নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অন্যকোথাও অন্য কোনোখানে- বিজয়ের গানে!

http://www.myspace.com/423882880/music/songs/31785002

অন্যআনন

আবেগের চোখে নয়, সম্ভাবনার চোখে

অন্যআনন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কামরুজ্জামান কামু এবং একজন স্ক্রীপ্টরাইটার

২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:১৬

১.

কামরুজ্জামান কামু, কবি, নাট্যকার, পরিচালক। তাঁর সাথে আমার প্রথম দেখা হয়েছিলো ছোট খাটো একটা আড্ডায়। সেখানে আমার আরেক প্রিয় ব্যক্তি সঞ্জীব দা (দলছূট) এবং রাসেল ও'নীল উপস্থিত ছিলো। সময়টা ছিলো ১৯৯৯/২০০০ সালের মাঝামাঝি। সঞ্জীব দার তখন একটা মিক্সড এ্যালবামে "কালোপাখি " নামে সলো গান বের হয়েছে। জোস হয়েছিলো গানটা।

দাদাকে সেটা জানাতেই গিয়েছিলাম ভোরের কাগজ অফিসে!দাদা আমাকে নিয়ে চললেন তাঁর পরিচিত আড্ডা খানায়। আমরা গান, লিরিক, দলছূট, সাহিত্য, কবিতা ইত্যাদি নিয়ে আড্ডা জমিয়ে ফেলছি, এমন সময় সন্ধ্যার দিকে কামু ভাই আসলেন। তিনি এসে দেখলেন, দাদা গান গাচ্ছেন, ডন ম্যাকলিনের গান, স্ট্যারি স্ট্যারি নাইট....! এখনো গানটা শুনলে আমি নিথর হয়ে যাই। কামু ভাই আসার পর আমাদের গানের আসর শেষ হলো। কামু ভাইকে দাদা অনুরোধ করলেন, তার নতুন গানটা গাইতে। কামু ভাই ভীষণ বিনয়ের সাথে সেটা প্রত্যাখান করলেন। পরে, একের পর এক অনুরোধে গেয়েই ফেললেন গানটা - তোমার ভাঁজ খোলো আনন্দ দেখাও, করি প্রেমের তরজমা, যে বাক্য অন্তরে ধরি, নাই দাড়ি তার নাই কমা।...আমি বিমুগ্ধ হয়ে শুনছিলাম জীবন্ত একটা গান। কামরুজ্জামান কামুর গান।

তারপর হঠাত কি হলো, গান শেষে কামু ভাই উঠে দাঁড়ালেন " আমার যাইতে হবে"। দাদা জিজ্ঞেস করলেন কোথায়? কামু ভাই বললেন বাসায়। বউয়ের ভয়ে তাকে তাড়াতাড়ি বাসায় ফিরতে হবে! খুব বিনয়ের সাথে কামু ভাই আমাদের বললেন।

আমি জানিনা, বাংলা মোটরের ঐ আড্ডার কথা কামু ভাইয়ের মনে আছে কিনা, হয়তো একদমই নেই!



২.

গতকাল (২০/১০/২০০৭) রাত নয়টায় এনটিভিতে দেখলাম, কামু ভাইয়ের চিত্রনাট্য ও পরিচালনায় নাটক "স্ক্রীপ্ট রাইটার"।

নাটকে অভিনবত্ব ছিলো অভিনেতা বাছাইয়ের ক্ষেত্রে। সেখানে আমরা দুজন স্বনামখ্যাত পরিচালক ( দুজনই আমার ভীষণ পছন্দের!) নুরুল আলম আতিক এবং গিয়াসউদ্দীন সেলিমকে প্রথমবার অভিনেতা হিসেবে দেখেছি । আতিক অভিনয় করেছেন বেকার কবি এবং স্ক্রীপ্ট রাইটার চরিত্রে আর সেলিম অভিনয় করেছেন নাট্যনির্মাতা র চরিত্রে। তাদের অভিনয় ছিলো সাবলীল, সাধারণ এবং বাহুল্যবিবর্জিত।

আতিকের বউ হিসেবে অভিনয় করেছেন জয়া। দূর্দান্ত অভিনয় করেছেন তিনি। আমার মনে হয়নি যে উনি অভিনয় করছেন। পুরো নাটকেই তিনি প্রেগনেন্ট ছিলেন।

নাটকে বেকার কবি আতিক চাকরির সন্ধানে দিগ্বিদিক ঘুরে বেড়ায়। সে জনে জনে বলে বেড়ায় তার নতুন স্ক্রীপ্টের কথা। কিন্তু মনে মনে সে একটা অদ্ভূত স্বপ্নও বয়ে বেড়ায়, টাকা পয়সা হলে রাঙ্গামাটি-বান্দরবানে একটা ছোটোখাটো পাহাড় কিনবে। সেখানে ঘর বানিয়ে সে, তার স্ত্রী ও তার সন্তান বাস করবে।আর তার স্ত্রীর মনে ঘুরপাক করতে থাকে কাছিমের দীর্ঘায়ুর ভাবনা। কাছিম ৩০০ বছর বাঁচে কিন্তু মানুষ! তার আশঙ্কার কথা সে তার স্বামীকে জানায়, যদি সন্তান প্রসব করে সে মারা যায়!



এদিকে তার চাকরিও হয়না আবার স্ক্রীপ্টও আগায়না। পরিচালক একদিকে আশ্বাস দেন কিন্তু এটাও বলেন, স্ক্রীপ্টে টুইস্ট দরকার ( মোচড় এবংKISF method !)। স্ক্রীপ্টের নায়িকাও থাকে প্রেগনেন্ট , গল্পের টুইস্ট হলো তাকে মেরে ফেলা হবে নাকি সে বেঁচে থাকবে। এটা নিয়ে কবি তার স্ত্রী এবং একমাত্র বোনের ( ঘরে মা, বাবা আর কেউই নেই) সাথে আলোচনার একপর্যায়ে জয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে সে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে/ক্লিনিকে যায়। স্ত্রীকে অপরেশান রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে , নিজে গিয়ে বসে ওয়েটিং রুমে। সে উদ্বিগ্ন এবং ক্লান্ত, এক পর্যায়ে তার চোখে ঘুম চলে এলে, সে স্বপ্ন দ্যাখে সে আর তার সন্তান একটা ছোটো নৌকায় করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।ছেলেটা বাবাকে মা মা বলে ডাকছে।



৩.

গল্পটা সাধারণ লেগেছে আমার কাছে। তবে কিছু কিছু জায়গায়, দারুণ ব্যাপার ছিলো। যেমন , বেকার কবির বন্ধুর বউয়ের প্রলোভনে পড়া, টেলিভিশনে কাছিমের ডিমপাড়া, কাছিম ছানারগুলোর সমুদ্রে ছুটে যাওয়া ইত্যাদি এবং পরক্ষণেই কবি পত্নীর স্বামীর কাছে কাছিম বিষয়ক গল্প বলা ভালো লেগেছে। কবির বোন চরিত্র অভিনয় করা অভিনেত্রীর গলাটা সুরেলা। হাবিবের এখনই নামবে বৃষ্টি গানটি সে ভালোই গেয়েছে।



আবহ সঙ্গীতে ইয়োইয়ো গানটা আগ্রহের জন্ম দিয়েছে।

আসলে স্ক্রীপ্টরাইটার নাটকের কবির পুরো জীবনটাই একটা স্ক্রীপ্ট। কখনো বা কবির স্ক্রীপ্ট তার অনাগত সন্তানের মুখ, কখনো বা বউয়ের স্বপ্ন, কখনো চাকরি ইত্যাদি। কবির নিজের জীবনেই কতো মোচড় বা টুইস্ট অথচ নাট্যকার সেটার মধ্যে কোনো মোচড় বা টুইস্ট খুঁজে পান না। এখানে শেষ দৃশ্যে কবি পত্নীর মারা যাওয়াটা আমাদের বলে দেয়, জীবন, জীবনের টুইস্ট বা মোচড় যেকোনো নাটক ,সিনেমার স্ক্রীপ্টের চেয়ে বড়ো। জীবনই সবচেয়ে বড়ো ইভেন্ট ফুল, অনিশ্চিত যাত্রায় পরিপূর্ণ একটা নাটক এবং তার কাছে সকল সৃষ্টি, শিল্প নগন্য।



৪.

তবে, নাটকের কোথাও কোথাও ক্যামন যেন ঝুলে গেছে। পুরো নাটকেই শুধু কবি, কবির সংগ্রাম, দৈন্যতা নাটককে ক্যামন যেন একটা দুঃখী দুঃখী একটা প্রলেপ দিয়েছে। কিন্তু এ স্বত্বেও ব্যক্তিজীবন সংস্পর্শী গল্প, চরিত্রায়ণে অভিনবত্ব, ভিন্নমাত্রার মেকিং এ নাটকে দিয়েছে অন্যমাত্রা।

যারা নাটক টি মিস করেছেন, পরে বাজারে ডিভিডি এলে সংগ্রহ করে দেখতে পারেন। বা পরে কখনো এনটিভিতে পুর্নপ্রচার হলে দেখে নিতে পারেন।



ধন্যবাদ কামরুজ্জামান কামু, আমরা আরো নাটক দেখতে চাই এবং ব্লগেও আপনার সরব উপস্থিতি কামনা করি।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২১

রিজভী বলেছেন: একমত.......অসাধারণ লিখেছেন কামু ভাই।

আর নাটকের কাহিনী দেবার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩১

হট্টগোল বলেছেন: নাটকের কোথাও কোথাও ক্যামন যেন ঝুলে গেছে। পুরো নাটকেই শুধু কবি, কবির সংগ্রাম, দৈন্যতা নাটককে ক্যামন যেন একটা দুঃখী দুঃখী একটা প্রলেপ দিয়েছে।
----------------------------------------------

এরকম হলে নাটকটা ছুঁয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গায় নমিনেশন সহজে মেলে। আর আমাদের দুঃখবিলাসকে একটু চাড়া দিলে আমরাও আহা উহু করি। নাটক হিট।

৩| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩২

অন্যআনন বলেছেন: আপনি দেখেছেন রিজভী!

৪| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৩৩

অন্যআনন বলেছেন: আপনার মুখে বন্দুক নয় , ফুলচন্দন পড়ুক হট্ট!

৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৪০

হট্টগোল বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে @ অন্য

৬| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪

জামাল ভাস্কর বলেছেন: আমার কাছে নাটকের স্ক্রীপ্ট যতো ভালো লাগছে...ঠিক ততোটাই খারাপ লাগছে তার নির্মাণ কৌশল...চরিত্রগুলি ক্যান জানি ঠিক দাঁড়ায় না...এক কবি'র গল্প কইতে গিয়া অন্য চরিত্রগুলি আসে আর যায়। টিভি নাটকের বাইন্ধা দেওয়া সময়ের একটা ঝামেলা আছে তার লেইগা চিত্রনাট্যে লজিকাল প্রগ্রেশন বইলা একটা বিষয় থাকতে হয়, যা গল্প কওনের ধরণটারে ছোট পরিসরেই অটুট রাখে। কামু'র নাটকে গল্প বলনটা আমার ভালো লাগে নাই। অহেতুক টপ শটের বহুব্যবহার ভালো লাগে নাই...টপ শটের একটা ব্যাকরণগত অর্থ আছে...তয় সকল পারফরমারের অভিনয় গুণে পার পাইয়া যায় নাটকটা।

ফারুকীর একটা নিজস্ব গল্প বলার ধরণ আছে...তার ভাই বেরাদররা এইটারে অনুকরণ করতে গিয়া বিষয়টা মর্তবা না ধইরা কেবল কাঠামোগত ধরণটারে অনুসরন করে, যার জন্য ছবির অনেক আমেজেই ঝামেলা প্রতিভাত হয়। কামু'র নাটকেও তার সব বিদ্যমান।

৭| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৮:০৬

লাল দরজা বলেছেন: অন্য,
টিভিতে প্রমো দেখে পছন্দ হয়ে ছিল, কিন্ত নাটক'টা দেখা হলো না। আপনার লেখা থেকে একটু আঁচ পাওয়া গেল, ঘোল পরিবেশনের জন্য ধন্যবাদ। না দেখার সাধ কিছুটা পুরন করে নিলাম। সময় করে পরে দেখে নেয়া যাবে। আহা'র নির্ঝর আজ থেকে ব্লগবাসী হলেন, খেয়াল করেছেন নিশ্চই?

৮| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:১২

রাশেদ বলেছেন: দেখি নাই নাটকটা। দেখবো অনলাইনে আসলে।

৯| ২১ শে অক্টোবর, ২০০৭ রাত ৯:৪২

হট্টগোল বলেছেন: ফারুকীর একটা নিজস্ব গল্প বলার ধরণ আছে...তার ভাই বেরাদররা এইটারে অনুকরণ করতে গিয়া বিষয়টা মর্তবা না ধইরা কেবল কাঠামোগত ধরণটারে অনুসরন করে
----------------------------------------
এই লাইগ্যাই বেরাদারগো বানানো নাটকরে ফারুকীর নাটক কইয়া সবাই ভাবে।

১০| ২৪ শে অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ২:৪২

বাকী বিল্লাহ বলেছেন: স্ক্রীপ্ট রাইটার ভালোই লাগছে। ভাস্করের কমেন্ট আরো ভালো!

১১| ২৪ শে অক্টোবর, ২০০৭ বিকাল ৫:২৭

সামী মিয়াদাদ বলেছেন: নাটকটা দেখতে পারিনাই। দেখতে হবে। ধন্যবাদ।

১২| ২৫ শে অক্টোবর, ২০০৭ দুপুর ২:০৭

অন্যআনন বলেছেন: ইয়েস বাকী ভাই, কিন্তু আপনার খবর কি? অনেকদিন ধরে না দেইখা আছি, ভালো লাগে কন! আড্ডা ফাড্ডা হইবো না?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.