নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

শানানুজ্জামান অংকন

ইচ্ছাকে ভেঙ্গে চুরে আর মাঝি হওয়া হলনা

শানানুজ্জামান অংকন

এখনো বলার মত কোন পরিচয় নেই।

শানানুজ্জামান অংকন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মেরুদণ্ডের শুল্ক ১০ শতাংশ

১৬ ই জুন, ২০১৫ রাত ২:৪৫

একটি জাতি কখন নিজের পায়ে স্বাবলম্বী হয়ে দাঁড়াতে পারে এমন প্রশ্নের জবাবে যেকোনো সচেতন মানুষের উত্তর হবে; যে জাতি শিক্ষায় যত বেশি অগ্রসর সেই জাতি তত বেশি স্বাবলম্বী। এখন আসি আমার দেশের কথায়। আমি বাংলাদেশ নামক একটি উন্নয়নশীল দেশের নাগরিক। যেহেতু আমার দেশ উন্নয়নশীল সেহেতু আমাদের জাতির উন্নয়নের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার পথে প্রধান ভূমিকা পালন করার কথা আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার।
আমাদের দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে বেশ কিছুদিন যাবত নানা রকমের টানা হেঁচড়া চলছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলতে গেলেই ইদানীং প্রথম যে কথা মাথায় আসে তা হল প্রশ্নপত্র ফাঁস। পিএসসি, জেএসসি থেকে শুরু করে এসএসসি এবং এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথায় গরম থাকে আমাদের দেশের পরীক্ষার মৌসুম।
বছর ছয় সাত আগেও অবশ্য প্রশ্নপত্র ফাঁসের খবর ছিল কিছু, কিন্তু যতদূর মনে পড়ে সেই ফাঁস হওয়া প্রশ্ন যোগাড় করার জন্যে ছাত্র ছাত্রীর বাবা মায়ের গুনতে হত অগণিত টাকা। তবে ইদানীং কালের ঘটনা ভিন্ন। আজকাল ফাঁস হওয়া প্রশ্ন আপনার খোঁজার দরকার নেই, ঘরে বসেই যেকোনো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটের মাধ্যমেই আপনি পেতে পারেন যেকোনো পরীক্ষার প্রশ্ন। সেই পরীক্ষার প্রশ্নে আপনি পরীক্ষা দেবেন এবং বছর বছর বাড়বে আমাদের দেশের শিক্ষার্থীদের পাসের হার এবং পাল্লা দিয়ে এগুবে জিপিএ ৫ পাবার মহোৎসব।
বাংলাদেশ ব্যুর অফ এডুকেশনাল ইনফরমেশন এন্ড স্ট্যাটিস্টিক এর তথ্য মতে, ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষার পাসের হার ছিল ৬৭.৪০ শতাংশ, যা মাত্র পাঁচ বছরে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪ সালে হয় ৯১.৩৪ শতাংশ; অবশ্য এবছর পাসের হার ৪.৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৮৭.০৪ শতাংশ। ২০০৭ সালে এইচএসসি পরীক্ষায় পাসের হার ছিল ৬৪.২৭ শতাংশ যা ২০১৩ সালের মধ্যে বেড়ে হয় ৭৮.৬৭ শতাংশ, যদিও গতবছর এই পাসের হার কিছুটা কমে নেমে আসে ৭৫.৭৪ শতাংশে।
এগোলো ক্রমবৃদ্ধি হারে বছর বছর বাড়তে থাকা পাসের হার। এবার আসা যাক আমাদের দেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে করা গবেষণার কথায়। আমাদের বড় ভাইরা জন্মেছিলেন লেটার স্ট্যান্ড এবং স্টার মার্কের যুগে, এরপর এলো এ প্লাসের যুগ ফোর্থ সাবজেক্ট ছাড়া, আমি জন্মেছিলাম ফোর্থ সাবজেক্ট সহ এ প্লাসের যুগে, আমার ছোট বোনের কপালে জুটেছে সৃজনশীল প্রশ্নের যুগ এখন আবার আমাদের শিক্ষামন্ত্রী ভাবছেন এমসিকিউ প্রশ্ন উঠিয়ে দেবার কথা!! শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে করা এই গবেষণা শিক্ষার্থীদের জন্যে কতখানি মঙ্গলজনক এগুলো ভাবার সময় আর যার হোক আমাদের রাষ্ট্র যন্ত্রের হর্তাকর্তাদের নেই।
প্রতি বছর বছর যে পরিমাণ শিক্ষার্থী এইচএসসি পাস করছে, তাদের জন্যে জনগণের ট্যাক্সের টাকায় চালিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যথারীতি পর্যাপ্ত পরিমাণ আসন সংখ্যা নেই। তাই, উচ্চবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত পরিবারে (কোন কোন ক্ষেত্রে নিম্নবিত্তও) বড় হওয়া শিক্ষার্থীরা শিক্ষা লাভের আশায় ভর্তি হচ্ছে দেশে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে। যদিও ধারনা (!) করা হয়ে থাকে আমাদের দেশের প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির পড়াশোনা আসলে শুধু নামেই পড়াশোনা, তবুও এই নামের পড়াশোনার জন্যেই অভিভাবকদের একটি সার্টিফিকেটের জন্যে গুনতে হয় জনপ্রতি তিন লাখ থেকে বিশ লাখ টাকা পর্যন্ত।
চলতি বছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে ১০ শতাংশ মূল্য সংযোজন কর (মূসক) আরোপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও প্রতিষ্ঠানের উপরেই আরোপ করা হয়েছে এই কর তবুও ধরে নেওয়া যায় এই কর আসলে বর্তায় শিক্ষার্থীর উপরেই। বছর বছর টিউশন ফি বাড়ার সাথে, এবার মরার উপর খাঁড়ার ঘায়ের মত গুনতে হবে আরও ১০ শতাংশ ভ্যাট। একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ১৬০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে এখন মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় চার লাখ। তাহলে এই দশ শতাংশ কর আসলে প্রয়োগ করা হচ্ছে এই চার লাখ শিক্ষার্থীর উপর।
ছোটবেলা থেকে জেনে এসেছিলাম শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এখন দেখতে হচ্ছে এই মেরুদণ্ড নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে গেলে গুনতে হবে ১০ শতাংশ ভ্যাট। অবশ্য এই ১০ শতাংশ ভ্যাট দেবার ফলে মেরুদণ্ডের হাড়গুলো আসলে কতখানি শক্ত হচ্ছে সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। উন্নয়নশীল দেশ উন্নয়নের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে কারণ বছর ঘুরতেই বাড়ছে পাসের হার, আর প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হলেই দিতে হবে মেরুদণ্ডের কর।
অবশ্য আশার কথা হল, ২০১০ সালেও প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির উপর ৪.৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব অর্থমন্ত্রী করলেও, জনগণের বিক্ষোভ এর কারণে সরকার সে প্রস্তাব বাতিল করে। আসুন, শিক্ষাকে ব্যবসা বানানোর এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে একসাথে রুখে দাঁড়াই, নচেৎ আমাদের ছেলে মেয়েরা হয়ত শুল্কের টাকার অভাবে এই শিক্ষাটুকু ও পাবেনা, অথবা কোনদিন হয়ত দেখবেন শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের সামনে আলু, পটল বিক্রি করার মত করে ঝুড়ির মধ্যে প্রয়োজনীয় শিক্ষা বিক্রি হচ্ছে; যার যতখানি শিক্ষা প্রয়োজন সে ঠিক সেই পরিমান কর দিয়ে শিক্ষা চটের ছালায় কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৫:১১

চাঁদগাজী বলেছেন:


বুংগা বুংগা, বকবক চুংগা

১৬ ই জুন, ২০১৫ ভোর ৫:৩৯

শানানুজ্জামান অংকন বলেছেন: আপনার বুংগা আর চুংগার অর্থ মাথার উপর দিয়ে গেল!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.