নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমিই আমার মতো...\n

মুসআব আব্দুল্লাহ

মুসআব আব্দুল্লাহ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমরা সরকারি স্কুলের ছাত্র..

১৬ ই জুন, ২০১৬ রাত ১২:৩৭

আমরা সরকারি স্কুলে পড়তাম....শুধুমাত্র এই একটা কারণেই আমাদের কৈশোরের সময়টা চমৎকার ছিলো!

হাইফাই স্কুলের মত বিলাসবহুল ভবন আমাদের স্কুলগুলোর ছিলো না।আমাদের ভবনগুলো ছিলো সেই ব্রিটিশ আমলের...কাঠের নড়বড়ে দরজা জানালা,দেয়ালের উপরে ঘুলঘুলি।ক্লাসরুমে বিশাল ডাণ্ডাওয়ালা ফ্যান ছিলো,সেই ফ্যান জোরে ঘুরতো,তবে তাতে বাতাস ছিলো না।প্রচণ্ড গরমে আমরা দরদর করে ঘামতাম,তবে এসব পরোয়া না করেই আমরা মাঠ দাপিয়ে ফুটবল বা ক্রিকেট খেলতাম সকাল এগারোটা বা দুপুর দুটোর কড়া রোদেই।আমাদের বাস্কেটবল কোর্ট ওয়ালা মাঠ ছিলো না,আমাদের মাঠভর্তি বালু ছিলো,আমাদের বিশাল মাঠ ছিলো।

ঘামে ভিজে মাঠের এক কোণে থাকা টিউবওয়েল বা বাথরুমের কল থেকে পানি নিয়ে আমরা হাত মুখ ধুয়ে ফেলতাম....আমাদের কাছে টিস্যু বা রুমাল পারতপক্ষে থাকতো না।ঘাম আর পানিতে ভেজা মুখ আমরা মুছতাম খাতা থেকে কাগজ ছিঁড়ে নিয়ে।

আমাদেরকে কোন স্যার ম্যাডাম "তুমি" করে সম্বোধন বা শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতেন না.....আমাদের স্যারগুলো আমাদের মত ছিলেন।মাঝবয়সী স্যারগুলো আমাদের বড় আপন ছিলেন....তাঁদের সবগুলো শার্ট আমাদের চেনা ছিলো।তাঁদের "তুই" সম্বোধনে স্নেহ ছিলো,রেগে গিয়ে আমাদের জন্ম নিয়ে প্রশ্ন তুললেও তাতে আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত হতাম না।

আমাদের সবার রক্ত গরম ছিলো.....ঠুনকো ঘটনায় আমরা হাতাহাতি করে রক্তারক্তিও করে ফেলতাম।দুই তিনদিন পর আক্রান্ত স্থানের ঘা শুকানোর সাথে সাথে আমাদের মান অভিমানও চলে যেতো।কম বেতনের সাথে সাথে আমাদের মান অভিমানও কম ছিলো।

আমরা কথায় কথায় ইংলিশ বলতে পারতাম না,আমাদের উচ্চারণ শুদ্ধ ছিলো না,আমাদের কথায় আঞ্চলিক টান আসতো।আমাদের ড্রেসাপের দিকে অত খেয়াল ছিলো না,মোটামুটিভাবে একটা ফুলহাতা শার্ট ফোল্ড করে পড়েই আমরা দিনের পর দিন কাটিয়ে দিতাম।আমাদের ফেয়ারওয়েল সুন্দর ছিলো না,কোনমতে গায়ে একটা পাঞ্জাবি চাপিয়ে আমরা ফেয়ারওয়েলে আসতাম....অনেক সময় ফেয়ারওয়েলেই আমাদের মারামারি লেগে যেতো।স্যারেরা এসে বেত দিয়ে সেদিনও আমাদের পিটিয়ে সোজা করতেন।

আমরা ক্লাসি ছিলাম না....কাদায় ভর্তি মাঠে গিয়ে গায়ে কাদা মাখতে আমাদের কোন ঘেন্না লাগতো না,গ্রীষ্মের দুপুরে সিটি বাসগুলোতে করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাসায় আসতে আমাদের আত্মসম্মানবোধে লাগতো না।অতদিকে আমাদের চিন্তা যেতো না।আমাদের চিন্তা থাকতো সেকেন্ড পিরিয়ডে ক্লাসে আসা টিনের ডেকে সিঙ্গারা না সমুচা আছে কিনা তা নিয়ে,আমাদের চিন্তা থাকতো কিভাবে টিফিনটা নিয়েই ব্যাগ হাতে চম্পট দেওয়া যায় তা নিয়ে,চিন্তা ছিলো প্রায়ই ছুটির সময় বিপরীত দিকের রিকশায় দেখা সবুজ/আকাশী জামার মেয়েটির কোন পছন্দের ছেলে আছে কিনা তা নিয়ে।আমাদের প্রকাশ্যে বিপরীত লিঙ্গের কোন বন্ধু ছিলো না.....বয়েজ স্কুলে পড়া আমাদের জন্য গার্লস স্কুলে কারো সাথে কথা বলাটাও মানবতা বিরোধী অপরাধের মত ছিলো।দুই তিনজন আমাদের বান্ধবী থাকতো,তবে সেটা নিতান্ত গোপনে.....মাঝেমাঝে সায়েন্স ফেয়ার কিংবা ভাষা প্রতিযোগ বা ম্যাথ অলিম্পিয়াডে এক স্কুলেই সবার আগমন ঘটতো....তখন "তুই" করে করে একটু টুকটাক কথা বলেই আমাদের "বাহ বেশ বড় হয়ে গেছি" ফিলটা চলে আসতো।

আমরা সরকারি স্কুলে পড়তাম....সাদা প্যান্ট ছিলো আমাদের... জাকারিয়া স্যার, কুতুবি স্যার, নারায়ন স্যার এর মাইর বিখ্যাত ছিল।

তারপরও আমরা সুখী ছিলাম.... স্যারের মন্ত্রমুগ্ধ কথা শুনে সুখী, স্যার থেকে মার খেয়েও সুখী ছিলাম।

আমাদের "hangout" ছিলো না....আড্ডা ছিলো।
"oh shit" ছিলো না...."তার মারে বাপ" ছিলো।
"dude" ছিলো না....শালা ছিলো।
"damn" ছিলো না...."ধুর *াল" ছিলো।

জীবনটা আমাদের একদম দীপু নাম্বার টুয়ের মত ছিল! ©

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.