![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমরা প্রতিদিন অন্তত ১৭বার প্রার্থনা করি পরম করুণাময় আল্লাহ যেন আমাদের সরল ও সঠিক পথে পরিচালিত করেন।
“আমাদেরকে সরল পথ দেখাও,সে সমস্ত লোকের পথ, যাদেরকে তুমি নেয়ামত দান করেছ। তাদের পথ নয়, যাদের প্রতি তোমার গজব নাযিল হয়েছে এবং যারা পথভ্রষ্ট হয়েছে”। (সূরা ফাতিহা:৬-৭)
কিন্তু এমন প্রার্থনা আমরা প্রতিদিনই করি কেন?আমরা কিভাবেই বা বুঝবো যে আমাদের এই প্রার্থনা মঞ্জুর হচ্ছে?তবে কি আমরা ধরেই নিই যে আমরা কোন চেষ্টা ছাড়াই সঠিকপথে চালিত হবো এবং জান্নাতে প্রতিশ্রুত স্থান পাবো?কিংবা কেবল আমরাই সঠিক রাস্তা খুঁজে পাবো এবং বাকিরা নয়?
পবিত্র কোরআনে এইসব প্রশ্নেরই জবাব রয়েছে। আমরা যদি একটু মনোযোগের সাথে এইসব জিজ্ঞাসার অনুসন্ধান করি,তবে এর জবাব পেয়ে যাব।দুর্ভাগ্যবশতঃ অনেক মুসলমান ভাই কোরআনের আয়াতের ভুল ও বিচ্ছিন্ন অর্থ বুঝার কারণে মনে করেন,আল্লাহ কেবল যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথে নিয়ে আনেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে বিপথগামী করেন।
এই ভুল ধারনার কারণে অনেকে ঈমান-আমল থেকে দূরে সরে যায় এবং গোমরাহিতে লিপ্ত হয়। সুতরাং আক্ষরিক ভাবে এটাই মনে হচ্ছে আল্লাহ যাকে ইচ্ছা তাকে সঠিক পথের পথিক হিসেবে চালিত করেন এবং যাকে ইচ্ছা তাকে সত্যপথ দূরে ঠেলে দেন।কিন্তু এই ধারণা কেন?
প্রথমতঃআমাদের এটা বুঝা উচিত যে আল্লাহর সকল সিফত বা গুণাবলী সংযুক্ত করা ব্যতীত তাঁর সম্বন্ধে কোন ধারণা করা সম্পূর্ণরূপে অগ্রহণযোগ্য।আমরা আল্লাহর কয়েকটি গুণাবলীর দিকে লক্ষ্য করি।আল্লাহ ন্যায়বিচারক,সর্বজ্ঞ এবং অন্তর্যামী।তিনি তাকেই সঠিকপথে পরিচালিত করেন,যে কিনা সঠিকপথে পরিচালিত হতে চায়।যে আল্লাহর দিকে দিকে আগায়,আল্লাহও তার দিকে এগিয়ে আসেন।যদি আমরা পবিত্র কোরআনের কিছু আয়াতের দিকে খেয়াল করি তবে এই ব্যাপারটি পুরোপুরি বুঝতে পারবো।
“[....]যে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস করে, তিনি তার অন্তরকে সৎপথ প্রদর্শন করেন। আল্লাহ সর্ববিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত”।(সূরা তাগাবুনঃ১১)
“ তিনি তাদেরকে তাঁর পথ দেখান যারা তাঁর অভিমুখী”।(সূরা রা’দঃ২৭)
“ যারা সৎপথ অবলম্বন করে আল্লাহ তাদের সৎপথে চলার শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং তাদেরকে মুত্তাকী হবার শক্তিদান করেন "(সূরা মুহাম্মাদঃ১৭)
উপরোক্ত আয়াত থেকে এটা পরিস্কার যে কেউ যদি তার অন্তরকে আল্লাহর দিকে রুজু করে তবে আল্লাহ তার অন্তরে সৎ পথে চলবার প্রেরণা দিয়ে দিবেন।ইসলামের পথে প্রত্যাবর্তনকারী অনেকের ক্ষেত্রেই এটি প্রমাণিত হয়েছে।
একইভাবে বিপথগামীদের কথা বর্ণনা করেও কোরআনের আয়াত নাযিল হয়েছে।
“ নিশ্চয়ই যেসব লোক (এ কথাগুলো মেনে নিতে) অস্বীকার করেছে, তাদেরকে তুমি সতর্ক করো বা না করো, উভয়টিই তাদের জন্য সমান,তারা ঈমান আনবে না।আল্লাহ তাদের অন্তরে ও কানে মোহর মেরে দিয়েছেন। এবং তাদের চোখের ওপর আবরণ পড়ে গেছে। তাদের জন্য কঠিন শাস্তি নির্ধারিত রয়েছে”।(সূরা বাকারাঃ৬-৭)
তবে আল্লাহ সম্ভবত এই ধরনের বিভ্রান্তির পথে থাকা বান্দাদের ব্যাপারে সূরা লায়লে সবচাইতে পরিপূর্ণ বর্ণনা করেছেন।
“সুতরাং কেউ দান করলে,মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা সত্য বলে গ্রহণ করলে,আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ।এবং কেহ কার্পণ্য করলে ও নিজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে,আর যা উত্তম তা অস্বীকার করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পথ”।(সূরা লায়লঃ৫-১০)
এই সঠিকপথের দিশার ব্যাপারটিকে সেই স্কুলের মত ভাবা যায় যেখানে স্কুল কর্তৃপক্ষই ঠিক করে কোন ছাত্রকে পরবর্তী ক্লাসে উত্তীর্ণ করা হবে এবং কোন ছাত্রকে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হবে।তবে হ্যাঁ,স্কুল কর্তৃপক্ষ এই কাজগুলো করে ঠিক,তবে এর পুরোটা নির্ভর করে ছাত্র কি করছে তার উপর।
নিজেদের অজ্ঞতার কারণে মানুষ মনে করে আল্লাহ আমাদেরকে পুতুল হিসেবে তৈরি করেছেন।যার কারণে আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা বলতে কিছু নেই।অথচ আল্লাহ কোরআনে জানাচ্ছেনঃ
“শপথ মানুষের এবং তাঁর, যিনি তাকে সুঠাম করেছেন,অতঃপর তাকে তার অসৎকর্ম ও সৎকর্মের জ্ঞান দান করেছেন।সে-ই সফলকাম হবে,যে নিজেকে পবিত্র করবে।এবং সে-ই ব্যর্থ হবে,যে নিজেকে কলুষাচ্ছন্ন করবে।(সূরা শামসঃ৭-১০)
গোটা ব্যাপারটাকে আয়নার প্রেক্ষিতে দেখা যেতে পারে।আয়নায় ভালো মন্দ সব কিছুই ফুটে উঠে।তবে আয়না নিজে ঠিক করতে পারেনা যে আমরা কিভাবে আয়নার সামনে নিজেদের উপস্থাপন করবো।আল্লাহ আমাদের অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যতের ব্যাপারে অবগত এবং আমাদের প্রতিবিম্ব হচ্ছে আমাদের কৃতকর্ম।এখানে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে আল্লাহ আদি-অনন্ত পর্যন্ত বিরাজমান এবং তাঁকে কোন সময়ের ফ্রেমে আবদ্ধ করার সাধ্য আমাদের নেই।কখনোই ভুলে যাওয়া চলবে না যে তিনি আমাদের চিন্তার এবং ব্যাখার সীমানার বাহিরে।
“তোমাদের মধ্যে আল্লাহর নিকট সে ব্যক্তিই অধিক মর্যাদাসম্পন্ন যে তোমাদের মধ্যে অধিক মুত্তাকী। নিশ্চয় আল্লাহ সকল কিছু জানেন ও সমস্ত খবর রাখেন”।(সূরা হুজুরাত:১৩)
আল্লাহ অবশ্যই আমাদেরকে সঠিক পথের নির্দেশনা দিবেন কিন্তু তার আগে আমাদেরকেই রাস্তা বেছে নিতে হবে।অন্য সব মাখলুকাতের সাথে আমাদের পার্থক্য এখানেই।আল্লাহ আমাদের বুদ্ধি-বিবেক দিয়েছেন যাতে করে আমরা নিজেদের মেধা খরচ করে তাঁকে চিনতে পারি এবং এবং আদেশ মেনে চলতে পারি।নিজের ব্যক্তিগত জীবন বা সমাজ-রাস্ট্রের সর্বোপরি কল্যাণ ও শান্তির জন্য এর বিকল্প নেই।আল্লাহ এরশাদ করছেনঃ
“ বল,'সত্য তোমাদের প্রতিপালকের নিকট থেকে; সুতরাং যার ইচ্ছা বিশ্বাস করুক ও যার ইচ্ছা সত্য প্রত্যাখ্যান করুক”।'(সূরা কাহফঃ২৯)
সঠিক পথে চলবার ব্যাপারটা আল্লাহর সাথে দেওয়া-নেওয়ার সম্পর্কের মত।যতই আপনি আল্লাহর উপর ঈমান আনবেন,ততই আল্লাহ আপনাকে সঠিক রাস্তায় তুলে নিয়ে আসবেন।এর জন্য আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে,প্রার্থনা করতে হবে।আর এর বিপরীতে আমরা যদি অসচেতন ও ভ্রূক্ষেপবিহীন হই তবে আল্লাহ গোমরাহির দিকে ঠেলে দিবেন।তাই প্রিয় নবীজী (সাঃ) প্রায়ই প্রার্থনা করতেনঃ
হে অন্তরের নিয়ন্ত্রক,আমাদের অন্তরকে আপনার দ্বীনের উপর প্রতিষ্ঠিত করে দিন এবং আমাদের অন্তরকে আপনার আনুগত্যের দিকে নিয়ে আসুন।(তিরমিযিঃ৩৫২২,মুসলিমঃ২৬৫৪)
যদি আমরা ঔদ্ধত্যকে বেছে নিই এবং কোন ধরনের প্রচেষ্টা ছাড়াই মনে করি যে আল্লাহ সবকিছু স্বয়ংক্রিয়ভাবে “নির্ধারিত” করে দিবেন,তবে আমরাই ক্ষতিগ্রস্থ হবো এবং নিজেদেরকে জাহান্নামের আগুনের জন্য প্রস্তুত করবো।আমাদের প্রতিটি কাজই হবে আল্লাহর জন্য এবং সেটা হতে হবে আল্লাহর নির্দেশিত পন্থায়।
“যিনি সৃষ্টি করেছেন মৃত্যু ও জীবন,তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য কে তোমাদের মধ্যে কর্মে উত্তম? তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল”।(সূরা মুলকঃ২)
http://www.suhaibwebb.com অবলম্বনে রচিত।ঈষৎ সংক্ষেপিত
©somewhere in net ltd.