![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
নিজের মন্তব্য প্রকাশ আর নিজের দায়িত্ব বোধ থেকেই এই সাইটে আসা । পড়াশুনার ফাকেঁ নিজের সৃষ্টিশীল লেখা দেখতে ভালোই লাগে তাই এ ছোট্ট প্রয়াশ।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত শনিবার (২৬ অক্টোবর) সন্ধ্যায় ফোন করেন বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়াকে। তাদের সেই টেলিফোন আলাপের বিস্তারিত ইতোমধ্যে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত হয়েছে। ছড়িয়ে পড়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার টেলিফোন আলাপের বিস্তারিত প্রকাশ করা হলো :
প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ইমরান বিরোধীদলীয় নেতার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মোবাইল ফোনে কল দিয়ে প্রথমে দুজন কথা বলেন। এই দুজনের কথাবার্তার পরে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়। প্রথমে দুজনে কুশল বিনিময় করেন।
স্লামালাইকুম।
জি, এডিসি সাহেব
শিমুল দা, আপনি তো ফোন দিলেন না।
না, না। আমরা তো অপেক্ষা করছি আপনার জন্য। ছয়টা থেকে ম্যাডাম বসে রয়েছেন।
না, না। আপনাদের তো ফোন করার কথা।
না, এ রকম কোনো কথা তো আপনার সাথে আমার হয়নি। আপনি ছয়টায় ফোন দেবেন। ম্যাডামকে আমি আধঘণ্টা ধরে বসিয়ে রেখেছি।
আমি আপনাকে বলিনি যে আমি ফোন দেব। বিকজ আমরা এক্সপেক্ট করছি আপনারা ফোন দেবেন।
না, আপনি উল্টা কথা বলছেন। এ ধরনের কোনো কথা হয়নি। আমি ম্যাডামকে বলেছি...
না, আমিও তো বলিনি যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ফোন দেবেন। আমি বলেছি...
আপনি টেলিফোন করে মিলিয়ে দেবেন। এটা আপনার ডিউটি।
এটা তো আপনারও ডিউটি আছে যে আপনি টেলিফোন করিয়ে মিলিয়ে দেবেন।
ম্যাডাম এখন পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন।
আমরা অপেক্ষা করছি আপনার কলের জন্য।
ম্যাডাম এখনো বসে আছেন। আপনি দেন, এখনই দেন। ম্যাডামকে দিচ্ছি আমি।
আছেন ওখানে আপনারা?
জি, জি। ম্যাডাম এখনো আছেন।
আচ্ছা, ওয়েট করেন।
প্রধানমন্ত্রীর এডিসি ইমরান ও বিরোধীদলীয় নেতার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাসের মধ্যে এই কথাবার্তার পরে প্রধানমন্ত্রী ও বিরোধীদলীয় নেতার মধ্যে কথোপকথন শুরু হয়।
খালেদা জিয়া : হ্যালো, হ্যালো...
শেখ হাসিনা : হ্যালো। কেমন আছেন?
খালেদা জিয়া : ভালো।
শেখ হাসিনা : আমি ফোন করেছিলাম আপনাকে দুপুরবেলা, পাইনি।
খালেদা জিয়া : দেখেন, এই কথাটা যে বলছেন, তা সঠিক নয়।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে জানিয়ে দিতে চাই...
খালেদা জিয়া : আপনাকে প্রথমে আমার কথা শুনতে হবে। আপনি যে বলছেন দুপুরে ফোন করেছিলেন, দুপুরে কোনো ফোন আসেনি।
শেখ হাসিনা : আমি রেড ফোনে ফোন দিয়েছিলাম।
খালেদা জিয়া : রেড ফোন তো দীর্ঘদিন ধরে, বছর ধরে ডেড পড়ে আছে। আপনারা গভর্নমেন্ট চালান, কী খবর রাখেন? গভর্নমেন্ট চালাচ্ছেন, এই খবর রাখেন না যে বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কি না। আর আপনি যদি ফোন করবেনই, তাহলে গতকালই আপনার লোক এসে ফোন ঠিক করিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। দেখে যাওয়া উচিত ছিল যে বিরোধীদলীয় নেতার ফোন ঠিক আছে কি না।
শেখ হাসিনা : রেড ফোন সব সময় ঠিক থাকে।
খালেদা জিয়া : আপনারা লোক পাঠান। এখনই লোক পাঠান। দেখে যান ফোন ঠিক আছে কি না।
শেখ হাসিনা : আপনি তো প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। আপনি জানেন, রেড ফোন সব সময় ভালো থাকে।
খালেদা জিয়া : ভালো থাকে তো, তবে আমারটা ভালো নেই। আমারটা তো ভালো নেই।
শেখ হাসিনা : ভালো আছে, আমি যখন ফোন করেছিলাম, সেটা ভালো ছিল।
খালেদা জিয়া : না, সেদিনও চেক করেছি। আপনারা যদি সত্যি কথা না বলেন, তাহলে চলবে না।
শেখ হাসিনা : আমার সত্যি কথা না বলার তো কিছু নেই। আমি কয়েকবার ফোন দিয়েছি।
খালেদা জিয়া : হঠাত্ করে কি মৃত ফোন জেগে উঠবে? আপনার টেলিফোন এত পাওয়ারফুল যে ডেড ফোন জেগে উঠবে!
শেখ হাসিনা : ঠিক আছে, কোনো কারণে আপনি ফোনটা ধরতে পারেন নাই।
খালেদা জিয়া : না, ধরতে পারি নাই না। আমি এখানে বসা। আমি এর মধ্যেই ঘুরি। ছোট্ট জায়গা, ছোট্ট জায়গার মধ্যেই আমি ঘুরি। ফোন বাজলে আমি না ধরার কোনো কারণ থাকতে পারে না। ডেড ফোন বাজতে পারে না। বুঝছেন? এটাই হলো সত্যি কথা।
শেখ হাসিনা : দেখুন, ফোন ডেড ছিল, না ডেড করে রাখা হয়েছে...
খালেদা জিয়া : ডেড ছিল। বহু কমপ্লেইন আপনাদের কাছে গেছে। কিন্তু আপনারা তো... রেড ফোনে আমার সঙ্গে কথা বলার লোক নেই। কাজেই আমি কার সাথে কথা বলব?
শেখ হাসিনা : আমি আগামীকাল দেখব, কেন আপনার ফোন ডেড ছিল।
খালেদা জিয়া : সেটা দেখবেন ভালো কথা।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে ফোন করলাম। আগামী ২৮ তারিখ সন্ধ্যায় গণভবনে আপনাকে দাওয়াত করছি। আপনি জানেন যে আমি ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করেছি আগামী নির্বাচন সম্পর্কে। আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি।
খালেদা জিয়া : আপনার যদি সত্যিকারের আন্তরিকতা থাকে আলোচনা করার জন্য, আমার যেতে কোনো আপত্তি নেই। আমি একা যাবো না। আমার সঙ্গে নিশ্চয়ই আরও কেউ থাকবে।
শেখ হাসিনা : আপনি যতজন খুশি নিয়ে আসতে পারেন। সমস্যা নেই।
খালেদা জিয়া : আমি দলবলসুদ্ধ নিয়ে যেতে চাই না। যাদেরকে প্রয়োজন মনে করব, তাদেরকে নিয়ে যাবো। সেটা হতে হবে ২৮ তারিখের পরে। ২৯ তারিখ সন্ধ্যা ছয়টায় আমার হরতাল শেষ হবে।
শেখ হাসিনা : আমি অনুরোধ করব জাতির স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে হরতাল প্রত্যাহার করে নেন।
খালেদা জিয়া : না, আমি ২৮ তারিখ যেতে পারব না।
শেখ হাসিনা : মানুষ খুন করা, আগুন মারা—এসব বন্ধ করুন।
খালেদা জিয়া : মানুষ খুন করা আপনাদের কাজ। আমাদের সেসব অভ্যাস নাই। আপনারা মানুষ জ্বালান, মানুষ মারেন, লগি-বৈঠা দিয়ে মানুষ মারেন। এসব রেকর্ডেড। আপনার মুখ দিয়েই শব্দ বেরিয়েছে। কাজেই এসব আপনি অস্বীকার করতে পারবেন না। আমি বলছি, হরতাল চলবে। ২৯ তারিখ সন্ধ্যায় শেষ হবে, এরপর আলোচনা।
শেখ হাসিনা : আমি বলছি, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থে দয়া করে এই হরতাল প্রত্যাহার করুন।
খালেদা জিয়া : না, দেশের স্বার্থে, জনগণের স্বার্থেই আমি এই হরতাল দিয়েছি, যেহেতু আপনারা কোনো আলোচনায় আসতে রাজি নন। আপনার মন্ত্রীরা বলছেন, কোনো আলোচনা হবে না। আপনি নিজে বলেছেন, আমাদের প্রস্তাব রিজেক্ট করে দিয়েছেন। কোনো আলোচনার দরকার নেই, এটা আপনারা বলছেন। এখন আবার আলোচনার কথা বলছেন। সেই আলোচনা হতে পারে, আমাদের কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর।
শেখ হাসিনা : আমি আপনাকে অনুরোধ করছি...
খালেদা জিয়া : না, সেটা সম্ভব না। উদ্যোগটা যদি একদিন আগে নিতেন, সেটা সম্ভব ছিল।
শেখ হাসিনা : এটা একদিন আগের বিষয় না। আপনি জানেন, আমি বিভিন্ন দলের সঙ্গে বসছি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি, আপনি ব্যস্ত মানুষ। আপনার মতো ব্যস্ত না হলেও আমাদেরও ব্যস্ততা আছে। ইচ্ছা করলে উপায় বের করা যায়। কিন্তু আপনারা সেটা করেননি। কালকে যে আমাদের সমাবেশের পারমিশন দিলেন, এত দেরিতে দিলেন কেন? কতদিন আগে পারমিশন চেয়েছি? মাইক পর্যন্ত লাগাতে দেন না। মানুষ এসে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কথা শুনতে পারে না। এটা কোন দেশের গণতন্ত্রের নমুনা দেখছেন আপনি?
শেখ হাসিনা : আমি যে সবার সঙ্গে আলোচনা করব, তা কিন্তু বহুদিন আগেই সবাইকে...
খালেদা জিয়া : আমরা যে সমাবেশ করলাম, সেখানে মাইকের পারমিশন দেওয়া কেন হলো না?
শেখ হাসিনা : না, মাইক তো দেওয়া হয়েছে। কয়েকটা মাইক ছিল।
খালেদা জিয়া : না, আমরা যতদূর ইচ্ছা মাইক দেবো। লোক বেশি, শুনবে। লোক আসবে এজন্য গাড়ি বন্ধ করে দেন, ১৪৪ ধারা জারি করেন। দেশে কি ইমার্জেন্সি চলছে নাকি? দেশে কি যুদ্ধাবস্থা চলছে যে এমন শুরু করে দিলেন আপনারা?
শেখ হাসিনা : আমি এ ব্যাপারে এখন আপনার সঙ্গে কথা বলতে চাচ্ছি না।
খালেদা জিয়া : কথা বলতে না চাইলে তো কথাই নেই।
শেখ হাসিনা : কথাগুলো সত্য না। আপনারা তো মিটিং করছেন।
খালেদা জিয়া : আপনারা মিটিং করতে দেবেন, মাইক দেবেন না। এমন সময়ে পারমিশন দেবেন, যখন মঞ্চও বানাতে পারব না। আপনারা কি আগে মিটিং করেন নাই?
শেখ হাসিনা : সব মনে আছে। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার কথা মনে আছে...
খালেদা জিয়া : গ্রেনেড হামলা আমরা করিনি, আপনারাই করেছেন।
শেখ হাসিনা : রাত ১১টায় পারমিশন দিয়েছেন, সেটাও মনে আছে। এসব কথা আপনাদের মুখে মানায় না।
খালেদা জিয়া : মুক্তাঙ্গনে সমাবেশ ছিল। সেখান থেকে যে ভেন্যু পরিবর্তন করে আপনাদের অফিসে নিয়ে গেছেন, সেটা পর্যন্ত আমাদের জানাননি। এসব পুরনো কথা বাদ দেন। এখন আপনাকে আমি বলছি, যদি সত্যিকারের আলোচনা করতে আন্তরিক হন, তাহলে আমাদের কর্মসূচির পরে...
শেখ হাসিনা : আমরা নিশ্চয়ই ঝগড়া করতে চাই না।
খালেদা জিয়া : আপনি তো ঝগড়া করছেনই।
শেখ হাসিনা : একতরফা বলে যাচ্ছেন। আমাকে তো কথা বলারই সুযোগ দিচ্ছেন না।
খালেদা জিয়া : আমি একতরফা বলব কেন। আপনি কথা বলছেন, আমি জবাব দিচ্ছি শুধু।
শেখ হাসিনা : আমি তো আপনার সঙ্গে কথা বলারই সুযোগ পাচ্ছি না।
খালেদা জিয়া : আপনি বার বার বলছেন হরতাল হরতাল। হরতাল এখন প্রত্যাহার হবে না। আমাদের কর্মসূচি শেষ হলে তারপর যদি... আপনি জানেন। আপনি যদি...
শেখ হাসিনা : হরতালের নামে মানুষ খুন করা অব্যাহত রাখবেন?
খালেদা জিয়া : আমি মানুষ খুন করতে চাই না। আপনারা মানুষ খুন করেছেন। কালকেও নয়জন মানুষ আমার খুন করেছেন আপনারা।... আপনার ছাত্রলীগ যুবলীগ করে না?
শেখ হাসিনা : না।
খালেদা জিয়া : আপনার ছাত্রলীগ-যুবলীগের আমরা অস্ত্রসহ ছবি দেখাতে পারব। আপনার ছাত্রলীগ-যুবলীগ কীভাবে খুন করে নিরীহ মানুষকে।
শেখ হাসিনা : বললাম তো খুনের রাজনীতি আমরা করি না; বরং আমি দেখি...
খালেদা জিয়া : ...আপনাদের তো পুরানা অভ্যাস। আপনারা সেই স্বাধীনতার পর থেকে ’৭১-এ যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখনও এই হত্যা করেছেন। এত মানুষ হত্যা করেছেন। এগুলো ভুলে গেছেন আপনি?
শেখ হাসিনা : একাত্তরে আমরা মানুষ হত্যা করেছি?
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ অবশ্যই। একাত্তরের পরে...
শেখ হাসিনা : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য...
খালেদা জিয়া : যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার জন্য নয়...। আপনারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার যদি ঠিকমতো করতেন, তাহলে আমরা পূর্ণ সমর্থন দিতাম। কিন্তু আপনারা সেই ট্রাইব্যুনাল করেননি। না করে, একতরফা করেছেন এবং আপনার দলে যে অনেক যুদ্ধাপরাধী আছে, সেগুলো একটাও ধরেননি। সেগুলোকে একটাও কেন ধরেননি?
আপনি তো প্রধানমন্ত্রী নন। দলের প্রধানমন্ত্রী। আপনি তো দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে পারেননি। নিরপেক্ষতার ঊর্ধ্বে আপনি যেতে পারেননি। তবে...
না হলে, আমার সঙ্গে এই আচরণ তো আপনারা করতেন না, যা করেছেন আপনারা। আমার সঙ্গে যেই আচরণ করেছেন, সেদিন আমার পার্টি অফিসে আপনারা যে আচরণ করলেন, এরপর আর বলতে হবে? বিরোধীদলীয় নেতাকে আপনারা সম্মান দিতে জানেন না। কিসের গণতন্ত্রের কথা বলেন আপনি?
শেখ হাসিনা : আপনার কথার জবাব দিতে গেলে আমাকে তো সেই ২০০১ থেকে অনেক কথা বলতে হবে।
খালেদা জিয়া : সেটার জবাব আমিও দিতে পারি। আপনি দিবেন আমিও দিতে পারি...
শেখ হাসিনা : ...এরশাদ বা তার দলের সঙ্গে কী কী করেছিলেন। আর ২০০১ সালে...
খালেদা জিয়া : একাত্তর সালে আমরা কিছু করিনি। এরশাদের সময় যত করেছেন আপনারা। এরশাদ যখন একটি নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে ক্ষমতা নিল, তারপর আপনি বললেন আই এম নট আনহ্যাপি। আপনি যখন বিবিসিকে বললেন। ...ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন কোন সংবিধানের অধীনে ক্ষমতা নিল...
শেখ হাসিনা : ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন আপনার চয়েজ ছিল।
খালেদা জিয়া : ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন আমার চয়েজ ছিল না। আপনার চয়েজ ছিল। আপনি নিজে বলেছেন আপনার আন্দোলনের ফসল। এগুলো ভুলে যান কেন? মানুষ তো ভোলে না সেগুলো।
শেখ হাসিনা : নয়জন অফিসার ডিঙিয়ে মইনুদ্দিনকে আপনি আর্মি চিফ বানিয়েছিলেন।
খালেদা জিয়া : আপনি এমন অনেক অফিসারকে বাড়ি পাঠিয়েছেন। সেটা নয়জন না সাতজন, সেটা কথা নয়। আপনি অনেককে ডিঙিয়ে বাড়ি পাঠিয়েছেন। মইনুদ্দিন যে-ই থাকুক না কেন, যখন এটা করল—সেখানে আপনারা... সেই ইয়েতে গেলেন কেন আপনি? সেটা সংবিধানসম্মত হয়নি। সংবিধানসম্মত ছিল না। সেটাতে কেন গেলেন আপনি? সেদিন তো আপনি মনে করেননি। আমরা দুই দলই তখন ক্ষমতার বাইরে...
তখন তো একবার মনে করলেন না আমরা আলোচনা করি। ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিনের এখানে যাওয়া ঠিক হবে না। এরা সংবিধানসম্মত নয়। আপনি তো সেটা মনে করলেন না। চলে গেলেন সেখানে হাসিমুখে।
শেখ হাসিনা : ...আমি আগুনে বসেও হাসিখুশি থাকি। আবার বাবা, মা, ভাই...
খালেদা জিয়া : ...অতীত ছেড়ে দিয়ে আমি বলতে চাই এখন সামনের দিকে কী করে আগাবেন... আপনার যদি সত্যি সত্ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে আমরা সামনের দিকে কী করে এগুবো... সামনের দিকে এগুতে চাই।
শেখ হাসিনা : আপনি তো অনেক অভিযোগ করলেন। আমি তো এত অভিযোগ করতে চাই না। ছোট্ট রাসেল..., ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছেন।
খালেদা জিয়া : ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা আপনারা করিয়েছেন। আপনাকে হত্যা করতে কেউ চায়নি।... আপনি যত থাকবেন, তত আমাদের জন্য ভালো।...
শেখ হাসিনা : ১৫ আগস্ট আপনি যখন কেক কাটেন...
খালেদা জিয়া : ১৫ আগস্ট আমার জন্মদিন। আমি কেক কাটবই।
শেখ হাসিনা : খুনিদের উত্সাহিত করার জন্য যখন আপনি কেক কাটেন।...
খালেদা জিয়া : ...এটা বলেন না। ১৫ আগস্ট বাংলাদেশে কোনো মানুষের জন্ম হবে না? কোনো মানুষ পালন করবে না। এগুলো বাদ দেন। কথায় কথায় আপনারা বলেন। অনেক কথা বলেন জিয়াউর রহমানকে। আরে জিয়াউর রহমান তো আপনাদের নতুন জীবন দান করেছে। এগুলো কথা বইলেন না। বুঝেছেন। আপনারা তো বাকশাল ছিলেন।... আপনারা জিয়াউর রহমানের বদৌলতে আওয়ামী লীগ হতে পেরেছেন। আদার ওয়াইজ আওয়ামী লীগ হতে পারতেন না।
শেখ হাসিনা : ...রাসেলকে তো এই বাসায় ঘুরতেও দেখেছেন।...
খালেদা জিয়া : নতুন করে শুরু করি। সেটাতে আপনি রাজি থাকেন, আসেন আমরা সুন্দর আলোচনা করি। আমার আলোচনা করতে আপত্তি নাই। কিন্তু সেই ডেট হতে হবে আমার হরতাল শেষ হওয়ার পর।
শেখ হাসিনা : আপনার হরতাল প্রত্যাহার করবেন না?
খালেদা জিয়া : না, আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। এটা তো আমার ডিসিশন না। এটা ১৮ দলের ডিসিশন। আমি এটা কী করে একলা করব?
শেখ হাসিনা : আপনি ১৮ দলকে ডেকে নিয়ে বলেন...
খালেদা জিয়া : এখন সময় নাই। আপনি যে তাড়া করতেছেন। এখন তো খুঁজে পাওয়া যাবে না লোকজনকে। আপনি তো সবার পেছনে পুলিশ লাগিয়ে রেখেছেন। কী করে মানুষ পাওয়া যাবে, বলেন?
শেখ হাসিনা : আমরা পুলিশ লাগিয়ে রাখব কেন?
খালেদা জিয়া : আপনি লাগিয়ে রাখবেন না তো কে রাখবে? পুলিশ... কার কথায়... কি আমার কথায় চলে? আপনি তো সবার বাসায় বাসায় রেইড করছেন। বস্তি থেকে পর্যন্ত আপনি লোক ধরে নিয়ে যাচ্ছেন।
শেখ হাসিনা : যেখানে বোমা বার্স্ট হয়ে যাবে...
খালেদা জিয়া : বোমা ব্লাস্ট হয়ে যাবে। বোমা ব্লাস্ট তো আপনারা করেন আর নাম দেন আমাদের। এগুলো তো আপনাদের পুরাতন ঐতিহ্য।
আমি বলতে চাই, যদি আপনারা ২৯ তারিখের পরে করেন আমি রাজি আছি। আমি নিশ্চয়ই কথা বলতে রাজি আছি।
শেখ হাসিনা : আপনি আলটিমেটাম দিলেন দুই দিনের। এখন আমি দুই দিনের মধ্যেই ফোন করলাম। অথচ এখন হরতালও করবেন আবার বলছেন ২৯ তারিখের পরে। আপনি কী বক্তৃতা দিলেন আর আজকে এখন কী বলছেন, আপনি একটু ভেবে দেখেন।
খালেদা জিয়া : আমি বলেছি আলোচনা চলুক, কর্মসূচিও চলবে।
শেখ হাসিনা : আপনি নিজেই বলছেন দুই দিনের মধ্যে আলোচনা... হরতাল দিবেন না।... শোনেন আমার কথা... আমার এখানে ক্যামেরা নাই...
খালেদা জিয়া : আমার এখানে ক্যামেরা ট্যামেরা নাই। আমি নিজেই কথা বলছি। আমি বাসায় বসে কথা বলছি। অফিসে হলে আমার জন্য সুবিধা হতো। ক্যামেরা ট্যামেরা থাকত। টেলিভিশনে দেখব আপনারাই ক্যামেরা দেখাচ্ছেন।... যে বলেছে... টেলিভিশনে স্ক্রল দিয়েছে যে ওনার রেড টেলিফোন ঠিক আছে। আমি এটা দেখতে চাই।
শেখ হাসিনা : আমি খবর নিলাম। ফোন ঠিক আছে। ১০-১২ বার ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : ফোন ঠিক নাই। তাহলে বলতে চান আমরা কেউ ফোনে শুনছি না। ফোন বাজে আমরা কেউ শুনি না।
শেখ হাসিনা : আমি কানে শুনব কি করে। গ্রেনেড হামলায় তো আমার এক কান এমনিতেই নষ্ট।... ফোন আমি নিজে করেছি।
খালেদা জিয়া : আপনি নিজে করলে কী হবে। আপনি একটা ডেড ফোনকে... আপনি বলেছেন আপনি ফোন করেছেন।
শেখ হাসিনা : ফোন রিং হচ্ছিল...
খালেদা জিয়া : রিং হবে কী করে। যে ফোন ডেড, সেটা রিং হবে কী করে। এটাই তো মন-মানসিকতার পরিচয়। আপনি কি সত্যি কথা বলছেন কি না।
শেখ হাসিনা : আমি সত্যি কথা বলছি। মিথ্যা বলার কিছু নেই...
খালেদা জিয়া : আমি কাল পর্যন্ত চেক করেছি। আপনি করতে পারেন।... ফোন চেক করে রিপোর্ট করেছি। আপনারা... লোকজন... কেউ আসেন। তারা তো আমাদের মানুষ বলে মনে করে না। কাজেই আসেও না, টেলিফোন ঠিক করার গরজও বোধ করে না। রেড টেলিফোন কেন? আজকাল তো মোবাইল ফোন আছে, টিঅ্যান্ডটি আছে...
শেখ হাসিনা : রেড টেলিফোনের দোষ দিয়ে খামাখা মিথ্যা বলার তো দরকার নেই।
খালেদা জিয়া : মিথ্যে বলব কিসের জন্য। যে টেলিফোন ডেড, তো ডেডকে ডেড বলবই তো। আপনি বললে তো হবে না যে ফোন বিজি ছিল। এটা বললে কেউ বিশ্বাস করবে না।
শেখ হাসিনা : এক্সচেঞ্জে কালকে খবর নেওয়াই যাবে। এটা কোনো ব্যাপার না।
খালেদা জিয়া : কিন্তু আপনার গুলশান এক্সচেঞ্জ থেকে যে বলেছে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ সে সত্য কথাটা বলেনি।
শেখ হাসিনা : রেড টেলিফোন কিন্তু আলাদা এক্সচেঞ্জ। আরও ভালো করে জানবেন।
খালেদা জিয়া : আলাদা এক্সচেঞ্জই। টেলিভিশন স্ক্রল দিছে। আপনি নিজে সামনে থাকলে দেখতেন।
শেখ হাসিনা : আমি গণভবনের অফিসে বসে আছি। আমার অফিসে কোনো টেলিভিশন নেই।
খালেদা জিয়া : তাহলে কেন বলা হচ্ছে, টেলিফোন ঠিক আছে।
শেখ হাসিনা : আপনার শিমুল বিশ্বাসের সাথে কথা হয়েছে...
খালেদা জিয়া : আপনার সঙ্গে কথাই ছিল যে এই টেলিফোনে কথা হবে আমাদের। আমি তো বসে আছি এখানে। আধাঘণ্টা বসে আছি যে আপনার টেলিফোন আসবে। আমরা তো গোপন কিছু বলব না। একসময় আমরা অনেক কথা বলেছি। এরশাদবিরোধী আন্দোলনে একসঙ্গে কাজ করেছি। কেন কথা বলব না। এখনো বলতে চাই, কাজ করতে চাই। আসুন দেশের...
শেখ হাসিনা : আগামী ২৮ তারিখ আসেন। আমরা আলোচনা করি।
খালেদা জিয়া : না, আমি ২৮ তারিখ যেতে পারব না। আপনি যদি সত্যি আন্তরিক হন, ২৯ তারিখের পর ডেট দেন। আমি আসব।
শেখ হাসিনা : আপনি কালকে বললেন...
খালেদা জিয়া : না, আমি কর্মসূচি দিয়ে ফেলেছি। এখন সম্ভব না।
শেখ হাসিনা : আপনি নিজেই বলেছেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনার জন্য না ডাকলে হরতাল দেবেন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল দিয়ে ফেলেছি। তার আগে বলা উচিত ছিল।
শেখ হাসিনা : আপনি আপনার বক্তব্যটা আবার শোনেন।
খালেদা জিয়া : হ্যাঁ, এখন আমি নিজে শুনলেও কর্মসূচি দিয়ে ফেলেছি। সঙ্গে সঙ্গেই বলেছি, কর্মসূচিও চলবে, আলোচনাও চলবে।
শেখ হাসিনা : আপনি যেহেতু বললেন দুই দিনের মধ্যে...
খালেদা জিয়া : আমি বলেছি। কর্মসূচি-সংলাপ একসঙ্গে চলবে।
শেখ হাসিনা : এর আগেই আমি ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : না, হরতাল চলবে। কর্মসূচি ঠিক হয়ে গেছে। ১৮ দলের সবার সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত হয়েছে। ১৮ দল পাবো কোথায় এখন? এখন কেউ নেই।
শেখ হাসিনা : ১৮ দল আপনি পাবেন, ডাকলেই পাবেন। আপনি ডাকলে হবে না, এটা কোনো কথা হলো নাকি। এটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
খালেদা জিয়া : বিশ্বাস করবে না ঠিক আছে। আমি ডাকলে হতো। কিন্তু এখন হবে না, এই কারণে...
শেখ হাসিনা : আপনি বললেন, দুই দিনের মধ্যে আলোচনা না করলে আপনি হরতাল দেবেন। এ সময়ের মধ্যেই আপনাকে ফোন করলাম।
খালেদা জিয়া : না, আপনি যদি কাল রাতেও ফোন করতেন, তাহলে কর্মসূচি বিবেচনা করা যেত। পুরো রাত চলে গেছে। সকালে অফিসে চলে গেছি।
শেখ হাসিনা : রাতে ফোন না দিলে তো আপনার হয় না। আমি রাত জাগি না।
খালেদা জিয়া : আপনি কি সন্ধ্যার সময় ঘুমিয়ে পড়েন?
শেখ হাসিনা : আমি নামাজ পড়ি...
খালেদা জিয়া : আমি জানি। আপনি নামাজ পড়েন, কোরআন পড়েন... করেন। সবই জানি।...
শেখ হাসিনা : আপনি যে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিলেন, আমি ঠিক সেই সময়ের মধ্যেই আপনাকে ফোন করেছি আলোচনার জন্য।
খালেদা জিয়া : এখন আমার দলের কোনো নেতাকে পাবো না, কেন্দ্রীয় কমিটির নেতাদের পাবো না, ১৮ দলের নেতাদের পাবো না, কার সাথে কথা বলে আমি এটা প্রত্যাহার করব, আপনি বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনি কাউকে পাবেন না—এটা একটা কথা হলো? আপনি হুকুম দিলেই তো সব হবে।
খালেদা জিয়া : আরে আপনার ডিবি, এসবি তো আমার বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। আমার নেতারা কী করে আসবে বলেন?
শেখ হাসিনা : আপনারা ছুরি-কাঁচি-দা-কুড়াল নিয়ে মানুষকে আক্রমণ করার কথা বলছেন।
খালেদা জিয়া : ছুরি-কাঁচি-দা-কুড়াল নিয়ে তো আপনারা করেন। বিশ্বজিেক আপনার লোকজন দা দিয়ে হত্যা করল না?
শেখ হাসিনা : আমার লোকজন না। যারা করেছে তারা অনেক আগে থেকেই বহিষ্কৃত। আমরা তাদের সবাইকে গ্রেফতার করেছি।
খালেদা জিয়া : আমি আপনাকে আবার রিকোয়েস্ট করছি, ২৯ তারিখের পর আপনি সময় দেন, আমি আলোচনায় রাজি আছি। এখন এই কর্মসূচি থেকে বেরোনোর কোনো পথ নেই। আপনি ৩০ তারিখে ডাকেন, আমি যাব।
শেখ হাসিনা : আপনি জনগণের সামনে, জাতির সামনে যে বক্তব্যটা দিয়েছেন, সেটা অনুসরণ করেন। হরতাল প্রত্যাহার করেন।
খালেদা জিয়া : সেটা করার পথ আর খোলা নেই এখন। টাইম ওভার হয়ে গেছে। আপনি যদি কাল রাতেও ফোন করতেন, আমি রাতেই মিটিং ডাকতাম।
শেখ হাসিনা : আপনি দুই দিন সময় দিয়েছিলেন। আমি দুই দিনের মধ্যেই আপনাকে ফোন করেছি।
খালেদা জিয়া : আপনি কি মনে করছেন এই হরতালেই আমাদের কর্মসূচি শেষ হয়ে যাবে!
শেখ হাসিনা : না না। আপনি তো আরও হরতাল দেবেন। আপনি ৩৩০ দিন হরতাল দিয়েছিলেন। সেটা তো আমার মনে আছে।
খালেদা জিয়া : ৩৩০ দিন দিইনি কিন্তু। আপনি ১৭৩ দিন হরতাল দিয়েছেন। মনে নেই? আচ্ছা আপনি বলেন, ১৯৯১ সালে আমরা দুজনে আন্দোলন করে গণতন্ত্র আনলাম। তার পরে সেখানে আপনি অপজিশনে গেলেন, তাতে কী আছে? আমরা একসঙ্গে কাজ করতাম। কিন্তু আপনি তো সংসদে ফ্লোরে দাঁড়িয়ে বললেন, একদিনের জন্যও আমাকে শান্তিতে থাকতে দেবেন না।
শেখ হাসিনা : এটা আমি বলিনি। নো।
খালেদা জিয়া : এগুলো তো রেকর্ড আছে। আর তত্ত্বাবধায়ক? তত্ত্বাবধায়ক তখন কার ছিল? জামায়াতের ছিল। আপনি তখন তত্ত্বাবধায়ক ছাড়া মানবেনই না।
শেখ হাসিনা : তখন মাগুরার ইলেকশন।
খালেদা জিয়া : মাগুরার ইলেকশন? ভোলার ইলেকশন আপনি বলেন না কেন?
শেখ হাসিনা : ভোলার ইলেকশনের পরে যে সিচুয়েশন তৈরি হয়, তখন উপায় ছিল কি? ওইভাবে ভোট কারচুপি করলে...
খালেদা জিয়া : এই সিচুয়েশন এখনো হয়েছে। আপনার পক্ষে আপনার ডিসি ভোট চেয়ে বেড়ায়। ডিসি নৌকায় ভোট চেয়ে বেড়ায়।
শেখ হাসিনা : ডিসি কী কথা বলছে আর পত্রিকা কী কথা বলছে...
খালেদা জিয়া : না, এগুলো ঠিক তো। আপনি কালকে ডিসিকে বলবেন ব্যালট বাক্স ভর্তি করো। নো, এগুলো হতে পারে না। আপনি যদি ৩০ তারিখে করতে চান, আমি রাজি আছি। আমার এটা ফাইনাল। এর বাইরে আমি যেতে পারি না।
শেখ হাসিনা : না না। ডিসিরা ভোট চাইবে কী জন্য?
খালেদা জিয়া : চেয়েছে তো! পত্রিকায় এসেছে তো!
শেখ হাসিনা : ভোট চাওয়ার লোকের আমার অভাব নাই। আমার দল তো এ দেশে সংগ্রামের মধ্য দিয়েই জন্ম নিছে।
খালেদা জিয়া : আমার দলও। অনেক সংগ্রাম করে ক্ষমতায় এসেছে। এগুলো কথা বললে কথার পৃষ্ঠে কথা আসবেই।
শেখ হাসিনা : আমি আবারও আপনাকে অনুরোধ করছি, আপনি হরতালটা প্রত্যাহার করেন।
খালেদা জিয়া : আমি হরতাল প্রত্যাহার করতে পারব না। আপনি সময়মতো আমাকে টেলিফোন করেননি। সেজন্য আমি দুঃখিত। কালকে যদি টেলিফোন করতেন, পরিবেশ-পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
শেখ হাসিনা : আপনি কালকেই তো আলটিমেটাম দিলেন। কালকে একটার দিকেই তো আপনাকে ফোন করেছি। তাও পাইনি। আপনি বলছেন ফোন বাজতেছে না। কিন্তু আমার যে এডিসি দেড়টা-পৌনে দুইটা থেকে চেষ্টা করছে।
খালেদা জিয়া : ফোন না বাজলে তো আমার কিছু করার নেই। আমি তো বলেছিলাম নয়টার সময় নেতাদের ডাকব, কথা বলব, তখনো তো আমাকে ফোন দিলেন না। আপনি তো বসে থাকলেন ছয়টা, ছয়টা...
শেখ হাসিনা : আমার জরুরি মিটিং। কোনো মিটিংয়ে আমি দেরি করতে পছন্দ করি না। অলরেডি দেরি হয়ে গেছিল।
খালেদা জিয়া : আপনি যদি মনে করেন মিটিং বেশি ইমপোরট্যান্ট, না এটা বেশি ইমপোরট্যান্ট।
শেখ হাসিনা : না, সব মিটিং তো ইমপোরট্যান্টই। আমার কথা বলার পর আপনি ১২টার দিকে নেতাদের সঙ্গে বসে হরতালটা প্রত্যাহার করে নিতেন।
খালেদা জিয়া : মিটিং থেকে বের হয়েও আপনি কথা বলতে পারতেন। তাহলে আমার তখন সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধা হতো।
শেখ হাসিনা : আপনি দয়া করে এককভাবে সিদ্ধান্ত নেন।
খালেদা জিয়া : এককভাবে আমি কীভাবে সিদ্ধান্ত নিবো?
শেখ হাসিনা : আপনি বলেন যে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি। সে অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে আপনি হরতালটা প্রত্যাহার করছেন। সেকথা জনগণের সামনে বলেন।
খালেদা জিয়া : না, সেটা তো হবে না। তাহলে আপনি বলেন যে আপনি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবেন। তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা : তাহলে আর আলোচনার কী থাকল?
খালেদা জিয়া : নো, আলোচনা অনেক থাকে। আলোচনার অনেক প্রক্রিয়া থাকে। আপনি বলেন যে আমি নির্দলীয় সরকার মেনে নেবো। তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করব।
শেখ হাসিনা : আমার ৯০ ভাগ সিট থাকা সত্ত্বেও আমি আপনাকে আহ্বান জানাচ্ছি সর্বদলীয় সরকার করার জন্য।
খালেদা জিয়া : সর্বদলীয় সরকার হয় না। আপনি এর আগেও বলেছেন। সেগুলো হতে পারে না। আপনি যদি বলেন যে এখন আপনি নিরপেক্ষ সরকারের জন্য রাজি আছেন, তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেবো। আপনি বলেন।
শেখ হাসিনা : যারা মাইনাস টু করতে চেয়েছিল, তাদেরকে আবার সুযোগ দিতে চান কেন?
খালেদা জিয়া : আমি দিতে চাই না। সেটা আপনি দিতে চান। আপনি যে ভাষায় কথা বলেন...
শেখ হাসিনা : না, আপনি তো খুব মধুর ভাষায় কথা বলছেন।
খালেদা জিয়া : আপনি যে ভাষায় কথা বলেন, সেজন্য আমরা আপনার বক্তব্য শুনিই না।
শেখ হাসিনা : আমরা যেটা চাচ্ছি যে পার্লামেন্টে আমরা আছি। পার্লামেন্টে আমরা যেহেতু আছি—কখনো আপনি অপজিশনে, কখনো আমি অপজিশনে। কখনো আমি সরকারে, কখনো আপনি সরকারে। আমরা যা করব, পার্লামেন্টের ভেতরেই করব।
খালেদা জিয়া : না না, আপনার মিটিংয়ের সময় তো আপনি নষ্ট করছেন। আপনার মিটিংয়ের টাইম তো আমি নষ্ট করতে চাই না। আপনার তো মিটিংয়ে যাওয়ার কথা। আপনি দেরি করছেন তো। আপনার মিটিংয়ের দেরি আমি করতে চাচ্ছি না। এভাবে সব কথা হয় না।
শেখ হাসিনা : হরতালটা উইথড্র করে দেন।
খালেদা জিয়া : না, আপনি বলেন আগে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। এটা নিয়ে আলোচনা হবে। তাহলে আমি হরতাল উইথড্র করে নেবো।
শেখ হাসিনা : এটা নিয়ে তো যখন কথা হবে, তখন আলোচনা হবে আপনাদের সঙ্গে।
খালেদা জিয়া : আলোচনা তো কোন কোন ব্যক্তি নিরপেক্ষ হবে, নির্দলীয় কে, কী হবে, আপনার ফর্মুলা থাকবে না আমার ফর্মুলা থাকবে—এগুলো নিয়ে তো আরও অনেক আলোচনা বাকি আছে।
শেখ হাসিনা : আপনি নিজের দলের লোকের ওপর ভরসা করেন না?
খালেদা জিয়া : আমার দলের লোকের ওপর আমার ভরসা আছে। আপনি যদি বলেন যে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে রাজি আছেন, তাহলে কালকেই আমি হরতাল উইথড্র করে দেবো। রাতের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে দেবো হরতাল উইথড্র হবে। আমরা কালকেই আপনার সঙ্গে আলোচনায় বসব। কোনো অসুবিধা নেই। আপনি শুধু এটুকু বলেন।
শেখ হাসিনা : আপনি সর্বদলীয়টা মেনে নেন।
খালেদা জিয়া : না। সর্বদলীয় মানা যায় না। সর্বদলীয় মানা যায় না।
শেখ হাসিনা : পরে আবার কাকে আনবেন, ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন হয়ে যাবে। আপনি আর ফখরুদ্দিন-মইনুদ্দিন সৃষ্টি করবেন না; বরং যা করি আমরা নিজেরা নিজেরা করি।
খালেদা জিয়া : আমি কিছুই করতে চাই না। আপনি নির্দলীয় সরকারে রাজি হলে বলেন, না হলে আপনি ৩০ তারিখের পরে ডেট দেন। আমি করব। হরতাল প্রত্যাহার হবে না। ২৯ তারিখের পরে ডেট দেন। আমি আলোচনা করব।
শেখ হাসিনা : আমি ২৮ তারিখে আপনাকে দাওয়াত দিচ্ছি। আপনি আসেন।
খালেদা জিয়া : আমি ২৮ তারিখে যেতে পারব না। হরতালের মধ্যে আমি কোথাও যাই না।
শেখ হাসিনা : কাদেরকে আনবেন বলেন। আপনি ২৮ তারিখে আসেন।
খালেদা জিয়া : ২৮ তারিখে আমি যাবো না। হরতাল প্রত্যাহার হবে না। আপনি যদি ৩০ তারিখে রাজি থাকেন...
শেখ হাসিনা : ধন্যবাদ। আপনি ভালো থাকেন।
২| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:২৪
সেমিবস বলেছেন: ক্যান ব্যান হইলাম?? লিখাটা ছিল.....
Click This Link
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৩ দুপুর ১:১৯
পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: হে দেশের মহারথী জনতার কাণ্ডার
মিলে মিশে গড়িবারে আসা দরকার
ভুল হলে ১৭ কোটি মানুষের বিপন্ন জীবন
আলোচনা ও শান্তি একতার মেলবন্ধন ।।
ক্ষমতায় নয় সেবায় করা যায় মানবের মন জয়
মানুষ এর রায় সময়ের উন্নয়ন দেখবে বিশ্ব নিশ্চয় ।।