![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কোটা সংস্কার আন্দোলন ও কিছু কথা
বেশ কয়েকদিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, প্রিন্ট মিডিয়া ও মিডিয়াতে যে বিষয়টি সবচেয়ে জনপ্রিয় ও আলোচিত সেটি হল এই কোটা সংস্কার আন্দলন ২০১৮।
এই আন্দলনটি বেশ কদিন আগেও দেখা গিয়েছিল। আমরা এর আগে ২০১৩ সালে এরকম একটি আন্দোলন দেখেছিলাম, যেটি সেই সময় সফলতার মুখ দেখেনি।
এবারও আমরা দেখছি, এই আন্দোলনে বেশ সাড়া পাচ্ছে। ইতিমধ্যে হাইকোর্টে রিট করা হয়েছে। পাশাপাশি বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এর জন্য আন্দোলন হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আমার অত্যন্ত ক্ষুদ্র জ্ঞানে কিছু লিখতে পারায় নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমি আপ্রান চেস্টা করেছি প্রতিটি বিষয় যেন নিখুত ও নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করা যায়, যাতে এই “ সময়ের দাবি”র সঠিক মূল্যায়ন হয়, এক্ষেত্রে আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা একান্ত কাম্য।
আমি এই আলচনায় যে যে বিষয় গুলো সম্পর্কে বিশ্লেষণ করার চেস্টা করব,
১। কোটা ও কোটাধারি কি?
২। মেধা ও মেধাবি কি?
৩। কেন এই আন্দোলন ?
৪। মেধার মূল্যায়ন,
৫। মেধাহীন প্রশাসন
৬। মুক্তিযোদ্ধা কোটা কি আদৌ যৌক্তিক
৭। কোটা ৫৬% না ১০%
৮। শেষের কথা
আসুন আলোচনা শুরু করা যাক,
১। কোটা ও কোটাধারি কি ?
বিশ্বের বহুল প্রচলিত একটি শব্দ হল কোটা (Quota) । শব্দটি কমবেশি বিশ্বের প্রায় সকল দেশে সকল সরকারি, বেসরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক সকল প্রতিষ্ঠানে কমবেশি প্রচলিত। কোটা হল একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে কিছু নির্দিষ্ট সংখ্যককে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। “ বিশেষ করে, একটি সিমিত বা নির্দিষ্ট সংখক মানুষ বা জিনিস” – সুত্রঃ গুগল অনলাইন অভিধান।
যাদের কোটা আছে তারাই কোটাধারি।
২। মেধা ও মেধাবি কি ?
“মেধা হল ভাল বা যোগ্য হওয়ার মান, বিশেষ করে যা প্রসংসা বা পুরষ্কার পাওয়ার যোগ্যতা রাখে” – সুত্রঃ অনলাইন অক্সফোর্ড অভিধান।
এবং যাদের এই মান আছে তারাই মেধাবি।
৩। কেন এই আন্দোলন ?
চলমান এই আন্দোলনের মুল বিষয় হল, কোটা সংস্কার করা, কোটা পুরপুরি বাতিল করা নয়। বিষয় হল সংস্কার, বাতিল নয় কেন ? কারন আন্দোলনকারিরা মনে করছেন, কোটা থাকা দরকার কিন্তু তা সহনীয় মাত্রায়। এটাই হল মুল কথা।
আসুন আমরা আরেকটু গভীরে যাওয়ার চেষ্টা করি।
বিভিন্ন সুত্র থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, দেশে বর্তমান কর্মক্ষম মানুষের মধ্যে প্রাই চার কোটি লোক বেকার। এখানে শিক্ষিতের পাশাপাশি আশিক্ষিত বেকারও রয়েছে । সুত্রঃ দৈনিক আমাদের সময় , ২ জুলাই ২০১৭
বাংলাদেশের অর্থনিতির এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে প্রতিবছর ২২ লক্ষ কর্মক্ষম শিক্ষিত লোক শ্রমবাজারে প্রবেশ করে, এর মধ্যে কাজ পায় ৭ লক্ষ্য আর বেকার থেকে যায় বাকি ১৫ লক্ষ লোক।
বাংলাদেশে প্রতিবছর মোট কতটি পদে সরকারি চাকরিতে নিয়োগ দেওয়া হয় তার নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নেই, কিন্তু ২০১১ সালের এক হিসাবে দেখা যায়, বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কর্মরত কর্মচারী-কর্মকর্তার সংখ্যা ১১ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৫, বরতমানে এর সংখ্যা ১৩ লাখ। -সুত্র উইকিপিডিয়া।
সুতরাং দেখা যায় যদি, বর্তমানে কর্মরত সকল সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিয়ে পুনরায় সকল পদে নিয়োগ দেওয়া যায় তবে, শুধু এক বছরে যুক্ত হওয়া ১৫ লাখ বেকারকেও চাকুরি দেওয়া সম্ভব না।
কাজেই আমাদের মাথাই রাখতে হবে আমাদের মুল উদ্দেশ্য কি, মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের সাথে শত্রুতা করা নাকি, নিজের রুজির ব্যাবস্থা করা। আন্দোলন একটি গনতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু সেই আন্দোলনটি হতে হবে সঠিক জায়গায়, তা যেন বিফলে না যায়। তা না হলে একবার দেখি, বয়স ৩৫ করার দাবি, আরেকবার দেখি কোটা বাতিলের দাবি। কবে দেখব বয়স ৪৫ করার দাবি, নতুবা, মেধার জন্য সাধারন চাকরি পাচ্ছেন না তাই, মেধা কোটাও বাতিলের দাবি।
৪। মেধার মূল্যায়ন
মন্তব্যটি অত্যন্ত যৌক্তিক, “কোটা থাকলে মেধাবিরা মূল্যায়ন পান না”। এখানে একটা বিষয় পরিষ্কার করা দরকার, সেটা হল, আপনি যে মেধার মূল্যায়ন করতে চান সেটাও কিন্তু একটি কোটার মাধ্যমে সেটি হল, মেধা কোটা । ধরুন চাকরিতে কোন কোটা নাই অর্থাৎ মেধা কোটাও নাই, তাহলে কর্ম-কমিশনের নিয়োগ নিতি কি হবে তখন, কমিশন নিজের ইচ্ছা অনুযায়ী যাকে খুশি তাকে নিয়োগ দিতে পারবে।
বর্তমানে চাকরির বাজারে যে লক্ষ্য লক্ষ্য প্রতিযোগীর মধ্যে ১০/১৫ হাজারে টিকে, ১০/১৫ হাজারের মধ্যে আবার যখন ৩/৪ হাজারে টিকে তখন ওই ৩-৪ হাজারের সবাইকেই কি আপনি আমেধাবি বলবেন। তহলে, যারা প্রিলিতে বাদ পড়ে রিটেনে বাদ পড়েন তাদেরকে আপনি কি বলবেন আমার জানা নেই।
৫। মেধাহীন প্রশাসন
“কোটার কারনে মেধাহীন হয়ে পড়ছে প্রশাসন” – মন্তব্যটিকে অত্যন্ত শ্রদ্ধা জানাই ও এর ভূয়সী প্রশংসা করি এই কারনে, যে যারা মন্তব্যটি করে থাকেন তারা আমাদের প্রশাসনকে, আমাদের প্রশাসনিক কাঠামো নিয়ে অত্যন্ত চিন্তিত। তবে আমি আপনাকেই বলছি, দেশের সবচেয়ে বড় প্রশাসন ত জনপ্রতিনিধিরা, তারাই তো দেশের সচিব, ডিছি, এসপি কে চালান। তাহলে তাদেরকে পরিক্ষা দিয়ে নিরবাচিত করুন। রাষ্ট্রপতি, প্রধান মন্ত্রি, মন্ত্রি সবাইকে এক্সাম এ বসান।
সুতরাং, কোটার কারনে যে প্রশাসন মেধাহিন হয়ে পড়ছে তা একটি অবান্তর ও উদ্ভট ধারনা। যারা বলছেন তারা অবশ্যই কোননা কোন উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয়ে বলছেন অথবা না বুঝে বলছেন।
আমরা ইতিমদ্ধেই দেখেছি বাংলাদেশের পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ সকলেই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিচ্ছেন, যার ফলে আচিরেই আমরা অনুন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে অন্তর্ভুক্তি হতে যাচ্ছি। “মার্চেই আমরা উন্নয়নশীল দেশে রুপান্ত্রিত হতে যাচ্ছি” – জননেত্রি শেখ হাসিনা।
কাজেই বর্তমানে পুলিশ প্রশাসন, বিচার বিভাগ অনেক গুরুত্বপূর্ণ যায়গাতে অনেকেই আছেন যারা কোটা থেকে নিয়োগপাপ্ত হয়েছেন এবং শুধু চালাচ্ছেনই না বরং দক্ষতার সাথে দেশকে এগিয়ে নিচ্ছেন। এরুপ মন্তব্যে তাদেরকে হেয়প্রতিপন্ন করা হচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
৬। মুক্তিযোদ্ধা কোটা থাকা বা না থাকা
চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলনে, সবচাইতে বেশি আলচিত যে কোটা সেটি হল, মুক্তিযোদ্ধা কোটা (যেটি সবচাইতে বড় বলির পাঠা)। এইখানে আরেকটি বিষয় পরিস্কার হওয়া দরকার, সেটা হল, এই কোটা কিন্তু আসলে মুক্তিযোদ্ধার কোটা। স্বাধীনতার পর দেশে সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধাদের কিছু সুবিধা দেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধা কোটা চালু করা হয়। আমরা অনেকেই মনে করি এটা শুধু তাদের সন্তান্দের জন্য, বিষয়টি আসলে তা না। যেখানে মুক্তিযোদ্ধা পাওয়া যাবে না, সেখানে তাদের সন্তান , যেখানে তাদেরও পাওয়া যাবে না সেখানে নাতি-নাত্নি(যদিও নাতি-নাত্নি কোটা খুব কম যায়গাতেই প্রয়োগ করা হয়)।
এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, মুক্তিযোদ্ধারা বুকের রক্ত দিয়ে দেশ স্বাধীন করেছেন, তারা সেই সময় কোটা পেয়েছেন ভাল কথা, কিন্ত তাদের বংশধররা (সন্তান, নাতি-নাত্নি) পাবে কেন ?
প্রশ্নটি আমার কাছে খুবই মূল্যবান, একটু ভালোভাবে খেয়াল করবেন। যারা এই দাবিটি করেন, তাদের কাছে আমার ছোট্ট একটি প্রশ্ন, যারা যুদ্ধে মারা গেছেন, বা পরবর্তীতে দেশ স্বাধীনের পর মারা গেছেন তারা তো এখন আর দেশে নেই, তবে তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজন দের কে সাহায্য করার দরকারটা কি? বঙ্গবন্ধু আজ নেই, সুতরাং তার পরিবার কেন সরকারি সয়াহতা পাবে? যারা মারা গেছেন তারা তো আর টাকা-পয়সা পাচ্ছেন না।
দেখুন খুব সংক্ষেপে একটা কথা না বলে পারছিনা, আপনি যার টাকায় ফ্রাইড রাইছ আর চিকেন খাবেন তাকে দিবেন রুটি তরকারি (মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা), তা কোন মানবিকতার মধ্যে পড়ে।
৭। কোটা ৫৬% না ১০%
বর্তমানে দেশে প্রচলিত ব্যবস্থা আনুযায়ি বিভিন্ন কোটা ৫৬% ও মেধা কোটা ৪৪%। এখন বিষয়টি হল এই ৫৬% কি সত্যিই সঠিক ভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না !
আগেই বলা হয়েছে কোটার সংগা আনুযায়ি “একটি সিমিত সংখ্যক মানুষ বা জিনিস বিশেষ করে” তাহলে আবার প্রিলি, রিটেন, ভাইভা পাশ করা লাগবে কেন ?
আরেকটা বিষয়, বলা হয় দেশের এত পারছেন্ট এর জন্য এত কোটা কেন ?
বিষয়টি যদি একটু চিন্তা করেন তাহলেই এর উত্তর পাবেন আশা করি, কোটার অর্থটা কি ? এর মানে কি পারছেন্টেন্স ?
যেরকম কোটা আসলে হওয়া উচিত সেটিই তো নাই। কোটার যে অর্থ তাতে প্রিলি থেকে কোটার প্রয়োগ করা দরকার, অন্যথাই কোটা থাকা না থাকা সমান কথা।
সুতরাং বর্তমান যে ৫৬% কোটা, তা ১০০% নিয়ে গেলেও কোন যাই আসে না, কেননা ভাইভাতে কোয়ালিফাই করার পরেই না কেবল কোটা বিবেচনা করা হয়।
সুতরাং কোটা সংস্কার করা অবশ্যই করা দরকার, আর তা হল, প্রিলি থেকেই। তবেই কোটার মুল উদ্দেশ্য সফল হবে।
৮। শেষের কথা
আমরা বাঙালি, চিলে কান নিয়ে গেছে বলে আমরা চিলের পিছে দৌড়াই, আসলে কান আছে কিনা তা একবারও কানে হাত দিয়ে দেখি না। আমরা যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করছি একবারও ভাবছি না, আমাদের সমস্যা আসলে কোথাই। কোটা ৫৬% থেকে ১০% নামিয়ে আনলেই সকল সমস্যা সমাধান হবে না। আমাদের কর্মসংস্থান বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করতে হবে, তবেই আসল সমস্যা সমাধান হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধ চেতনা বিরোধী, যারা কোনদিনও চাইনি এই দেশে মুক্তিযুদ্ধ চেতনা প্রতিষ্ঠা পাক, তারাই আজ কিছু সাধারন শিক্ষার্থীকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। তাই আসুন আমরা এই আন্দলনের মাধ্যমে শুধু একটি মহলকে উপকৃত না করি।
“বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ঠাই নাই” – না বলে, বলি-
“বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চেতনার ঠাই নাই””
জয় বাংলা
জয় বঙ্গবন্ধু।
©somewhere in net ltd.
১|
২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ রাত ২:৪৭
চাঁদগাজী বলেছেন:
ব্লগে স্বাগতম।
বাংগালীদের মাঝে ভালো ছাত্র আছে, মেধাবী নেই; মেধাবী থাকলে জাতির অবস্হা এই রকম হ য ব র ল হতো না।