![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ডা: অপূর্ব পণ্ডিত (১১ ফেব্রুয়ারি , ২০১৩) : শাহবাগে আন্দোলন চলছে। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। আন্দোলন ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করা ও রাজাকারদের সামাজিকভাবে বয়কট করার শপথে লাখো মানুষ জড়ো হয়েছে শাহবাগে। বিভিন্ন বিভাগীয় শহরে ও জেলা শহরেও একসঙ্গে আন্দোলন চলছে। ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের নেতৃত্বে আন্দোলনের শুরুটা করেছে মূলত তরুণ প্রজন্ম। যারা কোনো রাজনৈতিক দলের ব্যানারকে দেখতে চাচ্ছে না। রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, আপসের বাইরে লাখো মানুষের সমাবেশ অনেককেই ভাবিয়ে তুলেছে। আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করেছে অনেক দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব। রাজনৈতিক নেতারাও অনেকে চত্বরে এসে কিংবা কেউ চত্বরের বাইরে থেকেও এই গণজাগরণের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন।
আন্দোলনের বর্তমান কর্মপন্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে চলছে হরেক রকমের শলাপরামর্শ। নেতৃত্ব , ফসল কে ঘরে তুলবে, তৃতীয় শক্তির উত্থানের স্বপ্ন, গুজব, হুমকি সব চলছে। দেশের সব মিডিয়া কাভার করছে। অনলাইনে লেখালেখি তো চলছেই। আন্দোলনকে ভিন্ন চোখে দেখার লোকের সংখ্যাও কম নয়। মঞ্চ দখলের চেষ্টা, বিচ্ছিরি ভাষায় ফেসবুকে, ব্লগে পোস্ট সেগুলোও চলছে। অনেকেই শাহবাগের এ আন্দোলনকে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার আন্দোলন বলেছেন। বিরোধী দলের নেতারা অনেকটা বাধ্য হয়েই এখন একে গণমানুষের আন্দোলন বলছেন।
সবকিছু ছাড়িয়ে এই আন্দোলনে কিছু কথা ইতিমধ্যেই বেরিয়ে এসেছে। ইতিহাসকে ইচ্ছেমতো যারা নিয়ন্ত্রণ বা বদলে দিতে চায় তারা কোনোদিনই সার্থক হবে না। রাজনৈতিক বিবেচনায় একাত্তরের খুনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের নামে কোনো প্রহসন করা চলবে না। গত ৪২ বছরে যুদ্ধাপরাধীরা ব্যবসা, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, কোচিং বাণিজ্য, মন্ত্রীত্বসহ অনেক পদ্ধতিতে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী হয়েছে। এই অর্থনৈতিক, সামাজিক পুনর্বাসনে এরা বিভিন্ন সময় পেয়েছে রাজনৈতিক সহায়তা। কখনো নির্বাচনি ঐক্য, কখনো কূটনৈতিক সম্পর্ক, কোনো কোনো সময় রাজপথে ঐক্যের নামে এরা বলিষ্ঠ হয়েছে। স্বাধীনতার পর এতগুলো বছর পেরিয়ে গেছে তবু এরা হুমকি দেয়- তাদের বিচার হলে দেশে গৃহযুদ্ধ বাধাবে। এবার শাহবাগের এ আন্দোলন থেকে এদের প্রতি চ্যালেঞ্জ উচ্চারিত হয়েছে। কোটি মানুষের মনের দাবি, যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি চাই। প্রতিনিয়ত স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হচ্ছে প্রজš§ চত্বর। দেশে এযাবৎকালে যত গণজাগরণ হয়েছে সবই ঘটেছে রাজনৈতিক নেতাদের আহ্বানে। এই প্রথম দেশে এরকম একটি আন্দোলন শুরু হয়েছে কারও ভাষণ, ঘোষণা ছাড়া। দলে দলে লাখো মানুষ নেমে এসেছে রাজপথে কোনো ধরনের লোভ, লালসা, অর্থ খরচ ছাড়া। রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল এই জনতার উদ্দেশ্য নয়। লক্ষ্য একটাই, রাজাকারের বিচার চাই। আন্তর্জাতিক কিছু মিডিয়া যখন পরিকল্পিতভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকে ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখানোর চেষ্টা করছিল তখন কিছু তরুণ প্রজন্মের এ আন্দোলন রাজনৈতিক নেতাদের হতবিহ্বল করতেই পারে।
স্বাধীনতা-পরবর্তী তরুণ প্রজন্মের নামে এত দিন নানাবিধ অভিযোগ ছিল- এরা ভিনদেশি বিদেশি কৃষ্টির পৃষ্ঠপোষক, এরা দেশের প্রকৃত ইতিহাস জানে না, এরা বাংলিশ কথা বলে, এরা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, দেশের প্রতি ভালোবাসা নেই। অথচ এবারের এই গণজাগরণে এরা প্রমাণ করে দিয়েছে এরা দেশকে নিজের জীবনের চেয়েও বেশি ভালোবাসে। কোনো রাজনৈতিক কলুষতার বাইরে যেয়ে এরাই বরং জাতির এই ক্রান্তিলগ্নে দেশের হাল কীভাবে ধরতে হয় শেখাল। এমনকি মহাজোটের সংসদ সদস্য এ আন্দোলনকে বর্তমান প্রজন্মের নব উজ্জীবন হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
আন্দোলনের একটি বড় অর্জন বলতে গেলে বলতেই হবে দেশে এইযে এতসব পত্রিকা, টিভি চ্যানেল গড়ে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো এবং তথ্যপ্রযুক্তি তার চেয়ে অনেক অনেক বেশি শক্তিশালী। তথ্যপ্রযুক্তি, তারুণ্যকে হেলাফেলা করার দিন শেষ। দেশের অপরাজনীতির হিংস্র থাবায় এতদিন আমাদের স্বাধীনতার অর্জনগুলো ভুলুণ্ঠিত হয়েছে। এই গণজাগরণের আহ্বায়ক ইমরান এইচ সরকার বলেছেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা শাহবাগ চত্বর ছাড়বো না। গণজাগরণ মঞ্চও হয়তো থামবে একদিন, কিন্তু ইতিমধ্যে এবারের এ আন্দোলনের প্রাপ্তিটিই সেখানে, একাত্তরের রাজাকার, আলবদরদের বিরুদ্ধে নতুন প্রজন্ম রুখে দাঁড়িয়েছে। দেশ, জাতি, কোটি মানুষের প্রাণে আজ তারুণ্যের জয়গান। তাদের একটাই দাবি, রাজাকারের বিচার চাই, এরা আমার দেশের নাগরিক হতে পারে না। এদের বয়কট করো।
©somewhere in net ltd.