নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দূর থেকে দূরে, আরো বহুদূর......... চলে যেতে হয়, কত স্মৃতির ছায়ায়, এই রোদ্দুরের নীচে, নীল সবুজের খেলাঘরে জীবন মেতে থাকে কত নিয়মের প্রতীক্ষায়...
১/
আমি যখন ছোট ছিলাম তখন আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল আমেরিকা যাওয়া।
ছোটবেলায় মানুষের ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার আর পাইলট হবার স্বপ্ন থাকে। আমার স্বপ্ন ছিল আমেরিকায় গিয়ে নিগ্রোদের দলে যোগ দেয়া। আমি ভাবতাম, ওদের সাথে আমার জীবনের অনেক দেনা-পাওনা বাকি আছে। তাই বাকি জীবন ওদের সাথে একটু র্যাপ গান গেয়ে কাটিয়ে দিব। হাঁটুর প্রায় নীচে একটা জিন্স প্যান্ট পড়ব। গলায় আর হাতে থাকবে সোনার চেইন, মুখের একটা দাঁত থাকবে সোনার। আমি এক হাতে প্যান্টটাকে ধরে রাখব যাতে সেটা হাঁটুর বেশি নীচে চলে না যায়। আর আরেক হাত নাচিয়ে নাচিয়ে জীবনের কিছু অব্যাক্ত সত্য কথা বলে যাবো। আমার প্রতি এক শব্দের পরপর একটা করে ‘F’ আদ্যক্ষরের গালি থাকবে। চারিদিকে কিছু রমণী ইতং-বিতং করে নাচানাচি করবে। একেবারে, বিদগ্ধ সমাজবোদ্ধা গাতক হব। বাই দ্যা ওয়ে, আমেরিকায় ‘নিগ্রো’ একটা গালি। ওখানে এবং দুনিয়ার সবখানেই কালোদের ‘কালো’ বলতে হয়, কিন্তু কখনো ‘নিগ্রো’ বলতে হয় না। কিন্তু ছোটবেলায় এত পলিটিক্যালি কারেক্ট ছিলাম না আর এত কিছু জানতাম না। আমি ওদের ভালো মনেই ‘নিগ্রো’ বলতাম।
আমেরিকার প্রতি এই মোহর কারণ ছিল হুমায়ূন আহমেদ আর মুহম্মদ জাফর ইকবালের কিছু বই। সেই ১৯৯৫ সালের দিকে হুমায়ূন আহমেদের ‘হোটেল গ্রেভার ইন’ নামে একটা বই পড়ি যেখানে উনি আমেরিকার নর্থ ডাকোডায় পি-এইচ-ডি করার সময়ের গল্প বলছিলেন। সেই বই পড়ে আমি আমেরিকার জীবনযাত্রা নিয়ে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম।
এইদিকে মুহাম্মদ জাফর ইকবালের দুটো উপন্যাস আমার খুব প্রিয় ছিল। এদের একটা নাম ছিল ‘কাচ সমুদ্র’ আর আরেকটার নাম ‘বিবর্ণ তুষার’। দুটো উপন্যাসই ছিল আমেরিকা কেন্দ্রিক। ‘কাচ সমুদ্র’ উপন্যাসে আমেরিকান ক্রিস্টিনা একবার ওর বয়-ফ্রেন্ডের সাথে লং আউটিং-এ যাবে। তাই ক্রিস্টিনা রিয়াজ নামক গল্পের কেন্দ্রিয় চরিত্রকে নিজের বাড়ি দিয়ে যায়। আমি অবাক হয়ে ভাবতাম, আমেরিকার মেয়েরা তাহলে এত উদার হয়? নিজের বাড়ি পর্যন্ত একটা অচেনা ছেলেকে দিয়ে যেতে পারে? অথচ, আমি যখন মালয়শিয়া ছেড়ে চলে আসছিলাম তখন একবার কোন এক কাজে আবার মালয়শিয়া গেলে আমার এক প্রাক্তণ মেয়ে কলিগ ওর সুইমিং পুলওয়ালা পুরো বাসা আমাকে দিয়ে চলে গেছিল। মালয়শিয়ায় তখন এক মাসের মত ছিলাম। হোটেলে থাকতে গেলে অনেক টাকা গুনতে হবে। তখন বুঝছিলাম, গল্পের ক্রিস্টিনারা বাস্তবেও থাকে।
এইদিকে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা প্রেমের উপন্যাস ছিল। নাম ‘সুদূর ঝর্ণার জলে’। এই বইটা আমি পড়ছিলাম ১৯৯৮ সালে ফার্মগেটের আল-রাজী হাসপাতালের ৩০৮ নাম্বার রুমের বেডে শুয়ে। প্রেমের গল্পের চেয়ে আমার আগ্রহ ছিল খুঁজে খুঁজে আমেরিকার বিষয়গুলো নিয়ে ফ্যান্টাসি করা। আমার প্রিয় উপন্যাসের তালিকায় একটা প্রেমের উপন্যাস থাকা খুব বিরল। কিন্তু ‘সুদূর ঝর্ণার জলে’ যেই বিরল জায়গাটুকু দখল করে আছে শুধু আমেরিকা কেন্দ্রিক গল্প হবার জন্য।
সেবা প্রকাশণীর ‘তিন গোয়েন্দা’ পড়তাম সেই ছোটবেলা থেকেই। আমেরিকার প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে আর হলিউড থেকে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত লস এঞ্জলেসের রকি বীচের পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের সেই ক্ষুদে তিন কিশোর গোয়েন্দার গল্প। গল্পের মূল চরিত্র কিশোর পাশা একজন বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত আমেরিকান খুঁদে গোয়েন্দা। আরেকজন হল রবিন মিলফোর্ড, আইরিশ আমেরিকান এবং বইয়ের পোকা। আগে থেকেই জানতাম যে আমেরিকায় আইরিশ কালচারকে বেশ সমীহ করা হয়। সেবার যখন প্রথম আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন শহরে গেলাম, একেবারে হতাশ হয়ে গেলাম। এত ছোট একটা শহর, অথচ বাংলাদেশ থেকে আমরা কত কিছুই না ভাবতাম। হেঁটে হেঁটেই ঘন্টা দুয়েকের মাঝেই ডাবলিন শহরের এই মাথা থেকে আরেক মাথায় চলে যাওয়া যাবে। সুন্দর, শান্ত শহর সন্দেহ নেই। আমার এমন শহরই ভালো লাগে। আইরিশ ব্যান্ড দ্যা কোরস আমার সব সময়ের প্রিয় ব্যান্ড। কিন্তু আমার কল্পনায় ছিল ডাবলিন হল সুরম্য অট্টালিকায় ভরা বিশাল ব্যস্ত শহর। বাস্তবে দেখি এই শহরে পাঁচ তলার বেশি ভবন খুঁজে পাওয়াই দূরহ। বৃটিশ এয়ারওয়েজের প্লেনের জানালা দিয়ে দেখি ডাবলিন এয়ারপোর্টের পাশে ভেড়া চরছে। খালি বাংলাদেশের এয়ারপোর্টে গরু চরলেই যত সমস্যা!
তিন গোয়েন্দায় আরেকজন ছিল, নাম মুসা আমান। বইয়ের ফ্ল্যাপে মুসা আমানকে পরিচয় করিয়ে দেয়া ছিল ব্যায়ামবীর, আমেরিকান ‘নিগ্রো’ হিসাবে। আমি তখন নিজেও জানতাম না ‘নিগ্রো’ একটা গালি। এই ছোট কিন্তু মারাত্মক ভুলটি স্বত্বেও অনেক অনেক ধন্যবাদ সেবা প্রকাশণী আর রকিব হাসানকে, আমাদের ছোটবেলাটাকে এত সুন্দর গল্প দিয়ে আরো সুন্দর করার জন্য। জানি তিন গোয়েন্দা নিয়ে অনেকে অনেক কথাই বলবে। কিন্তু বিদেশী গল্প অবলম্বন করে লেখা হলেও দেশীয় কিশোরদের উপযোগী করে এবং গল্পের মূল কাঠামো ঠিক রেখে এতবড় একটা সিরিজ এডাপশন করা সহজ জিনিস না। এই জিনিসের মর্ম যারা বুঝবে না, তাদের বুঝিয়েও লাভ নেই। তাদেরকে তাদের মত করে থাকতে দেই।
তিন গোয়েন্দার পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ডের কথা এখনও মনে হয়। সেই সাথে এটাও মনে হয় যে পাশা স্যালভিজ ইয়ার্ড যে প্রাইম লোকেশনে অবস্থিত (প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে আর হলিউড থেকে কয়েক মাইল দূরে), সেইখানে জমির যে দাম আর তার সাথে যদি দোকান, বাড়ি ভাড়া আর এয়ার বি-এন-বি করা হয় সেটা দিয়েই তো তিন গোয়েন্দার আজকে মিলিয়ন-বিলিয়ন ডলার থাকার কথা! এই জায়গায় এক টুকরা জমি থাকা মানে হীরার খনি থাকা।
২/
বাংলার সাহিত্যিকরা উনাদের গল্প উপন্যাসে আমেরিকাকে বিভিন্নভাবে বারবার আনলেও বিলেত বা ইউরোপকে কেন জানি বারবার উপেক্ষা করে গেছেন। শাহরিয়ার কবিরের ‘কার্পোথিয়ানের কালো গোলাপ’ বইটিতে হয়ত ইউরোপের কিছুটা ভাপ আসছিল, কিন্তু মোটাদাগে বিলেত কেন্দ্রিক কোন বাংলা উপন্যাস তেমন চোখে পড়ে না। অথচ, বিলেতে বাংগালিরা আসা-যাওয়া করছে সেই অনাদিকাল থেকেই। বাংলার আগের জেনারেশনের বেশিরভাগ জজ-ব্যারিস্টার বিলেত থেকে ডিগ্রী নেয়া। এক সময় কমনওয়েলথ স্কলারশিপ নিয়েও অনেক বাংগালি বিলেতে পি-এইচ-ডি করতে এসেছিল। এর বাহিরে, এককালে রাশিয়াতেও অনেকে উচ্চ-শিক্ষা নিত। পোল্যান্ড, জার্মানি আর ফ্রান্সেও অনেকে আসত শিক্ষা-দীক্ষার কারণে। কিন্তু, কোন এক অজ্ঞাত কারণে বাংলা সাহিত্যে এই দেশগুলোকে উপজীব্য করে তেমন কোন গল্প-উপন্যাস বা প্রেম কাহিনী চোখে পড়ে না। অথচ, এক লন্ডনেই এত বাংলাদেশি আছে যে ইংরেজির পরে লন্ডনের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা হল বাংলা। অন্যদিকে, ইউরোপে বাংগালিরা অনেক আগে থেকে আসা-যাওয়া করলেও আমেরিকায় বাংগালির বসতি হয়ত ৫০ বছরের কিছু বেশি। কিন্ত বাংলা সাহিত্যে আমেরিকার এত প্রাদুর্ভাবের কারণ কি সেটা জানতে পারলে ভালো হত।
৩/
সেবা আর প্রজাপতি প্রকাশণীর বদৌলতে অনুবাদ সাহিত্যে ইউরোপ আর বিলেতের কিছু কিছু ভালো বই মানুষ পড়ার সুযোগ পেয়েছে। যেমন ক্যাপ্টেন ম্যারিয়াটের লেখা ‘চিলড্রেন অব নিউ ফরেস্ট’ ছোট বড় সবারই ভালো লাগবে। আরেক ব্রিটিশ লেখক স্যার হেনরি রাইডার হ্যাগার্ড আমার খুব প্রিয় লেখক। যদিও উনার বেশির ভাগ উপন্যাস আফ্রিকাকে উপজীব্য করে ফিকশন। আর চার্লস ডিকেন্সের কথা তো সবাই জানে। পৃথিবীর অন্যতম দামী লেখক যিনি কিনা প্রতিটি শব্দ লেখার জন্য আলাদাভাবে টাকা পেতেন বলে মিথ ছিল এক সময়।
জার্মান লেখক এরিক মারিয়া রেমার্ক-এর ‘থ্রি কমরেডস’, ‘দ্যা রোড ব্যাক’, ‘অল কোয়ায়েট ইন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’, ‘দ্যা ব্লাক অবিলিস্ক’ উপন্যাসগুলো প্রথম আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ আর পরবর্তী ঘটনাগুলোকে নিয়ে লেখা। আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় ‘থ্রি কমরেডস’ সব সময় ছিল। ‘অল কোয়ায়েট ইন দ্যা ওয়েস্টার্ন ফ্রন্ট’ বইটির জন্য লেখক নোবেল প্রাইজ পান। এই দুটো বই বিশ্বযুদ্ধ ও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের উপর ভিত্তি করে হলেও এতে এত সূক্ষ ও ফাইন টিউনড রসিকতা ছিল যেটা না পড়লে বোঝা যাবে না। অবশ্য সেই লেভেলের রসিকতা বুঝতে হলে নিজেরও কিছুটা লেভেল থাকা লাগবে। এইদিকে ‘থ্রি কমরেডস’ যুদ্ধ পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহের উপরে ভিত্তি করে হলেও বইটি আবার আদতে প্রেমের উপন্যাস যার পরিণতি দুঃখের। প্রিয় বইয়ের তালিকায় আরো একটা প্রেমের গল্প, ভাবা যায়!
ফ্রান্সের লেখক আলেকজান্ডার ড্যুমার ‘কাউন্ট অব মন্টিক্রিস্টো’ বইটার মূল চরিত্র এডমন্ড দান্তের গল্প পড়ে চোখে পানি ধরে রাখা কষ্টের ছিল। ভিক্টর হুগোর লেখা ‘লা মিজারেবল’-এর কোয়াসিমোদোর কষ্টের কথা মনে পড়লে জীবন নিয়ে হাহাকার এখনো চলে আসে। সেবা আর প্রজাপতি প্রকাশণীকে অনেক ধন্যবাদ এত সুন্দর সুন্দর উপন্যাসগুলো বাংলার কিশোরদের হাতের নাগালে এনে দেয়ার জন্য।
৪/
যাইহোক, আমেরিকা প্রসঙ্গে আবার ফিরে আসি।
একসময়ের মুগ্ধকর আমেরিকা বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার মোহ ভাঙ্গাতে থাকে। যুদ্ধের পর যুদ্ধ, ব্যক্তিগত অস্ত্রের যথেচ্ছ ব্যবহার, কালোদের প্রতি অমানবিকতা, হেলথ কেয়ার নিয়ে অসংখ্য অভিযোগ, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা আর বাচ্চাদের স্কুল নিয়ে বিভিন্ন খবর পড়ে আমার আমেরিকাকে আমার আর ভালো না লাগতে শুরু করে। একা মানুষের জন্য আমেরিকা ভালো হলেও, পরিবার নিয়ে থাকার জন্য আমেরিকাকে আমার মনে হতে থাকে অতটা ভালো না। যদিও এটা আমার একান্ত নিজের পারশেপশন, তাই এটাকে এত সিরিয়াসভাবে নেয়ার কিছু নেই। যারা আমেরিকাতে থাকেন এবং আমেরিকা নিয়ে খুশি, আমি চাই আপনারা আরো খুশি হোন।
ঠিক এইসময়ে, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমার ভিতর ছিমছাম আর লেইড ব্যাক লাইফ আছে এমন দেশের প্রতি আগ্রহ জন্মাতে শুরু করে। তখন মনে হয়, জীবনটা মরিশাস অথবা ফিজিতে কাটিয়ে দিতে পারলে মন্দ হত না। ব্রাজিলকে মনে হতে থাকে স্বর্গভূমি। অবশ্য ব্রাজিলের প্রতি এই আগ্রহ ওদের ফুটবল খেলা দেখে হয় নাই। নব্বই দশকের শেষার্ধে একটা পপ ব্যান্ড ছিল, নাম ছিল ‘ভেঙ্গা বয়েজ’। এই ব্যান্ডের মেম্বারেরা সম্ভবত ল্যাটিন আমেরিকান ছিল। ওদের একটা গানের নাম ছিল ‘ব্রাজিল’। ওই গান দেখেই আর কার্নিভ্যালের সময় সাম্বা ড্যান্স থেকে মনে হইত ব্রাজিল আর ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলো আসলেই সুন্দর। আমার মনে হত আমার আসলে ব্রাজিলে জন্ম নেয়া উচিত ছিল, ভুলে বাংলাদেশে চলে আসছি।
৫/
ছোটবেলায় আমি ডাকটিকেট, বিদেশী কয়েন আর টাকা জমাতাম।
আমার সবচেয়ে বেশি ছিল বিলেতের ডাক টিকেট। এক রাণীর ছবি দিয়ে ছোট বড় আর নানা রঙের এক ঢঙয়ের কতগুলো ডাকটিকেট বিলেত সেই সময় ছাপিয়েছিল জানতে ইচ্ছে করে। আমার তিনকোণা, লম্বাটে, খাড়া, গোল, ডাবল সহ হরেককরম ডাকটিকেট ছিল। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিল নিউজিল্যান্ডের একটা ডাকটিকেট। নীলচে বেগুণী রং-এর ব্যাকগ্রাউন্ডে একটা পরীর ছবি ছিল সেটা। গেলবার দেশে গিয়ে ডাকটিকেটের পুরো বইটাই আর পাইনি। কেউ নিয়ে গেছে বাসা থেকে।
আমার অনেক দেশের কয়েন ছিল। দুই রঙয়ের কয়েন ছিল যেগুলোর ভিতরের দিকটা সোনালি আর বাহিরের দিকটা রুপালি। ইউরোপের কয়েনগুলো ছিল এমন। একটা কয়েন ছিল মাঝখানে ছিদ্র। কোন দেশের কয়েন সেটা ভুলে গেছি। কিন্তু আমার সবচেয়ে প্রিয় কয়েনটা ছিল ১৯৭১ সালের ইন্দোনেশিয়ার পঞ্চাশ রুপিয়ার একটা কয়েন। কয়েনটাতে একটা ময়ূরের ছবি খোদাই করা ছিল। আমি সেই সময় ভাবতাম কয়েনটা রুপার তৈরি। সেই সময় ফার্মগেটে বিমানের অফিস ছিল, সম্ভবত এখনও আছে। সেই অফিসের পাশে একটা ডাকটিকেটের দোকান ছিল। ঐ দোকানটাতে মোটামুটি সব রকমের ডাকটিকেট আর কয়েন পাওয়া যেত। একবার সেই দোকানে আমি আমার প্রিয় ইন্দোনেশিয়ান কয়েনটা নিয়ে গেছিলাম। দোকানদার আমাকে সেই যুগেই কয়েনটার জন্য ১৫০ টাকা দিতে চেয়েছিল। সেই যুগে একটা বাচ্চার জন্য ১৫০ টাকা মানে বিশাল কিছু। কিন্তু আমি কিছু না বলে কয়েনটাকে শক্ত করে ধরে দৌড় দিয়ে চলে আসছিলাম। আমি কয়েনটাকে কেন এত পছন্দ করতাম সেটা আজো বুঝতে পারি নাই। হয়ত, তখন অবচেতন মনেই জানতাম যে কোন এককালে আমার বউ হবে ইন্দোনেশিয়ান। বউকে নিয়ে দেশে গেলাম, কিন্তু কয়েনের বক্সটা আর পেলাম না। সেই কয়েনটাও জীবন থেকে হারিয়ে গেল। ও বলতে ভুলে গেছি, আমার প্রথম ইলেকট্রিক গিটার কিনেছিলাম Ibanez ব্রান্ডের। যারা গিটার সম্পর্কে জানেন না, তাদের জন্য বলছি Ibanez গিটারের জগতে খুব বড় একটা ব্রান্ড। সেই ২০০৪ সালের দিকে বুয়েটে পড়ার সময় টিউশনি করে চল্লিশ হাজার টাকা জমিয়ে গিটারটা কিনেছিলাম। সেই গিটারটাও ছিল ইন্দোনেশিয়ান-মেড। ইন্দোনেশিয়াতে এখনও Ibanez ব্রান্ডের গিটারের অন্যতম বড় ফ্যাক্টরি ফ্যাক্টরি আছে বলেই জানি।
আমার পোল্যান্ডের একটা দশ লক্ষ টাকার নোট ছিল। জানিনা, বাংলাদেশি টাকায় সেটার দাম কত হত। জীবনে কত টাকা এলো আর গেল। দেশে গিয়ে দেখি আমার সবগুলো বিদেশি নোট গায়েব। সেই দশ লক্ষ টাকার নোটটার কথাও অনেক মনে পড়ে। পরে অবশ্য ইন্দোনেশিয়া গিয়ে এক লক্ষ টাকার নোট দিয়ে কেনা বেচা করে সেই দুঃখ কিছুটা লাঘব হয়েছিল।
৬/
ফার্মগেটে সেই ডাকটিকেটের দোকানটার কাছে একটা গানের ক্যাসেটের দোকান ছিল। নাম ছিল সম্ভবত ‘রেইনবো’। আমার জানামতে, ঢাকা শহরে সেই সময়ে যারা বিদেশি হার্ডরক ও মেটাল গান শুনতো তাদের জন্য স্বর্গভূমি ছিল সেই দোকানটা। মোটামুটি দুস্প্রাপ্য যেকোন বিদেশী ব্যান্ডের গান সেই দোকানটায় পাওয়া যেত। উনারা সম্ভবত বিদেশ থেকে ক্যাসেট এনে সেটা কপি করে বিক্রি করতেন। উনাদের কাস্টমার সম্ভবত বেশি ছিল না, কিন্তু যারা সেই দোকানটার মর্ম বুঝত তারা ঠিকই ঘুরেফিরে সেই দোকানটায় আসত। এবং সবচেয়ে বড় সুবিধা ছিল যে, সেই দোকানটায় একটা ক্যাসেটে মনের মত বিভিন্ন ব্যান্ডের বারোটা গান রেকর্ড করে নেয়া যেত। শেষবার দেশে গিয়ে আমি সেই ডাকটিকেটের দোকানটাও আর দেখি নি, ‘রেইনবো’ ক্যাসেটের দোকানটাকেও আর খুঁজে পাইনি।
৭/
ফার্মগেটের খামারবাড়ির কাছে একটা কনফেকশনারি টাইপ রেস্টুরেন্ট ছিল। নাম ছিল ‘চন্দ্রিমা’। এখনও সেই দোকানটা আছে কি না, জানি না। স্কুল থেকে ফেরার পথে আমি, তাহিয়াত আর নাজিব সেই দোকানটাতে ভিড় করতাম। প্রতিদিন কিছু না কিছু খাওয়া হত সেখানে। যদিও তাহিয়াত বিল দিত বেশিরভাগ সময়।
আমার মনে পড়ে বিজয় সরণির মোড়ে র্যাংগস ভবণের কথা। সেই ভবনের নীচতলার ডিসপ্লেতে বিশাল বিশাল স্পিকারওয়ালা সিডি আর ভিসিডি প্লেয়ার সাজিয়ে রাখা হত। আমার খুব ইচ্ছা হত বিশাল বড় স্পিকার ওয়ালা একটা সিডি প্লেয়ার থাকবে যার সাব-উফার হবে বিশাল। স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে গেল। বাসায় একটা সিডি প্লেয়ার ছিল, সেই যেই লেভেলের সাব-উফারের আমি স্বপ্ন দেখতাম সেটা কখনো আমার ছিল না। আর এখন তো অতবড় সিডি প্লেয়ারেরও চল নেই। পরে একবার দেশে গিয়ে দেখি র্যাংগস ভবণই আর নাই। সেখানে এখন বিশাল রাস্তা। র্যাংগস ভবণের রাস্তার ওপাশে ছিল ‘কুপারস’ নামে এক নামী বেকারি। কখনো খাইনি সেখানে। কিন্ত সেই বেকারিটাও আর নেই। মাঝে মাঝে এখনও মনে হয় সেই বেকারির কথা।
৮/
এভাবে প্রতিবারই যখন দেশে গিয়েছি, তখন দেখেছি জীবনের কিছু ফেলে আসা জিনিস জীবন থেকে চিরতরে হারিয়ে গেছে। গেলবার যখন দেশে গিয়েছিলাম তখন যাদের সাথে দেখা হয়েছিল তাদের অনেকের সাথেই সেটা ছিল শেষ দেখা। আমি নিশ্চিত জানি, আমি যাদের ফেলে এসেছি তাদের অনেকের সাথেই হয়ত সেটাই ছিল শেষ দেখা, আর কোনদিন ওদের সাথে দেখা হবে না। এটাই সত্য, এটাই বাস্তব।
আমার কাছে ঢাকা শহর সেই ২০০৮ সালে থেমে আছে। এমনিতেই ২০০৮ এর পরে আমি দেশে তেমন যাই নাই। মাঝখানে যখন কিছুদিনের জন্য ছিলাম, তখন অবাক হয়ে খেয়াল করলাম যে ঢাকা শহর আর আগের মত নেই। রাস্তাঘাটগুলো ধীরে ধীরে সব অচেনা হয়ে গেছে। মানুষগুলো সব বদলে গেছে।
২০০৮ সালের আগে আমি কত সহজেই গল্পের বই কিনতে পারতাম, বিদেশী গান শুনতে পারতাম। আমার আগ্রহ ছিল ডাকটিকেট, কয়েন, বিদেশী টাকা, গিটার, জিওগ্রাফি এবং আরো অনেক আজাইড়া জিনিস নিয়ে। ২০০৮ এর পরে আমি যতবার দেশে গেছি ধীরে ধীরে এই জিনিসগুলো একটু একটু করে মুছে যেতে দেখেছি। আমি দেখেছি ঢাকা শহরের সব লাইব্রেরিগুলো থেকে গল্প-উপন্যাস উধাও হয়ে গিয়ে ধীরে ধীরে গাইড বই আর বি-সি-এস এর বই দিয়ে ভরে যেতে। অনেক আগে যখন নাখালপাড়ায় থাকতাম সেই সময়ে ‘ছাত্রবন্ধু’ নামক একটা লাইব্রেরি থেকে গল্পের বই কিনতাম। ওদের বইয়ের তালিকা দিলেই ওরা আমার জন্য বই আনিয়ে দিত। গেলবার দেশে গিয়ে দেখি ‘ছাত্রবন্ধু’ লাইব্রেরি মুদির দোকানে পরিণত হয়েছে। কেউ আর বই পড়ে না, পাবলিশাররাও আর বই প্রকাশ করে না। দেশের ছোট বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে গিয়ে মনে হইছে, আমার চিন্তা-ভাবনাই ওদের চেয়ে ছোট মানুষের। বাচ্চাদের কোন আগ্রহ দেখি নাই ছবি আঁকা নিয়ে, ডাকটিকেট নিয়ে, জীওগ্রাফি বা সাইন্স নিয়ে। এর চেয়ে বেশি দেখেছি বাচ্চাদের এসব নিয়ে প্রতিযোগিতা করতে।
নব্বই দশক আর ২০০০ সালের দিকে ঢাকা শহরে বিশাল বিশাল ওপেন এয়ার কনসার্ট হত। এখন নাকি এসবও আর তেমন হয় না। মানুষ এখন ওয়াজ শুনে। আমার আপত্তি নেই, কিন্তু আমার এসব ভালোও লাগে না। যার ভালো লাগে সে শুনুক, আমার পোষাই নাই, তাই আমি চলে আসছি।
আমার কিশোরবেলার ঢাকা শহর আমার কাছে সেই ২০০৮ সালেই আটকে গেছে। দেশ বদলেছে, মানুষ বদলেছে আর সময়ও বদলে গেছে। আমিও হয়ত আর আগের মত নেই। তবুও সেই ২০০৮ সালের আগে যে ঢাকা শহরটা ছিল, সেটার জন্য মাঝে মাঝে মনটা পুড়ে যায়।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৪:১৫
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: ধন্যবাদ। আপনার মন্তব্যটাই একটা পোস্ট হয়ে গেছে। আপনার কিছু পয়েন্ট নিয়ে আমার অবজারভেশনগুলো বলছি।
২/ রিসেন্টলি লন্ডনে বাংলাই নাকি প্রধাণ বিদেশী ভাষা এমন একটা নিউজ দেখছিলাম। আমি ইংল্যান্ডে থাকি। এখানে ভারতীয়দের ভিতর অনেক ভাগ ও ভাষার লোক আছে। এমনকি কলকাতার ভারতীয় বাংলাতেই কথা বলে। তাছাড়া শিখ আছে, তামিল আছে, তেলুগু আছে।
৪/ আমি ইংল্যান্ডে থাকি। হয়ত আমেরিকার চেয়ে ইংল্যান্ড ফ্যামিলি লাইফের জন্য বেটার। কিন্তু এই দেশটা সত্যি বলতে কি ট্রাক হারিয়ে ফেলছে। জ্ঞানে বিজ্ঞানে আর পেরে উঠতে পারছে না। এক কালের সেক্যুলার দেশটা বেশি সেক্যুলারিজম দেখাতে গিয়ে এখন বৃটিশটা লন্ডনকে বলে লন্ডনস্থান। লন্ডনে আসলে আপনি দেখবেন পুরো শহর ভর্তি আমাদের কালারের মানুষ। লন্ডন ও বার্মিংহ্যামে সাদারা মাইনরিটি।
৮/ আপনার লেখাটা পড়ে মতামত দিচ্ছি।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
২| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:৫৭
কামাল১৮ বলেছেন: ষাটের দশকেই বই পড়ে অনুপ্রেণিত হবার বয়স শেষ হয়ে যায়।তখনই যুক্তি বুদ্ধি দিয়ে মার্কসবাদী হবে কমিউনিষ্ট পার্টির সদস্য হয়ে যাই।তার পর বই পড়ে তার বিশ্লেষণ করতে তেষ্টা করি।অনুপ্রাণীত হই না।চিন্তার গভীরে তলিয়ে যাই রাশান উপন্যাসিকদের উপন্যাস পড়ে।
ভাষা আন্দোলনের পরের লেখকদের অনেকের লেখা মনোযোগ আকর্ষণ করে।
৩| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ৩:৪৫
কামাল১৮ বলেছেন: এলোমেলো কথামালা পড়ে খুবই ভালো লাগলো।শাহরুখ খান ও সালমান খান দুই জন একই স্টেজে আলাদা আলাদা অনুষ্ঠান করেছিলো।শাহরুখ খাঁনের অনুষ্ঠান চমেৎকার হয়েছিলো।সেটাই আমার প্রথম এবং শেষ স্টেজে অনুষ্ঠান দেখা।বেলিরোডে অবশ্য অনেক নাটক দেখেছি ৭২এর পরে।
০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৪:১৬
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আপনি তো অনেক আগের মানুষ বলে মনে হচ্ছে। আপনার অভিজ্ঞতাগুলো শুনতে চাই। নিশ্চয়ই অনেক ইন্টারেস্টিং গল্প আছে আপনার।
৪| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:১৪
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: ২ দিনের জন্য কোমায় চলে গেলাম।
দারুন পোস্ট।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৪৯
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: বলেন কি? অনেক ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।
৫| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ৭:৪৮
রবিন_২০২০ বলেছেন: চমৎকার পোস্ট। পড়ার সময় ফেলে আসা ঢাকার কথা চোখে ভাসছিলো। আমার জীবনে ঢাকা স্থির হয়ে আছে ১৯৮৯ এ।
আমেরিকা নিয়ে কিছুটা ভিন্নমত আমার। পরিবার নিয়ে থাকার জন্য চমত্কার জায়গা। অবশ্য State আর City একটা ফ্যাক্টর। (আমি বন্দুক প্রিয় মানুষ, এই শখ আমেরিকা ছাড়া আর কোথায় পূরণ করা যাবে?)
০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৫০
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: বাহ, তাহলে তো আপনি প্রায় তিন যুগ দেশ ছাড়া। নিশ্চয়ই আপনি আমার চেয়ে অনেক বেশি পরিবর্তন দেখছেন। আপনার বন্দুক নিয়ে পোস্ট দিয়েন।
৬| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি পড়ুয়া মানুষ।
কাচ সমুদ্র বইটা আমার কাছে দারুন লেগেছে।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৫১
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: অনেক কিছুই পড়া হয় নি। কাচ সমুদ্র বইটা আমারও খুব প্রিয়।
৭| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:২১
শূন্য সারমর্ম বলেছেন:
আপনার পশ্চিম নিয়ে মোহ ভেঙে গেছে,ঢাকায় এসে ঢাকা বদলে দিন।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৫২
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি এ ঢাকার স্বপ্ন দেখি সেই ঢাকার স্বপ্ন ঢাকাবাসী দেখে না। তাই তারা নিজেদের মত ঢাকা গড়ে নিয়েছে। সেখানে আর বাগড়া দিতে চাই না।
৮| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ সকাল ১১:৩২
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: আমার মোহ তৈরি হয়েছিল গ্রিস, ইতালি, মিশর- এসব দেশ নিয়ে। গ্রিক ট্রাজেডি, শেক্সপিয়ারের বিভিন্ন বই এতে প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছে।
০৭ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ১:৫৩
আরাফাত৫২৯ বলেছেন: বাহ দারুণ তো। সেই সব নিয়ে পোস্ট দিয়েন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৬ ই জানুয়ারি, ২০২৫ রাত ২:১৮
ভুয়া মফিজ বলেছেন: ১. আমার জীবনের প্রথম লক্ষ্য আর উদ্দেশ্য ছিল পাইলট হওয়া। ক্লাশ থ্রি'তে পড়ার সময়ে আমার গার্লফ্রেন্ড (একমুখী প্রেম ছিল। 'গার্লফ্রেন্ড' আমি বলতাম, সে কিছুই জানতো না) সপরিবারে ইংল্যান্ডে চলে আসে। প্লেন চালিয়ে ইংল্যান্ড এসে ওর সাথে দেখা করাই ছিল মুখ্য উদ্দেশ্য। ক্লাশ ফোরে চশমা নেয়ার কারনে পাইলট হওয়া আর হয়ে উঠে নাই।
২. লন্ডনে ইংরেজির পরে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত ভাষা বাংলা? আপনি নিশ্চিত? ভারতীয় আর পাকিস্তানী (এদের সম্মিলিত জনসংখ্যা বাংলাদেশীদের থেকে অনেক বেশি) মিলে যে কমন ''কথ্য হিন্দি''র উদ্ভব, সেটাই তো আমার জানামতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। আমি অবশ্য লন্ডনে থাকি না, কাজেই আমার জানায় ভুল থাকতে পারে।
৩. বই পড়ার কথা কি বলবো? সারাজীবন পাঠ্য বইয়ের বাইরের বই পড়েছি, ফলে মিডিওকার ছাত্রের তকমা কখনও আমার পিছু ছাড়ে নাই। শুধু একটা ঘটনা বলি.........ক্লাশ ফাইভে পড়ার সময়ে মাসুদ রানার ''ভরত নাট্যম'' বইসহ বড় বোনের হাতে ধরা খাই। সেই বয়সের জন্য নিষিদ্ধ সেই বই পড়ার কারনে ''অকালপক্ক'' উপাধি আর মা-বোনের হাতে চরম নির্যাতনের শিকার হলেও মাসুদ রানা পড়া থেকে উনারা আমাকে বিরত রাখতে পারেন নাই।
৪. বিভিন্ন কারনেই দেশ হিসাবে যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে যুক্তরাজ্যকে আমার অধিকতর বাসযোগ্য মনে হয়। আমার ব্যক্তিগত মত।
৫. ফার্মগেইটে ডাকটিকেটের সেই দোকানটার নাম সম্ভবতঃ ছিল ''সালাম স্ট্যাম্পস''।
আমিও আগে কয়েন, ব্যাঙ্কনোট আর ডাকটিকেট জমাতাম। কয়েন-ব্যাঙ্কনোট জমানো বহু আগেই বাদ দিয়েছি, তবে ডাকটিকেট এখনও জমাই। গর্ব করে বলতে পারি, আমার বিশাল সংগ্রহ বৈচিত্র আর আর্থিক মুল্যের বিচারে অনন্য। ইদানীং ভাবছি আমার পুরো সংগ্রহটা কোন চ্যারিটিকে দিয়ে দিবো। বৃটিশ হার্ট ফাউন্ডেশান তালিকার এক নাম্বারে আছে।
৬. আমাদের সময়ে নিউ এলিফ্যান্ট রোডে ''রিদম'' নামে একটা দোকান ছিল যেখান থেকে আমরা গান সিলেক্ট করে রেকর্ড করাতাম। সেই দোকান এখন আছে কিনা জানি না। সেখানে গান শোনারও ব্যবস্থা ছিল। আমার সবচাইতে প্রিয় গায়ক ক্রিস ডি'বার্গের সাথে আমার পরিচয় সেই দোকানেই।
৭. আমার প্রিয় খাবারের দোকান ছিল বেইলী রোডের ''সুইস বেকারী''। তাছাড়া শাহবাগের ''মৌরি'' আর ''সিলভানা''ও খুব প্রিয় ছিল। একা খেলে সুইস আর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে খেলে মৌরি / সিলভানা তখন ছিল বেস্ট, আমার জন্য!!! এগুলো এখন আছে কিনা জানি না।
৮. যদিও আপনি অনেক পরের ঢাকাকে দেখেছেন, তারপরেও আপনার লেখা পড়ে নস্টালজিক হলাম। ঢাকা নিয়ে আমারও একটা এলোমেলো লেখা আছে। অনেক আগে লিখেছিলাম। সময় পেলে চোখ বুলাতে পারেন। লিঙ্ক দিলাম। ঢাকা, আমার ঢাকা
লেখাটা খুব ভালো লেগেছে। ভালো থাকবেন।