নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

প্রিয় মানুষেরা

জীবনের এই গতিপথ...পূর্ব-পশ্চিমে যেন এক নিছক অন্বেষণ

আরাফাত৫২৯

দূর থেকে দূরে, আরো বহুদূর......... চলে যেতে হয়, কত স্মৃতির ছায়ায়, এই রোদ্দুরের নীচে, নীল সবুজের খেলাঘরে জীবন মেতে থাকে কত নিয়মের প্রতীক্ষায়...

আরাফাত৫২৯ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের দুঃখগাঁথা - ৩: নোকিয়া এন গেজ

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:২০



১।
সময়টা ছিল ২০০৪ সাল।

সেই সময়ে আমি এখনকার মতন ছিলাম না। তখন আমার মাথাতে ছিলনা কাঁচাপাকা চুলের বাহার। ছিলনা এখনকার মতন অর্থকষ্ট। আমি ছিলাম ছিপছিপে গড়নের, লম্বাটে, মায়াবী চাহনীর, ঝাকড়া চুলের, জলপাই রংয়ের, মেধাবী এক অদ্ভুত সুন্দর তরুন। সেই আমলে যখন কিনা মোবাইলে কালার স্ক্রীন ছিল দূর্লভ, তখনও আমার ছিল একটা লাল রঙয়ের নোকিয়া এন গেজ ফোন। বুয়েটে যখন আমি মোবাইল বের করে কথা বলতাম, তখন মেয়েরা হুমড়ি খেয়ে পড়ত। তারপরে আবার গীটার-টিটার বাজিয়ে বুয়েট লাইফ একেবারেই ম্যাসাকার করে দিয়েছিলাম। সেই আমলেই আমি খুব ঘুরাঘুরি করতাম। তখন অবশ্য ডি-এস-এল-আর এর চল ছিলোনা।

একবার দিনাজপুর জয় করে ঢাকা ফিরছিলাম। একা ছিলাম। পাশের সিটে কেউ বসেনি। বাসটি ছিল মূলত ফাঁকা। কিন্তু পথিমধ্য ফুড ভিলেজে বাসটি থামার সময় এক্সিডেন্ট করে বসল। জানের ক্ষতি না হলেও মালের ক্ষতি হল বেশ। বিশেষ করে বাসটির সামনের অংশটুকু পুরোই ভেঙ্গে গেল। বাসের ভিতর ত্রাসের সূচনা হয়ে গেল। সেই ত্রাসের ভিতরেই দেখলাম একটা মেয়ে "ফোন" "ফোন" বলে চিতকার করছে। সেই ত্রাসের ভিরতই ভাবলাম, নিজেকে সবার সামনে তুলে ধরার এই সুযোগ। সবার সামনে আমার নোকিয়া এন গেজটি বের করে মেয়েটিকে নাটকীয় কায়দায় বললাম, "এই যে নিন ফোন"।

মেয়েটি ফোন হাতে নিয়ে বলল "সরি, আমার মোবাইল নষ্ট হয়ে গেছে। আমি বাসাতে ফোন দিব। আপনার এতবড় মোবাইল কেন? এটা কিভাবে ডায়াল করে?"

আমিও সেই রকম একটা ভাব নিয়ে সবার সামনে বললাম "আমার মোবাইলের ব্যালেন্স শেষ হয়ে গিয়েছে। বাসাতে ফোন দেয়া যাবেনা"।

মেয়েটি তাচ্ছিল্যের সাথে মোবাইলটি আমার হাতে দিয়ে বলল, "এতবড় মোবাইল আবার ব্যালেন্স নাই"। তারপরে জনতার দিকে তাকিয়ে মেয়েটি বলল, "ভাই আপনারা কেউ একটা মোবাইল আমাকে এক মিনিটের জন্য দিন না"।

এক সহৃদয় চাচ্চু আমার দিকে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে একটা সস্তা মোবাইল মেয়েটির দিকে বাড়িয়ে দিল।


২।
"বলতে হবে, মেয়েটি ছিল একটু অন্যরকম। ঠিক যেন অন্য কারো সাথে যায়না" - ফুড ভিলেজে বার্গার, চা আর নুডুলস খাচ্ছিলাম আর এসব ভাবছিলাম। ওদিকে বাসটি মেরামতের কাজ চলছিল। হাতে ছিল অফুরন্ত সময়। সেই সময়, সেই মেয়েটি ঠিক আমার সামনে এসে বলল, "সরি কিছু মনে করবেন না। তখন ভয় পেয়ে আপনাকে বোধহয় কিছু বলে ফেলেছিলাম। প্লিজ কিছু মনে করবেননা।"

আমি বললাম, "আপনি ফোন ফোন বলে চিতকার করছিলেন। আমি ভাবলাম কোন ফোবিয়া হবে হয়ত। ফোন হাতে দিলে ঠিক হয়ে যাবে। আপনি ফোন কল করতে চাচ্ছিলেন সেটা বুঝতে পারিনি"।

মেয়েটি বলল "বোঝার কথাও না। যাইহোক আপনার সাথে কিছুক্ষণ বসি?" এইবলে মেয়েটি আমার মুখোমুখি বসে বলল "আমার নাম রোজি।"

আমি আমার নাম বললাম।

সেদিন মেয়েটি আমার প্রতি অনেক অনেক আগ্রহ দেখাচ্ছিল যেটি সাধারণত সচারচর ঘটেনা। যাইহোক, বাসটি প্রায় চারঘন্টা পরে ঠিক হল। মেয়েটি বাসে ঠিক আমার পাশে বসল। কথায় কথায় অনেক কিছু জানা হল মেয়েটি সম্পর্কে। যদিও মেয়েটি আমার চেয়ে বয়সে কিঞ্চিত বড় এবং সেই সময়ে আমার বড় মেয়েদের প্রতি কিঞ্চিত বেশি আগ্রহ ছিল তাই আমিও কোন আপত্তি করিনি। আর কথায় কথায় এটাও বুঝেছিলাম মেয়েটি ছিল ঢাকার এক নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের বখে যাওয়া মেয়ে। সাধারণত কেউ কথায় যথেষ্ট হিউমার দিতে না পারলে আমি বন্ধুত্ব করতে আগ্রহী হইনা। কিন্তু তাও সেবার হলাম, কারণ মেয়েটি আমার চেয়ে বয়সে একটু বড় ছিল।

খুবই অবাক লেগেছিল কারণ মেয়েটি একটা টেলিফ্লিম কোম্পানীর পিছনের দৌড়াচ্ছিল শুধুমাত্র একটা মিউজিক ভিডিও শূট করার জন্য যেটাতে সে মূল চরিত্রে থাকবে। এর জন্য সে "যে কোন" কিছু করতে প্রস্তুত আছে বলে জানাল। আর এই ইন্ডাস্ট্রীতে আমার এমন অনেক বন্ধু বান্ধব আছে এবং আমিও এক-আধটু মিউজিক করি শুনে সে "যে কোন কিছু" করার অভিপ্রায়ে আমার আরো ঘনিষ্ট হয়েছিল।

মেয়েটি আমাকে হটাত করেই বলল, আগামী পরশুদিন তার জন্মদিন এবং সে এটা আমার সাথে শেয়ার করতে চায়। চলন্ত বাসে হটাত একটা অপরিচিত মেয়ের কাছ থেকে এমন অফার পেয়ে একটু অবাক হলেও ঘাবড়ে গেলাম না। ঠিক হল, পরশুদিন বিকাল পাঁচটায় বসুন্ধরা সিটিতে আমরা দেখা করব।


৩।
বুয়েটে আমার দুইটা বান্ধবি ছিল, ধরি যাদের নাম মলি ও ডলি। মলি ও ডলি আমাকে অনেকবার অনেকভাবেই সাবধান করল। অবশেষে হাল ছেড়ে দিয়ে আমাকে অনেক উপদেশ দিয়ে ছেড়ে দিল। কোনটার পর কি করতে হবে তাও বলে দিল। যাবার সময় এইটাও বলে দিল, "তুই যে গাধার গাধা সব কি ঠিক ঠাক মত করতে পারবি?" আমি ওদের ভালোমত আশ্বস্ত করে বললাম, "আমি পারব, কারণ আমার আছে নিডো"। কিন্তু ওরা বিশ্বাস করলনা, তাই তখন ওদের শার্ট খুলে মাসল দেখিয়ে বললাম, "দেখিস আমি তোদের মুখ উজ্জ্বল করে আসব।"

আমার এই কথা শুনে দুই বান্ধবির মুখ শুকিয়ে আমসির মত হয়ে গেল। যাইহোক, আমি পালাশী থেকে একটা ট্যাক্সি নিয়ে রওয়ানা দিলাম।


৪।
সত্যি কথা, আমি মেয়েটার জন্য গিফট কিনেছিলাম হলমার্ক থেকে। সেই আমলেই ওটার দাম ছিল চারশত টাকা। সেটা ছিল একটা সুন্দর নরম ডল, যেটা কিনা মূলত আমার নরম মনটাকেই প্রকাশ করছিল।

বসুন্ধরা সিটিতে গিয়ে রোজির সাথে দেখা হল। সে গাঢ় লাল লিপিস্টিকের সাথে একটা ফিনিফিনে লাল শাড়ি পরে এসেছিল। যেহেতু সেটা ছিল ওর জন্মদিন, আর আমি জাস্ট ব্যাপার স্যাপার বুঝতেই গেছিলাম, তাই গিফটাকে আগেই আমার স্কুল ব্যাগের ভিতর ঢুকিয়ে ফেলেছিলাম। প্রায় ঘন্টাদুয়েক কথা চালাচালির পর রোজি জন্মদিনের ট্রিট হিসাবে আমাকে একটা বার্গার খাওয়ালো যার দাম ছিল বিশ টাকা মাত্র। আমি চিন্তা করলাম, চারশত টাকার গিফট প্লাস পঞ্চাশ টাকার ট্যাক্সি ভাড়ার বিপরীতে মাত্র বিশ টাকার বার্গার ঠিক পোষাচ্ছেনা। তাই ব্যাগের ভিতরের গিফট ব্যাগের ভিতরেই রেখে দিলাম। যেহেতু, আমি "যে কোন কিছু" করতে আগ্রহী ছিলাম না তাই গিফট দিলে টাকা উসুল হবেনা, এবং সেটাই ছিলো আমার গিফট না দেওয়ার মূল কারণ। যাইহোক, কথায় কথায় রোজির নষ্ট জীবনের অনেক কাহিনী শুনতে শুনতে অনেক রাত হয়ে গিয়েছিল আর আমিও নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিলাম যে রোজি একটা বড় মাপের কাঠবলদ ছাড়া আর কিছুই না আর সে যা চায় তা সে কোনদিনও পাবে না। তাই কথা না বাড়িয়ে রোজিকে বললাম, "তুমি তোমার বাসাতে চলে যাও। আমিও আমার বাসাতে চলে যাই।"

রোজি আমার বাম হাতটি আকড়ে ধরে বলল, গ্রিনরোডে তার এক বন্ধুর বাসাতে যেতে। আমি সবিনয়ে এই আবেদন প্রত্যাখ্যান করে বললাম, "আমাকে বাসাতে যেতে হবে"। রোজি খুব কাতর গলায় বলল, "কেউ আমাকে চায় না। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়বনা, ঠিক ঠিক প্রতিরাতেই তোমাকে ফোন দিব।"

আমি বললাম, "সেটা দেখা যাবে, কিন্তু আমি কখনোই তোমাকে ফোন দিবনা"।

রোজি অট্টহাসিতে ফেটে পড়েছিল আমার এই কথা শুনে।


৫।
রোজিকে বিদায় দিয়ে আমি আমার বাসাতে যাবার জন্য একটা সি এন জি ঠিক করতে গেলাম, সি এন জি ওয়ালা চাইল আশি টাকা। সেই আমলে এইটা ছিল অনেক বেশি ভাড়া তাই আমি মেজাজ খারাপ করে ফার্মগেটের দিকে হাঁটা শুরু করলাম।

আমি যখন ঠিক পূর্ণিমা সিনেমা হলের সামনে আসলাম, তখন কে যেন আমাকে মিসকল দিল। আমি পকেট থেকে নোকিয়া এন গেজটা বের করে কল লিস্ট চেক করতেছিলাম এমন সময় দুটো ঘটনা ঘটলঃ
ক) কেউ একজন আমাকে ধাক্কা দিল।
খ) কেউ একজন আমার হাত থেকে মোবাইল টা নিয়ে দৌড় দিল।

আমি আগেই বলেছি "আমি ছিলাম ছিপছিপে গড়নের, লম্বাটে, মায়াবী চাহনীর, ঝাকড়া চুলের, জলপাই রংয়ের, মেধাবী এক অদ্ভুত সুন্দর তরুন। সেই আমলে যখন কিনা মোবাইলে কালার স্ক্রীন ছিল দূর্লভ, তখনও আমার ছিল একটা লাল রঙয়ের নোকিয়া এন গেজ ফোন।"

তাই আমি ইচ্ছা করলেই সেই বদমাশ দুটোকে দৌড় দিয়ে ধরে আচ্ছামত ধোলাই দিতে পারতাম। কিন্তু মূহূর্তের ভগ্নাংশ সময়ে আমার মনের ভিতর এই কথাগুলোই ঘুরপাক খেল, "এই মোবাইলেই তো রোজি আমাকে প্রতিরাতে কল দিবে। এই মোবাইলের সূত্র ধরেই তো ওর সাথে আমার পরিচয়। আমি আর কোন নষ্ট জীবনের মুখোমুখি হতে চাই না। আর সে যদি আমাকে প্রতিরাতে কল দেয় তাহলে আমার একমাত্র সম্পদ আখলাক বা চরিত্র ধ্বংস হয়ে যাবে, আমার তাকওয়া কমে যাবে। কি দরকার এই মোবাইলের? কতই বা দাম একটা নোকিয়া এন গেজের? বেশি হলে মাত্র পঞ্চাশ হাজার টাকা। কিন্তু আখলাক বা চরিত্র সে তো একেবারেই অমূল্য। যাহ ব্যাটা তোদের ভাগ্য ভালো যে আমি মোবাইলটা তোদেরকে দিয়ে দিলাম। তোরা রোজির সাথে ইচ্ছামত সারারাত গল্প কর। এক নষ্ট জীবন আরেকটি নষ্ট জীবনের মুখোমুখি হোক। মাইনাসে মাইনাসে প্লাস হোক।"

আমি কোন কথা না বলে রাস্তাতে সোজা হয়ে দাঁড়ালাম। একটা সি এন জি বাসার জন্য ঠিক করলাম আশি টাকায়। রাস্তার সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল। বাসাতে ফিরে সি এন জি ওয়ালাকে পুরো একশ টাকাই দিলাম। সি এন জি ওয়ালা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল।

এর পরের ছয় মাস আমি আর কোন মোবাইল ইউজ করি নাই।

রোজির সাথেও এর পরে আর কোনদিন যোগাযোগ হয় নাই।


৬।
পরেরদিন ডলি আর মলিকে নিয়ে অনেক ঘুরলাম। ওদের কাছে রোজির জন্য কেনা গিফটটা একশত টাকা লাভে পাঁচশত টাকা দিয়ে বিক্রি করলাম।

ওরা অনেক খুশি হল।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩২

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১১

আরাফাত৫২৯ বলেছেন: ধন্যবাদ পড়ার জন্য।

২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩৪

যবড়জং বলেছেন: পড়ে ফেল্লাম ।।।++

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১২

আরাফাত৫২৯ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৪৫

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: গল্পটা ভালোই এগুচ্ছিল। কিন্তু এক্সপেরিম্যান্ট করতে গিয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলেছেন। মোবাইল চুরি হলেই আখলাক ঠিক থাকবে - এ জন্য মোবাইল উদ্ধার করবেন না - এটা ভালো যুক্তি না। যেখানে আপনি নিজেই ৪০০ টাকা গিফট নিয়ে দেখা করতে গিয়েছিলেন। যাই হোক, গল্পে লেখকের স্বাধীনতা আছে, থাকবেই...

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৬

আরাফাত৫২৯ বলেছেন: জীবন কাহিনীকে গল্প বললেন!

যাই হোক, কাহিনী বলেন আর গল্প বলেন, লেখালেখি সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, যে যাই বলুক, সবই শুনলাম কিন্তু স্বাধীনতা আমার। ওই যে বলে না, বিচার মানি কিন্তু তালগাছ আমার।

ভালো থাকবেন।

৪| ২৮ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৪৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমি আমার ভুবন শূন্য করেছি- তোমার পুরাতে আশ ।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭

আরাফাত৫২৯ বলেছেন: ভাই বুঝি নাই, তবে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.