নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি লিখতে ভালবাসি,তাই চেষ্টা করি লিখে যেতে।মানুষ হিসাবে ব্যর্থ ও নষ্ট মানুষ।সত্যকে ভালবাসি বলে সত্য বলি।আমি এই পৃথিবীতে এসে যদি মিথ্যার চাদরে ঢেকে যাই,তা হবে জীবনের বড় পরাজয়।

সৈয়দ কামাল হুসাইন

সৈয়দ কামাল হুসাইন। অতি সামাণ্য ক্ষুদ্র মানুষ।

সৈয়দ কামাল হুসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

অন্য উন্মাদ (ছোট গল্প)

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩১

,,,,,,,,,,, অন্য উন্মাদ,,
সৈয়দ কামাল হুসাইন
.................
শেষে এসে সম্পর্ক শেষ হয়েই গেল।
দীর্ঘদিনের ব্যাপক চেষ্টা ব্যর্থ হবার
পরে শাবিব নিয়তি মেনে নিল। আর
কিইবা করার ছিল তার? চেষ্টার মাধ্যমে
সবকিছু হয়ে যায়না, নিয়তি'তেও থাকতে
হয়, শাবিব বুঝতে পারে। অন্ধকার গলির
মুখে এসে দাঁড়ায় শাবিব। বিদ্যুৎ নেই।
নিস্তব্ধ পরিবেশ, যেন এ পৃথিবীতে সে
খুব একা, কেউই নেই তার। চারপাশের
অন্ধকার সাক্ষী দিচ্ছে, আরো ভালো
করে তাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে, চন্দ্রা নেই,
জীবনের রাতে আর কোন আলো নেই।
চন্দ্রার কথা খুব মনে পড়ে। চন্দ্রা কত দিন
এখানে দাঁড়িয়েছিল, কত দিন এখান
থেকেই কথা শুরু হয়েছিল, অন্ধকারের টর্চ
হাতে দাঁড়িয়ে থাকতো চন্দ্রা। সেই
চন্দ্রা আজ নেই।
শাবিব মানতে পারেনা চন্দ্রা
অভিমানে চলে গেছে। যার কিনা শাবিব
ছাড়া পৃথিবীতে কেউ ছিলনা। শাবিব
জানতো, চন্দ্রা একদিন চলে যাবে, কিন্তু
এই সময়ে এসে এভাবে চলে যাবে
ভাবেনি। এটা যেন হঠাৎ সুস্থ মানুষের
স্টোক করার মতো। চারটা বছর চন্দ্রাহীন
অদ্ভুত রকমের কষ্টে কি করে যেন
কাটলো, শাবিব ভাবে।
নিরস মনে আস্তে আস্তে ঘরের দিকে
হাঁটে শাবিব।
দরজা বন্ধ। ঘরের ভিতরে ক্ষীণ আলো
জ্বলছে। শাবিব দরজার সামনে এসে ধীর
কণ্ঠে ডাক দেয় ",'-ফাঈজা ঘুমিয়ে গেছ
মা?'
ঘরের ভিতর থেকে কোন শব্দ আসে না।
শাবিব বাহিরের এদিক ওদিক তাকিয়ে
কি যেন খুঁজতে থাকে। কাঠের দরজায়
আস্তে করে ধাক্কা দেয়, :-ফাঈজা?'
:'-ফাঈজা ঘরে নেই, তুমি এতো রাত করে
কেন এলে?'
বুকের ভিতরটায় কেমন যেন জ্বালা হয়
শাবিবের। মেয়েটির কন্ঠ ঠিক তার
মায়ের মতোই কানে বাজে। শাবিব কি
যেন ভেবে বলল, -': ফাঈজা কোথায়
গেলো?'
বাবার কথা শুনে ফাঈজা'র হাসি আসে।
হাসি আড়াল করে দ্রুত।
-:'সেই বিকাল থেকে ওর খোঁজ পাচ্ছিনা।
তোমাকে খুঁজতে গেছে নিশ্চয়। এতো রাত
করো কেন?'"
শাবিব মেয়ের চালাকি দেখে অনেকটা
অবাক হয়। চৌদ্দ বছরের মেয়েটা এতো
পাকা দুষ্টু হয়ে গেছে।
:-আচ্ছা দরজা তো খুলো আগে।
ফাঈজা চেয়ারে থেকে উঠে এসে
জানালার ফাঁক দিয়ে বাবা কে দেখে।
বাবার জন্য তার খুব দুঃখ লাগে। মা যে
কেন বাবার রাত্রিগুলোকে আঁধারে
ঢেকে দিলো, ফাঈজা বুঝতে পারে না।
দরজা খুলে দিয়েই ফাঈজা হাসতে শুরু
করে।
:-তোমাকে তো বোকা বানিয়ে দিলাম
বাবা।
শাবিব মেয়ের সাথে হাসে। :-'তুমি
অনেক পেকে গেছ মা। বুড়ো ছেলের
সাথে কেউ এমন করে?' খাটের উপর বসতে
বসতে শাবিব বলে।
বাবার পাশে এসে বসে ফাঈজা।
:'-ও বাবা- তুমি ছাড়া আর কেউ নেই
আমার।
মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেয় শাবিব।
মাথায় যত্ন করে হাত বুলাতে থাকে।'
:-খেয়েছ মা?'
:-'বুড়ো ছেলেকে ছাড়া খেতে ভালো
লাগেনা।'
:-'আমার জন্য বসে না থেকে খেয়ে নিবে,
পরে আবার আমার সাথে খাবে।'
:'-ভাল লাগে না বাবা।'
:-এমন করলে হয়না,তুমি ছোট মানুষ, ঠিক
সময় না খেলে শরীর খারাপ হবে। চলো
এবার খেতে যাই।'
শাবিব দাঁড়াতে যায়।
একটু থেমে ফাঈজা আবার বলে, বাবা
একটা কথা বলি?
শাবিব ছোট করে বলে, বলো।
:-'মা কে ছাড়া থাকতে তোমার খুব কষ্ট
হয়? প্রশ্ন করে চুপ হয়ে যায় ফাঈজা।
সম্পূর্ণ অন্য রকম করে হাসে শাবিব।
পৃথিবীর সবচেয়ে আলাদা এ হাসি। যে
হাসির মধ্যে শ্রাবণের মেঘ ভেসে
থাকে।
:-মোটেও না। খুব ভালো আছি। আমার
আম্মু সব কষ্ট দূর করে দিয়েছেন।।
ফাঈজা জানতো বাবা কোনদিন ও
কষ্টের কথা বলবে না। জানতে চেয়ে
বাবার কষ্ট শুধু বাড়িয়ে দিলাম, মনে
মনে ভাবে ফাঈজা। বাবার চোখের
দিকে তাকায়, চোখগুলো বহুদিন
নিদ্রাহীন।
:-বাবা চলো খেতে যাই।
শাবিব ছোট শিশুর মতো বলে, হুম চলো।
:'-খেতে বসে ফাঈজা বললো, বাবা কলম
এনেছো?'
ভিতরে ভিতরে কষ্ট পায় শাবিব। কলম
আনতে ভুলে যাওয়ার কারণে।'
:-মা ভুলে গেছি, কাল নিশ্চিত আনব।'
:'-আমি এখন কবিতা লিখব কি করে? কাল
তো এই কবিতা মনেই থাকবেনা। তুমি যে
কেন এত ভুলে যাও বাবা।'
':-কাল ভুলবনা। সকাল সকাল নিয়ে আসব।'
কি কবিতা লিখবে?'
':-আমার একটা বাবা আছে, 'ফাঈজা সহজ
করে বলে।
:'-মা নিয়ে লিখবে না?'
:-'মা তোমাকে কষ্ট দিয়ে, আমাকে একা
রেখে চলে গেছে। মায়ের জন্য আমার
হৃদয়ে ঘৃণার পাহাড় জমা হয়ে আছে।'
:-'এমন বলে না।তোমার মা অনেক
ভালবাসতো তোমায়। 'শাবিব শান্তনার
ভাষায় বুঝ দেয় ফাঈজাকে।
:-জানি বাবা। তুমি খাও এবার।
বাবার প্লেটে খাবার তুলে দেয় ফাঈজা,
নিজের প্লেটেও নেয়।
--
শাবিবের চাকরি'টা চলে গেল তুচ্ছ
কারণে। এই নিয়ে তাঁর কয়বার চাকরি
গেল, শাবিব সহজে হিসাব মিলাতে
পারেনা। প্রথমবার চাকরি গিয়েছিল,
চন্দ্রা আসার এক বছর পর। তারপর থেকে
শুরু, চাকরি যাওয়া। পত্রিকার বিজ্ঞাপন
দেখে পিওনের চাকরিটা নিয়েছিল ছয়
মাস আগে। এর আগে অনেক ভালো একটা
চাকরি করতো শাবিব।কিন্তু মানুষের
সাথে একি পথে হাঁটতে হাঁটতে শাবিব
ভুলে যায়, জীবনের কঠিন আর একটা রুপ
আছে।বেশ কিছু দিন চাকরি না পেয়ে
পিওনের কাজেই লেগে যায়।
সকাল থেকে রাত দশটা/ বারোটা পর্যন্ত
অফিসের ফাইল নিয়ে দৌড়াদোড়ি।এর
শাবিব কেমন যেন অস্থির হয়ে
গিয়েছিল। কষ্টের আতিশয্যেই বলেছিল,
:-আমার মাথায় প্রচন্ড ব্যথা, আজ যেতে
পারবনা।'
:-তোমার সপ্তাহে তিন অসুখ হবে, কাজ
করবে নিজের মতো, এভাবে তো হয় না।
শাবিবের বস বলেছিল।
:'-আমি আপনার চাকরির মুখে থু থু
দিলাম।'
অবুঝ মাতালের মতো বলেছিল শাবিব।
কিছু মানুষ কষ্টের নিষ্ঠুর অত্যাচার সহ্য
করতে করতে একদিন ভুলে যায় চেনা মুখ।
ভুলে যায় কিভাবে কথা বলতে হয় কার
সাথে। শাবিবও এই রকম।
শাবিব একদিন এমন ছিলনা। জীবনের
অলিগলির তিক্ত পথে হাঁটতে হাঁটতে এমন
হয়ে গেছে।
:'-তুমি কি মানুষ নাকি জানোয়ার?
স্বাভাবিক কন্ঠ ইশতিয়াক সাবের।
কথা শুনে শাবিব এমন করে তাকায়
ইশতিয়াক সাবের দিকে, যেমন হিংস্র
প্রাণী তার শিকারের দিকে তাকায়।
শাবিব কেঁদে ফেলল।
:-'আমি জানোয়ার? আমি কি লাথি
দিয়েছি আপনার কপালে?'
ইশতিয়াক সাহেব খুব অবাক হন। ভাবেন এ
একটা উন্মাদ পাগল ।
:-'অসুস্থ হলেও একটু বসে থাকার সুযোগ
হয়না, এখানে চাকরি করবনা'।
ছোখ মুছতে মুছতে শাবিব বলে।
তুমি অফিসে এসে নিজের মতো ঘুরে
বেড়াবে, একটা কাজও ঠিক মতো
করবেনা, আবার কিছু বললে পশুর মতো
আচরণও করবে। তুমি থাকা একটা ভয়ংকর
বিপদ।
ইশতিয়াক সাহেব স্পষ্ট করে বলেন।
:-হু হু থাকবই না এই জঙ্গলের অমানুষদের
সাথে। ছি: এই অমানুষদের মাটিতে
আমার পা পড়েছিল, ঘৃণায় আমার বমি
আসছে। দীর্ঘ দিন বন্দি থাকা প্রানীর
মতো চেয়ে আছে শাবিব।
ইশতিয়াক সাহেব দারোয়ান ডেকে
বললেন,'
:-এই কুকুরটাকে কান ধরে এখুনি বের করে
দাও।'
':-সাবধান, এগুলো আপনার বাবার কান
নয়। আপনি ধরলে আমিও পারব, হাত আছে
আমারও।'
:'-তবে সোজা বেরিয়ে যা।'
গেইট দিয়ে বের হয়ে হাঁটতে থাকে
শাবিব। শব্দ করে কাঁদছে, ইশতিয়াক
সাহেব কে গালি দিচ্ছে। কোথায় যাবে
বুঝতে পারছে না শাবিব।
-------
খুব কম সংখ্যক হলেও পৃথিবীতে এমন
মানুষ আছে, যারা দুনিয়ার কাউকে সহ্য
করতে পারেনা। তাদের জীবন এমন
পাষান হবার জন্য কি দায়ী তাকে, তার
কারণ কেউ বের করতে পারেনা। কেউ
খোঁজারও চেষ্টা করেনা।
শাবিব একটু ব্যতিক্রম। সে ফাঈজাকে
সহ্য করতে পারে। চন্দ্রাকেও সহ্য করে
নিত আগে। কিন্তু লাভ হলোনা, চন্দ্রা
চলেই গেল।
--
:'-বাবা আজ এতো আগে চলে এলে?'
বাবার কাছে এসে দাঁড়ায় ফাঈজা।
:'-কেন? আমি আসায় তোর খারাপ লাগছে
নাকি?'
মেয়ে কে জীবনের প্রথম তুই করে বললো
শাবিব।
:'-বাবা! কি বলছো তুমি? তোমার কিছু
হয়েছে?'
:'-কিচ্ছু হয়নি আমার। আজ আগে এসেছি
বলে তোর খারাপ লাগছে কিনা জানতে
চাইছি।
ফাঈজা বুঝতে পারছেনা, সে কার সাথে
বলছে, তার বাবা তো এমন ছিল না।
মা বলেতো বাবার মাথায় নাকি
পাগলামো ভূত আছে, আজ কি তবে
সেটাই ধরেছে?
:"-বাবা মাথা ঠান্ডা করো।'
কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকলো শাবিব।
ফাঈজা বাইরে বসে আছে। তখন সূর্য
ডুবছে। ফাঈজা সূর্য ডুবে যাওয়ার দিকে
তাকিয়ে আছে। আজ এই প্রথম তার
মায়ের কথা মনে হলো।
শাবিব তখনো চুপ বসে।
:'-বাবা কলম এনেছ?'
:'-কিসের কলম?'
:'-কাল যে বলেছিলাম।'
:'-কবিতা লিখতি'?
:'-হ্যাঁ, তুমি যে কাল বলেছিলে, মা'কে
নিয়ে একটা কবিতা লিখবো। আজ মায়ের
কথা খুব মনে পড়েছে।'
:-ওহ! তবে তুইও ওর কথা ভাবিস?
শাবিবের হাতের কাছেই একটা টুকরো বড়
লোহা ছিল। খুব জোরে ফাঈজার মাথা
লক্ষ্য করে সেটি ছুঁড়ে মারে।
কয়েক সেকেন্ড। একটা চিৎকার,'
:-বাবা! ও বাবা! কি করলে তুমি?'
সুতা ছিঁড়ে গেলে ঘুড়ি যেমন উল্টো
দিকে পড়ে যায়, ফাঈজাও তেমনি পড়ে
গেলো।
রক্তে ভিজে যায় ঘর।
শাবিবের হঠাৎ মনে হয়, মেয়েটি কলমের
কথা বলেছিল। মানুষকে অস্ত্র হাতে
নিয়ে দৌড়ালে যেমন দৌড়ে শাবিব
তেমনি দৌড়ে দোকানে গেল।
কলম নিয়ে এসে যখন বললো,
:-এই নে মা কলম; আমার একটা বাবা
আছে, কবিতাটি লেখ।
---
ততক্ষণে ফাঈজা অনেক দূরের অন্য এক
অপরিচিত শহরে চলে গেছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৩৩

সৈয়দ কামাল হুসাইন বলেছেন: অন্য উন্মাদ-ছোট গল্প

২| ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৮:৪২

কিরমানী লিটন বলেছেন: চমৎকার প্রকাশ- সুন্দর ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.