নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি এক সুবোধ বালক /অবুঝ শিশুর মতো /মোর চলন বলন/খাই-দাই ফুর্তি করি / সাধ্যমত লিখি-পড়ি /আর কিছু নেই কথন।

আমানউল্লাহ রাইহান

তোমাকেই জ্বালাতে হবে আশার রবি, সোনালি প্রভাতের রাঙ্গা ছবি, তোমাকেই আঁকতে হবে......

আমানউল্লাহ রাইহান › বিস্তারিত পোস্টঃ

দেওবন্দ নিয়ে কিছু ভাঙাচোরা কথা

১৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৪:০২


আজকাল অনেক নব্য 'দেওবন্দ-গবেষক' দেখা যায়, যারা 'দেওবন্দকে' একটি 'শিক্ষাকেন্দ্র' হিসেবে বিচার করে। তাদের ভাষ্যমতে 'দেওবন্দ' গতানুগতিক অন্য দশটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মতো এটিও একটি শিক্ষানিকেতন। এখান থেকে মানুষ লেখাপড়া করে। শিক্ষা অর্জন করে। 'দেওবন্দ' সবকিছুকে, সব চিন্তাকে অনুমোদন দেয়। আসলেই কি তাই? আমি এব্যাপারে কিছু বলবো না। আপনারাই বিচার-বিবেচনা করেন।

তবে দল-নিরপেক্ষ এবং মতান্ধতা থেকে বের হয়ে একটি কথা বলি, 'দেওবন্দ' তার 'দেওবন্দিয়্যাত' এর বাইরে কাউকে অনুমোদন দিবে তো দূরের কথা চিন্তাও করে না। কারণ' দেওবন্দ' আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর প্রতিনিধিত্ব করে। আমাদের উপমহাদেশে আহলে সুন্নত বলতে 'দেওবন্দ' উরফ হয়ে গেছে। হকের উপর বিদ্যমান প্রত্যেকেই দেওবন্দের অন্তর্ভুক্ত। এখন বলুন, সে এর বাইরে কিভাবে অনুমোদন দিবে। আহলে দেওবন্দের বাইরে এমনকি খোদ 'দেওবন্দধারার' কেউ যদি কুরআন-সুন্নাহর নীতিমালাবিরোধী মত খাড়া করেন তাকেও 'দেওবন্দ' স্বীকৃতি দেয় না।

সোজাসুজি বললে হকপন্থিদের প্রতিটি হক কাজ 'দেওবন্দধারার' অন্তর্ভুক্ত। এটি একটি মূলনীতি। আমার বানানো নয়। খোদ দেওবন্দের। বোদ্ধা পাঠক ও সুস্থ চিন্তাবিদ মাত্রই জানেন এ কথা। তাই কারো কর্মচিন্তাকে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য দেওবন্দকে একটা শিক্ষাকেন্দ্রের মানদণ্ডে বিচার করে এই কথা বলা যে, এখান থেকে বিচিত্র চিন্তাধারার বিকাশ হয়, বিভিন্ন মতাদর্শের মানুষের জন্ম হয় এটা নিতান্তই ভাসা ভাসা এবং প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে দেওবন্দকে না বোঝার ফলাফল। জ্ঞাতব্য যে, এখান থেকে সকলেই একই চিন্তা-চেতনা, মতাদর্শ ও একই চিন্তাধারা নিয়ে বের হোন। আর সেটা হলো ধর্মীয়, রাজনৈতিক, আদর্শিক ও দার্শনিক সর্ব ক্ষেত্রেই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এর মতাদর্শ ও চিন্তাধারা।

বলতে ছিলাম নতুন প্রজন্মের নব্য 'দেওবন্দ-গবেষকদের' কথা এবং দেওবন্দকে বিচার করতে তাদের বাস্তবতাবিবর্জিত মেরুদণ্ডহীন আজব 'মানদণ্ডের' কথা।
'দেওবন্দ' একটি চেতনার নাম বা 'দেওবন্দ' একটি চিন্তা, আদর্শ ও নযরিয়ার নাম কিংবা দেওবন্দ একটি মানহাজের নাম, একটি 'মাকতাবায়ে ফিকর' , এটা তারা বলতে নারাজ।
তাদের বিচারের মানদণ্ড হলো 'দেওবন্দ' কেবলই একটি প্রচলিত প্রথানির্ভর শিক্ষাকেন্দ্র। তাই তারা দেওবন্দকে গতানুগতিক চশমায় দেখে একটি সাধারণ শিক্ষানিকেতন মনে করে। 'দেওবন্দ' যে একটি 'স্কুল অফ থট' হিসেবেই জন্ম হয়েছিলো এবং অদ্যাবধি 'স্কুল অফ থট' হিসেবেই পরিচিত, আলোচিত ও সমাদৃত তা তাদের বোধগম্য হয় না। আমার বুঝে আসেনা, এমন একটি বাস্তবতাকে তারা কিভাবে এড়িয়ে যেতে পারে?
সুস্পষ্ট বাস্তবতা তো তারাই অস্বীকার করে যারা বিকৃত মস্তিষ্কের এবং যারা মানসিক ভারসাম্যহীন চিন্তা লালন করে।

'দেওবন্দ' কি শুধুই প্রচলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান? খালি দরস-তাদরিস এর জন্যই এর প্রতিষ্ঠা? দেওবন্দ যদি কেবলই সাধারণ কোনো প্রতিষ্ঠান হতো এবং তা কোনো 'মাকতাবায়ে ফিকর' না হতো তাহলে দুনিয়া জুড়ে দেওবন্দের চিন্তাধারা নিয়ে এতো কথাবার্তা, যুক্তিতর্ক, আলোচনা-পর্যালোচনা, লেখালেখি, বক্তৃতা-সেমিনার এর কী দরকার ছিলো। কেনো 'উলামায়ে দেওবন্দ' আরব-আজমে তাদের তুলে ধরতে , তাদের মানহাজ ও মতাদর্শের পরিচয় করিয়ে দিতে কলমের কালি খরচ করেছেন! 'দেওবন্দিয়্যাত' নিয়ে কেনো কিতাবাদি লিখেছেন!
বিভিন্ন চিন্তাধারার মানুষ কেনো দেওবন্দ নিয়ে কথা বলে। ভাবে, গবেষণা করে। কী আছে দেওবন্দে? শুধু কি ঐতিহাসিক কারণেই দেওবন্দকে তারা গুরুত্ব দেয় নাকি আরো কিছু আছে সেটা খুঁজে বের করা দরকার। আমরা বাঙালিরা তো কেবল হুজুগে মাতি। 'দেওবন্দ' মানে দেওবন্দ, এতোটুকুই বুঝি। 'দেওবন্দ' নিয়ে এর বেশি চিন্তা করার সময় কোথায়! এজন্য মুখে মুখে খালি দেওবন্দের বয়ান ঝারি।খুঁজে দেখি না এর হাকিকত কী!

পৃথিবীতে অনেক নামি দামি ইসলামি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যুগে যুগে গড়ে উঠেছে। এবং সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে নামি দামি বিভিন্ন দার্শনিক ও বিচিত্র মতাদর্শের মণীষীর জন্ম হয়েছে। কিন্তু আমাদের ভারতবর্ষের শিক্ষা-ইতিহাস অন্যান্যদের থেকে একটু ব্যতিক্রম। এখানে শিক্ষাব্যবস্থা কেবলই গতানুগতিক কোনো স্থূল, চিন্তাহীন, চেতনা ও ধারাহীন নয়। আর এই সিলসিলাটা শুরু হয়েছিলো ক্ষণজন্মা মহামণীষী ইমাম শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবি রাহ. এর হাতে। তিনি তৎকালীন প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থাকে নূতন করে শুধু ঢেলে সাজাননি, বরং একটি মানহাজ ও চিন্তাধারার ভিত রচনা করেছিলেন। এবং একটি বিপ্লবের রূপরেখা প্রণয়ন করেছিলেন। ইতিহাস পরম্পরায় যাকে আকাবিরে দেওবন্দ 'ফিকরে ওয়ালিউল্লাহি' নামে অভিহিত করেন।

পরবর্তীতে ঔপনিবেশিক শোষণ আমলে সেই 'ফিকরে ওয়ালিউল্লাহি' এর উপর ভিত্তি করে গড়ে ওঠে এক মারকায। কালপরিক্রমায় আজ তা 'দেওবন্দ' তথা 'দারুল উলূম দেওবন্দ'। 'ফিকরে ওয়ালিউল্লাহির' ধারক ও বাহক। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত এবং ইসলামি বিপ্লবের প্রতিনিধিত্বকারী এক 'মাকতাবায়ে ফিকর', 'স্কুল অফ থট'। এখন যাকে বলা হয়' ফিকরে দেওবন্দ' বা 'দেওবন্দিয়্যাত'। ঈমান-আকিদা, রাজনীতি-অর্থনীতি, দর্শন ও বিপ্লব সর্বক্ষেত্রেই যার বিচরণ। কিন্তু কেউ অনুধাবন করতে পারে, কেউ পারে না। কেউ ভাসা ভাসা নযরে চর্মচক্ষে দেখে, কেউ গভীর নযরে অন্তরচক্ষু দিয়ে দেখে। মূল রহস্যটা এখানেই।

দেওবন্দের পাশাপাশি আরো দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের উৎপত্তি হয়েছে এই ভারতবর্ষে, দেওবন্দের মতো সে দুটোও একেকটি নযরিয়ার উপর গড়ে উঠেছে। নদওয়া ও আলিগড়। এ দুটো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানও একেকটি চিন্তাধারা লালন করে 'স্কুল অফ থট' হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছিলো। তবে মৌলিক ক্ষেত্রে তারাও 'দেওবন্দধারার'। শুধু কর্মনীতি ও কার্যক্ষেত্রে 'ফিকর ও নযরিয়ার' ভিন্নতা ছিলো এবং এখনো আছে। তাই 'নদওয়া' 'দেওবন্দধারা' থেকে খারিজ কেউ বলতে পারবে না।আর আলিগড়ের ব্যাপারে এখন কোনো কালাম করলে বলতে হবে, সেই 'আলিগড়' এখন আর নেই।

মোদ্দাকথা, পৃথিবীর অন্য দশটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে ভারতবর্ষের শিক্ষা-ইতিহাস এবং একেকটি নযরিয়ার উপর গড়ে ওঠা 'মারকায' ও 'মাকতাবায়ে ফিকরকে' তার মূলধারা ও বিশালতা থেকে সরে এসে গতানুগতিক চিন্তায় সংকুচিত করে বিচার করা সংকীর্ণমনা এবং চিন্তাজগতে ভারসাম্যহীনতার পরিচায়ক বৈ কি!

আরেকটি বিষয় হলো, অনেকেই নিজের সংকীর্ণতাকে ঢাকতে 'দেওবন্দ ও দেওবন্দিয়্যাত' শব্দদ্বয়ে এক আজব সংকীর্ণতার গন্ধ বের করতে চান। তারা 'দেওবন্দ' এর স্থলে 'আকাবির ও আসলাফ' বলতে চান। এটা দোষের কিছু নয়। সমস্যা হলো 'দেওবন্দ ও দেওবন্দিয়্যাতে' তারা 'আকাবির-আসলাফ' খুঁজে পান না। এটা খুবই দুঃখের কথা! কারণ এখানে এসে তাদের চিন্তাশক্তি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যায়। কেননা, 'দেওবন্দ' মানেই তো 'আকাবির-আসলাফ'। 'আকাবির-আসলাফ' নিয়েই তো 'দেওবন্দ'। পৃথক কিছু নয়। বরংচ 'আকাবির-আসলাফ' এর স্থলে 'দেওবন্দ' বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হয়। এভাবে উরফ না থাকলে বানানো দরকার। বর্জন নয়। 'আকাবির-আসলাফ' বললে কল্পনা মস্তিষ্কে শুধু অতীত মণীষীর কথা মিন হয়, ভেসে ওঠে। এর বিপরীতে 'দেওবন্দ বা দেওবন্দিয়্যাত' বললে 'আকাবির-আসলাফ' তো আছেনই, সাথে সাথে সমকালীন মণীষীগণও তাতে শামিল হয়ে যান।

পুনশ্চঃ আমি আমার দেখা, জানাশোনা ও অভিজ্ঞতা তুলে ধরলাম। সবাই যে আমার সাথে একমত হতে হবে জরূরি নয়। তবে আমি বিশ্বাস করি, 'দেওবন্দিয়্যাত' একটি "মাকতাবায়ে ফিকর"। একটি "স্কুল অফ থট"। একটি চেতনা, একটি আদর্শ-মতাদর্শ ও একটি পরিচয়ের নাম।

দ্বিপ্রহর।
17-12-2017 ঈ.

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.