নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোঃ আমিনুর রহমান

মোঃ আমিনুর রহমান

বেশী কিছু বলার নাই আমার সম্পর্কে আমি খুবই সাধারন একজন ব্লগার।

মোঃ আমিনুর রহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

যেভাবে মৃত্যু ঘটে একটি সুন্দর স্বপ্নের!!!

১২ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:১৮


'তোমার নাম হাফিজ মোল্লা?'
'জ্বি ভাই।'
'নাম শুনেতো জামাত-শিবির মনে হয়, হুম?'
' না ভাই, আমি জামাত-শিবিরকে দুচোক্ষে দেখতে পারিনা। ভাষানচরে নৌকা নিয়ে কত মিছিল করছি...'
'বাড়ি কোথায় তোমার?'
'ফরিদপুরের ভাষানচরে ভাই।'
'হলে সিট চাও কেন।'
'ঢাকা শহরে থাকার কোন ব্যবস্থা নাই ভাই। আর বাবা গরিব মানুষ। অটো চালিয়ে সংসার চালায়।'
'শোন, ওসব আবেগী কথাবার্তা এখানে চলবে না। আর যে বললে 'কোথায় কোথায় যেন মিছিল টিছিল করেছ' - এসব কথাও হলে সিট পাবার জন্য সবাই বলে। এখানে থাকতে হলে তোমাকে কাজে প্রমান দিয়ে থাকতে হবে। বুঝেছো?'
'জ্বি ভাই। বুঝেছি।'

'নাহ, তুমি বুঝোনি। শোন, যখন আমরা ডাক দিব কোন অজুহাত না দেখিয়ে হাজির হতে হবে। মিছিলে যেতে হবে। এন্টি গ্রুপের সাথে সমস্যা দেখা দিলে হাজির হতে হবে। অবশ্য সমস্যার সময় তোমার হাতে কোন জিনিস ধরিয়ে দেবনা। ভয় পাওয়ার কিছু নাই । তোমার উপস্থিতি শুধু আমাদের শোডাউনের জন্য। এবার বুঝেছো?'

আমি উনার কথা শুনে ঘাবড়ে গেলাম। কোনরকম সম্মতি সুচক মাথা দুলিয়ে রাজি হলাম যাতে হলের সিট টা হাত ছাড়া না হয়। ঐদিনই বাড়ি গেলাম। নিজের বিছানা পত্র নিয়ে ফিরে এলাম পরদিন। আহা, কত স্বপ্ন ছিল ঢাবিতে পড়ব। সেই স্বপ্ন পুরন হল। হলের সিটও পাওয়া গেল। সলিমুল্লাহ মুসলিম হল। কত নাম, কত কথা শুনেছি এই হলের ঐতিহ্য নিয়ে।

হলে ফিরে ছাত্রলীগের সেই বড় ভাইয়ের সাথে যোগাযোগ করলাম। তিনি আমাকে একটা বিল্ডিংয়ে নিয়ে গেলেন। দেখলাম সেখানে আমার মত আরো অনেক নতুন ছাত্র। হলের সিট বন্টন চলছে। একটুপর সেই বড়ভাই আমাকে ডেকে নিয়ে বারান্দায় এককোণে একটা খালি সিট দেখিয়ে বলল, এটা তোমার। আমি কিছুই বুঝলাম না উনি কি বললেন।

আমি বললাম, ভাই আপনি কি বলেছেন বুঝিনি। উনি বিরক্ত হয়ে বললেন, আরে হাদারাম এটা তোর সিট। বুঝলি। আমি অবাক হয়ে বললাম, সিট তো রুমে হয় বারান্দায় কেন? উনি ফুসে উঠলেন। 'তোর চৌদ্দগুষ্ঠির কপাল যে তুই বারান্দায় সিট পাইছস। তুই একা না। দেখবি কিছুক্ষন পর আরো কতজন এই সিট পাবার জন্য কান্নাকাটি করবে।

আসলে হল ও তাই। সিট বন্টন শেষ হতে হতে মধ্যরাত হয়ে গেল। বারান্দার এই কোনে আমি সহ মোট বারো জন নতুন ছাত্র। সেই রাতে আমাদের কারো ঘুম হয়নি। সিট পাবার উত্তেজনায় আমরা কেউ খাইনি। মধ্যরাতে না খেয়ে শুয়ে পড়লাম। আমার কাথার ফাকে সাঁ সাঁ করে ঠান্ডা বাতাস আসছে।

এরপর কয়েকদিন বেশ কাঠল। বারান্দায় হলেও আমরা মানিয়ে নিয়েছিলাম। আমি একজন বন্ধুও পেয়ে গেলাম। ওর নাম মশিউর। সব বিষয়ে সে সমান পারদর্শী। হলে উঠার পাচঁদিনের মাথায় ছাত্রলীগের সেই বড়ভাই আমাকে কল করল। তখন সন্ধ্যা প্রায় আট টা। আমি গিয়ে দেখি সবাই ঘাসের উপর গোল হয়ে আছে। মাত্র কয়েকজন চেয়ারে বসা। মনে হলো এরা সব বড়ভাই। আর বাকি সবাই শিশির ভেজা ঘাসের উপর বসা।

যিনি আমাকে হলে উঠতে সাহায্য করেছিল আমি তার কাছে গিয়ে সালাম দিলাম। তিনি একটু হেসে আমাকে বললেন, হাফিজ এদিকে আয়। এটা হল আমাদের গেস্টহাউজ। এখানে আমরা দলের কাজগুলো সবাইরে নিয়া আলোচনা করি।

আমি ভাল করে তাকালাম চারপাশে। বসে থাকা নতুন ছাত্ররা অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে বড়ভাইদের মুখের দিকে। আমি হঠাৎ খেয়াল করলাম চেয়ারের পাশে তিনটা ছেলে খালি গায়ে দাড়িয়ে আছে। জিজ্ঞাস করলাম, এরা খালি গায়ে কেন ভাই? উনি বললেন, এদের শাস্তি চলছে। মিছিলে আসেনি, তাই। আমি চমকে উঠলাম। বলে কি। নিজেদের লোককে শাস্তি?

আমি বললাম, ভাই ওরা তো নিজের লোক। ওদের কেন এভাবে......উনি বললেন, নিজের লোক বলেই তো এভাবে দাড়িয়ে আছে। অন্য গ্রুপের লোক হলে এতক্ষন বেচে থাকত নাকি। ঐদিনের পর থেকে প্রায় আমাকে কল করা হত। আজ মধুর কেন্টিনে মিছিল, কাল টিএসসি তে মিছিল, পরশু কোন ফ্যাকাল্টির হল রুমে মিটিং।
অনিচ্ছাসত্ত্বে ও যেতে হতো এসব মিছিলে।

এসব করতে গিয়ে ক্লাস মিস হত প্রচুর। সপ্তাহ খানেক পর দেখি লেখাপড়া হচ্ছেনা একচুল ও। তার উপর শরীর টা খারাপ করে ফেললাম। প্রচন্ড সর্দি জ্বরে দুর্বল হয়ে পড়লাম। হাতের কাছে রাখা নাপা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুদ খেলাম। কিন্তু জ্বর কমল না এতটুকু। এর মধ্যে আবার ছাত্রলীগের সেই বড়ভাইয়ের কল আসল। আজ একটা গ্রুপের সাথে মুখোমুখি হতে পারে তারা। উপস্থিত থাকতে হবে।

আমি দুর্বল শরীর নিয়ে সেখানে গেলাম না। মশিউর কে নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে। ডাক্তার কিছু এন্টিবায়োটিক দিয়ে বলল, ভাইরাস জ্বর। রেষ্ট নিলে ঠিক হয়ে যাবে। সন্ধ্যার সময় ছাত্রলীগের দুইজন বড়ভাই এসে আমাকে ডেকে নিয়ে গেল গেস্টহাউজে। আমার কোন কথায় কান দিলনা ওরা। জামা খুলে দাড় করিয়ে দিল।

এক এক করে ওরা সবাই চলে গেল। কিন্তু আমার যাবার অনুমতি নেই। রাত গভীর হচ্ছে। শীতে ঠান্ডা হাওয়া হুহু করে বইছে। বরফ শীতল শিশির কনা যেন আমার শরীর ফুড়ে ভিতরে ঢুকে যাচ্ছে। আমি কাপতে শুরু করেছি। দাড়িয়ে থাকতে পারছি না। এক সময় পড়ে গেলাম। রাত একটার দিকে মশিউর আমাকে অর্ধচেতন অবস্থায় উদ্ধার করল। পরদিন সকালে আমি গ্রামে চলে আসলাম।

আব্বা আম্মা আমাকে দেখে পাগলের মত কান্না শুরু করে দিল। ওদের কান্না দেখে আমারো চোখে পানি এসে গেল। আব্বা আমাকে একজন ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল। কয়েকটা টেষ্ট করে ডাক্তার বলল 'নিওমনিয়া, টাইফয়েড ' হয়েছে। ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

আমি রাজি হলাম না। আমার কেবল মনে হল, সময় শেষ হয়ে এসেছে। আমি মরে যাব। আব্বা জোর করে একটা মাইক্রো এনে আমাকে নিয়ে ঢাকায় রওনা দিলেন। গাড়িতে আমি বার বার বেহুশ হয়ে যাচ্ছিলাম। হুশ ফিরলে কখনো মনে হত বুকের উপর পাথর চেপে আছে । কখনো মনে হত মাথাটা ফাকা ফাকা লাগছে।
কখনো মনে হত আমি হাওয়ায় ভাসছি। শুধু ভাসছি। অসীম শুন্যে। উপপ, কি কষ্ট!!!
(লেখাটি সংগৃহিত)

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:২৮

আহমেদ জী এস বলেছেন: মোঃ আমিনুর রহমান ,




এই বাস্তব জঘন্যতার কোনও মন্তব্য নিষ্প্রয়োজন ।

২| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ দুপুর ২:৪২

বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
তবে.....

১২ ই মার্চ, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:২৬

মোঃ আমিনুর রহমান বলেছেন: তবে কি?

৩| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:২৩

বাবু>বাবুয়া>বাবুই বলেছেন: উপপ, কি কষ্ট!!!

৪| ১২ ই মার্চ, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৩

আহলান বলেছেন: তারা খুনি ... তবে বিচারাদালতে নয়, মানুষের বিবেকের কাছে ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.