নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

কিছু মনে করবেন না

আমু হাওলাদার

নৈরাজ্যের চুড়ান্ত অবস্থায় ইনোসেন্সের বিস্ফোরণ

আমু হাওলাদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

কাওয়াল ফারিদ আয়াজের বন্দনা

৩১ শে মে, ২০২০ দুপুর ১২:৩১



সংগৃহিত ছবি: ফারিদ আয়াজ ও আবু মুহম্মদ

ফারিদ আয়াজকে ভালোবাসি। যেমন ভালোবাসি প্রেমিকাকে। একবার সে জিজ্ঞেস করে, কী তোমার মাথা ঠান্ডা করে? তুমি যে হুটহাট রেগে যাও, মুখ গম্ভীর করে থাকো, বলো কি করলে তোমার মাথা ঠান্ডা হবে? আমি মুখ বাড়িয়ে দিয়ে বলি, তোমার আদর পেলে।

আদর পেলে অবশ্যই শান্তি লাগে। বিড়াল স্বভাবের মানুষের মুখ দিয়ে হয়তো গড়গড় আওয়াজ বের হয়। এছাড়াও আরো একটা জিনিস আমার মাথা ঠান্ডা করে- কাওয়ালি। প্রেমিকাকে গাইতে বলি। সে গায়, তীশে বগয়ের মরনাসকা কোহকন আসদ/ সর গুশ তা এ খুমার রোসূমো কোয়ূদ থা/ ইশক ও মজদুর উয়ে ইশরৎ গহে খুসরু ক্যা খুব/ হমকো তসলিম নিকে নামিয়ো ফরহাদ নোহী।

কিন্নর কণ্ঠ!

কাওয়ালির সঙ্গে আমার পরিচয় কিশোরকালে। ক্লাস নাইনে পড়ি। তখন কোরান পড়তাম মাদরাসায়। আমার পাশে বসত ফুয়াদ আল ফারুকী। ওর বাবাকে অনেকে চেনেন। চ্যানেল আইয়ে অনুষ্ঠান করত, ফারুকী, তাঁর ছেলে। ও কোরান পড়ার ফাঁকে দুলে দুলে কাওয়ালী গাইতো। হুজুর আশপাশে না থাকলে আমরা গল্প করতাম। ও গাইতো। ওর গলা ছিল গায়কী গলা। বাসায় তবলা হারমোনিয়াম দিয়ে ওদের গাওয়ার চর্চা ছিল।

কৈশোর পার করে নতুনভাবে কাওয়ালি শুনলাম। অনলাইন সুলভ হল যখন থেকে। সবার আগে আসবে নুসরাত ফাতেহ আলী খানের নাম। খোদা পরকালে যদি জিজ্ঞেস করেন, তোমার জীবনের অবসরে ভালো কাজ কী করে কাটাইছো? আমি বলব হে মহামহিম, আপনার বান্দা গুলাম ফাতেহ আলীর সুর শুনে কাটিয়েছি!

কারো কারো মনে জিজ্ঞাসা আসছে, সুর পান করেছো। হোয়াট এবাউট সুরা? আই মীন মদ্য? উত্তর হবে, যে নামেই তুমি ডাকো তারে, সে আমারে মাতাল করে।

আজকে মন ভরে আছে ফরিদ ফায়াজ, আবু মুহম্মদ ও ভাইদের কাওয়ালি। আহা কী সুর! আহা কী জবান! আহা ব্যাখ্যা! আহা শের! এমনকি গলা খাকারি!

গুরুর নাম নিতে হয় সম্মানের সঙ্গে। পড়ুন- উস্তাদ গুলাম ফারিদ উদ্দীন আয়াজ আল হুসাইনি কাওয়াল! এই হল আসল নাম গাতকের। আবু মুহম্মদ আর ভাইদের জন্য একইরকম শ্রদ্ধা। এক চিমটি ফারিদ আয়াজের জন্য বেশি রেখে।

অ্যালবাম শোনা আর লাইভ পারফরম্যান্স দেখা বা ভিডিও দেখার মধ্যে পার্থক্য আছে। ফারিদ আয়াজের মুগ্ধকর জিনিস তার জবান। তার গলা। তার মুখ। তার মুখের পান। পান চিবানো। হ্যাঁ, চুন সুপারি দিয়ে খাওয়া পান। তার হাসি।

গুরু-শিষ্যের মধ্যে একরকম সম্পর্কের উচ্চতা আছে। মা যেমন মুখের খাবার সন্তানের মুখে তুলে দেয়। মাঝেমধ্যে সেটা মুখের চিবানো খাবার হয়। সিলেটি গুরুদের মধ্যে এইরকম দেখেছ। এরা পান চিবিয়ে শিষ্যদের মুখে তার মখের সুবাস তুলে দেয়। ধোঁয়ার কলকে শিষ্যের হাতে তুলে দেয়।

তেমনি ফারিদ আয়াজের মুখের পান আমার কাছে এমন আকর্ষণীয়। একে গুরু ভক্তি যত আছে, তার থেকে বেশি আছে ওই জবানের ছোঁয়া পাওয়ার আশা। হায়, আফসোস আমি মেয়ে নই! হলে তাঁর ঠোঁট চুম্বন করে পানের রস নিতাম।

ফারিদ আয়াজ গান অনেক কিছু। গজল, সুফি, কাওয়ালী, ইন্ডিয়ান ক্লাসিক আরো কত কি! সব বুঝিনে। শুরু করেন বাবা, উস্তাদ মুনশি রাজিউদ্দিন আহমেদ খান কাওয়ালের কাছে। ফ্যামিলি ট্রি ধরে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন আমীর খসরুকে! জ্বী, গুরু ফারিদ আয়াজ খসরুর গানই শুধু করেন না, পরিবারের মানুষ হিসেবে ভালোওবাসেন। আরেক খসরু আছেন উপকথা হয়ে। এখানে দেখুন https://bit.ly/2zCDvwX

ফারিদ আয়াজ একবার ইরানে গেলেন। গান গাওয়ার আগে সবখানে তিনি ব্যাকস্টেজ সাক্ষাৎ দেন। এক সাংবাদিক তাঁকে জিজ্ঞেস করলেন, আপনি কত বছর গান করেন? তিনি বললেন ৭৫০ বছর!

ফারিদ আয়াজের পরিবার সাতশো বছর ধরে এই কাওয়ালি গেয়ে চলেছে। ৩৫ পুরুষ ধরে গান গেয়ে চলেছেন! পাকিস্তানের এই মহান গায়ক জন্মেছেন ভারতে। জন্মের চার বছর পরে পরিবারের সঙ্গে চলে যায় পাকিস্তানে। এরপর বেড়ে ওঠেন। পিতার সঙ্গে গান। গেয়েছেন সারা দুনিয়ায়। ৮০ এর বেশি দেশে তার কনসার্টে ভক্তরা পেয়েছে তাঁকে। তিনি দেশ গোনা ছেড়ে দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রে কবার, কবার হংকং এ আর কবার ইরানে গেয়েছেন তিনি আর মনে রাখেন না। তাঁর ধ্যান কাওয়ালীতে। পার্সি ভাষা জানেন। কাওয়ালী অনেকেই গান। আরবি-ফারসি ভাষার শের ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেন শ্রোতাদের। আহা কি মধুর ব্যাখ্যা! ইসলাম, সুফিবাদ টলটল করে সে ব্যাখ্যায়। গলা খাকাড়ি দেওয়া একটা উচ্চরকম আর্ট। ফারীদের কাওয়ালি না শুনলে আপনি বুঝতে পারবেন না।

ফারিদের মাথায় থাকে একটা টুপি। পাকিস্তানি টুপি। মসজিদের গেটের মতো সে টুপির সামনে একটা গেট থাকে। যেন কপালটা দেখা যায়। কপাল তার কারুকাজ করা সৌন্দর্য। ঠোঁট লাল।


বাবা ছিলেন মুনশি নাজিবুদ্দিন। বাবার সঙ্গে গাওয়ার সময় ফারিদের মাথায় থাকতো কালো মখমলের কিস্তি টুপি। পরে নিজ দল করলেন ভাইদের নিয়ে। কপাল-মাথায় তুলে নিলেন চুড়িদার ঝিকিমিকি টুপি। এও এক দেখার মতো বস্তু।

ইরানের একজন জিজ্ঞেস করলেন, আপনার নোট খাতা কই? অন্য অনেকের মতো আপনি নোটখাতা রাখেন না কেন? ফারিদ নিজের বুকে তাক করে বলেন আমার নোটখাতা এখানে।

বাংলাদেশে এসে গেয়ে গেছেন বুকে গানের খাতা জমা রাখা ফারিদ আয়াজ। আমি তখন খেয়াল করি নাই!

বিশ্বাস না হলে শুনুন

https://m.youtube.com/watch?v=wuxSFZV51W8

আমার ব্যক্তিগত ব্লগে লেখাটির একটি কপি আছে। অন্যান্য লেখা পড়তে দেখুন-
https://ahmadmuddasser.wordpress.com

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.