নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক সুবোধ বালক /অবুঝ শিশুর মতো /মোর চলন বলন/খাই-দাই ফুর্তি করি / সাধ্যমত লিখি-পড়ি /আর কিছু নেই কথন।

আমানউল্লাহ রাইহান

তোমাকেই জ্বালাতে হবে আশার রবি, সোনালি প্রভাতের রাঙ্গা ছবি, তোমাকেই আঁকতে হবে......

আমানউল্লাহ রাইহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

কালাপানি : স্বাধীনতার কালান্তক অধ্যায়

১১ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৭


ইয়হ তীর্থ মহাতীর্থ কা হ্যায়
মত কাহোঁ ইসে কালাপানি,
তুম সুনো ইয়াহাঁ কী ধার্তি কে
কণা কণা সে গাঁথা বলিদানি!
_____/গণেশ দামোদর সাভারকার।

প্রখর রোদের মধ্যে টানা ছয় ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকা। অমানুষিক পরিশ্রম করে দু’হাত রঞ্জিত হয়ে ওঠা নিজের রক্তেই। সমান তালে, অবিরাম নারিকেল ভেঙে তার ছোবড়া থেকে আঁশ বের করা। এক মুহূর্তের জন্য কাজ থামিয়ে পাহারাদারের কাছে এক গ্লাস পানি তো পাওয়া দূর কি বাত বরং পাহারাদারদের মুহুর্মুহু টিপ্পনীর সাথে শুরু হতো নতুন এক পাশবিক খেলা।
হাতে-পায়ে ডাণ্ডাবেড়ি পরিয়ে বলা হতো , হেঁটে গিয়ে পাশের নদী থেকে সবার জন্য পানি আনতে হবে। কাঁটাগাছে ভরা জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কিছুদূর হেঁটে যেতেই ক্লান্ত-পরিশ্রান্ত শরীর থেকে নেমে এলো রক্তের ধারা। জ্ঞান হারিয়ে সেখানেই পড়ে রইলো। শেষবারের মতো এক চুমুক পানিও জুটল না সেই স্বাধীনতাকামী কারাবন্দির কপালে।
এসব কল্পনা নয়। বরং এর চেয়েও নিষ্ঠুর সব অমানবিক শাস্তি দেওয়া হতো এখানে। এরকম নৃশংসতার বিচিত্র চিত্র প্রতিনিয়ত চিত্রিত হতো সেই বিখ্যাত ও কুখ্যাত কালাপানির কারাগারে, আন্দামানের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত সেলুলার জেলে।
এরকম অমানবিক পরিবেশে কাজ করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ফযলে হক খায়রাবাদির মতো অসংখ্য রাজনৈতিক বন্দি। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনে উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে এমন সম্ভাবনাময় আলেম-উলামা ও দেশপ্রেমিক তরুণদের শাস্তি হিসেবে পাঠানো হতো বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত আন্দামান সেলুলার জেলে। সাধারণ মানুষের কাছে জেলখানাটি ‘কালাপানি’ নামেই অধিক পরিচিত। ‘কালা’ বলতে এখানে মৃত্যুকেই বোঝানো হয়, আর বঙ্গোপসাগরের উপকূলে অবস্থিত হওয়ায় নামের সাথে যুক্ত হয়েছে ‘পানি’।

ইংরেজ আমলে ভারতে, বিশেষত বাংলার ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীদের আটকে রাখার জন্য যে ক’টি কুখ্যাত বন্দিশিবির তৈরি করা হয়েছিল, সেগুলোর মধ্যে কালাপানি অন্যতম। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে অংশগ্রহণকারী প্রখ্যাত দার্শনিক আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদি, আল্লামা জাফর থানেশ্বরি, মুফতি ইনায়াতুল্লাহ কাকুড়ি, বটুকেশ্বর দত্ত, উল্লাসকর দত্ত, বিনায়ক দামোদর সাভারকরের মতো বিশিষ্ট প্রতিবাদী ও আন্দোলনকারী ব্যক্তিবর্গকে বন্দী করে রাখা হয়েছিল কালাপানিতে।
১৮৫৭ সালে সংঘটিত সিপাহী বিদ্রোহের সময় থেকেই আন্দামান দ্বীপপুঞ্জকে বন্দীশিবির হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল ব্রিটিশরা। তবে সে সময় আলাদা করে কোনো কারাগার নির্মাণ করা হয়নি। ১৮৮৯ সালের ১২ জুন ভারতবর্ষের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে এ কয়েদখানাসংবলিত উপনিবেশটি গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

অবশেষে ১৮৯৩ সালে সেই উপনিবেশের অংশ হিসেবে সেলুলার জেল নির্মাণের কাজে হাতে দেয়া হয়। মাত্র তিন বছরের মধ্যে, ১৮৯৬ সালে, প্রায় ছয়শ কয়েদির দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে নির্মাণকাজ সমাপ্ত হয় মৃত্যুকূপ কালাপানির। এ যেন নিজের হাতে নিজের কবর খুঁড়ে বাকিদেরও সেই কবরে শোয়ার ব্যবস্থা করে দেয়া। ব্রিটিশবিরোধী প্রথম এই আন্দোলনে ব্রিটিশদের সাথে খুব একটা কুলিয়ে উঠতে পারেননি বিদ্রোহীরা। বেশিরভাগ বিদ্রোহীকে দমন করা হয় হত্যার মাধ্যমে, বাকিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডস্বরূপ নির্বাসনে পাঠানো হয় আন্দামানে।

কারারক্ষী ডেভিড ব্যারি এবং সামরিক চিকিৎসক মেজর জেমস প্যাটিসন ওয়াকারের তত্ত্বাবধায়নে সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণকারী শতাধিক বিদ্রোহীকে পাঠিয়ে দেয়া হয় আন্দামানে। আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে কয়েদির সংখ্যা, আর এই সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যায় কয়েদিদের মনের ক্ষোভ। জঙ্গল পরিস্কার করা, কাঠ কাটা, পানি আনা- এসব কাজ করতে গিয়ে এখানে-সেখানে তারা দেখতে পায় অসংখ্য মৃতদেহ। এরই মধ্যে কয়েকজন ব্রিটিশ পরিদর্শক এসে জায়গাটিকে মানুষের থাকার অনুপযোগী বলে ঘোষণা করেন। কিন্তু সেসব কথা কানেই তোলেনি ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ। রাজনৈতিক বন্দিদের গুম করে দেয়ার জন্য এর চেয়ে নিরাপদ জায়গা আর কোথায় থাকতে পারে? কয়েদি পালাতে গিয়ে মারা গেছে- এ কথা বলে দিলেই খালাস কারা কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে ১৮৬৮ সালের এপ্রিলে ২৩৮ জন কারাবন্দি জেল থেকে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে যায়। তাদের মধ্যে ৮৭ জনকে ফাঁসিতে ঝোলানো হয়। বাকিদের অবস্থা আলাদা করে বলার কিছু নেই। একবারে মরার সৌভাগ্য যাদের হয়নি, তিলে তিলে তাদের দুনিয়া ছাড়া করতো বর্বর ব্রিটিশরা। অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কেউ হয়ে যেতেন উন্মাদ, কেউ অকালে হারাতেন প্রাণ। এভাবে দিনকে দিন ঔপনিবেশিক শাসনবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ ওঠানো প্রতিবাদী মানুষগুলোকে ধরে এনে বিচারের নামে প্রহসন চালায় তারা। বেশিরভাগ কয়েদিকে গ্রেপ্তার করা হতো বাংলা এবং বার্মার দিক থেকে।

আন্দামানের তীব্র স্রোত আর কালো পানিকে খুব ভয় পেতেন কয়েদিরা, সাঁতরে এই পথ পাড়ি দেয়া ছিল এককথায় অসম্ভব। নির্জন এই দ্বীপটি থেকে বের হওয়ার আর কোনো রাস্তা নেই। কাজেই স্বাধীনতা সংগ্রামীদের শায়েস্তা করার জন্য কালাপানি হয়ে ওঠে ব্রিটিশদের একদম মনমতো একটি জায়গা। শিকলে বেঁধে তাদেরকে বাধ্য করা হতো কারাগারসহ দ্বীপটিতে নতুন নতুন বাড়ি বানাতে, যেখানে আরাম-আয়েশ করে দিন কাটাত ব্রিটিশ শোষক কর্তৃপক্ষ। এছাড়াও উপনিবেশবাদ আরও শক্তপোক্ত করতে আন্দামানে জেটি নির্মাণেও বাধ্য করা হতো কয়েদিদের।

উনবিংশ শতাব্দীর শেষদিকে, ভারতের স্বাধীনতা যখন অভ্যুত্থানে রূপ নিচ্ছে, সে সময় গ্রেপ্তারকৃত রাজবন্দিদের জন্য উচ্চমাত্রার নিরাপত্তা সম্বলিত কারাগারের প্রয়োজনীয়তা অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে।ব্রিটিশ রাজের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিয়োজিত স্যার চার্লস জেমস এবং ব্রিটিশ প্রশাসনের সার্জন এ. এস. ল্যাথব্রিজ পরামর্শ দেন, আন্দামানের সেলুলার জেলে দ্বীপান্তরিত হয়ে আসা কয়েদিদের জন্য একটি ন্যূনতম মেয়াদে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। মাঠে-ঘাটে এভাবে সবাই মরে পড়ে থাকলে তা ভারতবাসীর আরও বেশি চোখে পড়বে। সেই ভাবনা থেকে আন্দামানে অসংখ্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সেলের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় কালাপানি। সেল বা কোষ সদৃশ এই কাঠামোর জন্যই একে সেলুলার জেল বলা হয়।

এতো অত্যাচার, নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে কয়েদিরা অনেক সময় আক্রমণ করে বসেছেন ইংরেজ সেপাইদের উপর। এতে ইংরেজ সৈন্যদের প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে বলে জানা যায়। আন্দামান সেলুলার জেলে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন মেয়াদে যেসব বিখ্যাত বিপ্লবী বন্দিজীবন যাপন করেছেন, তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদি, আল্লামা জাফর থানেশ্বরি, মুফতি ইনায়াতুল্লাহ কাকুড়ি, দিওয়ান সিং কালেপানি,যোগেন্দ্র শুক্লা, হেমচন্দ্র দাস, সাভারকর ভ্রাতৃদ্বয়, গণেশ ঘোষ, অনন্ত সিংহ, লোকনাথ বল, উল্লাসকর দত্ত, মহারাজ ত্রৈলোক্যনাথ চক্রবর্তী, বটুকেশ্বর দত্ত, উল্লাসকর দত্ত প্রমুখ তাদের মধ্যে অন্যতম।

আল্লামা খায়রাবাদির ঐতিহাসিক মর্মান্তিক ঘটনা এখানে বেশ প্রসিদ্ধ। তাঁর পুত্র মাওলানা আবদুল হক রাণী ভিক্টোরিয়ার কাছে আবেদন ও তারপর ক্ষমা ঘোষণার মাধ্যমে পিতার মুক্তির আদেশ জারি করাতে সক্ষম হন। লিখিত মুক্তিনামাসহ তিনি ১৮৬১ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি পোর্ট ব্লেয়ার পৌঁছান। কিন্তু এসময় অনেক দেরি হয়ে যায়। তিনি পৌঁছার পর একটি জানাযা দেখতে পান।বাকিটা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়।

জেলটি প্রথমবারের মতো আপামর জনতার দৃষ্টি আকর্ষণ করে ত্রিশের দশকের শুরুর দিকে। কয়েদিরা সবাই আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন তখন। ব্রিটিশদের অমানবিক নির্যাতনের প্রতিবাদে মহাবীর সিং প্রথম অনশনের উদ্যোগ নেন। তাকে প্রতিহত করতে ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ জোর করে দুধ খাইয়ে অনশন ভাঙার চেষ্টা করে, কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুধ সরাসরি তার শ্বাসযন্ত্রে ঢুকে যায়। সাথে সাথেই মারা যান তিনি। তার মৃতদেহ ছুঁড়ে ফেলা হয় বঙ্গোপসাগরে। ১৯৩৭-৩৮ সালের দিকে মহাত্মা গান্ধী এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মধ্যস্থতায় মুক্তিকামী কয়েদিদের স্থানান্তরিত করার উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশ সরকার।

১৯৪২ সালে জাপান সরকার আন্দামান দ্বীপপুঞ্জ থেকে বিতাড়িত করে ব্রিটিশদের। সে সময় নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু তার ‘আজাদ হিন্দু ফৌজ’ নিয়ে ১৯৪৩ সালের ৭ নভেম্বর এ দ্বীপটিকে দখল করে স্বাধীন ভারতের পতাকা উত্তোলন করেন। তিনি আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের নাম দেন শহীদ ও স্বরাজ দ্বীপপুঞ্জ। অবশ্য এ ঘটনার দু’বছর পর অর্থাৎ ১৯৪৫ সালে বৃটিশ সরকার এ দ্বীপমালা পুনরায় দখল করে নেয়। তবে ততদিনে ভারতে ইংরেজ শাসনের সূর্য অস্তমিত। তাই তারা আন্দামান সেলুলার জেলের সব বন্দিকে মুক্তি দিয়ে উপনিবেশটিও চিরকালের জন্য বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। কিন্তু ততদিনে ইতিহাসের পাতায় এটি যে কালো অধ্যায় হিসেবে জায়গা করে নিয়েছে, তা চিরকাল মানুষের স্মৃতিতে অমলিন হয়ে থাকবে।

সেলুলার জেলের বিল্ডিংটিতে সাতটি উইং ছিল, বাইসাইকেলের চাকার মতো সবগুলো উইং গিয়ে মিলিত হয়েছে একটি বিন্দুতে। তিনতলা উইংগুলোতে মোট সেলের সংখ্যা ছিল ৬৯৩টি। প্রতিটি সেলে মাত্র একজন করে কয়েদি থাকতো, কেউ কারো মুখ দেখবে এমন কোনো ব্যবস্থা ছিল না। সারাক্ষণ সেখানে প্রহরায় থাকতো অসংখ্য প্রহরী। জরূরি অবস্থার জন্য ছিল বিশালাকৃতির অ্যালার্ম।
সেসব এখন অতীত। বিল্ডিংগুলো বেশিরভাগই নষ্ট হয়ে গেছে, নিচের সংযোগ টাওয়ারসহ তিনটি উইং টিকে আছে কোনোমতে। ১৯৬৯ সালে বিল্ডিংটিকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। বর্তমানে এটি ভারত ও বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষের কাছে দর্শনীয় স্থান হিসেবে সুপরিচিতি লাভ করেছে। এখানে বিভিন্ন গ্যালারিতে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি এবং স্মারকচিহ্ন সংরক্ষিত আছে।

আন্দামানের নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে অবস্থিত এই সেই সেলুলার জেল। কালাপানির কালান্তক ইতিহাসের প্রতিমূর্তি, রক্ত আর নৃশংসতার, অত্যাচার আর যন্ত্রণার সাক্ষী।
যেখান থেকে আজো দেশপ্রেমিক উলামায়ে কিরাম ও আম জনতার আর্তচিৎকার ভেসে আসে। যার প্রতিটি দেয়ালে লেগে আছে স্বাধীনতাকামীদের রক্তের দাগ। যেখানে আজো বিদ্যমান আছে বিখ্যাত ফালসাফাবিদ আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদিসহ অগণিত আলেম ও দেশপ্রেমিক সৈনিকদের কবর।

হযরত খায়রাবাদি কয়লা ও ইটের টুকরো দিয়ে লিখেছিলেন তার বিখ্যাত বই "আযাদী আন্দোলন"।যা স্বাধীনতার দলিল হিসেবে আজো বেঁচে আছে।
যেখানে রচিত হয়েছে উর্দুভাষায় পৃথিবীর প্রথম আত্মজীবনী, উলামায়ে কিরাম ও স্বাধীনতাকামীদের উপর লোমহর্ষক নির্যাতনের বর্ণনা সমৃদ্ধ আল্লমা জাফর থানেশ্বরির ঐতিহাসিক কিতাব "কালাপানি "। এই কারাগারেই রচিত হয়েছে মুফতি ইনায়াতুল্লাহ কাকুড়ি রাহ. এর দেওবন্দধারার মাদরাসাগুলোতে পাঠ্যতালিকাভূক্ত " ইলমুস সীগাহ" ও নবীজির জীবনী "তাওয়ারিখে হাবিবে ইলাহ "।


বন্দিদের জন্যে বরাদ্দ এক একটি ছোট ছোট খুপরি, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেওয়ার স্বাধীনতাও কেড়ে নেওয়া হয়েছিল ঘড়ির কাঁটার শৃঙ্খলে।এর লম্বা টানা বারান্দা, লোহার দরজা, ফাঁসির দড়ি – সব কিছুই আজ ব্যক্ত করে চলেছে সেই কষ্টের ইতিহাস, চোখের পানি এখানে বাঁধ মানে না| আজও প্রতিটা ইঁট – কড়িকাঠে সোচ্চার হয়ে ওঠে সওয়া-শো বছরের জমানো হাহাকার!
স্বাধীনতাকামী দেশপ্রেমিকদের উপর অকথ্য নির্যাতন ও নিষ্ঠুর নিষ্পেষণের সাক্ষী হয়ে আজো দাঁড়িয়ে আছে এই সেলুলার।

সে সময় আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জকে ভারত ভূখণ্ডের অংশ বলেই মনে করা হতো না। ওটা ছিল বিদেশ। রাজবন্দিদের আন্দামানে পাঠিয়ে তাদের মনোবল ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়াই ছিল ব্রিটিশদের মূল উদ্দেশ্য।

তারপরও মুক্তিকামী মানুষকে ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি ব্রিটিশরা। কোনো অপশক্তি পারেনি তাদের রুখতে। সেজন্যই স্বাধীন হতে পেরেছে ভারত, কালক্রমে স্বাধীনতা পেয়েছে বাংলাদেশ।

বাদ ফজর।
11/12/2017 ঈ.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.