![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এখনো বলার মত কোন পরিচয় নেই।
আমি পৃথিবী নামক বিরাট এই গ্রহের, বাংলাদেশ নামক ছোট্ট দেশে বাস করি। স্কুল কলেজের বইতে নিজের দেশ সম্পর্কে পড়েছিলাম অনেক ভাল ভাল কথা। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা আমার এই নদীমাতৃক দেশ। যে দেশ পৃথিবীর দুর্নীতিগ্রস্থ দেশগুলোর মধ্যে হর হামেশাই প্রথম হলেও, এই দেশের মানুষ পৃথিবীর সবথেকে সুখী মানুষ। এতদিন জেনেছিলাম তাই।
আমি ২২ বছর বয়সী এক সাধারণ বাংলাদেশী যুবক। আমি স্কিথজোফ্রেনিয়াক না হয়েও আজকাল সবকিছু করতেই ভয় পাই। আমি ভয় পাই, সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে পত্রিকা খুলতে; আমি ভয় পাই বাসা থেকে বের হয়ে ইউনিভার্সিটি যেতে; আমি ভয় পাই বাড়ি ফেরার জন্যে বাসে উঠতে; হ্যাঁ আমি, দুঃস্বপ্নের ভয়ে রাতের বেলা ঘুমাতে এখন ভয় পাই। আমি এখন রাস্তার পাশের চায়ের দোকানে দাঁড়িয়ে এক কাপ চা খেতে ভয় পাই, ভয় পাই পুলিশ দেখলে, আমি এখন মোটরসাইকেল এ দুইজন আরোহী দেখলেও ভয় পাই।
সকালে পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে, পেট্রোল বোমার আগুনে জীবন্ত দগ্ধ হয়ে যাওয়া লাশ। হরতাল অবরোধের নাশকতায় প্রাণ যায় স্কুল ছাত্রীর, আড়াই বছরের শিশুর পুড়ে যাওয়া শরীর দেখে ভেতরে ভেতরে দগ্ধ হই আমি। দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা বাস দেখি আমি পত্রিকা খুললেই, আর ভাবি কতজন মারা গেল আবার? ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ঐ গর্ভবতী নারীর কথা ভাবি আমি; ভাবি ঐ মায়ের কথা, যে পুড়ে যাওয়া শরীর দেখে হয়ত চিনতেই পারবে না নিজের ছেলেকে।
পত্রিকায় প্রতিদিন এমন সব পরিচিত খবর দেখার পর আমি নিজের কাজে বাইরে বের হবার প্রস্তুতি নেই। বাসা থেকে বের হবার সময় সবাই এমন ভাবে আমাকে বিদায় জানায় যে, মনে হতেই পারে আমি মুক্তিযুদ্ধে যাচ্ছি। দেখা হবেনা হয়ত আর, কে জানে হয়ত বিকালে ফিরে আসবে আমার লাশ। কে জানে, মা দেখে চিনতে পারবে কিনা আমাকে? হয়ত, মর্গে অযত্নে পড়ে থাকবে আমার কয়লা হয়ে যাওয়া নিথর শরীর।
চায়ের দোকানে বন্ধুদের সাথে এখন আড্ডা দিতে ভয় করে আমার। কে জানে হয়ত কেউ একজন মাত্র অল্প কিছু টাকার বিনিময়ে আমার দিকে লক্ষ্য করে ছুঁড়ে দেবে পেট্রোল বোমা। মানুষের জীবন তো এখন অনেক স্বস্তা, ঐতো সেদিনই পত্রিকায় দেখলাম একজন মানুষের জীবনের দাম নাকি মাত্র বিশ হাজার টাকা।
বাড়ি ফেরার পর্ব যখন শুরু হয় আমি শূন্য দৃষ্টিতে শুনশান রাস্তায় চলা অল্প কিছু বাসের দিকে তাকিয়ে একমনে ভাবতে থাকি, হয়ত আবার কাল টিভির পর্দায় এর মধ্যেই কোন একটা গাড়িকে পুড়তে দেখা যাবে। আর্তচিৎকার করতে করতে বাসের জানালা দিয়ে বেরিয়ে আসতে দেখা যাবে অফিস করে ক্লান্ত হয়ে বাসায় ফেরা কোন সরকারী চাকরিজীবীকে, বা কে জানে স্কুল থেকে ফেরা কোন অল্পবয়সী তরুণীকে। তারপর একসময় যখন হুশ ফেরে আমার, আমি খুব ভয়ে ভয়ে কোন একটা বাসে উঠি আর ঈশ্বরের কাছে মনে মনে প্রার্থনা করি আজকের মত জীবিত নিজের ঘরে ফেরার।
জানেন, আজকাল রাতে ঘুমাতেও ভয় করে আমার। আমি ঐ ট্রাকের হেল্পার ছেলেটাকে দেখি স্বপ্নে, কি জানি নাম ছিল! হ্যাঁ, সোহাগ। পেটের দায়ে কাজ করতে নামা ঐ ট্রাক ড্রাইভার এর কথা শুনি আমি ঘুমের মধ্যে। ওরা আমায় ভয় দেখায়। আমি স্বপ্নে, ঐ কৃষককে দেখি। সে আমায় বলে তার ফসল পড়ে থেকে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সব নষ্ট হয়ে গেলে কি খাবে তার পরিবারের লোকগুলো; আমায় স্বপ্নের মধ্যেই জিজ্ঞেস করে সে। আমি “জানি না” চিৎকার করে ঘুম থেকে জেগে উঠি।
বিশ্বাস করেন, এরপর সকালে যখন পত্রিকা খুলে দেখি এতকিছুর পরও কেউ একজন গণতন্ত্রের নামে নাশকতা চালিয়ে যেতে বলে, বলে দেশের মানুষ তার সাথে আছে, বলে যে কোন কিছুর বিনিময়েই হোক এই জালিম সরকারের পতন করবেই তখন আমার ঘৃণায় কুঁকড়ে যেতে ইচ্ছে করে। কেউ একজন যখন বলে, দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক, বাসে আগুন দেওয়া বা দুই-একজনের পেট্রোল বোমায় মারা যাওয়া বিচ্ছিন্ন ঘটনা, আমার তখন আত্মহত্যা করতে ইচ্ছে করে। এমনিতেই হয়ত কোন একদিন পেট্রোল বোমার আঘাতে শ্বাসনালী পুড়ে যাবে, তাই ভয়ে ভয়ে বেঁচে থাকার চেয়ে কোন একদিন সাহস করে ছাঁদ থেকে শুন্যে লাফিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে।
আমার দেশ, বাংলাদেশ। আমার সোনার বাংলা আমাকে কেন আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দেবে? বিশ্বাস করেন, আমি গণতন্ত্র বুঝিনা, আমি বুঝিনা ক্ষমতা কাকে বলে। আমি লোভ-লালসা, হিংসা বুঝিনা। আমি বিচ্ছিন্ন ঘটনাও বুঝিনা, আন্দোলনও বুঝিনা। আমি শুধু চাই, মা অফিসে গেলে যেন সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় বাসায় ফিরে আসে, আমি ছোটবোনকে পুড়ে যেতে দেখতে চাইনা। আমি শুধু জানি, আপনারা আমাকে আত্মহত্যার দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
২| ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৫ রাত ১:০২
শানানুজ্জামান অংকন বলেছেন: ধন্যবাদ
৩| ১৬ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৫:১৮
চাঁদগাজী বলেছেন:
" বিশ্বাস করেন, আমি গণতন্ত্র বুঝিনা, আমি বুঝিনা ক্ষমতা কাকে বলে। আমি লোভ-লালসা, হিংসা বুঝিনা। "
-বুংগা বুংগা
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১০:২৬
বঙ্গভূমির রঙ্গমেলায় বলেছেন:
ব্লগে স্বাগতম।
আপনার ভয় কেটে যাক এবং দ্রুত স্বদেশভূমির রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরে আসুক।