![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
অপু বিশ্বাসের পর এবার বুবলির বাচ্চার ছবি প্রকাশ, সাকিব খান স্বীকার করলো এই বাচ্চার বাবা ওনি, ১৬ আসামীই নির্দোষ,
টি টুয়েন্টি বিশ্বকাপের স্কোয়াড থেকে চিটকে পড়লেন মাহমুদুল্লাহ, সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ সিরোপা জিতলো বাংলাদেশী নারীরা-
ঢেলে দিই? খুশিতে, ঠেলায়, ঘুরতে! পদ্মা সেতু তৈরিতে লাগছে শিশুদের মাথা, ফাক ইউ বাংলাদেশ,
করোনায় গার্মেন্টস বন্ধ, আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? ও বেবি কাম কাম কাম..., বাবু
খাইছো, ওমাগো...টুরু লাভ, বাবা তোর দরবারে সব পাগলের মেলা! ফেনীর নুসরাত হত্যাকান্ড, সাকিব আল
হাসান নিষিদ্ধ,একের পর এক ভাইরাল টপিক, আসছে, যাচ্ছে, আরও আসবে...
না, আজকের লিখায় কোন ভাইরাল টপিক নিয়ে আলোচনা করবো না। কিন্তু তাহলে কি লিখবো? আচ্ছা
চলুন লিখা শুরু করি, যা মাথায় আসবে তাই লিখমু।
ঘটনা ১ঃ:
একটা পুকুর খনন করতে হবে, প্রচুর পরিমান শ্রমিক লাগবে। কাজ শুরু হলো, শ্রমিকরা আসলো, কেউ
মাটি কাটছে, কেউ মাথায় নিচ্ছে, কেউ নাস্তা তৈরি করছে কেউবা আবার কতটুকু কাটা হয়েছে
সেই হিসাব রাখছে। ১দিন, ২দিন, ৩দিন এভাবে কাটতেই লাগলো। একদিন পুকুর খনন শেষ হলো। ৩দিনে
শেষ হলে ৩দিনের জন্য বেশ কিছু পরিবারের কর্মসংস্থান হলো, ২বেলা আহার যুটলো। অতঃপর আবার অন্য
কোথাও চুক্তি নেওয়া হলো, এভাবে চলতেই থাকলো। হঠাৎ একদিন কি হলো, শ্রমিক সবাই আসা বন্ধ হয়ে
গেলো, ২জনেই পুরো কাজটা করে ফেলতেছে! কেমনে সম্ভব? প্রযুক্তির আপডেট, মাটি কাটার জন্য
এখন শ্রমিক লাগে না, রোবটই যথেষ্ঠ। ২০জন বা তার বেশি শ্রমিকের কাজ ঐ একটা রোবটই করছে আর
তাকে ম্যাইন্টেইন করার জন্য ২জন লোকই যথেষ্ট।
ঘটনা ২ঃ
শ্রমিকরা কাজ করছে কিনা দেখার জন্য একজন ম্যানেজার নিয়োগ দেওয়া হলো। অফিস পাহারা দেওয়ার জন্য
অসংখ্য সিকিউরিটি গার্ড নিয়োগ দেওয়া হলো। অপ্রত্যাশিত কিছু দেখলেই সবাই জড়ো হয়ে
প্রতিরোধ গড়ে তুলতো। হঠাৎ একদিন কি হলো, শ্রমিক সবাই আসা বন্ধ হয়ে গেলো, ২জনেই পুরো
কাজটা করে ফেলতেছে! কেমনে সম্ভব? পাহারা দেওয়ার জন্য ২০জন বা তার বেশি পাহারাদার লাগে না,
সিসি টিভি একাই সে কাজ করছে। আর ঐ কাজ মনিটরিং এর জন্য ১/২জন যথেষ্ট।
ঘটনা ৩ঃ
অফিসে রহিম সাহেব, করিম সাহেব আর ফাহিম সাহেব হিসাবে নিকাশে খুব অভিজ্ঞ। যত কঠিন
হিসাবেই হোক না কেন তারা সলভ করে ফেলতে পারে। রহিম সাহেবের টেবিলে হিসেবের খাতার অভাব নেই,
বুঝাই যাচ্ছে তার অভিজ্ঞতা অনেক বেশি। হঠাৎ করে একদিন সরকার ঘোষনা দিলো এখন থেকে সবাইকে
হিসাব নিকাশ ক¤িপউটারে করতে হবে। ব্যবহার করতে হবে উন্নত মানের সফটওয়্যার। প্রতিষ্ঠানের এমডি
নোটিশ দিয়ে দিলো সবাইকে ক¤িপউটারে কাজ করার অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হবে নাহয় ঐ চেয়ারে নতুন
লোক বসবে। ওনারা ৩জনই চিন্তায় পড়ে গেলো। অনেক চেষ্টা করেও অল্প কিছু দিনে ক¤িপউটার শিখতে
পারলো না। সফটওয়্যার ৩জনের কাজ একাই করতে পারে তাই অভিজ্ঞতা অর্জন করেও অন্য ২জনকে চাকরি
হারাতে হবে। ঠিক এমন ঘটনা ঘটেছে যখন বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষনা দিয়েছে সকল ব্যাংককে
ক¤িপউটারাইজড করতে হবে তখন। রাস্তার পাশে ফুটপাতে থাকা ক¤িপউটার শপ গুলোও তখন ট্রেইনিং
করিয়েছে। যারা ক¤িপউটারের কাজ আয়ত্রে আনতে পারছিল তারাই তাদের চেয়ার গুলো ধরে রাখতে পারছে।
দেখুন না, এই শিক্ষিত সমাজের চাকরিও তখন হুমকির মুখে ছিল। হিসাব নিকাশ করার জন্য একটা
অফিসে অনেক একাউন্ট্যান্ট লাগতো, এখন সেই কাজ ক¤িপউটারে হচ্ছে।
ঘটনা ৪ঃ
এইতো সেদিন করোনার কারণে বাংলাদেশে লকডাউনে ছিল, অসাহয় হয়ে পড়েছিল দিনে আনে দিনে খায়
শ্রমিকরা। স্কুল-কলেজতো এখনোই বন্ধ হয়ে আছে। প্রায় সব সেক্টরই হুমকির মুখে পড়ছিল। বাংলাদেশের
গার্মেন্টসশিল্প যখন উন্নত দেশে নেতৃত্ব দিচ্ছে ঠিক তখন ঘোষনা পড়লো গার্মেন্টসও বন্ধ রাখতে
হবে। শ্রমিকদেরও জীবনের মায়া আছে, তাদেরও পরিবার আছে। একদিকে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা
খারাপের দিকে যাচ্ছে আবার অন্য দিকে দেশের মানব স¤পদের কথা চিন্তা করতে হচ্ছে। তাহলে কি করা যায়?
আচ্ছা যদি শ্রমিকের পরিবর্তে রোবট দিয়ে গার্মেন্টস প্রোডাক্ট তৈরি করা হতো তাহলে কি
লকডাউনে গার্মেন্টস বন্ধ করার চিন্তা করা লাগতো? দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা হুমকির মুখে পড়তো?
পড়তো না, তবে এখনো যেহেতু গার্মেন্টসের জন্য রোবট নেই সেহেতু এই পরিস্থিতিতে শ্রমিকরাই
কাজ করতে হবে। অবশেষে গার্মেন্টস খুলে দেওয়া হলো। আচ্ছা একটু চিন্তা করুন তো, যদি এই
করোনা মৌসুমে বিশ্বব্যাপি রোবট ব্যবহার করার অনুমোদন দিয়ে দিতো তাহলে আমাদের দেশের
গার্মেন্টস শ্রমিকদের কি হতো? কি হতো তাদের জীবন ব্যবস্থা?
---
বিশজুড়ে পাঠশালা মোর সবার আমি ছাত্র- লেখকের এই লাইনটা নিশ্চয় মনে আছে। ভোরের ঐ পাখির গান,
সকালের সবুজ ঘাসও আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায়। কিন্তু আসলেই কি আমরা সে শিক্ষা অর্জন করছি?
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা- আইএলও বলছে, করোনা মহামারির কারণে সবচেয়ে ঝুঁকিতে তরুণ প্রজন্ম।
১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সীদের মধ্যে ২৪ দশমিক ৮ শতাংশই বেকার হয়েছেন। করোনার কারণে তরুণদের মধ্যে
বেকারত্বের হার দ্বিগুণ হয়েছে। আইএলওর হিসাবে, সবাই যদি পূর্ণকালীন কাজ করতেন , তাহলে
বাংলাদেশে করোনায় ১৬ লাখ ৭৫ হাজার তরুণ-তরুণী কাজ হারিয়েছেন। বাংলাদেশে সর্বশেষ শ্রমশক্তি
জরিপ হয়েছে ২০১৭ সালে। সেই জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। আর তাঁদের
মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। দুই সংখ্যার মধ্যে বিয়োগ দিলেই পাওয়া যায় বেকারের
সংখ্যা। আর সেটি হলো ২৭ লাখ। গত তিন বছরে দেশে শ্রমশক্তি নিয়ে নতুন জরিপ করা হয়নি। এর আগে
২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে পরপর দুই বছর ত্রৈমাসিক শ্রমশক্তি জরিপ করা হয়েছিল। তারপরেই এটি বন্ধ
হয়ে যায়। তাহলে প্রশ্ন হলো গত বছরের মোট বেকারের সংখ্যা আসলে কত? থাক এটা আপনারা
আইডিয়া করে নেন।
চলুন মূল কথায় ফিরে আসি, প্রযুক্তি কি আমাদের জন্য আর্শীবাদ নাকি অভিশাপ? কেন আমরা
এগোতে পারছি না? আমাদের ব্যর্থতা নাকি সরকারের? বর্তমান বিশ্বের সেরা কো¤পানি অ্যামজন,
আলিবাবা, উবার তাদের সেবা অ্যাপস দিয়ে দিচ্ছে। আমরা ঠিক তখন আমাদের দেশে ্য়ঁড়ঃ;খুশিতে, ঠেলায়,
ভাল্লাগে, ঘুরত্য়েঁড়ঃ; টপিক ভাইরাল করি। আমাদের দেশে বিকাশ/রকেট/পাঠাও তারা অ্যাপস দিয়ে বিজনেস
করছে আর আমরা তরুনরা ঠিক তখন ্য়ঁড়ঃ;বাবু খাইছে কিনা কিংবা চা খাবেন্য়ঁড়ঃ; কে ভাইরাল করছি! দেখচেন
তো পড়াশোনা এখন জুম বা মিট মোবাইল অ্যাপস এ হয়। বর্তমান ব্যবসা,অফিস সব হিসাব নিকাশ
কিন্তু অ্যাপস মাধ্যমে স¤পাদন করা হচ্ছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত যখন গুগুল, মাইক্রোসফটের মত বড়
বড় প্রতিষ্ঠানে সিইও দেওয়ার প্রতিযোগিতা করছে আমরা তখন প্রতিযোগিতা দিচ্ছি বিসিএস
ক্যাডার হওয়ার জন্য! আমরা চিন্তা করছি আমি একজন ইঞ্জিনিয়ার হবো, ডাক্তার হবো। আমরা চিন্তা
করছি না ইঞ্জিনিয়ার হয়ে, ডাক্তার হয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের জন্য কিছু একটা করব! আসলে ব্যর্থতা
আমাদের, আমাদের তরুনদের, আমাদের পরিবার, সমাজের। যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম
পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কিভাবে শিখবে? শের-এ-বাংলা এ কে ফজলুল হকের এমন
আফসোসের কারণ আজ হাড়ে হাড়ে টের পাওয়া যাচ্ছে। ২০৩০ সালের ভিতর সারাবিশ্বে কয়েকশো লক্ষ মানুষ
শুধু চাকরি হারাবে টেকনোলজি গ্রোথ এবং আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের জন্য। কারণ যে কাজ
বর্তমানে করতে ১০০ জন লাগে সে একটি কাজ ১ টা সফটওয়্যার এবং কয়েকজন মানুষ ও রোবট মিলে
করবে। যারা নিজেদের চাকরি টিকিয়ে রাখতে চান ও ভবিষ্যতে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স সাথে
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে চান আপনাকে অবশ্যই প্রযুক্তির সাথে আপডেট থাকতে হবে। নিয়মিত
রিসার্স করতে হবে। যতটুকু পড়ছেন মনে হবে এগুলো অভিশাপ ছিলো আমাদের। হ্যা, যদি এতটুকু
পড়েই পুরো প্রযুক্তিকে মেপে থাকেন তাহলে তাহলে আমাদের জন্য অভিশাপ এই প্রযুক্তি। আর যদি মনে
করেন আরও জানতে হবে এই প্রযুক্তি স¤পর্কে তাহলে চলুন সামনের কলামে এগিয়ে যাই।
একটা সময় পোস্ট অফিসের সাহায্যে সারা বিশ্বে চিঠি আদান-প্রদান হতো। এমনও হয়েছে একটা
চিঠি বাড়িতে আসার আগেই প্রেরক বাড়িতে চলে আসছে। তারও আগে ফিরে যান, যখন ছিলো না
কোন যানবাহন, হেটে হেটে পাড়ি দেওয়া লাগতো মাইলের পর মাইল। সভ্যতার পরিবর্তনে এখন
যোগাযোগ ব্যবস্থা হয়েছে অনেক উন্নয়ন। এখন মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে যায় মাত্র কয়েক ঘন্টার
ব্যবধানে। মুহুর্তের মধ্যে যেকোন সংবাদ ছড়িয়ে যায় দিক থেকে দিগন্তে। কাছের মানুষের সাথে কথা
বলার জন্য পকেট থেকে মোবাইলটা বের করাই যথেষ্ট। অডিও কল, ভিডিও কলের সাহায্যে পরিবারের সদস্যরা
রয়েছে দূর থেকেও কাছে। মুহুর্তের মধ্যেই যেকোন কিছু ভিডিও স্মৃতিতে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।
আবহাওয়ার পূর্ববাস জানা যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিকাশ করা যাচ্ছে অনায়াসে। কঠিন রোগ
নির্ণয় করা যাচ্ছে। কঠিন কঠিন ভাইরাস স¤পর্কে জানতে পারছে, জানতে পারছে কিভাবে এদের থেকে
বেঁচে থাকা সম্ভব। ভালো লাগছে না, মন খারাপ, বন্ধুদের সাথে অনলাইনে আড্ডা দেওয়া যাচ্ছে। কোন
একটা বিষয়ে রিসার্চ করতে হবে অনলাইনে সার্চ দিলেই রেজাল্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের
স্কীল ডেভেলপমেন্ট করা যাচ্ছে। যেকোন ধরনের শিডিউল ক্রিয়েট করা যাচ্ছে। সূর্যের দিকে তাকিয়ে
সময় নির্ধারন করা লাগছে না। এতকিছুর পরও যদি আমরা বলি প্রযুক্তি আমাদের জন্য অভিশাপ তাহলে
বলবো আপনার চিন্তায় ঘাটতি আছে। মহান আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কোরয়ানে বলেছেন, আমি কোন
জাতির ভাগ্য পরিবর্তন করি না ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত ঐ জাতি নিজেই তার ভাগ্যের পরিবর্তনে
সচেষ্ট হয়। এক সময় কোন একটা সংবাদ পৌছানোর জন্য ঢোল পিটিয়ে মানুষ জড়ো করতে হতো,
প্রযুক্তির বদৌলতে আজ আমরা একটা পোস্ট দিলেই তা চলে যাচ্ছে অন্য সকলের নিকট। আমাদের উচিত
প্রযুক্তির যথাযত ব্যবহার নিশ্চিত করা, নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানানো, নতুন পদ্ধতির আবিস্কার করা।
আমদের প্রতিজ্ঞা করা উচিত কোন ফালতু বিষয়কে ভাইরাল না করে কোন সম্ভাবনাকে ভাইরাল করার। আমরা
সবাই যদি সবাইকে সহযোগিতা করি তাহলে এই প্রযুক্তি একদিন আমাদের জন্য আর্শীবাদ হবে। আর
যদি আমরা সেফুদা, রিপন ভিডিও, বোজরা ইয়াঙ্কিকে ভাইরাল করি তাহলে সেটা আমাদের জন্য অভিশাপই
হবে। কোন পথে চলবেন সিদ্ধান্ত আপনার। আপনার শক্তির উপর জোড় দিন...
©somewhere in net ltd.