নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ঘরটির জন্য আমরা কোন স্পেশাল ক্যারেক্টার / ইমোটিকন গ্রহন করছি না।\nশুধুমাত্র সংখ্যা ও যে কোন সাধারন ক্যারেক্টার ব্যবহার করুন।\n

আমি মিন্টু

আমি মিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বাঙ্গালী কনে সাজলে তাকে অনেক সুন্দর লাগে তবে উপযুক্ত বয়স হলে । (২য় পর্ব)

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭


একজন বাঙ্গালী কনে সাজলে তাকে অনেক সুন্দর লাগে তবে উপযুক্ত বয়স হলে । (প্রথম পর্ব)
বাংলাদেশের বিয়ের পক্ষসমূহ

বরপক্ষ
বাংলাদেশের বিয়ের ক্ষেত্রে বরের পক্ষ থেকেই সাধারণত বিয়ের প্রস্তাব, কনেপক্ষের নিকট পেশ করা হয়, তাই বরপক্ষ, বাংলাদেশের বিয়েতে একটি সক্রীয় অংশ। বরপক্ষ, বিয়ের অনুষ্ঠানের মধ্যে বৌভাত বা ওয়ালিমার আয়োজন করে থাকে। সাধারণত বিয়ের পর বরপক্ষের বাড়িতেই কনেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং কনে ঐ বাড়িতেই আজীবনের জন্য বসত গড়েন।
কনেপক্ষ
কনেপক্ষ বা কন্যাপক্ষ, বাংলাদেশের বিয়েতে একটি নিষ্ক্রীয় অংশ। সাধারণত কনেপক্ষ থেকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়া হয় না। তবে দেয়ার প্রয়োজন হলে সাধারণত 'ঘটক' নামক তৃতীয়পক্ষের শরণাপন্ন হতে দেখা যায়। গ্রামেগঞ্জে, এমনকি শহরাঞ্চলেও কনেপক্ষ অনেকটা কন্যাদায়গ্রস্থ বলে মনে হয়। কারণ অনেকক্ষেত্রেই যৌতুক নামক আপাতবিলুপ্ত একটি সংস্কৃতির নতুন সংস্করণ হিসেবে কনেপক্ষকে, বিয়ের সময় বিপুল পরিমাণ আসবাব-সম্পদ কনের সাথে দিয়ে দিতে হয় বরের বাড়িতে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপটে কনেপক্ষ যথেষ্ট স্পর্শকাতর। কারণ কোনো কারণে নির্ধারিত বিয়ে ভেঙ্গে গেলে ঐ কনের জন্য, এমনকি ঐ পরিবারের অন্য মেয়ের জন্যও বর পাওয়া বা নতুন বিয়ে ঠিক করা কষ্টসাধ্য হয়ে উঠে, অনেক ক্ষেত্রে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এমতাবস্থায় নিজেদের স্থান ত্যাগ করতে বাধ্য হয় অনেক কনেপক্ষ। শহরাঞ্চলে এই প্রকোপ কম হলেও একেবারে অপ্রতুল নয়।
ঘটক

ঘটক মূলত একজন ব্যক্তি, যিনি বর এবং কনেপক্ষের মধ্যে মধ্যস্থতা করেন এবং বিয়েকে শেষাবধি সুসম্পন্ন করার জন্য পরিশ্রম করেন। ঘটকের এই কাজকে ঘটকালি বলা হয়। আঞ্চলিক ভাষায় অনেক সময় ঘটককে রায়বার বা আয়ভারও বলা হয়ে থাকে। ঘটকালি সবসময়ই একটা ব্যবসা নয়, বরং ক্ষেত্রবিশেষে একটি সামাজিক বা পারিবারিক দায়িত্বও হয়ে ওঠে। যদিও অনেকে একে ব্যবসা হিসেবে নিজের পেশা করে নিয়েছেন। বাংলাদেশে, ঘটক পাখি ভাই ঘটকালিতে বিশেষ সুনামধারী একজন ব্যক্তি, যিনি ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দ থেকে এই ব্যবসায়ের সাথে জড়িত এবং মার্চ ২০১০ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৮,০০০ বিয়ে দিয়েছেন বলে জানা যায়। তাঁর প্রকৃত নাম কাজী আশরাফ হোসেন হলেও অনেকেই তাঁকে পাখি ভাই নামেই চিনে থাকেন। বাংলাদেশের সমাজে ব্যবসায়িক ঘটকালির ব্যাপারটা ঘটে অনেকটাই লোকচক্ষুর আড়ালে, গোপনে। তাছাড়া ঘটকালির মাধ্যমে যারা বিয়ে করেন তারা প্রায় কেউই বিয়ের আগে বা পরেও এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে চান না। ঘটকালির কাজটি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ঘুরে ঘুরে করতে হলেও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নে অনেকেই ঘটকালির কাজটিকে ইন্টারনেটভিত্তিক করে নিচ্ছেন।
অঞ্চলভেদে বাংলাদেশের বিয়ে
ঢাকা অঞ্চলের বিয়ে


ঢাকা অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ঢাকার পুরোন বাসিন্দা "ঢাকাইয়াদের বিয়ে। এছাড়াও ঢাকায় আবাস করেছে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা মানুষেরা, আর তাই তাদের সম্মিলিত সংস্কৃতির মিথষ্ক্রীয়ায় তৈরি হয়েছে একটি মিশ্র সংস্কৃতি। এছাড়াও ঢাকায় বসবাসরত উচ্চবিত্তদের দ্বারা প্রবৃদ্ধি লাভ করেছে উচ্চবিত্তের, পরম ব্যয়বহুল আরেক ধরণের বিয়ের রীতি, যেখানে বিয়ের ধর্মীয় রীতি-নীতিগুলো অনেক ক্ষেত্রেই শাস্ত্রীয় বিধি-নিষেধের তোয়াক্কা না করে স্বীয় বৈশিষ্ট্য ধারণ করেছে, এবং বিয়ের রীতিতে ধার করেছে বহির্দেশীয় সংস্কৃতির উপজীব্য।

ঢাকাইয়া বিয়ে
সাধারণত ঢাকা, বিশেষ করে পুরোন ঢাকার বাসিন্দাদের ঢাকাইয়া বলা হয়। ঢাকাইয়া বিয়েতে আনুষ্ঠানিকতার বাহুল্য দেখা যায়। বিয়ের প্রস্তাব দেয়ার পরে, বিয়ে সংক্রান্ত উভপক্ষের যাবতীয় আলোচনার জন্য পানচিনি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন পেশাজীবি ঘটক, যাদেরকে বলা হয় মোতাসা। পানচিনি অনুষ্ঠান থেকে ইতিবাচক সাড়া পেলে বিয়ের সম্ভাব্য দিনক্ষণ এবং লেনদেনের বিষয়টি নিশ্চিত করার জন্য আয়োজন করা হয় মোতাসা-রাই বা 'পাকাকথা' অনুষ্ঠানের এ অনুষ্ঠানে বিয়ের কথা পাকা করা হয়। সব অনুষ্ঠানেই মুখরোচক খাবারের আয়োজন থাকে। এরকম খাদ্যপর্বকে ঢাকাইয়া ভাষায় বলা হয় 'খাস আপ্যায়ন'। মূল বিয়ে অনুষ্ঠানের কয়েকদিন আগে অনুষ্ঠিত হয় হলদি বা তেলাই, যে অনুষ্ঠানে গোসলের আগে বর ও কনের গায়ে হলুদবাটা মাখানো হয়। আয়ুর্বেদিকভাবে বিশ্বাস করা হয় হলুদ, বিয়ের আগে বর-কনের গায়ের রং উজ্জ্বল করবে। বিয়ের প্রথম থেকে শেষাবধি আত্মীয়স্বজনের অংশগ্রহণ আর গান-বাজনার মাধ্যমে এক আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয়। বর ও কনের বাড়িতে আলাদাভাবে তেলাইয়ের আয়োজন হয়ে থাকে। বরপক্ষ, মিষ্টিসহ বিভিন্ন উপাচার নিয়ে কনের বাড়িতে উপস্থিত হন; তেমনি কনেপক্ষের লোক উপস্থিত হন বরপক্ষের বাড়িতে। এসকল উপাচারের মধ্যে অবশ্যই থাকে দুটি বড় মাছ, যার একটি বরের প্রতীক, অন্যটি কনের। বরের প্রতীক মাছটির মুখে গুঁজে দেওয়া হয় একটি সিগারেট, কখনও মাছের মাথায় পরিয়ে দেয়া হয় গামছা; আর কনের প্রতীক মাছটির মুখ ঢেকে দেওয়া হয় একটুকরো কাপড় দিয়ে। এই মাছগুলো যে কাটে, তার জন্য উপহারস্বরূপ মাছের ভেতর দেওয়া হয় অর্থ। হলুদপর্ব শেষ হলেই শুরু হয় রং ছিটানোর খেলা, যা হিন্দুধর্মের হোলি উৎসবের অনুরূপ। এরপর বর ও কনের বাড়িতে আলাদাভাবে আয়োজন করা হয় আইবুড় ভাত নামের অনুষ্ঠান, যার আরেক নাম কুমারী ভাত। আইবুড় মানে অবিবাহিত অবস্থায় নিজের বাড়িতে বর বা কনের শেষ খাওয়া। উল্লেখ বাহুল্য হলেও বলতে হয়, এ অনুষ্ঠানেও থাকে প্রচুর খাবারের আয়োজন।এরপর আসে বিয়ের মূল আনুষ্ঠানিকতা। আগে কার্ড ছেপে দাওয়াত পাঠানোর রেওয়াজ ছিল না, এই কাজটি করা হতো লবঙ্গ উপহার দিয়ে। সেসময় কমিউনিটি সেন্টার ভাড়া করারও কোনো প্রচলন ছিল না। তাই গলির মোড়ে কিংবা এলাকার মসজিদে বিয়ের কাবিননামা লেখার কাজ সেরে নেয়া হতো। এরপর খাওয়াদাওয়া, উপহার প্রদান আর আতশবাজি ফোটানোর উৎসব চলতো বিয়ে বাড়িতে। বিয়ের পরও আরো মাসখানেক রয়ে যায় ঢাকাইয়া বিয়ের উৎসবের এই আমেজ। বিয়ের পর কনের পিতৃগৃহে বর আর কনের বেড়াতে যাওয়াকে বলা হয় ফিরোল্টা (ফির+উল্টা বা শ্বশুড় বাড়িতে আসা কনের উল্টো ফিরে যাওয়া)। সাম্প্রতিককালে (২০১১) কোনো কোনো আচার-প্রথা হারাতে বসলেও অধিকাংশই এখনো টিকে আছে।


চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিয়ে
বাংলাদেশের চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাঙালি ছাড়াও বাস করে অনেক অনেক আদিবাসী। মূলত এই অনুচ্ছেদে চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঙালি বিয়ের রীতি আলোচিত হয়েছে। চট্টগ্রামের বিয়ে সাধারণত হয় বেশ আড়ম্বরপূর্ণ। বিয়ের প্রাথমিক কার্যকলাপ অন্যান্য অঞ্চলের মতোই সম্পন্ন হয়। তবে বিয়ের আগে আয়োজন করা হয় বউ জোড়নি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানে বর ও কনের মধ্যে আলাপ করিয়ে দেয়াই এর মূল লক্ষ্য। এজন্য বউ জোড়নি অনুষ্ঠানে কনেকে সাজিয়ে বরের সামনে উপস্থিত করা হয়। জোড়নি অনুষ্ঠানটি অনেকটাই "এ্যাঙ্গেজমেন্ট" অনুষ্ঠানের সাথে তুলনীয়। চট্টগ্রামের আরেকটি বিচিত্র আয়োজন হচ্ছে 'ঘরজামাই বিয়া'। চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঙালি বিয়েতে বিয়ের পর কনের বাড়িতে বরের থেকে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে, যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ঘরজামাই বিয়া।

কুমিল্লা অঞ্চলের বিয়ে
কুমিল্লার বিয়েতে গায়ে হলুদ হতো প্রাকৃতিক উপাদান দিয়ে। বাড়ির উঠানে চৌকি পেতে তাতে চাদর বিছিয়ে বানানো হতো গায়ে হলুদের স্টেজ, বাঁশ বা কলা গাছ দিয়ে বানানো হতো স্টেজের সম্মুখভাগ। বিয়ে বাড়ি সাজানো হতো রঙিন কাগজের তৈরি রিং জোড়া দিয়ে কিংবা রঙিন কাগজ ত্রিকোণা করে কেটে সুতায় ঝুলিয়ে। গায়ে হলুদের জন্য বরের বাড়ি থেকে কনের জন্য এবং কনের বাড়ি থেকে বরের জন্য হলদে রঙের পোষাক, জুতা, টাওয়্যাল ইত্যাদি পাঠানো হতো। হলুদের দিনে বরের বাড়ি থেকে হলুদের জিনিসপত্রের সাথে আরো পাঠানো হতো বড় মাছ; সেই মাছের মুখে পুরে দেয়া হতো টাকা। রীতি অনুসারে যে মাছ কাটতেন, তিনি এই টাকাটা পেতেন। গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে লোকগীতির প্রচলন ছিল। কনের গায়ে হলুদের পরে তার গোসলের পানি বহন করে আনতেন কনের বড় বোনের জামাই বা দুলাভাই। এই পানি দিয়েই কনের গায়ে হলুদোত্তর গোসল করানো হতো। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপহার নামক এক প্রকার রসাত্মক চিঠির প্রচলন ছিল, যা সাধারণত বর-কনের ছোট ভাই-বোনেরা বর-কনের উদ্দেশ্যে লিখে ছাপাতেন। তা আবার ঘটা করে সর্বসমক্ষে পড়ে শোনানো হতো। বিয়ের দিনে, বিয়ের অনুষ্ঠানে বরপক্ষ অংশগ্রহণ করার সময় কনের জন্য বিয়ের পোষাক ও গহনা সাথে করে নিয়ে আসতেন। এই পোষাকের মধ্যে কনের মা, দাদী, নানীসহ কনের ভাই-বোনের জন্যও পোষাক অন্তর্ভুক্ত থাকতো। কনের জন্য আনা আভরণ দিয়ে কনেকে সাজিয়ে বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত করা হতো। তারপর ঘরে কনের সম্মতি নেয়া হতো আর বাইরে, বিয়ের স্টেজে বরের সম্মতি নেয়া হতো। বিয়ের সময় যৌতুকের কোনো উল্লেখ না থাকলেও সামাজিক রীতি অনুসারে কনেপক্ষ শোবার ঘর সাজানোর যাবতীয় জিনিসপত্তর (আসবাবপত্র ইত্যাদি) কনের সাথে প্রদান করা হতো। এছাড়াও বরের জন্য কনেপক্ষ থেকে অবশ্যম্ভাবি ঘড়ি, কলম, স্যুট পাঠানো হতো। বৌভাত সাধারণত হতো বিয়ের কয়েকদিন পর, এবং বৌভাতের দিন কনেপক্ষ বরের বাড়িতে দাওয়াত খেতে যেতেন, সেখানে আপ্যায়ন শেষে তাদের সাথেই কনে ফিরানি-তে (ফিরতি যাত্রায়) বাপের বাড়িতে আসতেন। বর্তমানে এই রীতির অনেকটাই পরিবর্তিত হয়ে গেছে।

সিলেট অঞ্চলের বিয়ে
সিলেট অঞ্চলের বিয়েতে, বিয়ের দিন কিংবা বিয়ের আগে ধামাইল নামের একটি মেয়েলি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়ে থাকে। এ অনুষ্ঠানে সাধারণত মহিলারা গীত গেয়ে থাকেন। সিলেটের বেশ কিছু জনপ্রিয় আঞ্চলিক বিয়ের গান রয়েছে, যেগুলো প্রায় সব বাড়ির নারীরাই জানেন। তাই গীতের সঙ্গে প্রায় সবাই গলা মেলাতে পারে। গীতের তালে তালে নারীরা তুলে ধরেন বরের মেজাজ, কনের চালচলন।

ধামাইল গীত
মেনু
0:00
সিলেটি ধামাইল গানের একটি নমুনা, যাতে নববধুর সম্পর্কে আলোচনা লক্ষণীয়।
এই ফাইলটি শুনতে অসুবিধা হচ্ছে? মিডিয়া সাহায্য দেখুন।

সিলেটি বিয়ের গানের একটি নমুনা উল্লেখ করা হলো

দেখছি কইন্যার মাথা ভালা ডাব নারিকেল জুড়ারে
দেখছি কইন্যার দাঁত ভালা আনারের দানারে
দামান্দেরও সাত ভাই সাত ঘুড়া ছুয়ারী
একেলা দামান রাজা চৌদল চুয়ারী
চৌদলের কিনারে পড়ে হীরা লাল মতিরে
চল যাই চল যাই দামান দেখিবারে।

আবার এই গীতের পাশাপাশি, কখনও কনেকে ঘিরে, কখনও আলাদাভাবে নারীরা একত্রিত হয়ে কোমরে শাড়ি প্যাঁচিয়ে বৃত্তাকারে ঘুরে ঘুরে হাততালি দিয়ে মাটিতে পা দিয়ে তাল ঠুকে ঠুকে নাচতে থাকেন। নাচের তাল কেবল একটিই- একটু সামনে, সকলে একত্রে এগিয়ে গিয়ে একবার হাততালি, আবার পিছিয়ে এসে পরবর্তি হাততালির প্রস্তুতি। তবে অধুনা বিয়েতে এজাতীয় গানের আয়োজন খুব কমে এসেছে, এবং এজাতীয় পারিবারিক আড্ডায় হিন্দী গান ও মডার্ণ ড্যান্সের উপস্থিতি লক্ষণীয়।

সিলেট অঞ্চলের বিয়েতে একসময় মুসলমানী রীতিতে বিয়ের মধ্যেও হিন্দুরীতির অনেককিছুই স্থান পেতো। যদিও সেসময়ে বিয়েতে প্রাকৃতিক উপকরণের প্রাধান্য থাকার কারণে অনেক ক্ষেত্রে মনে হতো যে বিয়ের রীতি হিন্দুরীতির কাছাকাছি, কেননা হিন্দুরীতির অনেকাংশ জুড়েই ছিল প্রকৃতির পূজা আর প্রাকৃতিক উপাদানের প্রাধান্য। তবে এও সত্য যে ইসলাম ধর্মে উল্লেখ নেই এমন অনেক আচারই হিন্দু ধর্মের প্রভাবে তখনই স্থান করে নেয় মুসলমানী বিয়ের রীতিতেও। এসকল আচারের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গায়ে হলুদের পুরো অনুষ্ঠান; গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে বোন কর্তৃক ভাইকে রাখি বন্ধন; বিয়ের দিনে বরের গোসলের আগে কাস্তে দিয়ে পানিতে বিশেষ আচার পালন, মাথার উপর কয়েক টুকরা ঘাস ঘুরিয়ে অজ্ঞাত অশুভ প্রভাব থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা ইত্যাদি। বর্তমানে প্রেক্ষিত ২০১১ ধর্মনির্বিশেষে মূলত অর্থের প্রাধান্য থাকে। বিশেষত সিলেট অঞ্চলের লোকেরা বিলেতে এবং মধ্যপ্রাচ্যে থাকার কারণে তাঁদের আনীত রেমিটেন্সের প্রভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানাদি হয় অর্থের জাঁকজমকপূর্ণ। অনেক সময় বাহুল্য আচরণাদি স্থান করে নেয় বিয়ের অনুষ্ঠানে। যেমন: গায়ে হলুদের দিনে বরপক্ষ বা কনেপক্ষের সকল পুরুষ একরঙের পাঞ্জাবি ধারণ, সকল নারী একরঙের শাড়ি বা সালোয়ার কামিজ ধারণ; বিয়ের অনুষ্ঠানে পার্টি স্প্রে'র ব্যবহার ইত্যাদি। সিলেট অঞ্চলের বিয়েতে গাড়ির বহর একটি সাধারণ এবং নৈমিত্তিক অনুষঙ্গ। সাধারণত বরপক্ষ কতটি গাড়ি নিয়ে বরযাত্রী গেলেন, তা আভিজাত্য প্রকাশের একটি মাধ্যম। অনেক ক্ষেত্রে একই এলাকার মধ্যে এক বাড়ির সাথে অন্য বাড়ির বড়ত্ব প্রকাশের মাধ্যমও হয় এই গাড়িবহর।
গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে মঞ্চ সাজানোর ক্ষেত্রে কাঁচাফুল, গাছের পাতা ইত্যাদির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায় প্রেক্ষিত ২০০৯১১। অধুনা মেঝেতে কার্পেটের বদলে একটি বিশেষ কৌশল অবলম্বন করে অলঙ্করণ করা হয়। মাটির মেঝেতে কাঠের গুড়া আর আইকা আঠা মিশিয়ে একপ্রকারের মণ্ড তৈরি করা হয়, যার সাথে রং মিশিয়ে মেঝেতে নকশাকারে বসানো হয়। তারপর অতিরিক্ত অনুষঙ্গের প্রয়োজন হলে [সবুজ রং দেখাতে] মটরশুঁটি, [সাদাটে রং দেখাতে] মটর ইত্যাদি বসানো হয়। কিছুক্ষণ উন্মুক্ত অবস্থায় রেখে দিলে এগুলো জমে গিয়ে মাটিতে কার্পেটের মতো আবরণ ধারণ করে। এর দুপাশে ফুল (সাধারণত কাঁচা ফুল) দিয়ে সারি তৈরি করা হয়। এই ফুলবেষ্টিত কার্পেট মাড়িয়ে বর বা কনে গিয়ে গায়ে হলুদের মঞ্চে আসীন হোন।
বরের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে কনেপক্ষ, কিংবা কনেপক্ষের অনুষ্ঠানে বরপক্ষ সাধারণত অংশগ্রহণ করেন না। আর বরপক্ষের গায়ে হলুদে কনে, কিংবা কনেপক্ষের অনুষ্ঠানে বরের উপস্থিতি প্রায় নিষিদ্ধ এবং অনেক ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূত এমনকি অমঙ্গল হিসেবেও দেখা হয়। এই অবস্থা ধর্মনির্বিশেষে সকল বিয়েতেই দেখা যায় প্রেক্ষিত ২০১১।

সিলেট অঞ্চলের বিয়েতে কন্যাপক্ষ, মেয়েকে বিয়ে দেয়ার সময় সংসারের প্রয়োজনীয় সকল আসবাব তৈরি করে দিয়ে থাকে। ধারণা করা যায়, একসময় সিলেটে যৌতুক প্রথা হিসেবে এর প্রচলন হয়। তবে এখন আর তা যৌতুক হিসেবে নয়, বরং একটা রেওয়াজ হিসেবেই কন্যাপক্ষের উপর বর্তায়; আবার তা না দিলে অনেক সময় বৌ-কে শ্বশুড়বাড়ির কথা শুনতে হয়, যা অনেকটাই যৌতুকপ্রথার অনুরূপ। তবে সম্ভ্রান্ত পরিবারে বৌ-কে কথা শুনতে না হলেও কনেপক্ষের, আসবাব না দেয়াটাকে সামর্থের অভাব ধরা হয় এবং তা একটা আর্থিক ব্যর্থতা হিসেবে ধরে নেয়া হয়। সিলেট অঞ্চলে, মুসলমানী বিয়েতে এই আসবাব বলতে পিঁড়ি, জায়নামাজ থেকে শুরু করে বিছানা, ড্রেসিং টেবিল, সোফা, ফ্রিজ পর্যন্ত সবই বোঝায়; তবে কুসংস্কারবশত ঝাড়ু আর পাটা (শিল-পাটা) সাধারণত দেয়া হয় না। আবার বরপক্ষ থেকে, কনের পিতা, বড় ভাই প্রমুখ বাদে মা, ছোট ভাই-বোন, চাচী, ফুফু, নানা-নানী প্রমুখ সকলকে (মোটামুটি হিসেবে একান্নবর্তী পরিবারের অধিকাংশ মানুষকে) এবং যে মৌলভী কনেকে ইসলাম শিক্ষা দিয়েছেন তাঁকে, ব্যবারী 'কাপড় (ব্যবহারী কাপড়) দিয়ে থাকেন। এছাড়াও বরের বাড়িতে বিবাহীত আত্মীয়-স্বজন যাঁরা আসেন, সাধারণত বরের আত্মীয় সম্পর্কের ভাই-বোন-শ্রেণীয়দেরকে কাপড় উপহার দেয়া হয়।
সিলেটি বিয়ের 'উপহার'
'উপহার' লেখা হতো কবিতার ছন্দে ভাই-ভাবির উদ্দেশ্যে
উপহার লেখা হতো কবিতার ছন্দে ভাই-ভাবির উদ্দেশ্যে
'উপহার' কখনও হতো পুরোন কোনো গৎবাঁধা ফরম্যাটে
উপহার কখনও হতো পুরোন কোনো গৎবাঁধা ফরম্যাটে


অতীতে, সিলেট অঞ্চলের বিয়েতে লাঠালাঠির প্রচলন ছিল বলে জানা যায়। কনের বাড়িতে ঢুকতে বরপক্ষকে লাঠালাঠিতে হারাতে হতো কনেপক্ষকে। এই লাঠালাঠি মোটেই কোনো পূর্বশত্রুতার জের নয়, বরং রীতির বহিঃপ্রকাশ ছিল। এভাবে যতক্ষণ, এমনকি যতদিন বরপক্ষ, কনেপক্ষকে হারাতে না পারে, ততদিন তারা কনেপক্ষের বাড়ির সামনে অপেক্ষমান থাকতেন; তারপর হারাতে পারলেই কনেপক্ষের বাড়িতে প্রবেশের সুযোগ হতো। তখনকার বিয়েতে বর বা কনের চেয়ে বয়সে ছোট সকলের নামে বর বা বধুর উদ্দেশ্যে বিশেষ কবিতা সংকলিত করে প্রকাশের প্রচলন ছিল। এসব সংকলনের নাম দেয়া হতো সুখের বাসর, ঘি চমচম, মিলন বার্তা[১] কিংবা উপহার। এই লেখাগুলো হতো কৌতুকপূর্ণ ও চটকদার।
রাজশাহী অঞ্চলের বিয়ে

রাজশাহী অঞ্চলের বিয়েতে থাকে পিঠার জয়জয়কার। বিয়ের কথাবার্তা ঠিক হওয়ার পর আঞ্চলিক গীতের তালে তালে বর-কনেকে স্ব স্ব বাড়িতে মিষ্টিমুখ করানো হয়, এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় থুবড়া। সাধারণত ক্ষীর ও আন্ধাষা তেলে ভাজা রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী মিষ্টি পিঠাবিশেষ তৈরি করা হয়। এই মিষ্টি সাধারণত পাড়া-প্রতিবেশীর বাড়ি থেকে তৈরি করে পাঠানো হয় বর-কনের বাড়িতে।
খুলনা অঞ্চলের বিয়ে

খুলনা অঞ্চলে বর আর কনেপক্ষের মধ্যে বিয়ের সময় অনুষ্ঠিত হয় প্রীতি বাকযুদ্ধ। তাও আবার বাংলায় নয়, এই তর্ক চলে পুরোপুরি ইংরেজিতে। এই ইংরেজি তর্কযুদ্ধই খুলনার বিয়ের স্বকীয়তা। বাড়ির প্রধান ফটকে বরপক্ষকে আটকে কনেপক্ষের লোকজন ইংরেজিতে কথোপকথন শুরু করে। তার জবাবে বরপক্ষকেও উত্তর দিতে হয় ইংরেজিতে। শেষ পর্যন্ত যে পক্ষ তর্ক চালিয়ে যেতে অপারগ হয়, তারা পরাজিত হয়। মূলত একপক্ষ, অন্য পক্ষকে লজ্জা পাইয়ে দেয়ার জন্যই এই প্রীতি বাকযুদ্ধ সংঘটিত হয়।

উপসংস্কৃতি
আদিবাসীদের বিয়ে

বাংলাদেশে সব মিলিয়ে ৪৫টি আদিবাসী গোষ্ঠী বসবাস করে। তাদের প্রত্যেকেরই আলাদা আলাদা বিয়ের রীতি রয়েছে। বিয়ে অনুষ্ঠানে কুলার মধ্যে ধান, দুর্বা, আতপ চাল, মিষ্টি, সিঁদুর ইত্যাদি সহকারে বর-কনেকে বরণ করার রীতি বাংলাদেশের অধিকাংশ আদিবাসী সমাজে প্রচলিত। আদিবাসীরা বিশ্বাস করেন এ রীতি নতুন দম্পতির ভবিষ্যৎ জীবন ধন-ধান্যে পরিপূর্ণ করবে। আদিবাসীয় বিশ্বাসমতে, ধান, দুর্বা, আতপ চাল ইত্যাদি বস্তুতে রয়েছে জীবনসার, এবং সিঁদুর হলো আদিবাসীদের যৌনচিহ্ন। আবার বিয়ের আগে বর-কনেকে তেল, হলুদ মেখে স্নান করানোর রীতি প্রায় সব আদিবাসী সমাজেই পালিত হয়, যাকে বলা হয় ‘তেলাই’। আদিবাসীদের বিশ্বাস তেলাইয়ের মাধ্যমে বর-কনেকে পবিত্র করা হয়। যাতে অপদেবতার কুদৃষ্টি বিনষ্ট হতে পারে। আদিবাসী বিশ্বাসে জল অতি পবিত্র এবং এতে সারবস্তু রয়েছে অধিক মাত্রায়। একারণে চাকমা, মগ, টিপরা, দালুই, সাঁওতাল, ওঁরাও, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসীদের মধ্যে বিয়ের পর মঙ্গলঘট থেকে আমপাতা-জামপাতা দিয়ে জল ছিটিয়ে আশীর্বাদ করার রীতি প্রচলিত আছে। বর-কনের জীবন যাতে সুখী হয় তা-ই তাদের আশীর্বাদের মূল উদ্দেশ্য।

বিয়েতে নবদম্পতির ভবিষ্যৎ জীবন কিরূপ হবে চাকমা সমাজে সে পরীক্ষা-রীতি চালু রয়েছে। মহিলারা কলার খোল দিয়ে দুটো নৌকা তৈরি করে একটিতে পান এবং অপরটিতে সুপারি দিয়ে নদীতে ভাসিয়ে দেন। নৌকা দুটি যদি পাশাপাশি ভাসতে থাকে তবে মনে করা হয় নবদম্পতির মিলের সম্ভাবনা। আর যদি বিপরীতমুখো হয়ে ভাসতে থাকে তবে অমিলের সম্ভাবনা। অমিল ঠেকাতে বিপরীতমুখী হয়ে ভাসা নৌকা দুটি টেনে একত্র করে তার নিচ থেকে কলসি ভরে জল এনে নবদম্পতিকে স্নান করিয়ে দেয়া হয়। সাঁওতাল, ওঁরাও, রাজবংশী প্রভৃতি আদিবাসীরাও এই নিয়ম পালন করে থাকেন সামান্য একটু ভিন্ন উপায়ে। বিয়ের পরের দিন বাড়ির আঙিনায় ছোট একটি পুকুর কাটা হয়। তারপর তাতে পানিভর্তি করে বর ও কনেকে সেই পুকুরে পয়সার লুকোচুরি খেলায় নামতে দেয়া হয়। প্রথমে বর একটি পয়সা লুকিয়ে রাখে এবং স্ত্রী তা খুঁজে বের করেন। পরে স্ত্রী তা লুকান এবং বর খুঁজে বের করেন। যদি উভয়েই সফল হন তবে তাদের মধ্যে ভবিষ্যৎ জীবনে দ্বন্দ্ব কলহ দেখা দেয়ার সম্ভাবনা থাকে না। বাংলাদেশের গ্রামবাংলার হিন্দু ও মুসলিম সমাজেও এই পয়সার লুকোচুরি খেলার নিয়ম প্রচলিত আছে।

মণিপুরি

সিলেট, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহসহ বিভিন্ন এলাকায় গোষ্ঠীবদ্ধভাবে মণিপুরি সম্প্রদায়ের লোকেরা বসবাস করে। মণিপুরিদের বিয়ের অনুষ্ঠান ৬ ভাগে বিভক্ত: প্রথমে মাউংকাবা অনুষ্ঠান দিয়ে শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা, এরপর একে একে হাজিবত (মঙ্গলাচরণ), হাইজিং, জামাই বারতন, লুহংরা (বিয়ে) ও মাঙ্গানী চাকখাবা অনুষ্ঠানগুলো ধারাবাহিকভাবে অনুষ্ঠিত হয়। মণিপুরি সমাজের বিয়েতে কোনোপ্রকার যৌতুকপ্রথা নেই।
গারো

ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলার গারোদের সমাজে একসময় বাল্যবিবাহের অনুরূপ "ঠ্যাঙ ধরা বিয়ে" নামক একপ্রকারের বিয়ের প্রচলন ছিল। কনে খুব ছোট থাকাবস্থায় এধরণের বিয়ে হতো। বিয়ের দিন কনের মা কনেকে কোলে নিয়ে বিয়ের কুঠিরে বসতেন। বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকতেন বর এবং গ্রাম্য মোড়ল, আর উভয়পক্ষের আত্মীয়-স্বজন। সবার সামনে বর এসে শ্বাশুড়ির পা চেপে ধরতেন, এবং নিজের সম্মতি জানিয়ে কনেসহ কনের মাকে তাঁর ঘরে যাবার অনুরোধ করতেন। এভাবে বিয়ে সম্পন্ন হতো, আর মেয়ে বড় না হওয়া পর্যন্ত বরের বাড়িতে মেয়ের মাও অবস্থান করতেন এবং মেয়ের দেখাশোনা করতেন।
হাজং
আদিবাসী সমাজ হাজং-এ বিয়ে আছে ৪ ধরনের। তবে সবচেয়ে প্রচলিত হচ্ছে স্বাভাবিক বিয়ে, অন্যান্যগুলো হলো হাঙ্গা, দায়মারা ও দায়পোড়া।
খিয়াং
পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীদের জনগোষ্ঠীর মধ্যে অষ্টম সংখ্যাগরিষ্ট আদিবাসীগোষ্ঠী হলো খিয়াং। রাঙামাটি, কাপ্তাই, বান্দরবানে এঁদের বসবাস। খিয়াং সমাজে বিয়ে, জন্ম-মৃত্যুর মতোই একটি অলঙ্ঘনীয় অধ্যায়, যার আচার-রীতিনীতিও বেশ সামাজিক। পরিবারের গণ্যমান্য ব্যক্তি, নিকটাত্মীয় এবং সমাজের প্রবীণদেরকে সাথে নিয়ে বিয়ের আয়োজন করা বর এবং কনে- উভয়পক্ষের অভিভাবকের জন্যই বাধ্যতামূলক। অন্যথায় গ্রামের গণ্যমান্য ও প্রবীণ ব্যক্তিরা বিয়ের কোনো অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে না। এই রীতির সামাজিক উদ্দেশ্য হলো বিবাহ উপলক্ষে পাত্র-পাত্রীর পরিবারে কি ধরণের সাহায্য-সহযোগিতা প্রয়োজন তা নির্ণয় করা। এরপর বরের বাবা-মা নিকটাত্মীয়সমেত কনের বাড়িতে গিয়ে আলোচনার মাধ্যমে বিয়ের দিন-তারিখ নির্ধারণ করেন। সাধারণত খিয়াং সমাজে পূর্ণিমার সময় বুধ ও বৃহস্পতিবারকে বিয়ের শুভদিন হিসেবে গণ্য করা হয়। ভাদ্র ও কার্তিক মাসে খিয়াং সমাজে বিবাহ অনুষ্ঠান নিষিদ্ধ। বিয়ের দিন বরযাত্রীরা কনের বাড়িতে পৌঁছলে তাদেরকে বিয়ের অনুষ্ঠানস্থলে এনে বসানো হয়। আমন্ত্রিত সকল অতিথির সামনে বর-কনেকে বসিয়ে উভয়ের হাতের উপর হাত রেখে ‘লাকশোঙ’ অনুষ্ঠান করা হয়। এই অনুষ্ঠানে বর-কনেকে মুখোমুখি বসানো হয়, অবশ্য বরের আসন, কনের তুলনায় কিছুটা উঁচুতে হয়। বর-কনের মাঝখানে একটি থালায় সিদ্ধ করা আস্ত একটি মুরগী, এক বোতল মদ ও ভাত রাখা হয়। বর প্রথমে মদ পান করার পর সিদ্ধ করা মুরগীর গলার নিচের অংশ টেনে বিয়ের শুভাশুভ যাচাই করেন। এরপর নবদম্পতি উপস্থিত গুরুজনদের প্রণাম করে আশীর্বাদ গ্রহণ করেন। বিয়ে অনুষ্ঠানের পর বরের হাতে একটি দা আর কনের হাতে একটি কাস্তে তুলে দেয়া হয়- একে খিয়াং সমাজে সৎ জীবনযাপনের প্রতীক এবং আশীর্বাদ হিসেবে গণ্য করা হয়। বিয়ে অনুষ্ঠানের পর বরযাত্রীরা ফিরে গেলেও বরকে কনের বাড়িতে তিন,পাঁচ কিংবা সাতদিন পর্যন্ত থাকতে হয়। এরপর স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারেন বর। স্ত্রীকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফিরে আসার পর বরের বাড়িতে একই রকমের আরেকটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। লাইতু-খিয়াংদের বিবাহ-রীতি অনুসারে বর ও কনে বিয়ের অনুষ্ঠান শেষে বরের বাড়িতে ফিরে এলে সেখানে পুনরায় ‘লাকশোঙ অনুষ্ঠান হয়। শিওরি পই সহ বিয়ে হলে কনের বাড়ীতে এক রাত অবস্থানের পর সকালে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা শেষে বর-কনে উভয়ে বরের বাড়িতে ফিরে যান। ‘শিওরি পই’ অনুষ্ঠানে বর ও কনের পাশে মদের (জু) জাবার কলসির ভেতর পানি ঢেলে দিয়ে কলসির মুখে দুটি সরু নল বসানো হয়। অনুষ্ঠানে আগত গণ্যমান্য অতিথিরা নল দিয়ে কলসি থেকে মদের জাবার পানি পান করেন। বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপনের কারণে কনের মায়ের বুকের দুধের দাবিস্বরূপ মূল্যবান কোনো সামগ্রী বা নগদ অর্থ বরপক্ষকে অবশ্যই দিতে হয়; আগে এক্ষেত্রে ২টি রৌপ্য মুদ্রা দেয়ার প্রচলন ছিল; খিয়াং ভাষায় এই প্রথাকে ‘চিই মন’ বলা হয়। ‘চিই মন’ বাবদ ১০১ টাকা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া যে গ্রাম বা পাড়ায় বিয়ে হয় সেই গ্রাম বা পাড়ার হেডম্যান/কারবারীকে বর-কনে উভয়পক্ষকে ‘চিরিপেইলা’ বাবদ (পূর্বে ৭ টাকা) বর্তমানে ২০১১ ১২ টাকা প্রদান করতে হয়। অবশ্য লাইতু-খিয়াংদের সমাজে ‘চিরিপেইলা’ রীতির প্রচলন নেই। লাকশোঙ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহিত দম্পতি খিয়াং সমাজের স্বীকৃতি লাভ করেন। খিয়াং সমাজের আদি বিবাহ-রীতির বাইরে বর্তমানে ২০১১ বৌদ্ধ ও খ্রিষ্টান ধর্ম অনুসারী খিয়াংরা স্বীয় ধর্মীয় রীতি অনুসরণ করেন এবং পাশাপাশি কিছু সামাজিক আচার-অনুষ্ঠানও পালন করেন। খ্রিষ্ট ধর্মাবলম্বী খিয়াং সমাজের বিবাহ অনুষ্ঠান চার্চের পুরোহিতের মাধ্যমে চার্চের রীতি অনুসারেই হয়ে থাকে।

বিভিন্নদেশে বিদেশীদের বিয়ের রিতিনিতি ।
ছবিতথ্যঃ ইন্টারনেট

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৬

প্রামানিক বলেছেন: দরুণ একটি বিষয় পোষ্টে তুলে এনেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।

২| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৬

মাকড়সাঁ বলেছেন: মনযোগ দিয়ে পুরোটা পড়লাম । খুব ভাল লাগলো .... ছবিগুলো সুন্দর ।

৩| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৯

মোহাম্মদ রাহীম উদ্দিন বলেছেন: চট্টগ্রাম অঞ্চলের বাঙালি বিয়েতে বিয়ের পর কনের বাড়িতে বরের থেকে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে, যাকে স্থানীয় ভাষায় বলা হয় ঘরজামাই বিয়া। X(( X(( বিষয়টি আমার কাছে পরিস্কার নয়। এই রকম কোন কিছু আমার জানা নেই।
আমি চাঁটগার একজন স্থানীয় বাসিন্দা।

৪| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:৫২

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: আমাদের অঞ্চলের মানুষ কি বিয়া করেনা ?
কিছু লিখলেন না যে ?


পোস্টটি নিঃসন্দেহে তথ্যবহুল ও চমৎকার !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.