![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজ দেশে যখন অন্ন, বস্ত্র,বাসস্থান বিহীন এক যাযাবর জীবন-যাপন। তখন অসহয় সিরিয়া বাসী বিপন্ন জীবন বাঁচাতে আর মাথা গোঁজার জন্য নিরাপদ আশ্রয় খুঁজতে শরণার্থী হয়ে নানা দিকে ছোটাছুটি করে। বিপন্ন মানবতা ডুকরে কেদেঁ আশ্রয় প্রাথনা করে বিশ্ববাসীর কাছে। কিন্তূ জায়গা দেওয়ার কেউ নেই। ইউরোপের জন্য এটা অভিবাসন সমস্যা হলে বিশ্ব মানবতার জন্য এটা এক লজ্জার নাম। কিন্তূ তবুও আরব দেশ গুলো নিরব। কিন্তূ ভূমধ্যসাগরতীরে মানবতার করুণ উপাখ্যান রচিত হচ্ছে প্রতিদিন। হাঙ্গেরিতেও কাঁটাতার পেরোতে গিয়ে পাঁচ বছর বয়সী ছেলেটার বাহু কেটে রক্তাক্ত হলেও সীমান্তরক্ষীরা শুনবে বলে সে একটুও কাঁদেনি। গর্ব করে তার বাবা বলেন, আমার ছেলেটা বীর। সাগরতীরে আয়লান কুর্দির লাশ হৃদয় ভেঙে দেয়, সৌদি আরব ও উপসাগরীয় রাষ্ট্রগুলোর উদাসীনতার দুর্গ তবু ভাঙে না।
৪০ লাখের বেশি সিরীয় দেশ থেকে দেশে, সীমান্ত থেকে সীমান্তে আশ্রয়ের সন্ধানে ভুগছে ও ছুটছে। অথচ যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদি আরব একযোগে নির্বিকার। সভ্যতার আঁতুড়ঘর বলা হতো ইরাক ও সিরিয়াকে। এখন তারা বধ্যভূমি। এখন খবর বের হচ্ছে আইএস তাদেরই সৃষ্টি। আর আইএস সৃষ্টি করছে লাখ লাখ উদ্বাস্তু। পাশ্চাত্যের মদদপুষ্ট জঙ্গিরা পৃথিবীতেই দোজখের মডেল দেখাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবেও আরব ধনকুবেরদের দানে সমৃদ্ধ ও শক্তিশালী এসব ধ্বংসের কারিগর। একটা নিউজে দেখলাম তুরস্কে আশ্রয় নেওয়া সিরীয় ওমর হারিরির কণ্ঠে তিক্ত হতাশা, ‘তারা বিদ্রোহীদের সাহায্য করে, শরণার্থীদের দেখে না।’ উপসাগরীয় সালতানাত গুলো বিশ্বের শীর্ষ ধনী, অথচ শরণার্থীদের জন্য তাদের দরজা বন্ধ। ওদিকে ইয়েমেনে হামলা করে করে উদ্বাস্তুর ঢল প্রতিদিন বাড়িয়ে চলেছে সৌদি আরব। আরব উপদ্বীপ ও উপসাগরীয় দেশগুলোয় একজন সিরীয়ও আশ্রয় পায়নি। বরং আশ্রয় দেওয়ার পক্ষে বলায় আরব আমিরাত থেকে এক ফিলিস্তিনি ব্লগারকে বহিষ্কার করা হয়। সিরিয়াকে অস্থিতিশীল করায় তুরস্কের ভূমিকাও কম নয়। শরণার্থীদের ডুবন্ত হাত যখন আরব শাসকেরা ফিরিয়ে দেয়, তখনই অগতির গতি হয় ইউরোপ। এ বছর ভূমধ্যসাগর পেরিয়েছে সাড়ে তিন লাখ শরণার্থী, এদের ২ হাজার ৬০০ জনের সলিলসমাধি ঘটেছে। পত্রিকায় দেখলাম গত সপ্তাহে অস্ট্রিয়ায় এক লরির ভেতর ৭১ জনের গলিত লাশ মেলে। তুরস্কের উপকূলে শিশু আয়লানের মৃত্যুদৃশ্যের অভিঘাতে এরপর জার্মানি সহ কয়েকটি দেশ সীমান্ত খুলে দেয়। তিন বছরের সেই শিশুটিই হয়ে ওঠে মানবতার আপন সন্তান। ইউরোপীয় বিবেক নড়ে ওঠে। নিজেদের হাতেও রক্ত ও কালিমার দাগ দেখে বিব্রত হয় তারা। ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী অভিবাসনকামীদের ‘পঙ্গপাল’ বললেও জনমতের চাপে দ্রুত অবস্থান বদলান। অথচ আরবলীগ, ওআইসি ও জিসিসি যেন অবশ। এ দেশগুলোর কোনোটিই শরণার্থীর অধিকার–বিষয়ক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর করেনি। সৌদি আরবের অবস্থান তবু বদলায় না। আরব বসন্তের পর থেকে শিয়া, ফিলিস্তিনি ও সিরীয়দের আশ্রয় দেওয়ায় সেখানে নিষেধাজ্ঞা আছে। তাদের ভয়, এরা রাজতান্ত্রিক দুঃশাসন মানবে না বেশি দিন। সৌদি আরব ও আরব আমিরাত একজন শরণার্থীকেও আশ্রয় না দেওয়াকে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের প্রতিনিধি ‘চরম লজ্জাজনক’ আখ্যা দেন। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মুখপাত্রের ভাষায়, ‘দায়ের অংশীদার তারা হতে চায় না, তারা চায় অন্যরা বোঝা সামলাক, তারা কেবল চেক লিখে দিয়েই খালাস।’ সিরিয়ার বিপর্যয়ের দায় এককভাবে যুক্তরাষ্ট্রেরই বেশি। অথচ তাদের ‘রাইট টু প্রটেক্ট’ কিংবা ‘মানবিক হস্তক্ষেপের’ হাত সিরিয়ায় পৌছায় না। যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসের কিছু সদস্যের ভাষ্য, শরণার্থীরা সন্ত্রাসীদের পাইপলাইন বানাবে। অথচ যুক্তরাষ্ট্রই সেক্যুলার সিরিয়ায় গণতন্ত্র রপ্তানির নামে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের অস্ত্র দিয়েছে জঙ্গিদের। হাজার হাজার যুবককে প্রশিক্ষণ দিয়ে ‘মুক্তিযোদ্ধা’ খেতাব দিয়ে সন্ত্রাসের পাইপলাইন এখনো চালু রেখেছে। জার্মান চ্যান্সেলর অ্যাঙ্গেলা মেরকেলের আট লাখ শরণার্থীকে আশ্রয় দেওয়ার অঙ্গীকার মহৎ দৃষ্টান্ত। জার্মানির এই উদারতার পেছনে রয়েছে অর্থনীতি ও সংস্কৃতি। তাদের জনসংখ্যা কমতির দিকে। উন্নতি বজায় রাখতে আরও শ্রমিক চাই। প্রচলিত কোটায় এত শ্রমিক আনা সম্ভব না। দ্বিতীয়ত, প্রধান দুই দল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট ও গ্রিন পার্টি একজোট হওয়ায় বর্ণবাদীদের আপত্তি ধোপে টিকছে না। তারপরও তারা যে কিছু টা আশ্রয় দিয়েছে তার জন্য জার্মান সরকার কে অনেক ধন্যবাদ। এই যুদ্ধের আগে সিরীয়রা কখনোই শরণার্থী হয়নি। পড়তে আসা সিরীয়রা আশ্রয় প্রার্থী হয়নি পাশ্চাত্যে। সেই সিরিয়ার এমন অবমাননায় আরবশাহির হাত থাকা লজ্জাজনক।
©somewhere in net ltd.