![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
গতমাসে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখা, তাদের এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছে যে, বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় রমনা কালী মন্দিরের জায়গা দখল করে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নির্মাণ করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ তাদের মতে বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান যেখানে আছে সেটা তাদের জায়গা!
আমার মনে হয়, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের নেতারা সেদিন কিঞ্চিত শুরা পান করেছিলেন যার ফলে ঘটেছিল মস্তিষ্ক্য বিভ্রম, আর সেকারনেই সেদিন রমনার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জায়গা তাদের বলে দাবি করে ফেলেছেন। তাছাড়া এমন উদ্ভট অযৌক্তিক মিথ্যাকথা’টা আদৌ কোন সুস্থ মস্তিষ্ক্যের মানুষের পক্ষে বলাটা সম্ভব ছিলনা। তাদের দাবির প্রেক্ষিতে বরং এটা বলা যায় যে, মুসলমানদের করুনা প্রাপ্ত হয়েই মুসলমানদের জায়গা দখল করেই আজকে হিন্দুরা অবৈধভাবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যোনে অবৈধ মন্দির বানিয়েছে।
হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ যুক্তরাষ্ট্র শাখার দাবির প্রেক্ষিতে অবশ্যই বলা প্রয়োজন যে সেটা আসলে হিন্দুদের জায়গা কোন কালেই ছিলনা এবং তাদের দাবি সম্পূর্ন মিথ্যা ও উস্কানীমুলক। তাহলে এবারে আসুন দেখি বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জায়গাটি কাদের ছিল? ইতিহাস এব্যাপারে কি বলে সেটা একটু যাচাই করে দেখি। উল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে সম্পূর্ণ এর পূর্ন ইতিহাস আমি সংক্ষেপে নিচে তুলে ধরছি:
ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, শুধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয় বরং পুরো রমনা এলাকার (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা সহ) গোড়াপত্তন করেছিলেন মুসলমানরা। মোঘল বাদশাহ জাহাঙ্গীরের শাসন আমলে ১৬১০ সালে রমনা এলাকার গোড়াপত্তন শুরু করেন সুবেদার ইসলাম খা, তিনি সেখানে দুটো চমৎকার আবাসিক এলাকা নির্মাণ করেছিলেন। একটি এলাকার নাম ‘মহল্লা চিশতিয়া’ এবং অপরটির নাম ‘মহল্লা সুজাতপুর’। এ এলাকাগুলোতে বাস করতেন ইসলাম খাঁ চিশতির বংশধরের লোকজন।
মোগল আমলের পুরো সময়টা বর্তমান রমনা এলাকা বাগ-ই বাদশাহী বা বাদশাহী বাগান হিসেবে পরিচিত ছিল এবং তখন থেকে ঢাকার নবাব আমল পর্যন্ত রমনা বাগানে সাধারণ জনসাধারণের প্রবেশ অধিকার ছিল না। মহল্লা সুজাতপুর ও মহল্লা চিশতিয়ার তৎকালে ঢাকার নাম করা জ্ঞানী-গুণী,শিল্পী, সাহিত্যিক, আইনজীবী, ডাক্তার প্রমুখ বসবাস করতেন। কলা ভবন, কার্জন হল, শাহবাগ, সিদ্ধেশ্বরী কালী বাড়ী, রমনা থানা সকলই ছিল ১৮৩২ সাল ওয়াল্টারের তথ্য অনুসারে বাগ-ই-বাদশাহী রমনা বাগানের মধ্যবর্তী এলাকা। কালক্রমে সুজাতপুর, চিশতিয়া, বাগ-ই-বাদশাহী এলাকার নামকরণ বিলুপ্ত হয়ে যায় এবং জনসাধারণের নিকট পরিচিতি পায় উক্ত এলাকাটি রমনা হিসেবে। উল্লেখ্য রমনা শব্দটি ফার্সী শব্দ এবং এ শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেছিলেন সেনাপতি ইসলাম খাঁ-ই।
বর্তমানে রমনা কালী মন্দির বলে যেটি দাবি করা হচ্ছে সেটিও বানানো হয়েছিলো তৎকালীন মোঘল বাদশাহ’র পৃষ্ঠপোষকতায়। ইতিহাস বলে, মোঘল আমলের শেষ দিকে বাদশাহ’র পৃষ্ঠপোষকতায়, মোঘল সেনাপতি মান সিংহের সহযোগিতা ও বার ভূঁইয়ার অন্যতম কেদার রায় এর অর্থে শাহবাজ মসজিদের উত্তর দিকে হরিচরণ গিরি অতিক্ষুদ্র পরিসরে ভিত্তি স্থাপন করেছিলো ‘কৃপা সিদ্ধির আখড়া’ যা পরবর্তীতে ‘ভদ্রাকালী বাড়ী’ এবং পর্যায়ক্রমে নামকরণ করা হয় ‘রমনা কালী মন্দির’ হিসেবে। আর মন্দিরের সাথে যে আনন্দময়ী আশ্রম নির্মিত হয়েছে সেটা হচ্ছে আনন্দময়ী নামক এক মহিলার নাম অনুসারে। ঐ মহিলা রমনা এলাকার মালিক ছিলো না। ঐ মহিলা ছিলো রমণীমোহন চক্রবর্তী নামক এক ব্যক্তির স্ত্রী। রমণীমোহন চক্রবর্তী ছিলো ঢাকার শেষ নবাব, খাজা হাবীবুল্লাহ বাহাদুরের কর্মচারী, যে ১৯২৪ স্ত্রী আনন্দময়ীসহ নবাবের শাহবাগ বাগান দেখাশোনার জন্য ঢাকায় এসেছিলো।
উল্লেখ্য কর্মচারির স্ত্রী আনন্দময়ী গিয়েছিলো ঐ রমনাকালী মন্দিরে, আর তাতেই হিন্দুরা ঐ মহিলাকে পূজনীয় ভাবতে শুরু করে, তার ভক্তরাই মন্দিরের পাশে ছোট্ট করে পূজারি আশ্রম, যা পরবর্তীতে নামকরণ হয় ‘মা আনন্দময়ী আশ্রম’। অথচ এখন হিন্দু উদ্ভট দাবি করে বলে- ঐ আনন্দময়ী নাকি পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মালিক। যাই হোক, ঐ সময়কার ছবিগুলোতে রমনা কালী মন্দির ও আশ্রমের যে আয়তন দেখা যায়, তাতে সব মিলিয়ে আয়তন ১০-১৫ কাঠা হয় নাকি সন্দেহ। ১৯৭১ সালে পাক বাহিনী মন্দিরটিকে ভেঙ্গে দিলে মন্দিরটির সঠিক আয়তন নিয়ে ভ্রান্ত তথ্য ছড়ানো শুরু করে দখলবাজ হিন্দুরা। তারা দাবি করতে থাকে পুরো এলাকাটাই নাকি তাদের। যুদ্ধ উত্তর সময় হিন্দুদের একাধিক বার ঐ মন্দিরের বদলে নতুন জমি দেওয়া হয়।
কিন্তু সেটা তারা বিক্রি করে ফের সেখানে ফিরে আসে। এক পর্যায়ে জোর করে প্রায় ১৩৩ কাঠা যায়গাকে মন্দির হিসেবে দখল করে নেয় তারা, দেয় বাউন্ডারী ওয়াল। অতিরিক্ত তৈরী করে লোকনাথ মন্দির, দূর্গা মন্দির। বলাবাহুল্য এ দখল সম্ভব হয়েছে শুধু ঢাবির জগন্নাথ হলের সাম্প্রদায়িক হিন্দু ছাত্রদের অপতৎপরতায়। এলাকাবাসী জানায়, রাতের আধারে জগন্নাথ হলের শত শত ছাত্র এসে বেড়া দিয়ে দখল করেছিলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল এলাকা, যা বাউন্ডারী দিয়ে বানানো হয় ‘রমনা কালী মন্দিরের নিজস্ব এলাকা’। অর্থাৎ ইতিহাস সাক্ষ্য দিচ্ছে- মুসলমানরা হিন্দুদের জায়গা দখল করেনি, বরং হিন্দুরাই মুসলমানদের যায়গা দখল করে মন্দির বানিয়েছে।
আমার মনে হয়, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান মুক্ত হওয়া উচিত। বাংলাদেশ সৃষ্টির যে ইতিহাস রচিত হয়েছিলো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে সে স্থান কারো দখলবাজীর যায়গা হতে পারে না। তাই দখলদার মন্দিরটিকে প্রাপ্য যায়গা দিয়ে সেটিকে অন্যত্র সরিয়ে ঐতিহাসিক স্থানটিকে মুক্ত করার দাবি জানাচ্ছি।
প্রয়োজনীয় লিঙ্ক:
১। উইকিপিডিয়া।
২। উইকিপিডিয়া
৩। কয়েকটি ব্লগ সাইট।।।
১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১:২১
মোঃ আমিনুর রহমান বলেছেন: ঠিকই বলেছেন
২| ১০ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১০
বিজন রয় বলেছেন: অনেক কিছু জানলাম।
©somewhere in net ltd.
১|
১০ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:০৯
মুদ্দাকির বলেছেন: এই গুলা কিছু না ভাই। এইদেশে অনেক হিন্দুর যায়গায় মসজিদ আর মুসলিমদের যায়গায় মন্দির আছে। ইতিহাসে যদি আরো পিছনে যান দেখবেন পুরাদেশটাই হিন্দু দের!! কিন্তু আরাতো বেশীর ভাগই এখন মুসলিম!!! আসলে কেউ চায় বাংলাদেশে আমরা ধর্মের নামে মারামারি করি
