নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

তুমি যে আছ তাই,আমি ব্লগে লিখে যাই......

আমি আবদুল্লাহ

দেখছি পড়ছি জানছি লিখছি

আমি আবদুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশে সানি লিওন কামিজ জনপ্রিয় হয় ক্যামনে?

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:২৯

প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিকদের একটা সুবিধা আছে।অনেক রিপোর্ট নতুন করে লিখতে হয়না।প্রায় একই ধরনের লেখা ফি বছর কিছুটা এডিট করে চালিয়ে দেওয়া যায়।র‍্যাবের ক্রসফায়ারের গল্প যেমন সবসময়ই এক রকম,তেমনি ঈদ বাজারের গল্প ও প্রায় একই রকম।দেশে বড় কোন মানবিক বিপর্যয়ের ঘটনা না ঘটলে বাজারের চেহারা প্রায় একই থাকে।পত্রিকার শেষ পাতায় কোন শাড়ি দোকানের ছবি আর নিচে ক্রেতা বিক্রেতার প্রতিক্রিয়া,বাজারে নতুন কি ফ্যাশন এল তার বর্ণনা।ব্যবসা ভালো হোক মন্দ হোক বিক্রেতা মুখে হতাশা ফুটিয়ে বলেন, ‘বিক্রি বাট্টা গত বছরের তুলনায় কম’ আর ক্রেতা বলেন, ‘দামটা গত বছরের তুলনায় বেশি’! গত একযুগের ও বেশি সময়ে বাংলাদেশে স্যাটেলাইট চ্যানেলগুলো জনপ্রিয় হওয়ার পর থেকেই প্রতি বছর ঈদ বাজারে ভারতীয় সিরিয়ালের কিংবা বলিউডের কোন নায়িকার নামের জামা বেশ জনপ্রিয় থাকে এবং সেগুলো বেশ চড়া দামে বিক্রি হওয়ার খবর ও আমরা পত্রিকায় পড়ে থাকি।কিন্তু একটু তলিয়ে দেখলেই দেখা যাবে এগুলো আসলে তেমন অসাধারণ কিছু নয় বরং নামের কারণেই এইসব জামার এত হু হু কাটতি।অর্থাৎ ইন্ডিয়ান নানা ছাইপাশ সিরিয়াল কিংবা মসলাদার মুভির এত প্রভাব এতটাই যে আমরা যেনতেন একটা জামাও কেবল নামের কারণে অনেক দাম দিয়ে কিনতে রাজি!তবে আবার একদম নতুন কিছু যে থাকেনা সেরকমটা কিন্তু না।সেটা একেবারেই যৎসামান্য।পুরনো বোতলে নতুন মদ কিংবা ব্যাপারটা ভাত সরাসরি না খেয়ে ঘাড়ের পিছন দিয়ে খাওয়ার মত।





সে যা-ই হোক না কেন,নানা ধরনের দেশী ফ্যাশন হাউজ থাকার পরেও যখন এইসব ইন্ডিয়ান কাপড় চোপড়ের বেশ চাহিদা থাকে,তখন আপনি কোনভাবেই এটাকে শুভ লক্ষণ হিসেবে দেখতে পারেন না।শুধু হুজুগের উপর ভিত্তি করে ঈদ বাজারের মত বিশাল একটা অংকের বাজার বিদেশীদের দখলে চলে যাবে,তবে সেটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তার অবকাশ আছে বৈ কি।নারীদের সিরিয়ালে বুঁদ হয়ে থাকাটা যদিও বিরাট কারণ তবে শুধু ব্যাপারটা এখানেই সীমাবদ্ধ না।আমার নিজের একটা ধারণা যে ঘরের শত্রু বিভীষণের মত এইখানটায় আমাদের পিছন থেকে ছুরি মারছে আমাদের দেশী মিডিয়াই।ব্যাপারটা তেমন কিছু না।একটু ভালোভাবে দেখলেই চলে।আলোচনার সুবিধার্থে একজন গড়পড়তা মধ্যবিত্ত বাংলাদেশী নারীর কথাই বিবেচনা করা যাক।হতে পারেন তিনি একজন ছাত্রী,পেশাজীবী কিংবা কেবলই আটপৌরে গৃহিণী।তিনি হয়তো দিনের উল্লেখযোগ্য একটা সময় ব্যয় করেন ইন্ডিয়ান টিভি সিরিয়াল দেখার পিছনে। নারীদের যেহেতু সাজগোজ কিংবা অলঙ্কারের প্রতি স্বভাবজাত একটা ঝোঁক থাকে,তাই ক্রমাগত।সিরিয়াল দেখতে দেখতে ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের চরিত্রগুলোর জাঁকালো সাজগোজ এইসব নারীদের মনের মধ্যে অজান্তেই কিংবা ইচ্ছাকৃত ভাবেই একটা প্রভাব ফেলে,চাহিদা তৈরি করে।আমরা যেহেতু মানসিকভাবে নানা ঔপনিবেশিকতার দাসত্ব ধারণ করি তাই ইন্ডিয়ান কিংবা অন্যসব প্রভুদের যে কোন বর্জ্য ও আমাদের কাছে বেশ ঝলমলে,আবেদনময়ী আর আকর্ষণীয়।যার কারণে প্রিন্স উইলিয়াম কিংবা ঐশ্বরিয়ার অনাগত সন্তান আমাদের উদ্বিগ্ন করে কিংবা টালিউডের কোয়েল মল্লিকের বিয়েও আমাদের কপালের ঘাম ঝরায়।এখন যেহেতু ঈদের মৌসুম আমাদের আলোচিতা হয়তো ইন্ডিয়ান সিরিয়ালের পাশাপাশি দেশী বাজারের ট্রেন্ড জানার জন্য বাংলাদেশী চ্যানেলগুলোর লাইফস্টাইল শো গুলোতে চোখ রাখেন।সাধারণত এইসব শোতে পপুলার ট্রেন্ডই তুলে ধরা হয়।ব্যবসায়ীরা বেশ ভালোভাবেই জানেন বাংলাদেশী নারীদের মনে ইন্ডিয়ান ব্যাপারস্যাপারের প্রতি ‘অন্য রকম’ একটা ভালোলাগা আছে।ফলে তারা নানা নামে এইসব সিরিয়ালের পোশাক আশাকই আনেন এবং লাইফস্টাইল শোগুলোতে সেটাই দেখানো হয়।সেই সাথে দেখানো হয় একজন নারী কিভাবে নিজেকে কমনীয়-মোহনীয়-আকর্ষণীয় করে তুলবেন।রূপচর্চা আর সাজগোজের মাধ্যমে নিজেকে কিভাবে “নতুন উচ্চতায়” নিয়ে যাবেন তার আউট লাইন দেওয়া হয়।যেহেতু তিনি একজন মধ্যবিত্ত,তিনি একটা পত্রিকা রাখার সামর্থ্য রাখেন এবং অন্য কোনদিন না হলেও অন্তত মঙ্গলবারে রাখেন। কারণ দেশের অধিকাংশ পত্রিকাই এইদিন লাইফস্টাইল ট্যাবলয়েড ছাপায়।ধরে নিচ্ছি মধ্যবিত্ত বাংলাদেশী নারী দেশের সর্বাধিক প্রচারিত দৈনিক প্রথম আলোর ‘নকশা’র উপর চোখ রাখেন।যদি পত্রিকা না রাখেন অন্তত মাসিক লাইফস্টাইল ম্যাগাজিন ক্যানভাস,চারবেলা চারদিক অথবা আইস টুডে ম্যাগাজিন পড়ে নিজেকে হাল ফ্যাশানের সাথে আপডেটেড রাখেন।এদের সবারই ঈদ উপলক্ষে বিশেষ আয়োজন থাকে।‘নকশা’ তো পুরো রোজা জুড়েই এক্সট্রা পেজ ছাপিয়ে অন্য সব লাইফস্টাইল ম্যাগাজিনকে ছাপিয়ে যায়।চার সপ্তাহের এই আয়োজনে কেবলই থাকে সকালে কি পড়বেন,বিকালে-সন্ধ্যায় কি পড়বেন কিংবা নিজেকে কিভাবে ঈদের শত ঝামেলার মধ্যেও সজীব ও প্রাণবন্ত রাখবেন।ঈদের আগে কিভাবে হাত-পা-চুল-রুপের পরিচর্যা করবেন।কোন জামার সাথে কি পড়বেন সেটা নিয়ে থাকে বিস্তর গবেষণা।এই গোটা ব্যাপারটা খুব সাধারণ কোন খরচ মনে হলে ভুল করবেন।সব হিসেব একত্র করলে অঙ্কটা দেখলে আপনার পিলে চমকে উঠতে পারে।এর সাথে যুক্ত হয় পাশের বাসার ভাবী,বান্ধবী কিংবা কলিগের কানকথা কিংবা প্রতিযোগিতা!এইসব কিছু মিলিয়ে সেই মধ্যবিত্ত নারী সিদ্ধান্ত নেন এবারের ঈদে উনারও চাই ‘সানি লিওন কামিজ’ কিংবা ‘আশিকি টুঁ থ্রিপিস’!দাম বেশি পড়লেও ক্ষতি নেই,শখের তোলা আশি টাকা!কাপড় চোপড়ের শো ডাউনের ঈদ তো বছরে একবারই আসে।





লেখার এতটুকু পড়েই আপনি যদি ‘তবে রে চুতিয়া’ বলে লেখকের দিকে তেড়ে আসেন,তবে নিজের পিঠের চামড়া বাঁচানোর জন্যই লেখককে আরও কিছু ব্যাপার সামনে আনতে হয়।আমি সাংবাদিকতার ছাত্র নই।তবে টুকটাক পড়াপড়ির কারণে বুঝতে পারি আমদের চিন্তা-ভাবনা-ধ্যান-ধারণার উপর মিডিয়ার প্রভাব অপরিসীম।বিজ্ঞাপনদাতাদের মাধ্যমে আদিষ্ট হয়ে মিডিয়া প্রতিনিয়ত সেইসব পণ্যকেই বারবার এমনভাবে দেখাতে থাকে যে আপনার একটা সময় মনে হবে যে এই জিনিসটা আমার লাগবেই।মিডিয়ার এভাবে বারবার দেখানোর ফলে যেখানে গণহত্যা পর্যন্ত ‘জায়েজ’ হয়ে যায় সেখানে ফ্যাশন তো ধুতচ্ছাই পর্যায়ে পরে।আমি স্মরণ করি আমার বেশ পছন্দের একজন মনিষী ম্যালকম এক্সের সেই বিখ্যাত বাণী,

“If you're not careful, the newspapers will have you hating the people who are being oppressed, and loving the people who are doing the oppressing.”



এখন স্বভাবতই একটা প্রশ্ন সামনে চলে আসে যে মিডিয়া তো সেটাই দেখাচ্ছে যেটা কিনা আমরা পছন্দ করি।ব্যাপারটা অনেকাংশে সত্য হলেও পুরোপুরি নয়।এটা কেবলই অজুহাত।এইখানটায় আবার কৃতজ্ঞচিত্তে ধার করি সচলায়তনের মাহবুব আজাদ ওরফে হিমুর কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা,



“পত্রিকার কাজ শুধু দর্শক পাঠকের চাহিদা যোগানো নয়, জনরুচি নির্মাণ করাও পত্রিকার কাজ।জনরুচিতে দীর্ঘমেয়াদে ভারতীয় অনুষ্ঠান-সিনেমা-তারকাদের গ্রহণযোগ্যতা নির্মাণে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোর ভূমিকা অপরিসীম”



সব পত্রিকার ফিচার এডিটররা মিলে যদি ঠিক করেন যে তারা আর বলিউডকে কিংবা ইন্ডিয়ান সিরিয়াল-রিয়েলিটি শোকে প্রোমোট করবেন না,তাহলে হয়তো আমরা অনেকভাবে লাভবান হবো।আমাদের ঈদ পোশাকের বাজার হয়তো ইন্ডিয়ার দখলে যাবে না,আমাদের চোখ কেবল ইন্ডিয়ান পোশাকের দিকে যাবে না অথবা আমাদের টিভি রিমোট কেবল ইন্ডিয়ান মুভি সিরিয়াল খুঁজে বেড়াবে না। কিন্তু ভ্রাতা বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাঁধবে কে?



পুনশ্চঃ১. একটা অগ্রিম দুঃসংবাদ দিয়ে আজকের মত বিদায় নিই।ঈদের আগে আগেই কিংবা ঈদের পরে পত্রিকা চালু হওয়ার পরে একটা খবর একটু খুঁজে দেখবেন ‘ ঈদের পোশাক না পেয়ে আত্মহত্যা’। কখনো বাবা মার সামর্থ্য থাকেনা সন্তানের আকাশ ছোঁয়া সামর্থ্য পূরণের। মনের অজান্তে এইভাবে উচ্চাভিলাষী চাহিদার বীজ যারা বপন করে দিচ্ছে তাদের জন্য কতটা ঘৃণা বরাদ্দ থাকা উচিত?



২.ভারতীয়রা আমাদের কিভাবে দেখে তার একটা ধারণা পাওয়া যাবে এই লেখা থেকে







ভারতীয়দের মনোভাবটি দেখেছি, তারা কথায় কথায় মুক্তিযুদ্ধে আমাদের যে সমর্থন ও সাহায্য করেছিল তা মনে করিয়ে দেয়। তারা মুখে ভাই ভাই বললেও আমাদেরকে নীচু জাতি হিসেবে দেখে এবং বাংলাদেশ নিয়ে অহরহ তামাশা করে। তারা শেখ মুজিবর রহমানকে গ্রেট লিডার বললেও বোঝানোর চেষ্টা করে ভারতের সমর্থন ছাড়া বাংলাদেশ নামে কোন ভুখণ্ডের জন্ম হতো না। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ টিকে আছে ভারতের সাহায্য নিয়ে। এমনকি ভারতীয় বাঙ্গালীদের বলতে শুনেছি, বাংলাদেশের বাংলা আসলে বাংলা ভাষার ব্যাঙ্গাত্বক রুপ। অর্থ্যাৎ বাংলাদেশীরা সঠিক ভাবে বাংলা লিখতে বা পড়তে জানেনা।

আমাদের সাহিত্যিকরা তাদের কাছে কোন সাহিত্যিকই নয়, এমনকি ছ্যা.. ছ্যা.. শব্দ উচ্চারণ করে তারা বাংলাদেশের বাংলাকে অপমান করে থাকে । অথচ বাংলাদেশের প্রাপ্য সব জায়গায় তারা ভাগ বসায়, সে গ্যাসই বা নদীর পানিই হোক অথবা বাংলাদেশ বর্ডারের শেষ সীমানাই হোক... আর যদি তা বাংলাদেশের জন্য তৈরি রেডিও, টিভি হয় তাহলেতো কথাই নেই। এক্ষেত্রে তারা বলবে বাংলাদেশে কোন সাংবাদিকই নেই এবং বাংলাদেশে সাংবাদিকতার মান খুব নীচু। বিদেশি বসের ভাষাগত অজ্ঞানতার সুবিধা নেবে আর বসের পিছনে চাটুকারিতা, এমন কি প্রয়োজনে সব কিছু দিয়ে বসকে খুশি করে পদবী দখল করার খেলায় তারা মত্ত্ব। এই খেলা বাংলাদেশীদের বুঝতে অনেক সময় লাগে, আরে তাতেই কেল্লা ফতে।

জার্মান সরকার, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ জয়ের পরে তখনকার বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীর অনুরোধে যে বাংলা ডিপার্টমেন্টটি উপহার স্বরূপ বাংলাদেশকে দেওয়া হয়োছিলো; তার বর্তমান বিভাগীয় প্রধান একজন ভারতীয় বাঙ্গালী। তার পাসপোর্ট ভারতীয় হওয়া সত্ত্বেও নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দেয় বর্তমান বিভাগীয় প্রধান। এর কারন হলো, ডয়েচে ভেলের নিয়মানুযায়ী প্রতিটি বিভাগের প্রধান হতে হবে সেই দেশের একজন নাগরিককে। অর্থ্যাৎ চাইনিজ বিভাগের প্রধান হবে একজন চাইনিজ। এ ক্ষেত্রে নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিলেই এই সুবিধাটি গ্রহণ করা যায়। যদিও ডয়েচে ভেলেতে ভারতীয়দের জন্য একটি আলাদা বিভাগ রয়েছে। সেখানে কিন্তু কোন বাংলাদেশি বিভাগীয় প্রধান নয়। এক্ষেত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের প্রাপ্য সম্পত্তি তারা দেশে বিদেশে সব জায়গায় নিজেদের সম্পত্তি হিসেবে ভোগ ও হজম করে চলছে। এমনকি মুসলিম ধর্ম পরিচয় নিয়েও তারা বিভিন্নভাবে অশ্রদ্ধার কথা বলে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫০

হিংস্র ঈগল বলেছেন: কি বলবো বুঝে পাচ্ছি না। তবে আমরা তরুণরাও এই উপনিবেশিক মানসিকতার বাইরে নয়। প্রতি চার বছর পর পর তার প্রকাশ ঘটে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.