নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
তোমাকেই জ্বালাতে হবে আশার রবি, সোনালি প্রভাতের রাঙ্গা ছবি, তোমাকেই আঁকতে হবে......
ভাষা আল্লাহ তা'আলার অনেক বড় নিয়ামত ও তাঁর অসীম কুদরতের বহি:প্রকাশ।শুধু ভাষার বিভিন্নতা নিয়ে কেউ গভীর চিন্তা করলে আল্লাহর অস্তিত্বের সন্ধান পেয়ে যাবে।ভাষা শিক্ষা,ভাষা নিয়ে গবেষণা করা বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার।যে কেউ এটা পারেনা।তকদিরে থাকতে হয়।
আমরা মুসলমান।আমাদের কাছে ভাষা নিয়ামত ও খোদার নিদর্শন।ইসলাম আমাদের ধর্ম।একমাত্র মনোনীত ধর্ম।কুরআন-সুন্নাহ আমাদের সংবিধান।যা আরবি ভাষায় নাযিল হয়েছে। সে হিসেবে আরবি আমাদের 'ধর্মভাষা'।কুরআন-সুন্নাহর গবেষণা ও তার মর্ম উদঘাটনের লক্ষ্যে এই ভাষা শিক্ষা করা,চর্চা করা এবং তা নিয়ে গবেষণা করা অবশ্যই আমাদের জন্য ইবাদতে গণ্য হবে।
বাংলাদেশের অধিবাসী হওয়ার সুবাধে আমরা বাংলাভাষী।বাংলাভাষা আমাদের 'মাতৃভাষা'।এই ভাষায় আমাদের সব কার্যক্রম।তাই এটাও আমাদের অবশ্যই শিখতে হবে।যেহেতু আমরা মুসলমান তাই আমাদের সবকিছু ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে।তাই বাংলাভাষীদের কাছে দ্বীন পৌঁছানোর জন্য বাংলাভাষা শিক্ষা করা দ্বীনের অংশ মনে করি।তবে তার অর্থ এই নয় যে অযথা এর পেছেনে জীবন বিলিয়ে দিয়ে মূল উদ্দেশ্য থেকে সরে রবো।বরং দাওয়াত, তা'লিম ও ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য মানুষকে মৌখিক বা লৈখিক ভাষায় বুঝানোর সক্ষমতা অর্জন করাই যথেষ্ট।
ইংরেজিভাষা বর্তমানে আন্তর্জাতিক ভাষা।এর বহুল প্রচার তাকে বিশ্বআসনে সমাসীন করেছে।
অন্যদিকে এটা আমাদের 'শত্রুভাষা'(প্রতীকী অর্থে)। ইয়াহুদি-খৃস্টান ও কাফেরগোষ্ঠী ইসলামের প্রকাশ্য ও প্রাচীন শত্রু।আর তাদের বেশিরভাগের ভাষা হলো ইংরেজি।তাছাড়া বিশ্বের অধিকাংশ দেশে রাষ্ট্রীয় ভাষা ইংলিশ।তাই এই ভাষাও আমাদের শিখতে হবে দুনিয়াতে চলার জন্য, বিশেষকরে ইসলামের প্রচার-প্রসারের জন্য।কেননা এখানে আছে খিদমতের বিশাল ময়দান।
আমরা উলামায়ে দেওবন্দের অনুসারী।দেওবন্দধারা, দেওবন্দি চিন্তাধারা ও মতাদর্শ আমাদের পথ ও পাথেয়।এই ভারতবর্ষসহ বিশ্বব্যাপী উলামায়ে দেওবন্দের পদচারণা ও তাদের অবদান ছড়িয়ে আছে।তাঁরা আমাদের আকাবির-আসলাফ ও পূর্বসুরী পিতৃপুরুষ।দেওবন্দি হওয়ার জন্য আলেম হওয়া শর্ত নয়।প্রত্যেক হকপন্থি মুসলমানই একজন দেওবন্দি।
উলামায়ে দেওবন্দ পৃথিবীর যে প্রান্তেই থাকুক তাঁদের একটি আলাদা ইতিহাস, সংস্কৃতি, রীতিনীতি ও কৃষ্টিকালচার যেমন আছে তেমনি আছে একটি নিজস্ব অনন্য ভাষা।সেটা হলো উর্দুভাষা।আমাদের আকাবিরের ভাষা।উলামায়ে দেওবন্দের ভাষা।সর্বোপরি আমাদের 'পিতৃভাষা'।
বিংশ শতাব্দীতে আরবির পর এভাষায় আমরা ইসলাম পেয়েছি,বুঝেছি।এ ভাষায় আছে জ্ঞানভাণ্ডারের অনন্য খনি।যা আরবি ছাড়া অন্য কোনা ভাষায় নেই।অনুবাদ করেও এই খনিকে স্থানান্তরিত করা সম্ভব নয়।
কিন্তু আফসোস ও দুঃখের বিষয় হলো আজকে সন্তানের কাছে পিতার ভাষা মূল্যহীন হয়ে পড়েছে।মাতৃভাষা ও শত্রুভাষা শিক্ষার অজুহাতে এরা পিতৃভাষাকে পরিত্যাগ করেছে।অনেকেই তো ব্যঙ্গ করে বলে,'রাজাকাইরা ভাষা'।
শত্রুভাষা শিখা নিষিদ্ধ নয়।দ্বীনের তরে শিখবো।তাই বলে কি পিতৃভাষা পরিত্যাগ করতে হবে?সম্মান না করো,নিমকহারামি করো অন্ততঃ ভাষা হিসেবেও এর গুরুত্ব থাকা উচিত।
তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার সমস্ত মুসলিমদেশসহ বিশ্বব্যাপী উলামায়ে দেওবন্দ এক ভাষার উপর আছেন।তাদের সাথে যোগাযোগ,সম্পর্ক রাখতে চাইলে উর্দুর বিকল্প নেই।নিজের ভাষা ভিন্ন থাকলেও তাঁরা উর্দু ব্যবহার করেন।সুতরাং এ'হিসেবেও তো উর্দু গুরুত্বের দাবিদার।
বর্তমানে বাঙালি মোল্লাগণ মুখেমুখে দেওবন্দি, কাজে-কর্মে,আকাবিরের জীবনধর্ম ও তাঁদের পদাঙ্ক অনুসরণ থেকে যোজন যোজন দূরে।তাই উর্দু তাদের ভালো লাগেনা,ইংলিশ চাই।'পিতৃভাষা' তাদের কাছে মযলুম, 'শত্রুভাষা'কে তারা বুকে আগলে নিয়েছে।যেকয়েকটা উর্দু কিতাব আছে সেগুলোও গুরুত্ব দিয়ে পড়াইতে নারায।আজ 90% ছাত্র উর্দুভাষা সম্পর্কে তেমন দক্ষতা বা পারদর্শিতা রাখে না।কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা ছিলো না। উর্দুর প্রতি অনাগ্রহ এবং অনীহা মনোভাবের কারণে আজকে এই অবস্থা। অথচ জোর দিয়ে বলতে পারি,উর্দু ছাড়া বাঙালি মোল্লাগণ চলতে পারবে না।মানেন বা না মানেন উর্দু লাগবেই লাগবে।উর্দুভাষার দ্বারস্থ হতেই হবে।
কিন্তু ফার্সির পর এবার উর্দুর বিদায়ের পালা।এর দায়ভার যাদের কাঁধে তারা আকাবিরের নিমকহারাম।ইতিহাস ক্ষমা করলেও প্রকৃত দেওবন্দিগণ কখনো তাদের ক্ষমা করবেন না।
বাদ মাগরিব।
দারুল হাদিস, দারুল উলূম মুঈনুল ইসলাম
হাটহাজারি, চট্টগ্রাম।
5/1/2017 ঈ.
©somewhere in net ltd.