নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সৎ মানুষদের পছন্দ করি ! নিজে সৎ থাকার চেষ্টা করি !!!

আসছে নতুন প্রজন্ম , আসবে নতুন দিন !

আহমেদ আলিফ

তোমাকে একটি নতুন সকাল এনে দিবো ...

আহমেদ আলিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছোট বেলায় সাঁতরে নদী পার হওয়া (জানের ফাড়া)

১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৩:৫৯

আমাদের বাড়ির পাশ দিয়েই বয়ে গেছে পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদ। এই নদীর সাথে আমাদের সম্পর্ক সেই পূর্বপুরুষ থেকেই। পূর্বপুরুষদের (দাদার বাবার) বসত ভিটা ছিলো নদীর ঐ পারে (লক্ষী চরে)। খেয়ালী নদী যখন কয়েক বার তার দিক পাল্টে দাদাদের ভিটা চেন্জ করাতে বাধ্য করলো (তিন বার) অবশেষে দাদা তার বসত ভিটা শিফ্ট করে নদীর এই পারে (নান্দিনা) চলে আসে। বাবা-চাচারা তথন ছোট।



এই রাক্ষসী নদীতে গোসল করতে গিয়ে জীবন হারিয়েছে আমার সবচেয়ে ছোট চাচা। চাচার বয়স তখন ১৯ । চাচা ছিলেন দক্ষ সাতারু। তাছাড়া ছোটবেলা (ন্যাংটা কাল) থেকেই নদীর সাথে সম্পর্ক। এর থেকে সাবধান থাকতে হবে এই কথা করো কখনো মনে হতো না। তাছাড়া পূর্বপুরুষদের মাঝে করো জীবনের দিকেও এই নদী কখনো হাত বাড়ায়নি।

সেদিন সকালে চাচা গেলেন নদীতে গোসল করতে। বরাবরের মতই খাঁড়া উঁচু পাড় থেকে নদীতে দিলেন ড্রাইভ। কিন্তু আজরাইল মনে হয় পানির নিচেই বসে ছিলো। পানির নিচে প্রচন্ড স্রোতের টানে চাচা ঢুকে পড়লেন নদীর কাঁফে (পানির নিচে মাটির লেয়ারের মাঝে বড় বড় গর্তে)। প্রায় ঘন্ট খানিক পরে আশেপাশের লোকজনের সন্দেহ হলো, এতখন তো পানিতে ডুপ দিয়ে থাকার কথা না! আরো ১০/১৫ মিনিটের মধ্যেই তারা বিপদ সম্পর্কে নিশ্চিত হলো। দাদাকে ডাকা হলো লোকজন জাল নিয়ে আসলো কিন্তু কিছুতেই লাশ পাওয়া গেলো না।(পাবে কি করে চাচা ঢুকে আছে কাফের ভিতরে)। অবশেষে আমাদের চরের রহিমউদ্দী দাদা আসলো, লোকে তাকে ডুবুরি মনে করতো। সেই দাদা অনেক চেষ্টা করে লাশ খুঁজে পেলেন। ততক্ষনে ৩ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে কাজেই আর কোনো আশা থাকে না তবুও আল্লাহর মিরাকেল এর আশায় সবরকম চেষ্টা করা হলো।



এবার আমর কথা বলি : আমার বয়স তখন ১৩/১৪ । এরই ভিতরে কয়েক বার নদী পার হয়েছি। একদিন চাচাতো ভাই সোহাগের সাথে গেলাম নদীতে গোসল করতে। সোহাগ বললো চল নদী পার হই। আমিও খুশিতে রাজি হলাম কারন ঐ পারের চরের বালু মাটিতে দৌড়া দৌড়ি করতে ভালো লাগতে। আমি বললাম কিন্তু আমাদের লুঙ্গি (গোসলের পর যেটা পরবো) আর পায়ের সেন্ডেল কোথায় রাখবো। সোহাগ বললো লুঙ্গি মাথায় বেঁধে নিবো আর সেন্ডেল জোড়া হাতের তালুর সাথে আঙ্গুল দিয়ে আঁকড়ে নিবো। পরিণাম না ভেবেই নদীতে সাঁতার দিলাম। মাঝ নদী পর্যন্ত গিয়ে বুঝলাম কাজটা ঠিক হয় নাই। একে তো-হাতে সেন্ডল থাকায় হাতের তালু দিয়ে পানি কেটে সাঁতারে সমস্যা হচ্ছিলো, দুই- মাথায় লুঙ্গি বাঁধা থাকায় মাথা পানিতে ডুবাতে পারছিলাম না তাই ঘাড় লেগে যাচ্ছিলো।

নদী যখন ৩/৪ অংশ পার হয়েছি তখন আমার হাতের পেশী অবশ হয়ে আসছিলো। সোহাগ ছিলো আমার একটু সামনে তাকে বললাম সোহাগ আর তো পারছি না। সোহাগ বললো হাতের সেন্ডেল ছেড়ে দে পরে আবার সাঁতরে আনা যাবে(তার অবস্থায়ও যে একই রকম)। সেন্ডেল ছেড়ে দিলাম কিন্তু ততক্ষনে আমার সারা শরীরেই শক্তি প্রায় শেষের দিকে একটু সুবিধা হলেও বাকি ২০/২৫ হাত নদী পার হবার মত মন বল পেলাম না। মাথাটা ভিজাতে পারলে ভালো হতো কিন্তু মাথার লুঙ্গি ভিজে গেলে তার ওজন অনেক বেড়ে যাবে সেটা নিয়ে আর সাঁতার কাটতে পারবো না আর ছেড়ে দিলেও ভিজা লুঙ্গি পানিতে ডুবে যাবে। অবশেষে লুঙ্গির মায়া ত্যাগ করলাম। মাথা থেকে লুঙ্গি খুলে দিলাম চিল সাঁতার। কিন্তু একি যে চিল সাঁতার দিলে আগে আমি ভাবতাম এই ভাবে আমি সাগরও পাড়ি দিতে পারবো (কারন এতে শক্তি লাগে কম) কিন্তু এখন যে এই সাঁতার দেবার মতন ও শক্তি নেই।



যাই হোক অবশেষে পানিতে নাকানি চুপানি খেয়ে তীরে এসে পৌঁছলাম (আলহামদুলিল্লাহ)। কিন্তু যেখানে ল্যান্ড করেছি সেখানে পলি মাটি। হাঁটুর উপরে উঁরু পর্যন্ত ডেবে যাচ্ছে। কারন আমরা ভাসতে ভাসতে অনেক ভাটিতে চলে গিয়েছিলাম। পলি মাটিতে কিভাবে হাঁটতে হয় জানা ছিলো তাই গড়িয়ে গড়িয়ে উপরের শক্ত মাটিতে উঠে হাফ ছাড়লাম। উপরে উঠে দেখলাম আমার লুঙ্গিটা তখনও ভাসতেছে, একটু রেষ্ট নিয়ে সাঁতরে গিয়ে লুঙ্গী নিয়ে আসলাম। সেন্ডেল খুঁজে দেখলাম সেটা বেশ কিছু দূরে ভাটিতে চলে গেছে। দৌড়ে সেখানে গিয়ে সাঁতরে সেন্ডেল নিয়ে আসলাম।

তার পর প্রায় এক কিলো দূরে ফেরিঘাটের নৌকায় করে নদী পার হয়ে বাড়ি আসলাম। এর পর আরও অনেক বার নদী পার হয়েছি কিন্তু সেই শিক্ষা মনে রেখেছি ঐরকম বোকামি আর করি নাই।:D

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:১২

আহমেদ আলিফ বলেছেন: আমার অজ্ঞতা আমার ছেলেকেও বলে যাবো যাতে সেও এই রকম বোকামি জীবনে না করে।

২| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৫২

প্রবাসী পাঠক বলেছেন: দুঃসাহসিক অভিজ্ঞতা। সাঁতরে পুকুর পাড়ি দিয়েছি কিন্তু নদী পার হবার মত দুঃসাহসিক চেষ্টা কখনো করি নি।

১২ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:১৫

আহমেদ আলিফ বলেছেন: বাড়ির পাসে নদীকে দেখতে দেখতে একে পুকুরই মনে হতো!
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ!

৩| ১২ ই জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৪:১৮

আদম_ বলেছেন: মজাদার সব আকাম করেছেন আপনি জীবনে।আপনার দাদার যে ৫০০ টাকা সংগ্রহ (চুরি) করেছিলেন সেটা কিভাবে খরচ করেছিলেন তা নিয়ে একটা বিস্তারিত পোস্ট চাই।
নদটি আপনার বাড়ি থেকে কত দুরে। বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা ব্রহ্মপুত্র নদ দেখা আমার জীবনের একটা স্বপ্ন।

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৭:১৭

আহমেদ আলিফ বলেছেন: দাদার কাছ থেকে সংগ্রহ করা ৫০০ টাকা কিভাবে খরচ করেছিলাম এখন ঠিক পুরোপুরি মনে নেই। তবে একটু একটু করে খরচ হয়ে ছিলো।
ব্রহ্মপুত্র নদটি আমাদের বাসা থেকে একধম কাছে। বলতে গেলে ২০/২৫ হাত দূরে। কখনো যদি জামালপুর আসার সময় পান আমাকে জানাবেন। ব্রহ্মপুত্র নদে গোসল করার দাওয়াত দিলাম;)

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ৮:০৯

আদম_ বলেছেন: মাত্র ২০/২৫ হাত। ও মাই গড। কি দারুণ! আল্লহ যদি কখনো জামালপুর যেতে দেয়, অবশ্যই আপনার সাথে করবো। অবশ্য আপনি অনেক ব্যস্ত।
ঈদে কয়দিনের ছুটি পাবেন?

১৩ ই জুলাই, ২০১৪ সকাল ১০:৪৪

আহমেদ আলিফ বলেছেন: নদীর ঐ পারের প্রাকৃতিক দৃশ্য এখনো আমাকে টানে। সময় পেলেই পরিবার সহ ঐ পারে বেড়াতে যাই।
ঈদে ২৭/০৭ থেকে ০১/০৮ পর্যন্ত বাড়ি থাকবো ইনশাআল্লাহ।

নিমন্ত্রণ রইলো কিন্তু!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.