নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার তার জন্ম হয় ১৯১১ সালে ৫ই মে । যার ডাকনাম রাণী, ছদ্মনাম ফুলতার, সে একজন বাঙালী নারী শুধু তাই নয় সে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম একজন নারী মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রথম বিপ্লবী মহিলা শহীদ ব্যক্তিত্ব । তখন পূর্ববঙ্গে জন্ম নেয়া এই বাঙালি বিপ্লবী সূর্য সেনের নেতৃত্বে তখনকার ব্রিটিশ বিরোধী সশস্ত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন এবং জীবন বিসর্জন করেন । ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দে পাহাড়তলী ইউরোপিয়ান ক্লাব দখলের সময় তিনি ১৫ জনের একটি বিপ্লবী দল পরিচালনা করেন । এই ক্লাবটিতে একটি সাইনবোর্ড লাগানো ছিলো যাতে লেখা ছিলো কুকুর এবং ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ । প্রীতিলতার দলটি ক্লাবটি আক্রমন করে এবং পরবর্তিতে পুলিশ তাদের আটক করে । পুলিশের হাতে আটক এড়াতে প্রীতিলতা সায়ানাইড গলাধঃকরন করে আত্মহত্যা করেন ।
প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার ১৯১১ সালের ৫ই মে মঙ্গলবার চট্টগ্রামের ধলঘাট গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার পিতা ছিলেন মিউনিসিপ্যাল অফিসের হেড কেরানী জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার এবং মাতার নাম প্রতিভাদেবী । তাদের ছয় সন্তান মধুসূদন, প্রীতিলতা, কনকলতা, শান্তিলতা, আশালতা এবং সন্তোষ । তাঁদের পরিবারের আদি পদবী ছিল দাশগুপ্ত । পরিবারের কোন এক পূর্বপুরুষ নবাবী আমলে ওয়াহেদেদার উপাধি পেয়েছিলেন এই ওয়াহেদেদার থেকেই ওয়াদ্দেদার বা ওয়াদ্দার । শৈশবে পিতার মৃত্যুর পর জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার তার পৈত্রিক বাড়ি ডেঙ্গাপাড়া সপরিবারে ত্যাগ করেন । তিনি পটিয়া থানার ধলঘাট গ্রামে মামার বাড়িতে বড় হন । সে বাড়িতেই প্রীতিলতার জন্ম হয় । আদর করে মা প্রতিভাদেবী তাকে রাণী ডাকেন । পরবর্তীকালে চট্টগ্রাম শহরের আসকার খানের দীঘির দক্ষিণ পশ্চিম পাড়ে টিনের ছাউনি দেয়া মাটির একটা দোতলা বাড়িতে স্থায়ীভাবে থাকতেন ওয়াদ্দেদার পরিবার । অন্তর্মুখী, লাজুক এবং মুখচোরা স্বভাবের প্রীতিলতা ছেলেবেলায় ঘর ঝাট দেওয়া বাসন মাজা ইত্যাদি কাজে মা কে সহযোগীতা করতেন ।
ডাঃ খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় ছিল প্রীতিলতার প্রথম শিক্ষা জীবনের শুরু । ১৯১৮ সালে তিনি এই স্কুলে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন । প্রতি ক্লাসে ভালো ফলাফলের জন্য তিনি সব শিক্ষকের খুব প্রিয় ও আদরের ছিলেন । সেই শিক্ষকের একজন ছিলেন ইতিহাসের ঊষাদি । তিনি প্রীতিলতাকে পুরুষের বেশে ঝাসীর রানী লক্ষীবাই এর ইংরেজ সৈন্যদের সাথে লড়াইয়ের ইতিহাস শোনাতেন । স্কুলে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন ছিলেন কল্পনা দত্ত পরবর্তীকালে বিপ্লবী বন্ধুও হন । এক ক্লাসের বড় প্রীতিলতা কল্পনার সাথে ব্যাডমিন্টন খেলতেন । তাদের স্বপ্নের কথা লিখেছেন কল্পনা দত্তঃ কোন কোন সময় আমরা স্বপ্ন দেখতাম বড় বিজ্ঞানী হব । সেই সময়ে ঝাঁসীর রানী আমাদের চেতনাকে উদ্দীপ্ত করে । নিজেদেরকে আমরা অকুতোভয় বিপ্লবী হিসাবে দেখা শুরু করলাম । স্কুলে আর্টস এবং সাহিত্য প্রীতিলতার প্রিয় বিষয় ছিলো । ১৯২৬ সালে তিনি সংস্কৃত কলাপ পরীক্ষায় বৃত্তি লাভ করেন । ১৯২৮ সালে তিনি কয়েকটি বিষয়ে লেটার মার্কস পেয়ে প্রথম বিভাগে ম্যাট্রিক পাশ করলেন । অঙ্কের নম্বর খারাপ ছিল বলে সে বৃত্তি পেল না ।ম্যাট্রিক পরীক্ষার পর বন্ধের সময় তিনি নাটক লিখেন এবং মেয়েরা সবাই মিলে সে নাটক চৌকি দিয়ে তৈরী মঞ্চে পরিবেশন করেন । তার বাড়িতে এক বিয়ের প্রস্তাব আসে । কিন্তু প্রীতিলতার প্রবল আপত্তির কারনে বিয়ের ব্যবস্থা তখনকার মতো স্থগিত হয়ে যায় । আই.এ. পড়ার জন্য তিনি ঢাকার ইডেন কলেজে ভর্তি হন । এই কলেজ়ের ছাত্রী নিবাসের মাসিক থাকা খাওয়ার খরচ ছিল ১০ টাকা এবং এর মধ্যে কলেজের বেতন ও হয়ে যেত । এই কারনেই অল্প বেতনের চাকুরে জগদ্বন্ধু ওয়াদ্দেদার মেয়েকে আই.এ. পড়তে ঢাকায় পাঠান । ১৯৩০ সালে আই.এ. পরীক্ষায় তিনি মেয়েদের মধ্যে প্রথম এবং সবার মধ্যে পঞ্চম স্থান লাভ করে । এই ফলাফলের জন্য তিনি মাসিক ২০ টাকার বৃত্তি পান এবং কলকাতার বেথুন কলেজ়ে বি এ পড়তে যান । বেথুন কলেজে মেয়েদের সাথে তার আন্তরিক সম্পর্ক তৈরী হয় । বানারসী ঘোষ স্ট্রীটের হোস্টেলের ছাদে বসে প্রীতিলতার বাশীঁ বাজানো উপভোগ করত কলেজের মেয়েরা । প্রীতিলতার বি.এ. তে অন্যতম বিষয় ছিল দর্শন । দর্শনের পরীক্ষায় তিনি ক্লাসে সবার চাইতে ভাল ফলাফল লাভ করতেন । এই বিষয়ে তিনি অনার্স করতে চেয়েছিলেন কিন্তু বিপ্পবের সাথে যুক্ত হবার তীব্র আকাঙ্ক্ষার কারনে অনার্স পরীক্ষা তার আর দেওয়া হয়নি । ১৯৩২ সালে ডিসটিংশান নিয়ে তিনি বি.এ. পাশ করেন । কিন্তু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে সম্পৃক্ত থাকায় কৃতিত্বের সাথে স্নাতক পাস করলেও তিনি এবং তার সঙ্গী বীণা দাসগুপ্তের পরীক্ষার ফল স্থগিত রাখা হয় । অবশেষে তাদেরকে ২২ মার্চ ২০১২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে মরণোত্তর স্নাতক ডিগ্রী প্রদান করা হয় ।
প্রীতিলতা তখন সবে শৈশব পেরিয়ে কৈশোরে পা রাখেন । চট্টগ্রামের বিপ্লবীরা তখন মহাত্মা গান্ধীর অসহযোগ আন্দোলন শেষে সক্রিয় হচ্ছিলেন । এর মধ্যে ১৯২৩ সালে এর ১৩ই ডিসেম্বর টাইগার পাস এর মোড়ে সূর্য সেনের বিপ্লবী সংগঠনের সদস্যরা প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারী কর্মচারীদের বেতন বাবদ নিয়ে যাওয়া ১৭,০০০ টাকা ছিনতাই করে । এ ছিনতাইয়ের প্রায় দুই সপ্তাহ পর গোপন বৈঠক চলাকালীন অবস্থায় বিপ্লবীদের আস্তানায় হানা দিলে পুলিশের সাথে যুদ্ধের পর গ্রেফতার হন সূর্য সেন এবং অম্বিকা চক্রবর্তী । তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা হয় রেলওয়ে ডাকাতি মামলা । এই ঘটনা কিশোরী প্রীতিলতার মনে অনেক প্রশ্নের জন্ম দেয় । স্কুলের প্রিয় শিক্ষক ঊষাদির সাথে আলোচনার মাধ্যমে এই মামলার ব্যাপারে বিস্তারিত ভাবে অনেক কিছুই জানতে পারে সে । ঊষাদির দেয়া ঝাসীর রাণী বইটি পড়ার সময় ঝাসীর রাণী লক্ষীবাইয়ের জীবনী তার মনে গভীর রেখাপাত করে । ১৯২৪ সালে বেঙ্গল অর্ডিনান্স নামে এক জরুরি আইনে বিপ্লবীদের বিনাবিচারে আটক করা হয় । চট্টগ্রামের বিপ্লবীদলের অনেক নেতা এবং সদস্য এই আইনে আটক হন । তখন বিপ্লবী সংগঠনের ছাত্র আর যুবকদেরকে অস্ত্রশস্ত্র সাইকেল এবং বইপত্র গোপনে রাখার ব্যবস্থা করতে হত । সরকার বিপ্লবীদের প্রকাশনা সমুহ বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করে । প্রীতিলতার নিকট আত্মীয় পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন বিপ্লবী দলের কর্মী ছিলেন । তিনি সরকার কর্তৃক বাজেয়াপ্ত কিছু গোপন বই প্রীতিলতার কাছে রাখেন । তখন সে দশম শ্রেনীর ছাত্রী । লুকিয়ে লুকিয়ে প্রীতিলতা পড়েন দেশের কথা 'বাঘা যতীন''ক্ষুদিরাম' এবং কানাইলাল ইত্যাদি রচনা সূমহ । এই সমস্ত গ্রন্থ প্রীতিলতাকে বিপ্লবের আদর্শে অনুপ্রাণিত করেন । প্রীতিলতা দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদারের কাছে বিপ্লবী সংগঠনে যোগদান করার গভীর ইচ্ছার কথা বলেন । কিন্তু তখনো পর্যন্ত বিপ্লবীদলে মহিলা সদস্য গ্রহণ করা হয়নি । এমনকি নিকট আত্মীয় ছাড়া অন্য কোন মেয়েদের সাথে মেলামেশা করাও বিপ্লবীদের জন্য নিষেধ ছিলো ।
ঢাকায় যখন প্রীতিলতা পড়তে যান তখন শ্রীসংঘ নামে একটি বিপ্লবী সংঘঠন ছিল । এই দলটি প্পকাশ্যে লাঠিখেলা, কুস্তি, ডনবৈঠক, মুষ্টিযুদ্ধশিক্ষা ইত্যাদির জন্য ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ক্লাব তৈরী করেছিল । ঢাকায় শ্রীসংঘের দীপালী সঙ্ঘ নামে একটি মহিলা শাখা ছিল । লীলা নাগ বিয়ের পর লীলা রায় এর নেতৃত্বে এই সংগঠনটি নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য কাজ করতেন । গোপনে তারা মেয়েদের বিপ্লবী সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করার কাজও করত । ইডেন কলেজের শিক্ষক নীলিমাদির মাধ্যমে লীলা রায়ের সাথে প্রীতিলতার পরিচয় হয় । তাদের অনুপ্রেরণায় দীপালী সঙ্ঘে যোগ দিয়ে প্রীতিলতা লাঠিখেলা, ছোরাখেলা ইত্যাদি বিষয়ে প্রশিক্ষন গ্রহণ করেন ।পরবর্তীকালে তিনি লিখেছিলেন আই এ পড়ার জন্য ঢাকায় দু’বছর থাকার সময় আমি নিজেকে মহান মাস্টারদার একজন উপযুক্ত কমরেড হিসাবে নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়েছি । ১৯২৯ সালের মে মাসে চট্টগ্রামে সূর্য সেন এবং তাঁর সহযোগীরা চট্টগ্রাম জেলা কংগ্রেসের জেলা সম্মেলন ও ছাত্র সম্মেলন এবং যুব সম্মেলন ইত্যাদি আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন । নারী সম্মেলন করবার কোন পরিকল্পনা তখনও ছিলো না কিন্তু পূর্ণেন্দু দস্তিদারের বিপুল উৎসাহের জন্যই সূর্য সেন নারী সম্মেলন আয়োজনের সম্মতি দেন । মহিলা কংগ্রেস নেত্রী লতিকা বোসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে প্রীতিলতা ঢাকা থেকে ও তার বন্ধু এবং সহযোদ্ধা কল্পনা দত্ত কলকাতা থেকে এসে যোগদান করেন । তাদের দুজনের আপ্রাণ চেষ্টা ছিল সূর্য সেনের অধীনে চট্টগ্রামের বিপ্লবী দলে যুক্ত হওয়ার কিন্তু ব্যর্থ হয়ে তাদের ফিরে যেতে হয় । ১৯৩০ সালের ১৯শে এপ্রিল আই এ পরীক্ষা দিয়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরে আসেন প্রীতিলতা । আগের দিন রাতেই চট্টগ্রামে বিপ্লবীদের দীর্ঘ পরিকল্পিত আক্রমণে ধ্বংস হয় অস্ত্রাগার পুলিশ লাইন, টেলিফোন অফিস এবং রেললাইন । এটি চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ নামে পরিচয় লাভ করে । চট্টগ্রামের মাটিতে বিপ্লবীদলের এই উত্থান সমগ্র বাংলার ছাত্রসমাজকে উদ্দীপ্ত করে । প্রীতিলতা লিখেছিলেন পরীক্ষার পর ঐ বছরেরই ১৯শে এপ্রিল সকালে বাড়ি ফিরে আমি আগের রাতে চট্টগ্রামের বীর যোদ্ধাদের মহান কার্যকলাপের সংবাদ পাই । ঐ সব বীরদের জন্য আমার হৃদয় গভীর শ্রদ্ধায় আপ্লুত হল । কিন্তু ঐ বীরত্বপুর্ণ সংগ্রামে অংশগ্রহণ করতে না পেরে এবং নাম শোনার পর থেকেই যে মাষ্টারদাকে গভীর শ্রদ্ধা করেছি তাকে একটু দেখতে না পেয়ে আমি বেদনাহত হলাম ।
১৯৩০ সালে প্রীতিলতা কলকাতার বেথুন কলেজে পড়তে আসেন । দাদা পূর্ণেন্দু দস্তিদার তখন যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের ছাত্র । যুব বিদ্রোহের পর তিনি মধ্য কলকাতায় বিপ্লবী মনোরঞ্জন রায়ের পিসির গুণু পিসি বাসায় আশ্রয় নেন । প্রীতিলতা ঐ বাসায় গিয়ে দাদার সঙ্গে প্রায় দেখা করতেন । পূর্ণেন্দু দস্তিদার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গেলে মনোরঞ্জন রায় ক্যাবলা দা নামে পরিচিত নারী বিপ্লবীদের সংগঠিত করার কাজ করেন । যুব বিদ্রোহের পর পুলিশের হাতে গ্রেফতার এবং কারাগারে বন্দী নেতাদের সাথে আত্মগোপনে থাকা সূর্য সেনের সাথে বিভিন্ন ভাবে যোগাযোগ হত । তারা তখন আরো হামলার পরিকল্পনা করছিল । সূর্য সেন প্রেসিডেন্সী কলেজের কেমিষ্ট্রির ছাত্র মনোরঞ্জন রায়কে গান কটন এবং বোমা তৈরীর নির্দেশ দেন । তিনি এসব সংগ্রহ করে পলাতক বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা গুণু পিসির বাসায় রাখতেন । এ বাসায় বসে প্রীতিলতা কল্পনা দত্ত, রেণুকা রায়, কমলা চ্যাটার্জী বহু গোপন বৈঠক করেন এবং চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের পর মাষ্টারদার প্রেরিত ইস্তেহার সাইক্লোষ্টাইলে ছাপিয়ে কলকাতার বিভিন্ন স্থানে বিতরন করেন । মনোরঞ্জন রায়ের সাথে প্রীতিলতা এবং কল্পনা দত্তের পরিচয়ের পর তিনি বুঝতে পারেন যে এই মেয়ে দুটিই জীবনের ঝুকি নিয়ে বিপ্লবী কাজ করতে সক্ষম হবে । ১৯৩০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে পুলিশের নজরদারী এড়িয়ে মনোরঞ্জন রায় কলকাতা থেকে চট্টগ্রাম এসে সূর্য সেনের হাতে গান কটন এবং বোমা তুলে দেন । এসময় তিনি জেলে থাকা বিপ্লবীদের সাথে যোগাযোগ করে চিঠির আদান প্রদান এবং কলকাতা থেকে বিস্ফোরক বহন করে আনার বিপদ সম্পর্কে মাষ্টারদার দৃষ্টি আকর্ষন করেন । শহর আর গ্রামের যুবক বয়সীরা পুলিশের চোখে সবচেয়ে বড় সন্দেহভাজন । এ অবস্থায় সূর্য সেন নারী বিপ্লবীদের এসব কাজের দায়িত্ব দেবার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন । কারন তখনো গোয়েন্দা বিভাগ মেয়েদের সন্দেহ করতো না । মাষ্টারদার অনুমতি পাওয়ার পর নারীদের বিপ্লবের বিভিন্ন কাজে যুক্ত করা হয় ।
চট্টগ্রামে সূর্য সেনের কাছে বোমা পৌঁছে দিয়ে কলকাতা ফেরত আসার একদিন পরেই ২৪ নভেম্বর মনোরঞ্জন রায় পুলিশের হাতে ধরা পড়েন । সে সময়ে টি জে ক্রেগ বাংলার ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পদে নতুন দায়িত্ব নিয়ে চট্টগ্রাম সফরে আসেন । তাকে হত্যা করার জন্য মাষ্টার দা রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে মনোনীত করলেন । পরিকল্পনা অনু্যায়ী ১৯৩০ সালের ২রা ডিসেম্বর চাঁদপুর রেলস্টেশনে তাঁরা রিভলবার নিয়ে আক্রমণ চালায় কিন্তু ভুল করে তারা মিঃ ক্রেগের পরিবর্তে চাঁদপুরের এস ডি ও তারিণী মুখার্জিকে হত্যা করেন । সেদিনেই পুলিশ বোমা আর রিভলবার সহ রামকৃষ্ণ বিশ্বাস এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে গ্রেপ্তার করে । এই বোমাগুলোই কলকাতা থেকে মনোরঞ্জন রায় চট্টগ্রামে নিয়ে আসেন । তারিণী মুখার্জি হত্যা মামলার রায়ে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের মৃত্যুদন্ড এবং কালীপদ চক্রবর্তীকে নির্বাসন দন্ড দেয়া হয় । ব্যয়বহুল বলে আলিপুর জেলের ফাঁসির সেলে মৃত্যু গ্রহণের প্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণের সাথে চট্টগ্রাম থেকে আত্নীয়দের মধ্যে কেউ দেখা করতে আসা সম্ভব ছিল না । এ খবর জানার পর মনোরঞ্জন রায় প্রীতিলতার কাছে লেখা এক চিঠিতে রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার চেষ্টা করতে অনুরোধ করেন । মনোরঞ্জন রায়ের মা হিজলী জেলে ছেলের সাথে দেখা করতে গেলে গোপনে তিনি প্রীতিলতাকে লেখা চিঠিটা তার হাতে দেন । গুনু পিসির উপদেশ অনুযায়ী প্রীতিলতা মৃত্যুপ্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে দেখা করার জন্য আলিপুর জেল কর্তৃপক্ষের কাছে অমিতা দাস ছদ্মনামে কাজিন পরিচয় দিয়ে দরখাস্ত করেন । জেল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে তিনি প্রায় চল্লিশবার রামকৃষ্ণের সাথে দেখা করেন । এ সাক্ষাৎ প্রসঙ্গে তিনি লিখেছেন তার রামকৃষ্ণ বিশ্বাস গাম্ভীর্যপুর্ণ চাউনি খোলামেলা কথাবার্তা নিঃশঙ্ক চিত্তে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করা, ঈশ্বরের প্রতি অচলা ভক্তি, শিশুসুলভ সারল্য, দরদীমন এবং প্রগাঢ় উপলব্দিবোধ আমার উপর গভীর রেখাপাত করল । আগের তুলনায় আমি দশগুন বেশী কর্মতৎপর হয়ে উঠলাম । আত্মাহুতি দিতে প্রস্তুত এই স্বদেশপ্রেমী যুবকের সঙ্গে যোগাযোগ আমার জীবনের পরিপূর্ণতাকে অনেকখানি এগিয়ে দিয়েছিল । ১৯৩১ সালের ৪থা আগস্ট রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসী হয় । এই ঘটনা প্রীতিলতার জীবনে এক আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসে । তার ভাষায় রামকৃষ্ণদার ফাঁসীর পর বিপ্লবী কর্মকান্ডে সরাসরি যুক্ত হবার আকাঙ্ক্ষা আমার অনেক বেড়ে গেল ।
রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ফাঁসীর পর আরো প্রায় নয় মাসের মতো প্রীতিলতাকে কলকাতায় থেকে যেতে হয় বি এ পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য । পরীক্ষা দিয়ে প্রীতিলতা কলকাতা থেকে চট্টগ্রামে বাড়ি এসে দেখেন তার পিতার চাকরি নাই । সংসারের অর্থকষ্ট মেটানোর জন্য শিক্ষকতাকে তিনি পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন । চট্টগ্রামে বিশিষ্ট দানশীল ব্যাক্তিত্ব অপর্ণাচরণ দের সহযোগিতায় তখন নন্দনকাননে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল নন্দনকানন উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় বর্তমানে অপর্ণাচরণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় । তিনি এই স্কুলের প্রধান শিক্ষক পদে নিযুক্ত হন । স্কুলে যাওয়া প্রাইভেট পড়ানো, মাকে সাংসারিক কাজে সাহায্য করে তার দিনগুলো কাটছিল । ১৯৩২ সালে বি এ পরীক্ষার পর মাষ্টারদার সাথে দেখা করার প্রত্যয় নিয়ে বাড়ী ফিরে । বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্য সেনের সাথে সাক্ষাতের আগ্রহের কথা তিনি কল্পনা দত্তকে বলেন । প্রীতিলতা কলকাতা থেকে আসার এক বছর আগে থেকেই কল্পনা দত্ত বেথুন কলেজ থেকে বদলী হয়ে চট্টগ্রাম কলেজে বি এস সি ক্লাসে ভর্তি হয় । সেজন্য প্রীতিলতার আগেই কল্পনা দত্তের সাথে মাষ্টারদার দেখা হয় । ১৯৩১ সালে এই গোপন সাক্ষাতের সময় আত্মগোপনে থাকা মাষ্টারদার সাথে ছিলেন বিপ্লবী নির্মল সেন তারকেশ্বর দস্তিদার, শৈলেশ্বর চক্রবর্তী এবং কালীকিংকর দে । মাষ্টারদা সে সাক্ষাতের সময় কল্পনা দত্তের কাছ থেকে প্রীতিলতা সম্পর্কিত খোজ খবর জানতে চায় । এরমধ্যে একবার মাষ্টারদার সংগঠন চালানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে কিছু অর্থের প্রয়োজন দেখা দিল । প্রীতিলতার বাবা সংসারের খরচ চালানোর জন্য মাসিক বেতনের পুরো টাকাটা প্রীতিলতার হাতে দিতেন । তিনি সে টাকাটা সংগঠনের কাজে দিয়ে দিতে চাইলেন । কিন্তু তা নিতে কল্পনা দত্ত আপত্তি করায় প্রীতিলতা কেদে বলেন গরিব দেখে আমাদের টাকা নিতে চান না । আমি যে নিষ্ঠাবান কর্মী হতে পারব তার প্রমাণ করার সুযোগও কি আমায় দেবেন না ? । প্রীতিলতার প্রবল আগ্রহের কারনেই কল্পনা দত্ত একদিন রাতে গ্রামের এক ছোট্ট কুটিরে তার সাথে নির্মল সেনের পরিচয় করিয়ে দেন । ১৯৩২ সালের মে মাসের গোড়ার দিকে সে সাক্ষাতে নির্মল সেন প্রীতিলতাকে পরিবারের প্রতি কেমন টান আছে তা জানতে চাইলেন । জবাবে তিনি বলেন duty to family কে duty to country র কাছে বলি দিতে পারব । যুব বিদ্রোহের পর বিশৃঙ্খল হয়ে পড়া সংগঠনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজে মাষ্টারদা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়ার কারনে প্রীতিলতার সাথে সে রাতে তার দেখা হয়নি । প্রীতিলতার সাথে এই সাক্ষাতের কথা বলেতে গিয়ে মাষ্টারদা লিখেছেন অল্প কয়েকদিন পরেই নির্মলবাবুর সঙ্গে আমার দেখা হতেই নির্মলবাবু আমায় বল্ল আমি রাণীকে কথা দিয়েছি আপনার সঙ্গে দেখা করাব সে এক সপ্তাহের জন্য যে কোন জায়গায় আসতে রাজ়ী আছে । রামকৃষ্ণের সঙ্গে সে ফাঁসীর আগে দেখা করেছে শুনেই তার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছা হয়েছিল । তার দেখা করার ব্যাকুলতা শুনে রাজী হয়ে কয়েকদিনের মধ্যে তাকে আনার ব্যবস্থা করলো । মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতার প্রথম সাক্ষাতের বর্ণনাতে মাষ্টারদা লিখেছেন তার চোখেমুখে একটা আনন্দের আভাস দেখলাম । এতদূর পথ হেঁটে এসেছে তার জন্য তার চেহারায় ক্লান্তির কোন চিহ্নই লক্ষ্য করলাম না । যে আনন্দের আভা তার চোখে মুখে দেখলাম তার মধ্যে আতিশয্য নেই শ্রদ্ধার ভাব তার মধ্যে ফুটে উঠেছে । একজন উচ্চশিক্ষিত একটি পর্ণকুটিরের মধ্যে আমার সামনে এসে আমাকে প্রণাম করে উঠে বিনীত ভাবে আমার দিকে দাড়িয়ে রইল মাথায় হাত দিয়ে নীরবে তাকে আশীর্ব্বাদ করলাম । রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে তার দেখা হওয়ার ইতিবৃত্ত রামকৃষ্ণের প্রতি তার শ্রদ্ধা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে প্রীতিলতা প্রায় দুই ঘন্টার মতো মাষ্টারদার সাথে কথা বলেছিল । মাষ্টারদা আরো লিখেছিল তার একশন করার আগ্রহ সে পরিষ্কার ভাবেই জানাল । বসে বসে যে মেয়েদের organise করা, organisation চালান প্রভৃতি কাজের দিকে তার প্রবৃত্তি নেই, ইচ্ছাও নেই বলে । তিন দিন ধরে ধলঘাট গ্রামে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে অবস্থানকালে আগ্নেয়াস্ত্র triggering এবং targeting এর উপর প্রীতিলতা প্রশিক্ষন গ্রহণ করলেন ।
১৯৩২ সাল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের দুই বছর অতিক্রম হয়ে গেল । ইতোমধ্যে বিপ্লবীদের অনেকেই নিহত ও অনেকে গেপ্তার হয়েছে । সে বছরগুলোতে আক্রমণের নানা পরিকল্পনার পরেও শেষ পর্যন্ত বিপ্লবীরা নুতন কোনো সাফল্য অর্জন করতে পারে নাই । এসব পরিকল্পনার মূলে ছিলেন মাষ্টারদা ও নির্মল সেন । এই দুজন আত্মগোপণকারী বিপ্লবী তখনো গ্রাম থেকে গ্রামে বিভিন্ন আশ্রয়স্থলে ঘুরে ঘুরে সাংগঠনিক কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছিলেন । এই আশ্রয়স্থলগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল ধলঘাটে সাবিত্রী দেবীর টিনের ছাউনি দেয়া মাটির দোতলা বাড়িটা । পটিয়া উপজেলার ধলঘাট গ্রামটা ছিল বিপ্লবীদের অতি শক্তিশালী গোপন আস্তানা । চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুন্ঠন এবং জালালাবাদ যুদ্ধের পর থেকে এই গ্রামে ছিলো মিলিটারি ক্যাম্প । এই ক্যাম্প থেকে সেনারা বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে আত্মগোপনরত বিপ্লবীদের ধরার চেষ্টা করত । সাবিত্রী দেবীর বাড়ি ছিল ঐ ক্যাম্প থেকে দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত । বিপ্লবীদের কাছে সে বাড়ির গোপন নাম ছিল আশ্রম । বিধবা সাবিত্রী দেবী এক ছেলে এবং বিবাহিতা মেয়েকে নিয়ে সে বাড়িতে থাকতেন । বিপ্লবীদের কাছে তিনি ছিলেন সাবিত্রী মাসিমা । এই আশ্রমে বসে সূর্য সেন এবং নির্মল সেন অন্যান্য বিপ্লবীদের সাথে সাক্ষাত করতেন এবং আলোচনা করে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত নিতেন । অনেক সময় এই বাড়িতেই তারা দেশ বিদেশের বিপ্লবীদের লেখা বই পড়ে এবং নিজেদের অভিজ্ঞতার কথা লিখে সময় কাটাতেন । ১৯৩২ সালের ১২ই জুন তুমুল ঝড় বৃষ্টির দিনে মাষ্টারদার পাঠানো এক লোক প্রীতিলতাকে আশ্রমে নিয়ে আসে । বাড়িতে প্রীতিলতা তার মাকে সীতাকুন্ড যাবার কথা বলেন । মাষ্টারদা এবং নির্মল সেন ছাড়া সে বাড়িতে তখন ডিনামাইট ষড়যন্ত্র মামলার পলাতক আসামী তরুন বিপ্লবী অপূর্ব সেন ভোলা অবস্থান করছিলেন । ১৩ই জুন সন্ধ্যায় সূর্য সেন এবং তার সহযোগীদের সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে অবস্থানের কথা পটিয়া পুলিশ ক্যাম্প জানতে পারে । এর আগে মে মাসেই ইংরেজ প্রশাসন মাষ্টারদা এবং নির্মল সেনকে জীবিত অথবা মৃত অবস্থায় ধরিয়ে দিতে পারলে নগদ ১০০০০ টাকা পুরস্কারের ঘোষণা দেন । ক্যাম্পের অফিসার ইন চার্জ ক্যাপ্টেন ক্যামেরন খবরটা জানার পর সে বাড়িতে অভিযানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন । পুরস্কার এবং পদোন্নতির আশা নিয়ে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন দুজন সাব ইন্সপেক্টর সাতজন সিপাহী একজন হাবিলদার এবং দুজন কনষ্টেবল নিয়ে রাত প্রায় ৯টার দিকে ধলঘাটের সে বাড়িতে উপস্থিত হয় । এর একটু আগেই মাষ্টারদা এবং প্রীতিলতা দোতলা বাড়িটার নীচতলার রান্নাঘরে ভাত খেতে বসেছিলেন । জ্বরের কারনে নির্মল সেন এবং ভোলা রাতের খাবার খাওয়া বাদ দিয়ে উপরের তলায় শুয়ে ছিলেন । মাষ্টারদার সাথে খেতে বসে অস্বস্তি বোধ করায় প্রীতিলতা দৌড়ে উপরে চলে যান । প্রীতিলতার লজ্জা দেখে নির্মল সেন খুব হেসেছিলেন । এমন সময় মাষ্টারদা ঘরের ভিতরের মই বেয়ে দোতলায় উঠে বলেন নির্মলবাবু পুলিশ এসেছে । মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে নিচে নেমে এসে মেয়েদের সাথে থাকার নির্দেশ দেন । ততক্ষনে সিপাহী এবং কনষ্টেবলরা ঘর ঘিরে ফেলে । ক্যাপ্টেন ক্যামেরন এবং সাব ইন্সপেক্টর মনোরঞ্জন বোস ধাক্কা দিয়ে দরজা খুলে ঘরের একতলায় থাকা সাবিত্রী দেবী এবং তার ছেলে মেয়েকে দেখতে পান । ঘরে আর কে আছে ? এ প্রশ্ন করে কোন উত্তর না পাওয়া অভিযান পরিচালনাকারীরা এসময় ঘরের উপরের তলায় পায়ের আওয়াজের শব্দ শুনতে পান । ক্যাপ্টেন ক্যামেরন হাতে রিভলবার নিয়ে ঘরের বাইরের সিড়ি বেয়ে উপরে উঠার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে । সিড়ির মাথায় পৌছে বন্ধ দরজায় ধাক্কা দিতেই নির্মল সেনের করা দুইটা গুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরন মৃত্যুবরন করেন । গুলির শব্দ পাওয়ার পরেই ঘরের চারিদিকে থাকা সৈন্যরা চারিদিক থেকে প্রচন্ড গুলিবর্ষণ শুরু করে । একটা গুলি এসে নির্মল সেনের বুকে লাগে এবং প্রচুর রক্তক্ষরনে তার মৃত্যু হয় । টাকা পয়সা এবং কাগজপত্র গুছিয়ে প্রীতিলতা এবং অপুর্ব সেনকে সঙ্গে নিয়ে মাষ্টারদা অন্ধকারে ঘরের বাইরে আসেন । এই সময়ে আমের শুকনো পাতায় পা পড়ার শব্দ পেয়ে আশেপাশে থাকা সিপাহীদের চালানো গুলিতে সবার আগে থাকা অপুর্ব সেন মারা যান । মাষ্টারদা আর প্রীতিলতা সেই রাতে কচুরিপানা ভরা পুকুরে সাতার কেটে আর কর্দমাক্ত পথ পাড়ি দিয়ে পটিয়ার কাশীয়াইশ গ্রামে দলের কর্মী সারোয়াতলী স্কুলের দশম শ্রেনীর ছাত্র মনিলাল দত্তের বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায় । মণিলাল সে বাড়ির গৃহশিক্ষক ছিল । মাষ্টারদার জন্য রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাৎকারের বিস্তারিত বিবরন লিখে ধলঘাটে এনেছিলেন প্রীতিলতা । সে পান্ডুলিপি পুকুরের মধ্যে হারিয়ে গেলো । তাদেরকে নিরাপদ কোন আশ্রয়ে নিয়ে যেতে বলেন মাষ্টারদা । মণিলাল দত্ত তাদেরকে ধলঘাট হতে ছয় কিলোমিটার দূরে পাহাড় জঙ্গল এবং নদীর কাছাকাছি একটা গ্রাম জৈষ্ট্যপুরায় নিয়ে যেতে মনস্থির করেন । এবং তারা মনে মনে ঠিক করে রাখে পুলিশ আসলে পাহাড় এবং জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা যাবে অথবা নদী পার হয়ে অন্য আশ্রয়ে চলে যাবে । অনেক প্রতিকূল পথ অতিক্রমের পর তারা জৈষ্ট্যপুরা গ্রামে বিপ্লবীদের আরেকটা গোপন আস্তানায় গিয়ে পৌঁছায় । সে গুপ্ত আস্তানাটি বিপ্লবীদের কাছে কুটির নামে পরিচিত ছিল । সে কুটিরে তখন আত্মগোপণ করে ছিল সুশীল দে ও কালীকিংকর দে এবং মহেন্দ্র চৌধুরী । সূর্য সেন পরের দিন প্রীতিলতাকে বাড়ি যাওয়ার নির্দেশ দেয় । এর আগে সূর্য সেনের নির্দেশে মণিলাল প্রীতিলতার বাসায় পুলিশের নজরদারী আছে কিনা তা জানতে শহরে যান । সব কিছু ঠিক আছে জানার পর প্রীতিলতাকে বাড়ি গিয়ে স্কুল শিক্ষকের দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয় । চট্টগ্রামে সৈন্য ও বিপ্লবীদের সংঘর্ষ শিরোনামে ধলঘাট সংঘর্ষের খবরটা ১৯৩২ সালের ১৫ই জুন দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় । সংবাদটি এভাবে লেখা ছিল ।
এইমাত্র সংবাদ আসিয়াছে যে, গতরাত্রে চট্টগ্রাম জেলার পটিয়ার নিকটে বিপ্লবী এবং সৈন্যদের এক সংঘর্য হইয়া গিয়াছে । ফলে গুর্খা বাহিনীর ক্যাপ্টেন ক্যামেরন এবং দুইজন বিপ্লবী নিহত হইয়াছেন । বিপ্লবীদের নিকট দুইটি রিভলবার এবং গুলি ইত্যাদি পাওয়া গিয়াছে । নিহত বিপ্লবীদের একজনকে নির্মল সেন বলিয়া সনাক্ত করা হইয়াছে ।
ধলঘাট সংঘর্ষের সে রাতেই গোলাগুলিতে ক্যাপ্টেন ক্যামেরনের মৃত্যুর পর পুলিশের এস. আই মনোরঞ্জন বোস পটিয়ার মিলিটারী ক্যাম্পে গিয়ে আরো ত্রিশজন সৈন্য এবং একটা লুইস গান নিয়ে সাবিত্রী দেবীর বাড়িতে ফিরে আসেন । লুইস গানের গুলিবর্ষণে বাড়িটা প্রায় ধ্বংস হয়ে যায় । সকালে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপারিন্টেন্ডেন্ট এবং সেনাধ্যক্ষ মেজর গর্ডন দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে যায় । সাবিত্রী দেবী এবং তার পুত্র কণ্যাকে বিপ্লবীদের আশ্রয় দেবার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় । কণ্যা স্নেহলতার জবানবন্দিতে আরো তিন যুবক দীনেশ দাশগুপ্ত ও অজিত বিশ্বাস এবং এবং মনীন্দ্র দাশকে আটক করা হয় । পরবর্তীকালে সাবিত্রী দেবী ও তার পুত্র রামকৃষ্ণ এবং এই তিন যুবককে বিপ্লবীদের আশ্রয় এবং সহায়তা করার দায়ে চার বছরের কারাদন্ড দেয় । ঘরের ভেতর চালানো তল্লাশীতে রিভলবার রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের দুইটা ছবি পাশাপাশি দুইটা মেয়ের ছবি যার মধ্যে একজন ছিল প্রীতিলতা সহ কিছু চিঠি এবং দুইটা বইয়ের পান্ডুলিপি পাওয়া যায় । ধলঘাটে ছবি পাওয়ার পর ১৯শে জুন পুলিশ বাসায় গিয়ে প্রীতিলতাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে । ২২ জুন এস.আই শৈলেন্দ্র সেনগুপ্ত এর নেতৃত্বে একটি দল সে বাড়িতে আরেক দফা তল্লাশি চালায় । তার নির্দেশে আশে পাশের সব জঙ্গল কেটে পরিষ্কার করা হয় । জঙ্গল এবং আশেপাশের পুকুরে তল্লাশীতে অনেক কাগজপত্র উদ্ধার করা হয় যা থেকে প্রমাণিত হয় চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের পর আত্মগোপনে থেকে ও বিপ্লবীরা তাদের আদর্শের সাথে অভিন্ন বিভিন্ন প্রবন্ধ পড়া এবং সামরিক প্রশিক্ষন চালিয়ে যাচ্ছিল । তল্লাশি অভিযানে কাজিন পরিচয় দিয়ে অমিতা দাশের প্রীতিলতার আলিপুর সেন্ট্রাল জেলে ফাঁসির প্রতীক্ষারত রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের সাথে সাক্ষাতের হাতে লেখা একটা বিবরন পাওয়া যায় । সে হাতের লেখার সাথে মেলানোর জন্য ৩০শে জুন প্রীতিলতার বাসা থেকে পুলিশ তার গানের একটা বই নিয়ে যায় । মাষ্টারদা প্রীতিলতাকে আত্মগোপনের নির্দেশ দেন । ৫ই জুলাই মনিলাল দত্ত এবং বীরেশ্বর রায়ের সাথে ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে প্রীতিলতা আত্মগোপন করে । ছাত্রী পড়ানোর কথা বলে তিনি বাড়ি ত্যাগ করেছিলেন । পিতা জগবন্ধু ওয়াদ্দেদার অনেক খোজ খবর করেও কোন সন্ধান পাননি । ব্যর্থ হয়ে যখন থানায় খবরটা জানানো হল পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর যোগেন গুপ্ত আরেক নারী বিপ্লবী কল্পনা দত্তের বাড়িতে যান । কল্পনা দত্ত সে ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন আমাদের বাসায় এসে গোয়েন্দা বিভাগের ইন্সপেক্টর বলেছে এত শান্তশিষ্ট নম্র মেয়ে ও এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে ভাবতেও পারি না তার ভিতর এত কিছু আছে ! আমাদের খুব ফাকি দিয়ে সে পালিয়ে গেল । চট্টগ্রাম শহরের গোপন আস্তানায় কিছু দিন কাটিয়ে প্রীতিলতা পড়ৈকড়া গ্রামের রমণী চক্রবর্তীর বাড়িতে আশ্রয় নেয় । বিপ্লবীদের আরেক গোপন আস্তানা এই বাড়িটার সাংকেতিক নাম ছিল কুন্তলা । এই বাড়িতে তখন আত্মগোপনে ছিলেন মাষ্টারদা এবং তারকেশ্বর দস্তিদার । প্রীতিলতার আত্মগোপনের খবর ১৯৩২সালের ১৩ই জুলাই আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশ করা হয় । চট্টগ্রামের পলাতকা শিরোনামের এই সংবাদে লেখা হয় চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার ধলঘাটের শ্রীমতী প্রীতি ওয়াদ্দাদার গত ৫ই জুলাই মঙ্গলবার চট্টগ্রাম শহর হইতে অন্তর্ধান করিয়াছেন । তাহার বয়স ১৯ বৎসর । পুলিশ তাহার সন্ধানের জন্য ব্যস্ত । প্রীতিলতাকে ধরার জন্য বেঙ্গল পুলিশের সি আই ডি কর্তৃক প্রকাশিত ছবিসহ নোটিশটি দেয় ।
১৯৩০ সালের ১৮ই এপ্রিল চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহের অন্যতম পরিকল্পনা ছিল পাহাড়তলী ইউরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণ করা । কিন্তু গুড ফ্রাইডের কারনে সেদিনের সে পরিকল্পনা সফল করা যায়নি । চট্টগ্রাম শহরের উত্তরদিকে পাহাড়তলী স্টেশনের কাছে এই ক্লাব ছিল ব্রিটিশদের প্রমোদকেন্দ্র । পাহাড় ঘেরা এই ক্লাবের চতুর্দিকে প্রহরীদের অবস্থান ছিল । একমাত্র শ্বেতাঙ্গরা ব্যাতীত এবং ক্লাবের কর্মচারী, বয় বেয়ারা, দারোয়ান ছাড়া এদেশীয় কেউ সে ক্লাবের ধারে কাছে যেতে পারতো না । ক্লাবের সামনের সাইনবোর্ডে লেখা ছিল ডগ এন্ড ইন্ডিয়ান প্রহিবিটেড । সন্ধ্যা হতেই ইংরেজরা এই ক্লাবে এসে মদ খেয়ে নাচ, গান এবং আনন্দ উল্লাস করতো । আত্মগোপনকারী বিপ্লবীরা ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের জন্য নুতনভাবে পরিকল্পনা শুরু করে । চট্টগ্রাম শহরের কাছে দক্ষিণ কাট্টলী গ্রামে ঐ ক্লাবেরই একজন বেয়ারা যোগেশ মজুমদারের বাড়িতে বিপ্লবীরা আশ্রয় পেলেন । ১৯৩২সালের ১০ই আগষ্ট ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণের দিন ধার্য করা হয় । শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর নেতৃত্বে সাতজনের একটা দল সেদিন ক্লাব আক্রমণ করতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে ফিরে আসে । শৈলেশ্বর চক্রবর্তীর প্রতিজ্ঞা ছিল ক্লাব আক্রমণের কাজ শেষ হবার পর নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার যদি সুযোগ থাকে তবুও তিনি আত্মবিসর্জন দেবেন । তিনি পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন । গভীর রাতে কাট্টলীর সমুদ্রসৈকতে তার মৃতদেহ সমাহিত করা হয় । মাষ্টারদা ১৯৩২সালের সেপ্টেম্বর মাসে ক্লাবে হামলা করার সিদ্ধান্ত নেয় । এই আক্রমণের দায়িত্ব তিনি নারী বিপ্লবীদের উপর দেবেন বলেন মনস্থির করেছিলেন । কিন্তু সাতদিন আগেই পুলিশের হাতে পুরুষবেশী কল্পনা দত্ত ধরা পরে গেলে আক্রমণে নেতৃত্বের ভার পড়ে একমাত্র নারী বিপ্লবী প্রীতিলতার উপর । ২৩শে সেপ্টেম্বর এ আক্রমণে প্রীতিলতার পরনে ছিল মালকোচা দেওয়া ধুতি আর পাঞ্জাবী চুল ঢেকে দেবার জন্য মাথায় সাদা পাগড়ি পায়ে রবার সোলের জুতা । ইউরোপীয় ক্লাবের পাশেই ছিল পাঞ্জাবীদের কোয়ার্টার । এর পাশ দিয়ে যেতে হবে বলেই প্রীতিলতাকে পাঞ্জাবী ছেলেদের মত পোষাক পড়ানো হয় । আক্রমণে অংশ নেয়া কালীকিংকর দে ও বীরেশ্বর রায়, প্রফুল্ল দাস এবং শান্তি চক্রবর্তী পোষাক ছিল ধুতি আর শার্ট । লুঙ্গি আর শার্ট পরনে ছিল মহেন্দ্র চৌধুরী, সুশীল দে আর পান্না সেন এর । বিপ্লবীদের আশ্রয়দাতা যোগেশ মজুমদার বিপ্লবীদের দেয়া তার গোপন নাম ছিল জয়দ্রথ ক্লাবের ভিতর থেকে রাত আনুমানিক ১০টা ৪৫ এর দিকে আক্রমণের নিশানা দেখানোর পরেই ক্লাব আক্রমণ শুরু হয় । সেদিন ছিল শনিবার প্রায় চল্লিশজন মানুষ তখন ক্লাবঘরে অবস্থান করছিল । তিন ভাগে বিভক্ত হয়ে আগ্নেয়াস্ত্র হাতে বিপ্লবীরা ক্লাব আক্রমণ শুরু করে । পূর্বদিকের গেট দিয়ে ওয়েবলি রিভলবার এবং বোমা নিয়ে আক্রমণের দায়িত্বে ছিলেন প্রীতিলতা শান্তি চক্রবর্তী আর কালীকিংকর দে র । ওয়েবলি রিভলবার নিয়ে সুশীল দে আর মহেন্দ্র চৌধুরী ক্লাবের দক্ষিণের দরজা দিয়ে এবং ৯ ঘড়া পিস্তল নিয়ে বীরেশ্বর রায়, রাইফেল আর হাতবোমা নিয়ে পান্না সেন আর প্রফুল্ল দাস ক্লাবের উত্তরের জানালা দিয়ে আক্রমণ শুরু করেছিলেন । প্রীতিলতা হুইসেল বাজিয়ে আক্রমণ শুরুর নির্দেশ দেবার পরেই ঘন ঘন গুলি আর বোমার আঘাতে পুরো ক্লাব কেপে কেপে উঠছিল । ক্লাবঘরের সব বাতি নিভে যাবার কারনে সবাই অন্ধকারে ছুটোছুটি করতে লাগল । ক্লাবে কয়েকজন ইংরেজ অফিসারের কাছে রিভলবার ছিল । তারা পাল্টা আক্রমণ করল । একজন মিলিটারী অফিসারের রিভলবারের গুলিতে প্রীতিলতার বা পাশে গুলির আঘাত লাগে । প্রীতিলতার নির্দেশে আক্রমণ শেষ হলে বিপ্লবী দলটার সাথে তিনি কিছুদূর এগিয়ে আসেন । পুলিশের রিপোর্ট অনুযায়ী সেদিনের এই আক্রমণে মিসেস সুলিভান নামে একজন নিহত হয় এবং চারজন পুরুষ এবং সাত জন মহিলা আহত হয় ।
পাহাড়তলী ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণ শেষে পূর্বসিদ্বান্ত অনুযায়ী প্রীতিলতা পটাসিয়াম সায়ানাইড মুখে পুরে দেন । কালীকিংকর দে র কাছে তিনি তার রিভলবারটা দিয়ে আরো পটাশিয়াম সায়ানাইড চাইলে কালীকিংকর তা প্রীতিলতার মুখের মধ্যে ঢেলে দেন ।
ইউরোপীয় ক্লাব আক্রমণে অংশ নেয়া অন্য বিপ্লবীদের দ্রুত স্থান ত্যাগ করার নির্দেশ দেন প্রীতিলতা । পটাসিয়াম সায়ানাইড খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়া প্রীতিলতাকে বিপ্লবী শ্রদ্ধা জানিয়ে সবাই স্থান ত্যাগ করে । পরদিন পুলিশ ক্লাব থেকে ১০০ গজ দূরে মৃতদেহ দেখে পরবর্তীতে প্রীতিলতাকে সনাক্ত করেন । তার মৃতদেহ তল্লাশীর পর বিপ্লবী লিফলেট অপারেশনের পরিকল্পনা রিভলবারের গুলি, রামকৃষ্ণ বিশ্বাসের ছবি এবং একটা হুইসেল পাওয়া যায় । ময়না তদন্তের পর জানা যায় গুলির আঘাত তেমন গুরুতর ছিল না এবং পটাশিয়াম সায়ানাইড ছিল তার মৃত্যুর কারণ ।
তথ্যঃ গুগল খোঁজ যন্ত্র
০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪৯
আমি মিন্টু বলেছেন: জানা নাই তবে চেষ্টা করবো । জানলে শেয়ার করবো ।
২| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:৪২
ব্লগার মাসুদ বলেছেন: চমৎকার তর্থ্যপূর্ণ্য পোস্টে ভাললাগা জানবেন ।
০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ২:০৮
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ২:১৫
লেখোয়াড়. বলেছেন:
স্যালুট প্রীতি দিদিকে। আমাদের বিপ্লবী অনুপ্রেরণা।
০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৪
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ লেখোয়ার ব্রাদার । বহুদিন পরে আপনারে দেখে ভালই লাগলো ।
৪| ০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:০৪
মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার শেয়ার ৩য় ভালো লাগা । শ্রধা জানাই প্রীতি দিদি কে ।আপনাকেও ধন্যবাদ সুন্দর পোস্টটি শেয়ার করার জন্য ।
০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭
আমি মিন্টু বলেছেন: এখানে ক্যচালি পোস্ট দিলেই ভালো হত কেননা আমাদের পোস্ট নির্বাচিত পাতায় নিতে
মডারেত গণ নতুন বউয়ের মত লজ্জা পায় ।
৫| ০২ রা জুন, ২০১৫ বিকাল ৪:২৪
কালের সময় বলেছেন: অসাধারণ সুন্দর একটি পোস্ট । ভালো লাগলো । @ লেখোয়াড় বলেছেন
স্যালুট প্রীতি দিদিকে। আমাদের বিপ্লবী অনুপ্রেরণা।
০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯
আমি মিন্টু বলেছেন: এখানে ক্যচালি পোস্ট দিলেই ভালো হত কেননা আমাদের পোস্ট নির্বাচিত পাতায় নিতে
মডারেত গণ নতুন বউয়ের মত লজ্জা পায় ।
৬| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৬
মিন্টুর নগর সংবাদ বলেছেন: ভালো ভালো .....................
০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৯
আমি মিন্টু বলেছেন: এখানে ক্যচালি পোস্ট দিলেই ভালো হত কেননা আমাদের পোস্ট নির্বাচিত পাতায় নিতে
মডারেত গণ নতুন বউয়ের মত লজ্জা পায় ।
৭| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫৭
সুমন কর বলেছেন: কেমন আছেন?
০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪২
আমি মিন্টু বলেছেন: আরে সুমন দাদু যে আছি ভাই ভালই । আপনে আর বৌদি ভালো আছে
৮| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৬
আমি মিন্টু বলেছেন: এখানে ক্যচালি পোস্ট দিলেই ভালো হত কেননা আমাদের পোস্ট নির্বাচিত পাতায় নিতে
মডারেত গণ নতুন বউয়ের মত লজ্জা পায় ।
০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৮
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ মিন্টু তোকে ।
৯| ০২ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৫১
বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: ভালো লাগলো ।
০৩ রা জুন, ২০১৫ সকাল ৯:৪৯
আমি মিন্টু বলেছেন:
১০| ০৩ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৫
ভয়ংকর বিশু বলেছেন: সালাম সালাম হাজার সালাম। লেখক আপনাকেও বিপ্লবী লাল সালাম।
০৩ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭
আমি মিন্টু বলেছেন: আপনারেও ধন্যবাদ ।সেই সাথে ধন্যবাদ ।
১১| ০৩ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৩
প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ
১২| ০৩ রা জুন, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১৬
ক্থার্ক্থা বলেছেন: দারুন ভালো লাগা রইল ।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা জুন, ২০১৫ দুপুর ১:০৩
নীল জানালা বলেছেন: ওয়াহেদেদার অর্থ কি? জানা থাকলে শেয়ার করার অনুরোধ রইল।