নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি ।।

অংকনের সাতকাহন

আমি জন্মের প্রয়োজনে ছোট হয়েছিলাম, এখন মৃত্যুর প্রয়োজনে বড় হচ্ছি ।।

অংকনের সাতকাহন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিসটেমেটিক !!!

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:২৭

পাশের বাড়ির ছোট ছেলেটা অনেক উৎসাহ উদ্দীপনা সহকারে দেখলাম সেদিন তার নুতন স্কুলে গেল। জীবনে প্রথমবারের মত স্কুলে যাবে, তার চোখেমুখে খেয়াল করলাম এক আশ্চর্য দীপ্তি। আমার তখনই মনে পড়ে গেল ছোটবেলার কথা্। প্রথম দিনের কথা মনে নেই এখন আর। তবে ছোটবেলার স্কুলের বেশ কিছু টুকরো স্মৃতি মনে পড়ে গেল।



হেসে হাত নেড়ে বিদায় জানালাম।







বিকেলে বাইরে থেকে ফিরতেই দেখি পিচ্চি মন খারাপ করে বসে আছে সামনের উঠোনের এককোণে। পাশে বসে চুলে হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার স্কুল ভাল লাগেনি? সে যা বলল তার ভাঙা ভাঙা বুলিতে তা হল, ওমা টুমি জাননা, আজকে তো ভত্তি না। আজকে মুখে মুখে। কালকে লতারি। শুনে আমি টাসকিত!



পরে খবর নিয়ে ওর মায়ের কাছে জানলাম ও যেখানে ট্রাই করছে ভর্তি হওয়ার সেটা শহরের বেশ নামকরা স্কুল। তাই ওকে অবতীর্ণ হতে হয়েছে ভর্তি পরীক্ষায়।







অবাক হয়ে ভাবলাম এ কি শিক্ষা ব্যবস্হা গড়ছি আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য। যে শিশুর এখন হেসেখেলে যাওয়ার কথা স্কুলে, শেখার কথা জীবনের পাঠ, মানবতার হাতেখড়ি। সে বয়েসেই ওর কাঁধে প্রথমেই ঝুলিয়ে দেয়া হচ্ছে পরীক্ষা নামের দায়বদ্ধতা। যে এখনো স্কুল কি তাই চিনেনি তাকে পরিচিত করিয়ে দেয়া হচ্ছে পরীক্ষার সাথে। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি যেটি হচ্ছে সেটি হল শিশুর মধ্যে জন্ম নিচ্ছে পরীক্ষাভীতি আর পড়ালেখার প্রতি সুপ্ত বিতৃষ্ণা।







আমি যখন এইসব নিয়ে ভাবছি তখন ওর মায়ের থেকে আরো জানতে পারলাম পরীক্ষাপদ্ধতির অভিনবত্বের। প্রথমেই ভোর থেকে বিশাল লাইন ধরে অভিভাবকদের ঠেলাঠেলি করে ফরম নেয়ার পেরেশানি। অতঃপর প্রথম টেস্ট হল নির্ভুলভাবে ফরম পূরণ সুন্দর হস্তাক্ষরে। ফরমে যাবতীয় তথ্যে গোলমাল হলেই ফরম বাতিল। তারমধ্যে খুবই ইমপর্ট্যান্ট একটা তথ্য হল পিতা-মাতার বার্ষিক আয়। নির্বাচিত ফরমের বাচ্চাগুলোর প্রথমে হবে লিখিত পরীক্ষা। সেখানে যারা টিকবে তাদের নেয়া হবে ভাইবা। এরপরের পরীক্ষা অভিভাবকদের। যদি মনমত হয় এরপর সবচেয়ে আজব ও ডাহা বলদামির পরিচায়ক টেস্ট- লটারি!







এই দীর্ঘ পরীক্ষা পদ্ধতিতে উতরে আসা বাচ্চাগুলোর ভবিষ্যতকে ঢেলে দেয়া হয় একটা পাত্রে। তারপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাদের আগামির সোনালী দিনগুলোকে কিমা বানানো হয়।তারপর সেখান থেকে হয় কোন বিদ্বার সাগর নয়তো ভবিষ্যতবক্তা টিয়াপাখি উত্তোলন করে হাতে গোনা কিছু বাচ্চার ভাগ্যলিপি। আর বাকিরা পড়ে থাকে অন্ধকারেই।







এ কেমন ভর্তিব্যবস্হা! মেধা নির্ণীত হয় লটারি খেলায়! এ থেকে কি আশা করতে পারি আমরা? সমৃদ্ধ আগামি প্রজন্ম নাকি একদল রাবার মেরুদন্ডধারী আদম পুতুল? যে শিশুরা পরিত্যক্ত হল বাসায় সেই কোমলমতি শিশুদেরও সহ্য করতে হয় গালমন্দ আর লাঞ্ছনা। পিচ্চিটাও নাকি মন খারাপের এটাই কারণ। বাবা বলেছে সে একটা উন্নত মানের গাধা। যেটা হওয়ার সেটা নাকি অঙ্কুরেই বোঝা যায়। ওকে দিয়ে নাকি কিচ্ছুই হবেনা।আমার প্রশ্ন এ থেকে তবে কি শিখল আমাদের সন্তানেরা? শুধু জানল তারা সম্ভাবনাহীন এক বাতিল পণ্য মাত্র, যার মূল্য নেই কানাকড়ি।এই মানসিকভাবে বিপর্যস্ত শিশুরাই কি আমাদের জাতির ভবিষ্যত?







শুধু তাই নয় এর পর থেকে স্কুল কলেজ জীবনের প্রতি পদে পদেই ভর্তির নামে এরকমই প্রহসন। প্রতি ক্ষেত্রেই টাকার খেলা। টাকায় হওয়া যায় ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার সহ অনেক কিছু। ১২ হতে ২০ লাখ টাকায় ভর্তি হওয়া যায় ভাল প্রাইভেট ভার্সিটি, মেডিকেল কলেজ সহ নানা জায়গায়। সবখানেই টাকা নামের প্রভাবকটা খুব ভালই দেখিয়ে চলে কেরামতি।







এ যেন কোন উল্টো গাধায় চড়ে চলছি আমরা। সাথে দেশ, জাতি।



ভাবছি, তাহলে সন্তান পৃথিবীর মুখ দেখার আগেই ওর জন্য একটা স্কুল, একটা কলেজ আর একটা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠা করে রাখা দরকার। নয়তো না টিয়াপাখির ঠোঁট মিস করে যায় ওর ভবিষ্যত!







স্বাভাবিকভাবেই একথা সর্বজনবিদিত যে বর্তমান সময় হচ্ছে প্রতিযোগিতার। এখানে প্রতিযোগিতার ক্ষেত্র সবটাই। বলা হয় জন্মের আগে শুক্রাণুর রেস, জন্মের সময় মেডিকেলের সিরিয়াল পাওয়া থেকে মৃত্যুর পর কবরের সিরিয়াল পাওয়া পর্যন্ত সবটাই এক ধুন্ধুমার প্রতিয়োগিতাই মাত্র।



তবে আমার আলোচ্য বিষয় এইসব প্রতিযোগিতার বিরোধিতা নয়। আমার মাথাব্যথার কারণ সিস্টেমের লস।







যতদিন না এই সিস্টেম পরিবর্তিত হচ্ছে শুদ্ধবুদ্ধির বিকাশ সম্ভব নয় কোনভাবেই।





।।সা।ত।কা।হ।ন।।

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৪

জান্নাতুন নাইম রাজন বলেছেন: তারপর ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে তাদের আগামির সোনালী দিনগুলোকে কিমা বানানো হয়।

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৩৬

অংকনের সাতকাহন বলেছেন: সবই সিস্টেম!!!

২| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৪৮

চুক্কা বাঙ্গী বলেছেন: এ যেন কোন উল্টো গাধায় চড়ে চলছি আমরা। সাথে দেশ, জাতি। সহমত।

৩| ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ১১:৫৮

আশিকুর রহমান অমিত বলেছেন: অন্যান্য অনিয়ম গুলো বাদ দিলে ক্লাস ওয়ানের জন্য লটারী সিস্টেম কে উপযুক্ত মনে হয়। কিন্তু সেটা হওয়া উচিত অপেনলি বাহ আরো স্বচ্ছতা নিয়ে। বাবা মার বার্ষিক আয় কে গন্য করে যে স্কুল সে স্কুএ পড়ানোর চেয় না পড়ানোই ভাল বাচ্চাদের।

৪| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:৪১

নেক্সাস বলেছেন: এ যেন কোন উল্টো গাধায় চড়ে চলছি আমরা। সাথে দেশ, জাতি।

সুন্দর বলেছেন

৫| ১৮ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪১

জাহিনের ভুবন বলেছেন: সিস্টেম লস.।.।.।.।.।.।.।.।।

৬| ২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:৩৬

রোলেন বলেছেন: কিন্ডার গার্টেন গুলার মাইকিং ভাস্য হচ্ছে আপনারা কোর রকম একটা ছেলে মেয়ে উৎপাদন করেন বাকীটা আমাদের দায়িত্ব। সিস্টেম সিস্টেমের জায়গায় নাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.