নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সীমানা পেরনোর আগে দেখেছ কী পিছন ফিরে একবার, লুকিয়ে ছিলো সেখানে অগণিত পরাজয়ের ছায়া...

অমিত বিশ্‌বাস

একদিন না একদিন মানুষের বিবেক এসে মানুষের সামনে এসে দাঁড়াবে, তারপর দংশন করা শুর‍্য করবে...

অমিত বিশ্‌বাস › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাচের ছুড়ি

১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:১৪

উর্মিকে আদালতে বিচারকের সামনে আনা হল। সে এখনো কেমন জানি ঘোরের মধ্যে আছে। বেশ কয়েকমাস আগে ঘটনাটা ঘটেছে তার সাথে।পক্ষ বিপক্ষের উকিলদের কথা কিছুই মাথায় ঢুকল না তার। তার নাম ধরে বিচারক উচ্চস্বরে ডাকার পর যেন সংবত ফিরে পেল উর্মি। অস্বচ্ছ দৃষ্টিতে বিচারকের দিকে তাকাল। বিচারক তার মুখ থেকে পুরো ঘটনা শুনতে চাইল।
কয়েকবার বলার পর উর্মি বুঝতে পারল তাকে কি বলা হয়েছে। কিছুদিন আগের ঘটনা মনে পড়ে গেল স্পষ্টভাবে সবকিছু।
হারিকের অপারেশনের পর উর্মি স্থির করল কিছুটা সুস্থ হলে তাকে নিয়ে নিরিবিলি কোথাও ঘুরে আসবে। হারিক তার স্বামী, তার পেটে টিউমার ধরা পড়েছিল। সার্জন উর্মি নিজেকে অস্ত্রপচারটা করেছিল।
মাসখানেক বাদে তারা হারিকের গ্রামের বাড়ি রওয়ানা হল। হারিকের বাড়িতে উর্মির কোনদিন যাওয়া হয় নি। প্রথমবারের মত যায় সে। একজন কেয়ারটেকার দুলু ছাড়া কেউ থাকে না বাড়িতে। তার বয়স অনেক প্রায় ৬০ বছর হবে কিন্তু শরীর এখনো বেশ ভাল, ঘড় দোড় জমি এসবকিছু সে দেখাশোনা করে। হরিকের দাদার দাদা রুকমান হাওলাদার এককালে প্রতাপশালী জমিদার ছিল। তাদের বাড়িটাও বেশ বড় জমিদারের বাড়ির মত দেখতে এখনো।
দুইদিন বেশ ভালই কাটল তাদের বিশেষ করে উর্মির। জন্ম থেকে শহরেই তার বেড়ে উঠা, গ্রামকে এত কাছ থেকে কোনদিন সে দেখে নি, এত খোলামেলা। কিন্তু একটা ঘটনার পর তার অনুভূতি পুরোটাই বদলে গেল।
সেদিন রাতে তারা ঘুমিয়েছিল। হঠাৎ হরিক ধুমধাম করে ঘুম থেকে জেগে উঠল। শব্দে ঘুম ভেংগে গেল। হরিক বলল সে দুঃস্বপ্ন দেখেছে। কি দেখেছে সেটাও সে বলল, সে নাকি ধুমপান করছিল ততক্ষণাত তার মনে হল, আরেহ! তার তো এইমাত্র অপারেশন হয়েছে; সে স্বপ্নের ভিতরেই নাকি খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল। সামনে দেখল, তার তখনো অপারেশন চলছিল। ডাক্তার হঠাৎ মাস্ক খুলল, তার দিকে তাকাল, মুহুর্তে তার মুখ খুব ভয়ানক হয়ে গেল, ঠোট সরাতে বেরিয়ে পড়ল ভয়ানক উচু উচু দাত, কিন্তু দাতগুলো সাদা না, কাচের মত দেখতে দাত। দাত দিয়ে সটান করে তার হাত ধরে হাতের বাহুর এক স্থানের একটা ফোড়ার মত অংশের মাংস তুলে ফেলল। আর ভয়ানক আতংকে ঘুম ভেংগে গেল তার।
হালকা হেসে, হরিককে শান্ত করে, পানি খাইয়ে আবার শুয়ে পড়ল তারা। একটু পর উর্মির নিজেরই ভয় লাগতে শুরু করল, মনে হল কেউ যেন তার উপর নজর রাখছে। বালিশের নিচে হাত দিল সে, বালিশের নিচ থেকে বের করে আনল একটা কালো আস্তরণের সুন্দর একটা বস্তু, হাতল আছে ধরার জন্য, হাতলের উপরের দিকটা ধীরে ধীরে সরু হয়ে যেতে গিয়েও শেষের প্রান্ত ততটা সরু হয় নি, দেখতে খুব সুন্দর। একটা অনেকদিনের পুরানো সিন্দুক থেকে এটা খুজে পেয়েছে সে; তার নিজেরই তো বাড়ি, তাই সে সেটা রেখে দিয়েছে। যখন সে সে এই কালো জিনিসটা দেখেছে, এন্টিক কোন জিনিসের মত লেগেছে। মুগ্ধ হয়ে সম্মোহনের বশেই হাত বাড়িয়ে দিয়েছিল সে জিনিসটার দিকে।
পরের দিন চিৎকার চেচামেচিতে ঘুম ভাংল উর্মির। '... আবার আইছে কিভাবে...কখন দেখসেন এক্সেক্টলি?... ‘
হরিকের গলার আওয়াজ। কেয়ারটেকার চাচা কি যেন বল্ল, কিছু শোনা গেল না। শেষের টুকু শুনতে পেল,‘... মনের ভ্রম ভাবসিলাম, বুড়া হইয়া গেসি, বাবাজী।'
উর্মি উঠে পাশের রূমে ছুটে গেল। দুলু দাঁড়িয়ে আছে চৌকির একপাশে আর হরিক বসে। দুইজনের মুখই উদাসীন। হরিক মীন মীন করে বলতে লাগল, 'কেম্নে হল? কেম্নে হল? কেম্নে হল?‘
উর্মি 'কি হয়েছে' বলাতে হরিক উর্মির দিকে তাকাল, তার চোখে ঘোলা দৃষ্টি। সে উত্তর দিল, 'কিছু না'। বলে সে বাইরে বের হয়ে গেল। সেই যে গেল আর এল রাতে।
দুলু কে অনেকবার জিজ্ঞেস করার পরেও কোন উত্তর পেল না উর্মি। সারাদিন এটা ওটা করে হরিকের জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। হরিককে দেখে খুব দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ ও হতাশ লেগেছে আজ তার। অথচ সে অনেক শক্ত মনের মানুষ। অপারেশন থিয়েটারে প্রবেশের সময় ও তার মুখে হাসি ছিল। দেখে মনে হচ্ছিল তাকে, একটা সামান্য টেস্ট করার জন্য ঢুকছিল।
অনেক রাত করে বাসায় এল হরিকে, কোন কথা বলল না; মুখ এখনো থমথমে। কোন কথা না বলে আগে রাতের খাবার খেয়ে নিল চট করে। সেদিনের রান্না ছিল ইলিশ মাছ, হরিকের খুব পছন্দের কিন্তু সে সাধারণত যেভাবে খায় খুব মজা করে, সেভাবে খেল না। উর্মি জানে, হরিক নিজে থেকে কিছু বলতে না চাইলে হাজার জোর-জবরদস্তি করলেও সে বলে না। তাই আর কিছুই জিজ্ঞেস করল না। বিছানায় উঠে বসে, নিজে থেকে কথা শুরু করল,
'আমি বুঝতে পারছি, তোমার সকালের কথোপকথনের ব্যাপারে জানার খুব কৌতূহল হচ্ছে।... তোমার জানা থাকা উচিত আসলে। শোন তাহলে...'
উর্মি চুপ করে হরিকের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হরিক উর্মির দিকে তাকাচ্ছে না। হরিক বলতে লাগল আলগোছে,
'...তুমি জানো, আমার দাদার দাদা মানে আমার প্রপিতামহের পিতা রুকমান হাওলাদার সেইসময়ের ডাকসাইটে জমিদার ছিলেন, এই বিশাল বাড়ি তো দেখছ, এখান থেকেই তিনি তার জমিদারি পরিচালনা করতেন। তখন বৃটিশ আমলের শেষের দিকে প্রায়। এই ঘটনার মুল যে চরিত্র সে একজন মহিলা। তাকে সবাই ডাকিনী বলত, জনশ্রুতি ছিল সে ডাকিনী চর্চা করত...‘
বলে উর্মির দিকে তাকাল সে। উর্মি কোন কথা বলল না; হরিক ভেবেছিল উর্মি অবিশ্বাস করে কিছু বলে উঠবে, কিন্তু কিছুই না বলে উদগ্রীব হয়ে শুনতে লাগল।
হরিক বলে চলল,
'... গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে জংগলের কাছে থাকত সে। কেউ ভয়ে ওদিকে যেত না। কথিত ছিল, কারো দিকে চোখ বড় বড় করে তাকালেই সেই ব্যক্তি রক্ত বমি হতে হতে মরত!'
'একদিন সেলিম আলী নামক এক ব্যাপারী ঐ মহিলাকে চুলের মুঠি ধরে টানতে টানতে নিয়ে এল জমিদারবাড়িতে। পিছনে এল কিছু গ্রামবাসী। তার চোখ কালো কাপড় দিয়ে ঢাকা ছিল। তার পরনের কাপড় অনেক পুরানো আর ছেড়া ময়লা; চোখে এত বড় পট্টি দিয়েছিল যে মুখ ঢেকে গেছিল প্রায়!'
'বিচার বসল, সেলিম ব্যাপারী তার অভিযোগ জানাল যে, ঐ মহিলা তার বাড়িতে গিয়েছিল তাকে মারার জন্য, রক্তের পিপাসা পুরণ করার জন্য। সেলিম এমনভাবে গ্রামবাসীকে উষ্কাল, সেদিন তার বাড়িতে এসেছে এরপর অন্যদের বাড়িতে হানা দিবে। গ্রামবাসী সবাই ডাইনীর মৃত্যু দাবী করল। আমার দাদার দাদা শেখ বদি ডাইনী কে পাথর মেরে হত্যার রায় বলল আর এর আগে তার চোখ উপড়ে নেওয়ার পরামর্শ দিল। ডাইনী কথা বলার অনেক চেষ্টা করল কিন্তু তার কথা কেউ শুনল না। লোকে মুখে শোনা, ডাইনীর এক চোখ নীল আর এক চোখ সবুজ। চোখ উপড়ে ফেলার সময় গ্রামবাসী দেখেছিল। গ্রামবাসী পাথর মারার সময় সেই মহিলা কোথা থেকে নাকি কাচের একটা ছুড়ি বের করে নিজের বুকে বসিয়ে দিয়ে মৃত্যু বরণ করেছিল। এসব হয়েছিল গ্রামের পূর্বদিকের খেলার মাঠে! তাকে ওখানে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাবার সময় সে জানোয়ারের গলার মত চিৎকার করছিল। সবাইকে অভিশাপ দিচ্ছিল আর বিশেষ করে আমার দাদার দাদাকে। সে নাকি বলে গেছে, জমিদারের বংশ নির্বংশ হয়ে যাবে।'
থামল হরিক। উর্মির দিকে তাকাল। কিছু বলল না সে। টেবিলে রাখা পানির জগ থেকে গ্লাসে ঢেলে পানি খেল সে। কিছু পানি কাপড়ে পড়ে গেল। মুখ মুছে আবার বলতে শুরু করেছিল,
' এরপর উত্তেজিত কিছু লোক ডাইনীর কুটিরে গিয়ে আগুন ধরিয়ে দিল, সেখানে একটা বাচ্চা ছিল কেউ জানত না। আগুন ধরানোর পর কুটিরের ভিতরের বাচ্চা চিৎকার শুরু করলে আক্রমণ কারী লোকেরা জানতে পেরেছিল। কিন্তু কেউই কিছু করতে পারল না বা চাইল না। সেই বাচ্চা সেখানেই পুড়ে মারা গেল। শেষ হল সেই ডাকিনীর অধ্যায়।'
উর্মির দিকে তাকাল হরিক।
''তুমি কি মনে কর, উর্মি'?
উর্মি মুঠো বদ্ধ হাতে কনুই রেখে চিন্তা করছিল। মুখ উঠিয়ে বলল,
'এতে ভৌতিক কোন ব্যাপার নেয়। ঘটনা একদম সাধারণ।'
-'কিভাবে?'
'ঐ মহিলা একদমই সাধারণ, তার কোন অলৌকিক ক্ষমতা নায়। সে কোথাও থেকে এসে হয়তো বা জংগলের পাশে কুটির বেধে থাকা শুরু করেছিল। এভাবে কেউ থাকে না বা মানুষ দেখতে অভ্যস্ত নয়, তাই ব্যাপারটাকে মানুষ অস্বাভাবিক মনে করতেই পারে। এমনকি কোন ঘটনা ঘটেছিল যে, ঐ মহিলার কারণে কেউ রক্ত বমি করতে করতে মারা গেছে?‘
ভ্রু কুচকাল হরিক। 'একবার এক কাঠুরিয়া ডাইনীর কুটিরের পাশেই কাঠ কাটতে গিয়েছিল শুনেছিলাম। সে ফিরে আসার পর রাত থেকে রক্ত বমি করতে করতে মারা গিয়েছিল।'
-'অর্থাত কোন প্রমাণ নেয়। একজন অস্বাভাবিক মানুষ সম্পর্কে মানুষের অস্বাভাবিক ধারণা হতেই পারে, এটাই স্বাভাবিক। সবাই ঘর বাড়িতে থাকে আর ঐ মহিলা একজন নারী হয়ে কিভাবে বনে জংগলে থাকে তার উপর তার আস্বাভাবিক জীবনের কারণে মানুষের তার ব্যাপারে নেতিবাচক চিন্তা খুব স্বাভাবিক। ফর এক্সামপল, তুমি কিন্তু ঐ মহিলাকে ডাইনী-ডাকিনী বলে সম্বোধন করে চলেছ, নিশ্চয় তুমি ছোটবেলা থেকে এই নাম শুনে শুনে অভ্যস্ত হয়েছ, তাই না?‘
-'ঠিক তাই, ছোটবেলা থেকে তার নাম শুনেছি ডাইনী, তাই তা বলেই ডাকি; এই কাহীনি সর্বদাই প্রচলিত ছিল।'
-'কিন্ত আমি এই ব্যাপারটা বুঝতে পারছি না যে, এই ঘটনা তোমার দাদার দাদার আমলের। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই মহিলার ব্যাপারে এখন কেন কথা উঠছে। তার মানে কি তার মৃত্যুর পর তাকে পুনরায় দেখা গেছে বা এই ধরনের কিছু?‘
-'তুমি সত্যিই খুব প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন মেয়ে। তোমার মত বুদ্ধিমতী মেয়ে আমি আর আমার জীবনে দেখি নি। তোমার ইন্টারনাল টেলেন্ট আমাকে সব চেয়ে বেশি মুগ্ধ করে' প্রশংসার দৃষ্টিতে উর্মিকে দেখছিল হরিক। 'তোমাকে যতই দেখি ততই মুগ্ধ হই। কিন্তু তুমি ঘটনার স্বাভাবিকতার প্রসংগে তোমার যুক্তি পুরোটা দাও নি মনে হচ্ছে। আর কি কারণে তোমার মনে হয়, ডাইন... ঐ মহিলার কোন ক্ষমতা ছিল না?'
-'কোন ঘটনা কিন্তু একজন থেকে আরেকজনের কাছে যেতে যেতে ঘটনা কিছুটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। এভাবে অনেকটা পরিবর্তন হয়েছে বলে আমার মনে হচ্ছে। আর ঐ লোকটা,... আলী... কি আলী যেন?....'
-'সেলিম আলী' মনে করিয়ে দিল হরিক।
-'লোকটার নাম এতদিন পরেও কিভাবে মনে রাখল মানুষ নাকি নামটাও বিকৃত হয়ে গেছে কে জানে।'
-'না, নাম ঠিক আছে, ঐ ডাকিনীর বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেওয়ার জন্য তার একটা ভাষ্কর্য বানানো হয়েছিল, সেখানে নাম ও উল্লেখ করা আছে। সেই ভাষ্কর্য এর পাশ দিয়েই গ্রামের একটা রাস্তার নাম করন ও করা হয়েছে, "সেলিম আলী সড়ক", তিনটা রাস্তা দিয়ে এই গ্রামে ঢুকা যায়, তার মধ্যে এই সড়কটা দিয়েই তো আমরা প্রবেশ করেছি। মনে আছে?'
-'আরে হ্যা, ঐ ভাস্কর্যটাই তো আসার পথে দেখেছিলাম। তোমাকে জিজ্ঞেস করতে চেয়েছিলাম। গাড়িতে তখন তুমি ঘুমাচ্ছিলে বলে আর জিজ্ঞেস করা হয় নি। যাই হোক, আমার মনে হয়, ঐ সেলিম আলীই কুটিরের ঐ সন্তানের জনক...'
হরিকের দিকে তাকাল, সে চমকায় নি বরং আরো মুগ্ধতার দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাল। তাহলে কি এই ব্যাপারটায় সত্যি? তার হরিক সেটা জানে? কথা বলতে বলতে ভাবছিল উর্মি।
'... আর মনে হয় সেই মহিলা আসলে তেমন বয়স্ক না, আর তাকে দেখে হয়তো সেলিম ব্যক্তিটার মনে কুচিন্তা জাগে, সেই নারী আগে কখনো হয়তো ভালবাসা পায় নি, তাই সেলিমের হয়তো বেশি বেগ পেতে হয় নি তার উদ্দেশ্য হাসিল করতে। বাচ্চা হবার পর তাই সে সেলিমের বাড়িতে গিয়েছিল তাকে মর্যাদা বা সন্তানের ব্যাপারে জানার জন্য। কিন্তু তাদের মধ্যে কোন কারনে হয়তো বনিবনা হয় নি বা ঐ নারী হয়তো তার কুকাজ ফাস করে দিতে চেয়েছিল ঠিক বলতে পারব না, তাই তার রক্ত খাবার উদ্দেশ্যে তার বাড়ি গিয়েছিল ডাকিনী এমন অভিযোগ তুলে বিচার বসিয়েছিল। আর সে সফল হয়েছিল। তখন তো শুনতাম জমিদাররাই সব বিচার ব্যবস্থা করতেন, তাই না?‘
হ্যা সূচক মাথা নাড়ল হরিক। বলল,
'আমার দাদার দাদা রুকমান সাহেব ঐ কুটিরে বাচ্চার কথা প্রায় অনেকদিন পর শুনেছিলেন। তখন তার মনে পড়ে একদিন পাশের গ্রামের এক সালিশ শেষ করে আসতে দেরি হয়ে গেছিল, তখন সে গ্রামের এক দাইমা আর সেলিমকে জংগলের দিকে যেতে দেখেছিল। দুইয়ে দুইয়ে চার মিলিয়ে তিনি কোন কিছু চিন্তা না করে সেলিমের বাড়ি যায় এবং তাকে এই ব্যাপারে চেপে ধরে। সেলিমের সাথে রুকমান সাহেবকে সামান্য ধস্তাধস্তি হয় এবং সেলিম জমিদারকে ধাক্কা দিয়ে পালিয়ে যায়.... তাকে তিনি মেঝে তে পড়ে গিয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেন, তাকে জমিদার বাড়িতে নিয়ে আসা হয় কিন্তু ফেরার পর বুঝা যায়, তার ডান সাইড প্যারালাইজড হয়ে গেছে.... আচ্ছা, দাদার দাদাকে কি বলে ডাকে আমি জানি না, তাই রুকমান দাদা বলেই ডাকি, কি বল?...' জিজ্ঞেস করল উর্মি কে নাকি নিজেকে ঠিক বুঝা গেল না, প্রশ্নটা করে উর্মির দিকে তাকাল না।
একটু বিরতি দিয়ে আবার বলা শুরু করল, 'এর পর থেকেই যত ঘটনা শুরু হল, মানুষ নাকে ডাকিনীকে জংগলের আশে পাশে দেখে। জমিদার বংশের কেউ বিশ্বাস করেনি। রুকমান দাদুর চার সন্তান ছিল, চার ছেলে ও একজন মেয়ে। সবাইকেই বিয়ে দিয়ে দিয়েছিলেন। মেয়েকে দুই গ্রাম পরে আরেক জমিদারের পুত্রের সাথে বিয়ে দিয়েছিলেন। সেখানেই থাকত। আর ছেলেরা বউ নিয়ে এই জমিদার বাড়িতে।'
'একদিন গভীর রাতের ঘটনা, সবাই তখন গভীর ঘুমে অচেতন, রোকমান দাদার ঘর থেকে চিতকার শোনা গেল, সবাই ঘুম থেকে উঠে ছুটে গেল। তিনি ডান দিক নাড়াতে পারেন না। গাল একদিকে ঝুলে গেছে। অন্য পাশ দিয়ে নাকি অদ্ভুতভাবে মাতাল ব্যাক্তির মত কথা বলতেন। প্রায় সারাদিন বিছানায় পরে থাকতেন। দুপুরে তাকে রোদে কিছুক্ষণ বাইরে রাখা হতো... তো সবাই ছুটে যাওয়ার পর তিনি জানালেন, তিনি একটা নারীকে তার ঘরেই দেখেছেন, তার দিকে তাকিয়ে ছিল। আর তিনি নিশ্চিত ভাবে বলেছিলেন, সেটা আর কেউ না, সেই ডাকিনী- এক চোখ নীল আর অন্য চোখ সবুজ।'
'কয়েকদিন পর পাশের গ্রাম থেকে খবর এল, সেলিম আলীর লাশ তাদের ওখানকার একটা পুকুরে ভেসে উঠেছে। লাশ আনা হল আমাদের গ্রামে, খুবই নাকি বিকৃত হয়ে গেছিল; মানুষ বলে তার শরীরে নাকি কোন হাড় ছিল না, খালি মাংস পিন্ডের মত শরীরটাই ছিল। একে একে ডাকিনীর বিচারের চার সাক্ষী অপঘাতে মারা গেল। কারণ ছাড়াই কেউ গলায় দড়ি নাহয় কিটনাশক খেয়ে নইতো কেউ পুকুরে নেমে পুকুরের নিচের লতায় পা আটকে পানি থেকে উঠতে পারল না। এর মধ্যেই খবর এল রুকমান দাদার মেয়ে মারা গেছে। তার জামাই নাকি তার শরীরে কেরোসিন তেল ঢেলে পুড়িয়ে মারসে। কিন্তু সে ঐ সময়ের ঘটনা কিছুই মনে করতে পারে না। গ্রামে কলেরা, প্লেগ, গুটি বসন্তের উপদ্রব দেখা দিল। গ্রামের অর্ধেক মানুষ মারা পড়ল। জমিদারের বাকি তিন জন সন্তান, একজন গাছ থেকে পড়ে, একজন বৃষ্টির দিনে কাদায় পিছলে মাথা ফাটিয়ে, এভাবে মারা পড়ল। সবার কথা এক্সেক্টলি মনে নাই। আমার প্রপিতামহ অর্থাৎ দাদার বাবা তখন শহরে। তিনি ভয়ে গ্রামে আর আসলেন না। শহরেই সংসার করতেন। এখানের লোক সব দেখাশোনা করত।'
প্রপিতামহের তিন সন্তানের মধ্যে দুই সন্তান মারা গেল। যিনি বেচে ছিলেন, তার নাম সজল অর্থাৎ আমার দাদা। তিনি প্রতিদিন রাতে দুঃস্বপ্ন দেখতেন। ঘুমাতে পারতেন না। এসব সমস্যার জন্য ব্যাবসায় লস খেয়ে গ্রামে চলে এলেন মৃত্যু নিশ্চিত জেনেও, তার দুই সন্তানের মধ্যে একজন মারা যায়, স্ত্রী ও গত হয়। আমার বাবা শেখরকে নিয়ে গ্রামে ফিরে আসে। আমার বাবাকে এখানেই একজন নারীর সাথে বিয়ে দিয়ে দিলেন। আমার মা ছিলেম সদা লাস্যময়ী নারী। আমাকে জন্ম দেওয়ার সময় মারা গেলেন। এদিকে দাদার অবস্থা শোচনীয়। দাদা রাতে ঘুমাতে পারতেন না একদম। তখন নাকি তিনি স্বপ্নে না বাস্তবে দেখতেন। রাতে কড়া ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমাতেন, কিন্তু এক দেড় ঘন্টা পর ঠিক জেগে যেতেন। একটা লোককে মেঝেতে রাখা হত, কিন্তু সে জেগে থাকতে পারত না। ওদিকে দাদার ঘুম ভাংলেই সে ভয়ানক ডাকিনীকে দেখতেন বিছানার পাশে বসে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তিনি চোখ খুলতেন না। তাও বুঝতে পারতেন। সারারাত ঘেমে নেয়ে যেতেন। তারপর একজন লোক ঠিক করা হল মাইনে দিয়ে যে দিনে ঘুমাবে রাতে দাদাজীকে পাহাড়া দিবে। কিন্তু সে প্রথম দিনেই পালাল।
একদিন দাদাজান খবর পেলেন কয়েক গ্রাম পরে একজন পীর এসেছেন, অনেক শক্তিশালী শ্মশানে শ্মশানে ঘুরে বেড়ায় আর লোকের উপকার করে। দাদা লোক পাঠালেন তাকে আনার জন্য, সাথে একটা আবেক প্রবণ চিঠি আর তাতে সন্তান নাতি নাতনী তথা পুরা বংশ বাচানোর আকুল আবেদন। ওখানে যেয়ে পীরকে নিয়ে আসতে তিন দিন সময় লাগলে। যেদিন পীর এলেন, সেদিন সকাল বেলা দাদাকে মৃত পাওয়া গেল বিছানায়। চোখ খোলা ও বিস্ফোরিত, এতই ভয়ানক কিছু দেখেছেন যে, হার্ট এটাক করেছিলেন।'
'পীর এল, পীরের সামনে দাদাজানের কবর জানাজা হল। এদিকে দাদাজান বেচে থাকতে বাবাও কয়েকবার ডাকিনীকে দেখেছে। সন্ধ্যায় আসার সময় পুকুর পাড়ে একটা নারী মূর্তি, চাদের আলোয় তার নীল আর সবুজ চোখ জ্বলছিল, বাবা তাড়াতাড়ি পা চালিয়ে চলে এসেছিল। বাবার এই পীর ফকিরে বিশ্বাস নেয়, তারপরেও রাজী হলেন। এদিকে দাদা মারা যাওয়াতে বাবার মনের অবস্থা এতটুকুও ভাল ছিলনা। পীরকে সবকিছু জানানোর পর পীর কি যেন করল সারাদিন। পীরের একজন সাগরেদ ছিল শুধু। সে তাকে সব ব্যাপারে সাহায্য করে। সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা আগুন জ্বালিয়ে ধোয়া পুড়িয়ে কি সব যেন করল, তারপর হাতে দুটা ছোট প্রায় গোলাকার একটা জিনিশ নিয়ে এল। বাবার কাছে গিয়ে মোলায়েম গলায় বলল,
-'এটা তোর ছেলের সাথে সর্বসময়ে বাধা থাকতে হবে। লকেট বানিয়ে রাখলে হবে না। তার শরীরের ভিতরে ঢুকিয়ে দিতে হবে। তোর জন্য আর দরকার হবে না, তোর ছেলের মধ্যে এই তন্তু ঢুকালেই ডাকিনী আর কিছু করতে পারবে না। '
-'মানে? শরীরের ভিতরে কিভাবে আর কেন?'
-'মানুষের শরীর পাচ টা উপাদান দিয়ে তৈরি রে! মাটি, আগুন, পানি, হাওয়া আর শূণ্যতা। এসব সবকিছুর সংস্পর্শে থাকলে এই তন্তু কোন অশুভ ব্যাপার হতে দেয় না।..... তুমি ভাবছ, আমি এ কথাগুলো সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ভাবে কিভাবে বলছি, না?... আসলে বাবা ডাইরী লিখতেন প্রতি রাতে, বাবার মেমরি শার্প ছিল খুব ; দিনের সব ঘটনা রাতে ডাইরীতে লিপিবদ্ধ করে রাখতেন।'
'বাবা এসব বিশ্বাস করতেন না, তাও অনোন্যপায় হয়ে পীর সাহেবকে আমার হাতের মধ্যে ঐ তন্তু সংযুক্ত করে দিলেন।' হরিল তার বাহুর সামান্য ফোলা অংশটা দেখাল আর দেখতে দেখতে বলল, 'কোথায় যেন আঘাত লেগেছে, সামান্য চেপ্টা হয়ে গেছে, যাই হোক, এর পর থেকে কিন্তু আর ডাকিনীকে দেখা যায় নি। কিন্তু কালকে চাচা বলল সে নাকি দেখেছে। তাই মন খারাপ ছিল, ডাকিনীকে দেখা মানে এই বংশের ধ্বংস মানে আমার মরণ। কিন্তু এই তন্তুর কথা মনে পড়ায় এখন মন ভাল হয়েছে, এই তন্তু থাকতে কোন সমস্যা নায়' বলে উর্মির দিকে তাকাল, উর্মির কাছে গিয়ে তার কপালে চুমু খেল তারপর গালে ঠোটে, তাকে বিছানায় শুইয়ে দিল, তার কাপড় ব্লাইজ খুলে তার উপর শুয়ে পড়ল। হরিক যখন উর্মির দেহ উপভোগ করতে লাগল তখন উর্মির কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম আর দুশ্চিন্তার ভাজ। ক্যান্সারের সেল আছে কিনা ভেবে তন্তুর ঐ স্থান কেটে পরীক্ষার জন্য প্যাথলজি ডিপার্টমেন্ট এ কালচার করতে পাঠিয়েছিল সে। রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছিল।
হরিকের শ্বাস জোরে জোরে পড়তে লাগল শুনতে পেল সে, দুঃশ্চিন্তা কমে যাওয়ায় হরিক উর্মির শরীর বেশ উপভোগ করছে। কিন্তু উর্মির চিন্তা ও শংকায় মাথা ফেটে যাচ্ছে। ঐ তন্তু হরিকের শরীর থেকে সরানোর পরেই পুনরায় আবার ডাকিনীকে দেখা গেছে। দুঃশ্চিন্তা ছারল না উর্মির। কাজ শেষ হতে উর্মির উপর নেতিয়ে কিছুক্ষণ পরে থাকল, তারপর চুমু খেয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরল।
কাপড় ঠিক করতে উঠে বসল উর্মি। তাদের ঘরের দুইদিকে দুটো জানলা আছে। বামপাশের জানালা খুললে জমিদারবাড়ির ভিতরের মাঝখানের উঠান দেখা যায় আর ডানপাশের জানালা দিয়ে একটু ঢালু জায়গায় ঝোপ ঝাড়। ডানপাশের জানালা খোলা ছিল, সেদিকে তাকাতেই শরীর হিম হয়ে গেল তার, একটা নারীর অবয়ব দেখল, নিজের অজান্তে চোখ ডলে পুনরায় তাকাতে আর কিছু দেখতে পেল না। উঠে জানালার কাছে গিয়ে তাড়াতাড়ি জানলা বন্ধ করে দিল। ওয়াশরুমে যাবার দরকার ছিল, কিন্তু আর যেতে ইচ্ছা করছে না তার। বিছানায় উঠে হেলান দিয়ে বসে রইল, ঠিক করেছে আজ আর ঘুমাবে না, হরিকের কথা, তন্তুর কথা মাথায় ঘুরে ফিরে আসতে লাগল। তার উপর নজর রাখার উপলব্ধিটা আবার ফিরে আসল, মনে হচ্ছিল তার আজ রাতেই কিছু একটা হবে। নিজেকে প্রবোধ দিল সে, কিছুই হবে না; শান্ত করার চেষ্টা করতে লাগল নিজেকে। হেলান দিয়ে এসব চিন্তা করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়ল সে, নিজেও জানে না।
বামপাশের জানলাতে শব্দ শুনতে পেল সে, সেই জানলা খোলার সময় করকর শব্দ হয়, সেরকমই শব্দ। সেদিকে তাকাল সে, বামপাশে তখনো ঘুমাচ্ছে হরিক। ঘুমে থাকলে পৃথিবী উল্টে গেলেও তার ঘুম সহজে ভাংগে না। জানলাটা ধীরে ধীরে খুলে যেতে উকি দিল এক নিষ্পাপ নারীর মুখ, ঘড়ের ভিতরের আলো পড়েছিল তার মুখে- মলিন চেহারা, চুলগুলো হালক উড়ছে, বাতাস নায় তারপরেও। চোখের দিকে দৃষ্টি যেতেও চোয়াল শক্ত হয়ে গেল তার। বিশেষ চিন্তা করতে হবে না সে কে এর উত্তর পাবার জন্য। ডাকিনী!!!
দেখতে না দেখতেই সে কিভাবে যেন ভিতরে চলে এল আর তার দিকে এগুতে শুরু করল, কাছে চলে এল যে, যতটা নিষ্পাপ তাকে প্রথম দেখায় মনে হয়েছিল আসলে তার চেহারা তেমনটা নয়। ভয় ধরে যায় এমন চেহারা। চোখ জ্বলজ্বল করছে। ঠোটের কোনে লাল রঙ এর কি যেন লেগে আছে, হা করল ডাকিনী, ভিতরে ও লাল রঙ এর পদার্থ, সেগুলো রক্ত ছাড়া আর কিছু না, রক্তের ফাক দিয়ে দেখা গেল স্বচ্ছ সুচালো দাত, তার খুব কাছে চলে এল ডাকিনী। এতক্ষণ সম্মোহনের দৃষ্টিতে তার দিকে দেখছিল উর্মি। সংবত ফিরে পেতেই চিৎকার শুরু করল আর হাত ঝাড়তে লাগল, বালিশের নিচে কি যেন ঠেকল হাতে, সেটা হাতে নিয়ে আরো জোড়ে সামনে হাত ঝাকি দিতে লাগল যাতে ডাকিনী তার সামনে আসতে না পারে, আর আসলেও যেন হাতের বাড়ি খায়। ডাকিনী হঠাৎ শা করে তার শরীরের মধ্যে ঢুকে গেল, গরম হাওয়া গায়ে লাগল। সে মুখ লুকিয়ে হাত দিয়ে ঝাড়ি মারতেই লাগল সামনে।
ঘুম ভেংগে গেল তার, সে বসে আছে বিছানায়; সংবত ফিরে পেল সে, তার হাতে ব্যাথা অনুভব করল। মনে হল একটু আগেই হাত জোড়ে জোরে ঝাকাচ্ছিল সে। সংবত ফিরে পেয়ে সামনে দৃষ্টি যেতেই গলা শুকিয়ে গেল তার। হরিক চিত হয়ে শুয়ে আছে, আর তার বুকের উপর মস্ত ক্ষত, রক্ত বেরুচ্ছে সেখান থেকে। তার হাতে একটা কাচের ছোড়ার মত একটা বস্তু, হাতলের যে অংশ ধরে আছে, সেখানটা কালো আস্তরণ, আলকাতরা জাতীয় কিছু পড়ে আস্তরন হয়ে গিয়েছিল। ছোড়ার অংশটাতেও আস্তরন ছিল, কিন্তু সেটা উঠে গেছে। এই সেই অদ্ভুত কালো রঙ এর সেই বস্তুটা, যেটার সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এই বাড়ির একটা কক্ষের আলমারি থেকে সংগ্রহ করেছিল সে। মনের অজান্তেই চিতকার করতে লাগল সে, জানলার দিকে মুখ পড়তেই চিৎকার আরো বেড়ে গেল। জানলা দিকে তাকিয়ে আছে ডাকিনী তার নীল ও সবুজ চোখের দৃষ্টি নিয়ে। চিৎকার আরো বেড়ে গেল তার। তার চিতকারে জমিদারবাড়ি কেপে কেপে উঠল।
আলোচিত ঘটনার মুল অংশগুলো জজ সাহেবকে শুনাল উর্মি। দিনের বেলায় কেমন যেন অবাস্তব লাগছে তার নিজেরই ঘটনাটা। হরিকের জন্য মন ভেংগে যাচ্ছে তার। অসুস্থ বোধ করতে লাগল সে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়তে লাগল। কাদতে লাগল সেম
জজ পুরো কাহিনীটা শুনলেন।পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেখলেন হরিকের। বুকের পাজড়ের দুইটা হাড় ভেংগে গেছিল তার। পাশে পলিথিনের প্যাকেটে রাখা কাচের ভোতা ছুড়িটা দেখলেন। এই ভোতা ছুড়ি দিয়ে মানুষের শরীরের চামড়াই ভেদ করাতেই পারবে না কোন মানুষ তার উপর এটা দিয়ে বুকের শক্ত পাজড়ের হাড় ভেংগে ফেলা!!! অমানুষিক শক্তি দিয়েও তো এটা সম্ভব না। কি বলবে বুঝতে পারল না জজ।
উর্মির হঠাৎ করে আরো অসুস্থ বোধ হতে লাগল। বমি বমি ভাব হচ্ছে আর মাথা ঘুড়াচ্ছে তার। তার সামনের কাঠগড়ার দেওয়াল ধরেও নিজেকে দাড় করাতে পারল না সে। পড়ে যাবার সময় দেখল কয়েকজন তাকে ধরার জন্য ছুটে আসছে।
জ্ঞান ফিরার পর দেখল সে একটা ডাক্তারের চেম্বারে শুয়ে আছে। সে এদিক ওদিক তাকাতে না তাকাতেই ডাক্তার রুমে প্রবেশ করল। উর্মিকে দেখে বলে উঠল,
-'চিন্তা বা ভয়ের কিছু নায়। ব্যাপারটা শুভ। শুভ সংবাদ আপনার জন্য। আপনি প্র‍্যাগনেন্ট, মা হতে চলেছেন।'
কথাটা শুনে একটু আনন্দ হতে না হয়ে ভয়ে দুঃশ্চিতায় কপালে ঘাম জমা হতে লাগল, ভ্রু কুচকে গেল। মনে হল, ডাকিনী তো তার সন্তানকেও ছাড়বে না। জমিদারের বংশ নির্বংশ না করা পর্যন্ত তো তার শান্তি হবে না! দুঃখ, যন্ত্রণা, ভয়, শোক, হতাশা, উদ্ধিগ্ন, আনন্দ সব একসাথে অনুভব হতে লাগল উর্মির জীবনে এই প্রথম।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:২৭

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: একটু বেশীই বড় পোস্ট হয়ে গেল।

২৩ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৩

অমিত বিশ্‌বাস বলেছেন: জ্বী ভাই, গল্পটা একটু বড় ছিল।

২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:৩১

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ভাই এত বড় গল্প পড়ার ধৈর্য নাই।
কয়েকটি ভাগে ভাগ করে দিতে পারতেন।
যা হোক শুরুটা ভালো, পরে সময় করে
পড়ে নিবো।

২৩ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৩৫

অমিত বিশ্‌বাস বলেছেন: গল্প কিছুটা লিখার পর লিখব লিখব করে আর লিখা হয় না, পরে গল্পের এন্ডিংটাই ভুলে যাই!!! তাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.