নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অতল গহবর

Mariner. Work on ships, travel around the world. Love to read, watch movies, listen to music and travelling.

অতল গহবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জাহাজী জীবন - ‘মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেছি’

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:২১

মহিউদ্দীন জুয়েল, চট্টগ্রাম থেকে: ‘আমার ভাই বেঁচে আছে। বিশ্বাসই করতে পারছিলাম না। সে তো মারা গেছে। তার আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। লোকজন বলেছিল ভাইয়ের জন্য কেঁদে আর কি হবে। কিন্তু আল্লাহ অবশেষে আমার ভাইকে আমাদের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।’ কথাগুলো বলেই আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়লেন সাইফুদ্দিন। আপন ভাইকে কাছে পাওয়ার আনন্দে আত্মহারা তিনি। তার ছোট ভাই এলেম উদ্দিন সাগরে জলদস্যুদের হাতে বন্দি ছিল। প্রায় এক বছরের বেশি সাগরে অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করতে হয়েছে তাকে। ভাইয়ের বুকে ভাই ফিরে আসায় আল্লাহর কাছে ঘন ঘন শুকরিয়া আদায় করছিলেন তাদের মা সাফিয়া বেগম। বাবা কালা মিয়া নাম ধরে বলছিলেন, ‘এলেম ছেলেটা আমার খুব কষ্ট পাইছে। কতদিন তার জন্য ফরিয়াদ জানাইছি। এবার খোদা আমাদের ছেলেকে আবার সবার মধ্যে নিয়ে আসছে। এর চেয়ে কোন পিতা কি আর বেশি খুশি হতে পারে?’

গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সোমালিয়া জলদস্যুদের কবল থেকে দেশে ফিরেছেন এলেম উদ্দিন। চট্টগ্রাম বিমানবন্দরে তাই এই নিয়ে পরিবারের সদস্যরা ছিলেন উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠায়।

গতকাল দুপুরে তার দুঃসহ সেসব দিনের কথা জানতে চাওয়া হয় শহরের দক্ষিণ হালিশহরের বাসায়। সেখানে দেখা যায় উৎসুক জনতার ভিড়। সবাই এক নজর দেখার জন্য তার বাড়িতে ভিড় করছিলেন। মধ্যবিত্ত পরিবারের সংসার এলেমদের। সংসারে পিতা-মাতা ছাড়াও আছে তার আরও দুই ভাই। বড় ভাই নূরুদ্দিন ছোটখাটো একটা চাকরি করে। পরের জন সাইফুদ্দিন করেন ছোটখাটো ব্যবসা। বোন শারমিন আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন। সংসারে উপার্জনের টাকা দিয়ে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে তাই এলেমকে পাড়ি জমাতে গিয়ে পড়তো হলো মহাবিপদে। দুঃসহ সেইসব দিনের স্মৃতি নতুনভাবে মনে করতে চান না তিনি। বলেন, ‘মায়ের দোয়া ছিল। তাই হয়তো এই যাত্রায় বেঁচে গেছি। কিন্তু সাগরের মাঝে কিভাবে যে দিন কাটিয়েছি তা বলতে চাইলে গা শির শির করে উঠে।’ ঘটনার বিবরণ দিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি কিভাবে আমার সহকর্মীকে হত্যার পর লাশ ফেলে দেয়া হয়েছিল। সেই লাশ কিলবিল করে খেয়েছে বিষাক্ত প্রাণীরা। কেঁদেছি। আর আল্লারে ডেকেছি।’ তিনি বলেন, ‘আমি জাহাজের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের টুকটাক কাজ জানি। আর তাই একটা চাকরির খোঁজে যোগাযোগ করি এমটি অয়েল গ্রেস কোম্পানির সঙ্গে। ওটা তেলবাহী জাহাজ ছিল। ২০১২ সালের মার্চের শুরুতেই আমরা ওমানের বর্ডারের কাছে জলদস্যুদের হাতে ধরা পড়ি। তারপর থেকেই ওরা আমাদের নির্যাতন করতো। টাকা না দিলে সাগরে ভাসানোর উল্লাস করতো।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের জাহাজে ২৩ জন লোক ছিলেন। এদের মধ্যে একজন নাইজেরিয়ান। নির্যাতনে তিনি মারা যান। প্রতিনিয়ত মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরেছি। মনে হচ্ছিল এই বুঝি উত্তাল সাগরে ফেলে দিচ্ছে ডাকাতরা। ডাকাতদের চেহারা ছিল ভয়ঙ্কর। ওরা কৌশলে আমাদের জাহাজকে টার্গেট করে স্পিডবোটে এসে সবাইকে জিম্মি করে।’

এলেমের মেজ ভাই সাইফুদ্দিন বলেন, ‘মনে করেছিলাম ভাই আর বেঁচে নেই। মরে যাওয়ার পর সাগরে তার লাশ ফেলে দেয়া হয়েছে। গত বছরের মার্চ/এপ্রিলের দিকে সে সোমালিয়ার জলদস্যুদের মোবাইল থেকে আমাকে কল দেয়। বলে ভাই আমাকে আর তোরা দেখবি না। ডাকাতরা প্রতিদিন মারে। টাকা না দিলে পানিতে ফেলে দেবে। এই কথা বলেই লাইন কেটে দেয়।’

তিনি এই বিষয়ে আরও বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম দিকে হঠাৎ আবার তার ফোন। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে বললো সে বেঁচে আছে। তাকে মারে নাই। ডাকাতরা তাদের মালিকের কাছে ফিরিয়ে দিয়েছে।’ বহু লোকের কাছে ধরনা দেয়ার পরও কোন গতি না হওয়ায় ভাইয়ের আশা ছেড়ে দেয়ার কথা জানান সাইফুদ্দিন। এলেমের বড় ভাই নূরুদ্দিন বলেন, ‘আমরা ধারণা করছি টাকা দিয়ে হয়তো তাদের মুক্ত করেছে এমটি রয়েল গ্রেস কোম্পানি। কেননা, টাকা ছাড়া যেখানে কাউকেই ফেরত দেয়া দূরে থাক, বাঁচিয়ে রাখার আশা দেয়া হচ্ছিল না সেখানে এটাই প্রমাণিত হয়। তারপরও আমাদের ভাই মা-বাবার কাছে ফিরে এসেছে।’

এলেমের মা সাফিয়া বেগমকে দেখা গেলো ছেলেকে চুমু খেয়ে শোকরিয়া আদায় করছেন। তার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘ছেলে বলেছে মায়ের দোয়ায় নাকি সে বেঁচে গেছে। কিন্তু আমি বলেছি আল্লাহর কৃপা ছিল। তা না হলে হয়তো আজও এই বাড়িতে তার জন্য সবার আহাজারি ভেসে উঠতো প্রতিদিন। আমি নতুন করে আর ছেলেকে হারাতে চাই না।’



Link: Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.