নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলা ভাষা হলো দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গ অঞ্চলের স্থানীয় একটি ভাষা এই অঞ্চলটি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে স্বাধীন রাষ্ট্র আমাদের এই বাংলাদেশ এবং ভারতের অঙ্গরাজ্য পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে গঠিত। তাছাড়াও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য, অসম রাজ্যের বরাক উপত্যকা এবং আন্দামান দ্বীপপুঞ্জেও বাংলা ভাষাতে কথা বলা হয়। এই ভাষার লিপি হল বাংলা লিপি । এই অঞ্চলের প্রায় বাইশ কোটি স্থানীয় মানুষের এবং পৃথিবীর কোটি কোটি মানুষের ভাষা হওয়ায় এই ভাষা বিশ্বের সর্বাধিক প্রচলিত ভাষাগুলির মধ্যে চতুর্থ স্থান অধিকার পেয়েছে। বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কার জাতীয় সঙ্গীত এবং ভারতের জাতীয় স্তোত্র এই ভাষাতেই রচিত এবং তা থেকেই দক্ষিণ এশিয়ায় এই ভাষার গুরুত্ব বোঝা যায়।বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে প্রচলিত বাংলা ভাষার মধ্যে ব্যবহার, উচ্চারণ ও ধ্বনিতত্ত্বের সামান্য পার্থক্য রয়েছে। বর্তমানে বাংলা এবং তার বিভিন্ন উপভাষা বাংলাদেশের প্রধান ভাষা এবং ভারতে দ্বিতীয় সর্বাধিক প্রচলিত ভাষা।এই ভাষা বালার নবজাগরণের ফলে সৃষ্ট বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধ ঐতিহ্য নির্মাণ ও বাংলার সাংস্কৃতিক বিবিধতাকে এক সূত্রে গ্রথিত করেছে । শুধু তাই নয় এই ভাষা বাঙালি জাতীয়তাবাদ গঠনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
১৯৫১ থেকে ৫২ সালের পূর্ব পাকিস্তানে সংগঠিত বাংলা ভাষা আন্দোলন এই ভাষার সাথে বাঙালি অস্তিত্বের যোগসূত্র স্থাপন করেছিল। ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবাদী ছাত্র এবং আন্দোলনকারীরা মাতৃভাষা বাংলায় কথা বলা ও লেখাপড়ার অধিকারের দাবীতে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। মাতৃভাষার জন্য তাঁদের বলিদানের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারি দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন ।
বাংলা ভাষা আন্দোলন ছিল তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তানে বর্তমান আমাদের বাংলাদেশ সংঘটিত একটি সাংস্কৃতিক এবং রাজনৈতিক আন্দোলন। মৌলিক অধিকার রক্ষাকল্পে বাংলা ভাষাকে ঘিরে সৃষ্ট এই আন্দোলনের মাধ্যমে সেসময় পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে গণ দাবীর বহিঃপ্রকাশ ঘটেছিল। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে এই আন্দোলনের চূড়ান্ত রূপ ধারণ করলেও বস্তুত এর বীজ রপিত হয়েছিল বহু আগে অন্যদিকে এর প্রতিক্রিয়া এবং ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী।১৯৪৭ সালে দ্বিজাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ ভারত ভাগ হয়ে পাকিস্তানের উদ্ভব হয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানের দুটি অংশ পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তানের মধ্যে সাংস্কৃতিক, ভৌগোলিক এবং ভাষাগত দিক থেকে অনেক মৌলিক পার্থক্য বিরাজ করছিল। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা করে যে উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এই ঘোষণার প্রেক্ষাপটে পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থানকারী বাংলাভাষী সাধারণ জনগণের মধ্যে গভীর ক্ষোভের জন্ম হয় এবং বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। কার্যতঃ পূর্ব পাকিস্তান অংশের বাংলাভাষী মানুষ আকস্মিক ও অন্যায় এই সিদ্ধান্তকে মেনে নিতে পারেননি এবং মানসিকভাবে মোটেও প্রস্তুত ছিলেন না তারা। ফলস্বরূপ বাংলাভাষার সমমর্যাদার দাবিতে পূর্ব পাকিস্তানে আন্দোলন দ্রুত দানা বেঁধে ওঠে। আন্দোলন দমনে পুলিশ ১৪৪ ধারা জারি করে ঢাকা শহরে সমাবেশ মিছিল ইত্যাদি বে আইনী এবং নিষিদ্ধ ঘোষণা করে দেন।১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলায় ১৩৫৮ সন ৮ই ফাল্গুন এই আদেশ অমান্য করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু সংখ্যক ছাত্র ও প্রগতিশীল কিছু রাজনৈতিক কর্মী মিলে মিছিল শুরু করেন। মিছিলটি ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের কাছাকাছি এলে পুলিশ ১৪৪ ধারা অবমাননার অজুহাতে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলিবর্ষণ শুরু করে। গুলিতে নিহত হন ভাষা শহীদ রফিক ভাষা শহীদ সালাম বরকত-সহ আরও অনেকে। শহীদদের রক্তে সেদিন ঢাকার এ রাজপথ রঞ্জিত হয়ে ওঠেছিল। শোকাবহ এই ঘটনার অভিঘাতে সমগ্র পূর্ব পাকিস্তানে তীব্র ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।তৈরি হয় আন্দোলন ।সেসময় ক্রমবর্ধমান গণআন্দোলনের মুখে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার শেষাবধি নতি স্বীকার করতে বাধ্য হয়ে যায় এবং ১৯৫৬ সালে সংবিধান পরিবর্তনের মাধ্যমে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষার স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো বাংলা ভাষা আন্দোলন মানুষের ভাষা এবং কৃষ্টির অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করেন যা বৈশ্বিক পর্যায়ে সাংবার্ষিকভাবে গভীর শ্রদ্ধা এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সাথে উদযাপন করা হয়।
১৯৫৩ সাল থেকে প্রতি বছর ২১ ফেব্রুয়ারি তারিখে মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানানো হয়। এই দিনে প্রত্যুষে সর্বস্তরের মানুষ নগ্ন পায়ে প্রভাতফেরীতে অংশগ্রহণ করেন এবং শহীদ মিনারে গিয়ে গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করেন। সারাদিন মানুষ শোকের চিহ্নস্বরূপ কালো ব্যাজ ধারণ করেন। তাছাড়াও আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি তর্পণ করা হয় এবং ভাষা আন্দোলনের শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং শান্তি কামনা করেন। ১৯৭১ সালে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার পর থেকে দিনটা কখনো জাতীয় শোক দিবস কখনোবা জাতীয় শহীদ দিবস হিসাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ২০০১ সাল থেকে দিবসটি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে উদযাপিত হচ্ছে। এইদিনে সরকারী ছুটি থাকে। বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে দিবসের তাৎপর্য্য তুলে ধরা হয়ে থাকে। দৈনিক সংবাদপত্রসমূহে বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করা হয়। বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গনে আয়োজিত অমর একুশে গ্রন্থমেলা অনুষ্ঠিত হয় পুরো ফেব্রুয়ারি মাস জুড়ে। বাংলাদেশ সরকার বাংলা ভাষা আন্দোলনকে ঘিরে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একুশে পদক প্রদান করেন ।
বর্তমানের পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ রাষ্ট্র দুটি পূর্বে ব্রিটি শাসনাধীন অবিভক্ত ভারতবর্ষের অন্তর্ভুক্ত ছিল। ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে উর্দু ভাষাটি কিছু সংখ্যক মুসলিম রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং ধর্মীয় নেতা যেমনঃ স্যার খাজা সলিমুল্লাহ স্যার সৈয়দ আহমদ খান নবাব ওয়াকার উল মুলক মৌলভী এবং মৌলভী আবদুল হক প্রমুখদের চেষ্টায় ভারতীয় মুসলমানদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কায় উন্নীত হয়। উর্দু একটি ইন্দো আর্য ভাষা যা ইন্দো ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর সদস্য। এই ভাষাটি আবার ইন্দো ইউরোপীয় ভাষা-পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। উর্দু ভাষাটি অপভ্রংশের মধ্যযুগের ইন্দো-আর্য ভাষা পালি প্রাকৃতের সর্বশেষ ভাষাতাত্ত্বিক অবস্থার ওপর ফার্সি ও আরবি এবং তুর্কির ঘনিষ্ঠ প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে দিল্লি সুলতানাত ও মুঘল সাম্রাজ্যের সময়ে দক্ষিণ এশিয়ায় বিকশিত হয়। এর পারসিক আরবি লিপির কারণে উর্দুকে ভারতীয় মুসলমানদের ইসলামী সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হত যেখানে হিন্দি এবং দেবনাগরী লিপিকে হিন্দুধর্মের উপাদান বিবেচনা করা হত।উর্দুর ব্যবহার ক্রমেই উত্তর ভারতের মুসলমানদের মধ্যে জনপ্রিয়তা লাভ করতে থাকে কিন্তু বাংলার ব্রিটিশ ভারতের পূর্বাঞ্চলের একটি প্রদেশ মুসলমানেরা বাংলা ভাষাকে তাদের প্রধান ভাষা হিসেবে ব্যবহারেই অভ্যস্ত ছিল। বাংলা পূর্বাঞ্চলীয় মধ্য ইন্দো ভাষাসমূহ থেকে উদ্ভূত একটি পূর্বাঞ্চলীয় ইন্দো-আর্য ভাষা যা বাংলার নবজাগরণের সময়ে বিপুল বিকাশ লাভ করে। উনিশ শতকের শেষভাগ থেকেই মুসলিম নারী শিক্ষার অগ্রদূত বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেন বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চা শুরু করেন এবং আধুনিক ভাষা হিসেবে বাংলার বিস্তার তখন থেকেই বিকাশিত হয়। বাংলা ভাষার সমর্থকরা ভারত ভাগের পূর্বেই উর্দুর বিরোধিতা শুরু করেন যখন ১৯৩৭ সালে মুসলিম লীগের লক্ষ্মৌ অধিবেশনে বাংলার সভ্যরা উর্দুকে ভারতের মুসলিমদের লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা মনোনয়নের প্রস্তাবটি প্রত্যাখ্যান করেন। মুসলিম লীগ ছিল ব্রিটিশ ভারতের একটি রাজনৈতিক দল যা ভারত বিভাজনের সময় পাকিস্তানকে একটি মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
তথ্যসূত্রঃ ইন্টানেট ।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:১৯
আমি মিন্টু বলেছেন: ভাই বিষয়টি ইয়ারকিতে নিয়া গেলেন এইটা কিন্তু পোস্টের প্রথম অংশ ।
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:৪৯
মহা সমন্বয় বলেছেন: মহান ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মৃতির প্রতি জানাচ্ছি গভীর শ্রদ্ধা
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৪:২০
আমি মিন্টু বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই তাদের প্রতি রইল গভীর শ্রদ্ধা ।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১:২৪
গেম চেঞ্জার বলেছেন: তো এরপর কি হইলো?