নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এই ঘরটির জন্য আমরা কোন স্পেশাল ক্যারেক্টার / ইমোটিকন গ্রহন করছি না।\nশুধুমাত্র সংখ্যা ও যে কোন সাধারন ক্যারেক্টার ব্যবহার করুন।\n

আমি মিন্টু

আমি মিন্টু › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন বাঙ্গালী কনে সাজলে তাকে অনেক সুন্দর লাগে তবে উপযুক্ত বয়স হলে । (৩য় ও শেষ পর্ব)

০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৫:৫৯


একজন বাঙ্গালী কনে সাজলে তাকে অনেক সুন্দর লাগে তবে উপযুক্ত বয়স হলে । (প্রথম পর্ব)
একজন বাঙ্গালী কনে সাজলে তাকে অনেক সুন্দর লাগে তবে উপযুক্ত বয়স হলে । (২য় পর্ব)
সাঁওতাল এর বিয়া

সাঁওতালদের মধ্যে প্রচলিত আছে একপ্রকার জোরজবরদস্তিমূলক বিয়ে, যাকে বলা হয় "হুরকাটারা" বা "ইতুত"। তবে এই বিয়ে পাশ্চাত্যের আদিবাসীদের মতো অতোটা বলপূর্বক বিয়ে নয়। আবার সাঁওতালদের মধ্যে আরেক প্রকারের বিয়েরও প্রচলন রয়েছে: তাদের বিশ্বাস, ছোটবেলায় কোনো শিশুর যদি প্রথম দাঁত উপরের মাড়িতে উঠে, তাহলে তার উপর দেবতার কুনজর পড়েছে। এক্ষেত্রে দেবতার কুনজর থেকে বাঁচাতে তাকে কুকুর অথবা শেওড়া গাছ অথবা মহুয়া গাছের সাথে বিয়ে দেয়া হয়; বিয়ের ধরণ অনুসারে এই বিয়েকে ডাকা হয় যথাক্রমে শেতা বাপলা, দাইবান বাপলা, মাতকোম বাপলা। সাঁওতালদের অনেকেই খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী হয়ে যাওয়ায় গীর্জাতে গিয়ে পাদ্রির উপস্থিতিতে বিয়ে করে থাকেন। তবে ধর্মান্তরিত সাঁওতালরা গীর্জা থেকে বাড়ি ফিরে গিয়ে সনাতনী নিয়ম-রীতি পালন করেন।
মগ জাতির বিয়া

ম্রোদের স্বগোত্রের মধ্যে বিয়ে নিষিদ্ধ। তবে অন্যান্য উপজাতির কোনো ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক কদাচিৎ ঘটে থাকে। ম্রো সমাজে দুই প্রকার বিয়ে প্রচলিতঃ

ছেলে মেয়ের পালিয়ে বিয়ে
আলাপ আলোচনার মাধ্যমে বিয়ে

বিয়ের সময় স্বামী কিছু জিনিসপত্র দিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে আসেন স্ত্রীকেও তাঁর বাপের বাড়ি থেকে গয়নাপাতি দিয়ে বিবাহ দেওয়া হয় । এবং মগ সমাজ পিতৃতান্ত্রিক বলে স্ত্রীকে স্বামীর বাড়ি গিয়ে উঠতে হয়। কোনো কারণে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটলে স্বামীর দেয়া সব জিনিসপত্র ফেরত পান তিনি, তেমনি স্ত্রীর গয়নাপাতিও বাবার বাড়িতে ফেরত নিতে পারেন। নারীদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বিয়ে দেখা না গেলেও স্ত্রীর মৃত্যুতে স্বামী নতুন বিয়ে করতে পারেন। মগ সমাজে বহুবিবাহ বা বহুস্বামী গ্রহণের কথা জানা যায় না, বাল্যবিবাহও সচরাচর ঘটে না।

হিজড়াদের বিয়ের কথা
হিজড়ারা সাধারণত বিয়ে করতে পারেন না, কারণ তারা নপুংশক থাকেন। তবে অপারেশনের মাধ্যমে যেসকল হিজড়াকে নারী বানানো সম্ভব হয় তারা সম্পূর্ণ নারী হলেও গর্ভধারণে অক্ষম বলে সন্তানহীন ক্লেষাচ্ছাদিত বিবাহিত জীবনের চেয়ে অবিবাহিত থাকাটাই বেশি পছন্দ করেন।
বাংলাদেশের আইনে বিবাহ

বাংলাদেশের সংবিধান ও আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক সাবালক নাগরিকের বিয়ে করার পূর্ণ অধিকার রয়েছে। আইন অনুযায়ী বিয়ের জন্য বিয়ের সাবালকত্য ধরা হয় পুরুষের জন্য নিম্নে ২১ বছর আর নারীর জন্য নিম্নে ১৮ বছর হতে হবে। এর কম বয়সে বিয়ে করাকে আইনী সমর্থন দেয়া হয় না এবং তা বাল্যবিবাহ হিসেবে পরিগণিত হয়। ক্ষেত্রবিশেষে বাল্যবিবাহ আইনত অপরাধ হিসেবে পরিগণিত হয়। বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ সংক্রান্ত প্রচলিত আইনটি হলো বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ আইন ১৯২৯ যেখানে এজাতীয় বিয়ে সংঘটিত হলে তার বিরুদ্ধে মামলা করার এখতিয়ার দেয়া হয়েছে ইউপি চেয়ারম্যান এবং পৌরসভা বা সিটি কর্পোরেশনের মেয়রকে। ইউনিভার্সাল ডিক্লারেশন অফ হিউমান রাইটসের ১৬(এ) অনুচ্ছেদের বিধানমতে বিয়ে ও বিয়ে বিচ্ছেদ নারী এবং পুরুষের একটি অধিকার৷
মুসলিম বিবাহ আইন

বাংলাদেশে ১৯৩৯ সালের মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন, ১৯২৯ সালের বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালের মুসলিম বিবাহ এবং তালাক রেজিস্ট্রেশন আইন ১৯৮০ সালের যৌতুক নিরোধ আইন প্রভৃতি আইনের সমন্বিত নিয়ম ধারার অধীনে মুসলমান সমাজে আইনী বিয়ে ও আনুষঙ্গিক কার্যক্রম সম্পাদিত হয়। অবশ্য এই যাবতীয় আইনই ইসলামী শরীআতের অন্তর্বর্তি এমনটা বলা যাবে না বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়াহ পরিপন্থি অনেক বিধানও এতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ে একটি ধর্মীয় দায়িত্বই কেবল নয় এটি একটি দেওয়ানী চুক্তিও বটে। এই আইন অনুসারে একটি পূর্ণাঙ্গ বিয়ের জন্য কতিপয় শর্ত পূরণ করতে হয়ঃ

উভয়পক্ষের ন্যুনতম বয়স
পারস্পরিক সম্মতি
দেনমোহর
সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক ২ জন সাক্ষী
আইনী নিবন্ধন ।

এই শর্তানুসারে বরের বয়স কমপক্ষে ২১ এবং কনের বয়স কমপক্ষে ১৮ হওয়া বাধ্যতামূলক। এছাড়া বর-কনেকে সুস্থ মস্তিষ্কের হতে হবে। অতঃপর নারী এবং পুরুষকে ইসলামী বিধান অনুসারে উভয়পক্ষের সাক্ষীর সামনে একজন উকিল বা কাজি'র উপস্থিতিতে সম্মতি জানাতে হয় মুসলিম আইন ও ইসলামী শরীয়াতে কনের প্ররোচনাহীন স্বেচ্ছা-সম্মতি বাধ্যতামূলক। দুজন সুস্থ মস্তিষ্কের প্রাপ্তবয়স্ক সাক্ষী উপস্থিত থাকা বাধ্যতামূলক এবং একজন পুরুষের সাক্ষ্য দুজন নারী সাক্ষ্যের সমান নয়। একজন নারীকে বিয়ে করতে হলে দেনমোহর দেওয়া বাধ্যতামূলক। দেনমোহর হলো একটি আর্থিক নিশ্চয়তা কিছু পরিমাণ অর্থ কিংবা সম্পত্তি যার বিনিময়ে একজন নারী তার বিবাহিত পুরুষ সঙ্গীর জন্য হালাল বা সিদ্ধ হোন। ইসলাম ধর্মমতানুসারে এই দেনমোহর সম্পূর্ণ আদায় করে দিতে হয়, দেনমোহর মাফ হয় না। মুসলিম আইন অনুসারে বিয়ের নিবন্ধন বাধ্যতামূলক এবং এই দায়িত্ব পুরুষের। এই দায়িত্বের অন্যথায় ২ বছর পর্যন্ত বর্ধনযোগ্য মেয়াদের বিনা শ্রম কারাবাস বা ৩০০০ টাকা পর্যন্ত জরিমানা বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারেন। একজন বিবাহিত নারী তার স্বামীর সেবা এবং আনুগত্য করবেন আর বিবাহিত পুরুষ তার স্ত্রীর সম্পূর্ণ দেখভাল করবেন, যাবতীয় দায়িত্ব পালন করবেন এবং স্ত্রীর সুখ শান্তি নিশ্চিত করবেন। ইসলামে পুরুষ এবং নারী উভয়েই পরষ্পরকে তালাক দেবার মাধ্যমে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন, তবে এজন্য বিয়ের সময় কাবিননামায় তালাকে তাওফিজ-এর ক্ষমতা স্ত্রীকে দিতে হয়। তালাক দেবার জন্য মুখে "তালাক" শব্দটি উচ্চারণ করাই যথেষ্ট হলেও আইনীভাবে তা স্বীকৃত হয় না, বিধায় তার লিখিত চুক্তির বিধান রয়েছে। কোনো পুরুষ তার স্ত্রীকে একত্রে কিংবা বিভিন্ন সময়ে তিনটি তালাক দিয়ে দিলে সেই স্ত্রী তার জন্য হারাম বা নিষিদ্ধ হয়ে যান এবং স্বামীকে যাবতীয় দেনমোহর আদায় করে দিতে হয়। অবশ্য ঐ নারী যদি অন্যত্র বিয়ে করেন এবং সহবাসের পর এই নতুন স্বামী যদি স্বেচ্ছায় তালাক দেন বা মৃত্যুবরণ করেন তাহলেই শুধু তিনি পূর্ববর্তি স্বামীর সাথে পুণরায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারেন। পারস্পরিক সমঝোতার ভিত্তিতে যদি এভাবে বিয়ে দেয়া হয় তাহলে তাকে "হিলা বিয়ে" (আঞ্চলিকভাবে কোথাও হিল্লা বিয়ে বলা হয়। মুসলিম আইনে খানিকটা ছাড় থাকলেও ইসলামী শরিয়াহ অনুযায়ী তালাক একটি ঘৃণিত কাজ এবং তা যেন না হয়, সেব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন অপরিহার্য। এজন্য শরীয়াতে তিন মাসে তিনবার তালাক দেবার বিধান রাখা হয়েছে যাতে অন্তর্বর্তি সময়ে উভয়ে, প্রয়োজনে মীমাংসা করে নিতে পারেন।
হিন্দু বিয়ের আইন

হিন্দুশাস্ত্রমতাবেক বিয়ে শুধুই চুক্তি না বরং এটি একটি ধর্মীয় বাধ্যবাধকতা। হিন্দু আইন মূলত হিন্দু ধর্মশাস্ত্রেরই প্রতিরূপায়ন। শাস্ত্রানুযায়ী পুরুষদের অবশ্য পালনীয় ১০টি ধর্মীয় কর্তব্যের Ten sacraments অন্যতম হলো বিয়ে। হিন্দু আইনের দৃষ্টিতে বিয়ে হলো ধর্মীয় কর্তব্য সম্পাদনের উদ্দেশ্যে স্বামী-স্ত্রীর পবিত্র মিলন। হিন্দু বিয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়া কেননা শাস্ত্রানুযায়ী পুত্রসন্তানই বংশের ধারা বজায় রাখতে এবং পিণ্ড দান করতে পারে। হিন্দু আইনানুযায়ী কনের বাবা মা বরের হাতে কনেকে সম্পূর্ণভাবে ন্যস্ত করেন। সনাতন হিন্দু আইনে কনের সম্মতি কিংবা অসম্মতি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা হয় না এবং বিবাহ বিচ্ছেদ এবং পূণর্বিবাহ স্বীকৃত নয়, এমনকি ধর্ম পরিবর্তন, বর্ণচ্যুতি, ব্যাভিচার কিংবা বেশ্যাবৃত্তিও বিবাহ-বিচ্ছেদের কারণ হতে পারে না। হিন্দু শাস্ত্রানুযায়ী যেহেতু বিয়ে কোনো চুক্তি নয় তাই বিয়ের জন্য সাবালকত্ব বিবেচিত হয় না । এই নিয়ম সনাতন হিন্দু আইনে অনুসৃত এবং বাংলাদেশী হিন্দুগণ এই আইন মেনে চলেন। হিন্দু আইনে বিয়ে রেজিস্ট্রেশনের কোনো বিধান নেই। হিন্দু আইন অনুযায়ী একজন নপুংসকও বিয়ে করতে পারে। বাংলাদেশের হিন্দু আইনে বর্ণপ্রথা রয়েছে অর্থাৎ আইনগতভাবে বর-কনেকে অবশ্যই সমগোত্রীয় হতে হবে। ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশে হিন্দু আইনে বিধবা বিবাহ । আইনসম্মতভাবে স্বীকৃত, তবে বাস্তবে এর প্রয়োগ সচরাচর দেখা যায় না। হিন্দু আইনানুযায়ী স্ত্রীর স্বামীর প্রতি অনুগত থাকতে হবে আর স্বামীকে তার স্ত্রীর সঙ্গে বাস করতে ও ভরণপোষণ দিতে হবে। বাংলাদেশের হিন্দু নারীরা হিন্দু ম্যারিড উইমেনস রাইট টু সেপারেট রেসিডেন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স অ্যাক্ট ১৯৪৬ অনুযায়ী কিছু কিছু ক্ষেত্রে পৃথকভা বসবাস করার ও ভরণপোষণ পাবার অধিকার পান যেমনঃ যদি স্বামী কোনো সংক্রামক রোগে আক্রান্ত হন এবং ঐ রোগ স্ত্রীর দ্বারা সংক্রমিত না হয়ে থাকে, কিংবা যদি স্বামী তার স্ত্রীর সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন এবং ঐ খারাপ ব্যবহার এমন হয় যে তা স্ত্রীর জীবনের প্রতি হুমকিস্বরূপ হয় কিংবা স্বামী যদি দ্বিতীয় বিয়ে বা পুনরায় বিয়ে করেন । কিংবা স্বামী যদি স্ত্রীকে তার সম্মতি ছাড়া ত্যাগ করেন কিংবা স্বামী যদি অন্য ধর্ম গ্রহণ করেন অথবা অন্য কোনো আইনগত কারণে স্ত্রী পৃথকভাবে বসবাস ও ভরণপোষণ লাভ করার অধিকারী হন।

বিশেষ বিবাহ আইন
বাংলাদেশে বিশেষ বিবাহ আইন ১৮৭২ অনুযায়ী বিশেষ বিবাহ অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। যেসকল ব্যক্তি মুসলিম হিন্দু, খ্রিষ্টান, ইহুদি, পার্সি, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেননি তাদের মধ্যে এই বিয়ে হতে পারে। তাছাড়া যেসকল ব্যক্তি হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ বা জৈন ধর্ম গ্রহণ করেছেন, এই আইনের মাধ্যমে তাদের জন্য বিয়ের বিকল্প একটি ধরণ নির্ধারণ করা হয়েছে। তাছাড়াও যেসকল বিয়ের বৈধতা সম্পর্কে সন্দেহের অবকাশ রয়েছে । সেসব সুনির্দিষ্ট বিয়ের বৈধতাও নিশ্চিত করা যায় এই আইন দ্বারা। বাংলাদেশে প্রচলিত মুসলিম আইনে বিয়ের একপক্ষ মুসলমান হলে অপরপক্ষ যদি মুসলমান হতে রাজি হয় তাহলে তা বৈধ বিয়েঃ কিন্তু অপরপক্ষ মুসলমান হেত অস্বীকৃত হলে তা অনিয়মিত বিয়ে। খ্রিস্টান আইনেও একই বিধান রাখা হয়েছে। এসকল বিয়েকে বৈধতা দেওয়া হয় বিশেষ বিবাহ আইন অনুসারে তবে এই আইন অনুসারে উভয় পক্ষকেই স্বীয় ধর্ম ত্যাগ করতে হয় এবং তা বাধ্যতামূলক। এক্ষেত্রে এই আইনের অধীনে বিয়ে হলে জাতিগত অসামর্থ্যতা দূরীকরণ আইন, ১৮৫০ অনুসারে হিন্দু, বৌদ্ধ, শিখ ও জৈন ধর্মে বিশ্বাসী কোনো পরিবারের উক্ত সদস্য স্বীয় পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন বলে গণ্য হবেন।

অপসংস্কৃতি
অপসংস্কৃতি শব্দটি মূলত আপেক্ষিক। তবুও বিয়ের ক্ষেত্রে যে সংস্কৃতি সমাজ-রাষ্ট্র, কিংবা বর বা কনে যেকোনো এক পক্ষের জন্য কল্যাণকর নয় সেসকল সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডকে অপসংস্কৃতি আখ্যা দেয়া হচ্ছে। যেমনঃ বাংলাদেশের কতিপয় অঞ্চলে প্রবাসী বর বা কনের সাথে বিয়ে দেয়ার একটি রীতি প্রচলিত। এছাড়াও কোনো কোনো সমাজে ব্যবসায়ী, ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তার প্রভৃতি পাত্রের সাথে মেয়ের বিয়ে দেয়ার ব্যাপারে তড়িঘড়ি করা হয়। সাধারণত প্রবাসী পাত্র/কন্যা; ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, ব্যবসায়ী পাত্রের খোঁজ পেলে অপরপক্ষ অনেকসময় মেয়েকে বলপূর্বক বিয়ে দেয়া হয়। এশিয়ার অনেক দেশের মতো বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে বহির্দেশে ইমিগ্র্যান্ট পাত্রীর সাথে ছেলের বিয়ে দেয়ার একটি প্রচলন রয়েছে, যার মূল উদ্দেশ্য থাকে মেয়ের মাধ্যমে ছেলেকে ঐ দেশটির স্থায়ী বাসিন্দা করানো বিশেষ করে সিলেট অঞ্চলে এর প্রকোপ বেশি। কখনও কখনও এজাতীয় বিয়েতে বহির্দেশে ইমিগ্র্যান্ট মেয়ের আপত্তি থাকলেও তাকে জবরদস্তিমূলক রাজি করানো হয়। কখনও ঘটে চরম অপ্রীতিকর ঘটনা, এমনকি মেয়েকে জিম্মি করে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। তাই এজাতীয় অঘটন রোধে ব্রিটেন সরকার আইন পর্যন্ত তৈরি এবং ব্যবহার করেছে। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দে ব্রিটেনের "ফরেন এ্যান্ড কমনওয়েল্‌থ অফিস এর ফোর্স ম্যারেজ ইউনিট"-এ আসা জবরদস্তিমূলক বিয়ের ১৩০০ অভিযোগের অন্তত ১০%-ই ছিল বাংলাদেশী-ঘটিত ঘটনা।

তাছাড়াও আছে প্রতারণামূলক বিয়ে। প্রতারণামূলক বিয়ের ক্ষেত্রে হয়তো বহির্দেশ-ইমিগ্র্যান্ট প্রতিবন্ধি ছেলে/মেয়ের জন্য মিথ্যে কথা বলে বর-কনে নিয়ে যাওয়া হয়, কিংবা বহির্দেশ সম্বন্ধে উচ্চধারণা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে মেয়েদের বিয়ে করে নিয়ে যাওয়া হয় বহির্দেশস্থ কোনো নীচ জীবনে। সাধারণত বহির্দেশে বেড়ে ওঠা অভিবাসীদের দ্বিতীয় প্রজন্মের ছেলে-মেয়েদেরকে ছুটি কাটানোর নাম করে বাংলাদেশে এনে এজাতীয় জবরদস্তিমূলক কিংবা প্রতারণামূলক বিয়ে দেয়া হয়। তবে প্রতারণামূলক বিয়েতে কোনোপ্রকারের সৎ উদ্দেশ্য না থাকলেও জবরদস্তিমূলক বিয়েতে অভিভাবকদের মনে যে সৎ উদ্দেশ্যটি কাজ করে তা হলো: বহির্দেশে বেড়ে ওঠা সন্তানাদিকে বাংলাদেশের সংস্কৃতি-ঘেঁষা রাখার অভিপ্রায়। কিন্তু বাংলাদেশ আর বহির্বিশ্বের অন্যান্য দেশের সংস্কৃতিতে যে বিস্তর ফারাক, তাতে এজাতীয় বিয়ে খুব কমই টিকে থাকে। আরো একপ্রকারের বিয়ের ঘটনা ইদানিং দেখা যাচ্ছে । যেসব বিয়ের মূল উদ্দেশ্য হয় বহির্দেশে পাড়ি জমানো। এজাতীয় বিয়েকে চুক্তিভিত্তিক বিয়ে বলা যেতে পারে। এরকম বিয়ের ক্ষেত্রে বহির্দেশস্থ কোনো নারী কিংবা পুরুষের সাথে রেজিস্ট্রি করে বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করেন বাংলাদেশের কোনো ব্যক্তি। অনেক ক্ষেত্রে বিবাহিত ব্যক্তি, স্ত্রী'র অসম্মতি কিংবা অনেক ক্ষেত্রে স্ত্রী'র সম্মতিতেও এমন চুক্তিভিত্তিক বিয়ে করে থাকেন। চুক্তির অংশ হিসেবে বহির্দেশস্থ ঐ নারী কিংবা পুরুষ একটা নির্দিষ্ট অংকের অর্থ পান এবং তার বিনিময়ে যার সাথে বিয়ে হয়েছে, তাকে বহির্দেশে যাবার প্রয়োজনীয় দলিলাদি তৈরিতে সহায়তা করেন। এজাতীয় বিয়েতে দৈহিক সম্পর্কের ঘটনা প্রায় থাকেই না। যদিও এজাতীয় বিয়েতে উভয়পক্ষ সন্তুষ্ট হবার সম্ভাবনা থাকে, তবুও এজাতীয় বিয়ের চুক্তির অন্যথা হলেই তা আর শুভ সমাপ্তি টানেনা বলে সমাজের দৃষ্টিতে তা অপসংস্কৃতিই বলা যায়।

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাল্যবিবাহ একটি সাধারণ ব্যাধি। বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী নারীদের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ বছর হলেও ৭৫% নারীর বিয়ে হয় ১৫-১৯ বছর বয়সে। ২০১১ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত প্রতিবেদনে রাজশাহীর তিনটি বেসরকারি সংস্থার প্রকাশিত তথ্যমতে ১ বছরে (নভেম্বর ২০১০-নভেম্বর ২০১১) সেখানকার তিন উপজেলায় ৬১২টি বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হয়েছে: চারঘাট উপজেলায় ১০০টির বেশি, পুঠিয়া উপজেলায় ৪৮৩টি এবং বাঘা উপজেলায় ২৯টি। এছাড়াও অনেক জায়গায়, ইসলাম সম্পর্কে হীনজ্ঞানীদের হস্তক্ষেপে শাস্ত্রীয় "হিলা বিয়ে"কে ভুল পথে চালিত করে নারীদের ইজ্জত নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়, যা চরম অবমাণনাকর এবং ভ্রান্তিমূলক।
বিচিত্র বিয়ে হলোঃ
বাংলাদেশে মানুষ ছাড়াও পশু পাখি কিংবা গাছের বিয়ে দেয়ার রীতি খুব প্রাচীন নয়। ২০০৯ খ্রিস্টাব্দের মার্চ মাসে এরকমই বিচিত্র এক বিয়ের আয়োজন করা হয় উত্তরবঙ্গে। বিয়েটি ছিল ব্যাঙের। বিয়ের বর-কনে দুজনই ব্যাঙ। গ্রীষ্মকালে প্রচণ্ড তাপে জর্জরিত গ্রামবাসী বৃষ্টির আশায় ব্যাঙের বিয়ের আয়োজন করে। ঐ অনুষ্ঠানের বর-কনে উভয়ের জন্য ছিল বিশেষ ধরণের পোষাক। বিয়ের পর্ব শেষ হলে বর-কনেকে ছেড়ে দেয়া হয় নিকটবর্তি পুকুরে। সেদিন রাতেই সে অঞ্চলে বৃষ্টি হয়। সাধারণত ভারতে হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসীদের কতিপয় এজাতীয় বিয়ের আয়োজন করে থাকেন প্রায়ই। বাংলাদেশে, ছড়া-কবিতায় ব্যাঙের বিয়ের উল্লেখ থাকলেও এজাতীয় ঘটনা ছিল এটাই প্রথম।

জনপ্রিয় মাধ্যমে বাংলাদেশের বিয়ে
বাংলাদেশের সংস্কৃতির যেহেতু একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ এই বিয়ে, তাই বাংলাদেশের গণমাধ্যমে বিয়ের উল্লেখ একটি সাধারণ বিষয়। যেকোনো গণমাধ্যমেই বাঙালির সাধারণ জীবনযাপনকে ফুটিয়ে তোলা হলে তাতে স্বাভাবিকভাবেই বিয়ের উল্লেখ থাকে। বাংলাদেশের নাটক, সিনেমা কিংবা তথ্যচিত্রেও বিয়ের উল্লেখ এসেছে বহুবার। বিভিন্ন গণমাধ্যম কখনও বিয়ে বিষয়ে আলাদা আয়োজনও রাখে- দৈনিক পত্রিকাগুলো বিয়ের উপর আলোকচিত্র সম্বলিত বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে, ম্যাগাজিনগুলো বিয়ে বিষয়ক বিশেষ সংখ্যা ছাপায়, ফ্যাশন ম্যাগাজিনগুলো বিয়ে বিষয়ক বিশেষ ব্রাইডাল সংখ্যা প্রকাশ করে। এছাড়াও ইন্টারনেটে বিয়ে বিষয়ক অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে, যেগুলো বিয়ের নানাবিধ আয়োজনকে সফল ও সুন্দর করার পরামর্শ দিয়ে থাকে।

১৯৯৯ খ্রিস্টাব্দে ইউনিসেফ প্রকাশিত "Adolescent Girls in Bangladesh" শিরোনামের আলোকচিত্র প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের নারীদের, বিশেষত অপ্রাপ্তবয়স্ক মেয়েদের বিয়ে স্থান পায়। বাংলাদেশের বিয়ের আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান দেখে উদ্বুদ্ধ হয়ে অনেক বিদেশী নাগরিকও এদেশের রীতিতে বিয়ের আয়োজন করেন। তবে সেক্ষেত্রে আয়োজন খাঁটি গ্রাম্য রীতিতে হয়ে থাকে।

তথ্যসংগ্রহ ইন্টারনেট ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.