নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বহুদূর যেতে হবে

চলনবিল

আমি এক ফেরিওয়ালা ভাই, স্বপ্ন ফেরি করে বেড়াই।

চলনবিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

বহিরাঙ্গে প্রতিবাদী স্লোগান লেইখা ভিতরাংগ খানা ভাড়ায় খাটাইতেসি আজকাল।

২১ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১২:২৬

চারুকলার উল্টাপাশের ছবির হাটের অনেক গুলো চরিত্র আছে। একাধারে এটি উন্মুক্ত ছবির হাট, তুমুল আড্ডার জমজমাট জায়গা, শিল্প সংস্কৃতির চর্চাগার , বোহেমিয়ান দের আড্ডা খানা। আরো বিভিন্ন ভাবে চরিত্র দাঁড় করানো যেতে পারে। সব কিছু ছাপিয়ে ছবির হাটের যে চরিত্র টি মূর্ত হয়ে উঠতো সেটি হলো মুক্ত চর্চার সঙ্গম স্থান হিসেবে। চারুকলার অভ্যন্তর ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক জায়গাই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ব্যাতীত অনেকের জন্যেই উন্মুক্ত নয়। সে হিসেবে ছবির হাট ছিলো অনেকের জন্যই প্রানে প্রান মেলাবার জায়গা।



কিছুদিন আগে সরকারী উদ্যোগে ভাংচুর চালানো হলো ছবির হাট চত্বরে। নষ্ট করা হলো অনেক শিল্পীর শিল্পকর্ম। এ আঘাত কে শুধু ছবির হাটের উপর আঘাত বলে খাটো করে দেখলে কিছুই বলবার থাকবেনা। বরং মনে হয় এর শেকড় আরো অনেক গভীরে। ফেসবুক, ব্লগে অনেকে এ উচ্ছেদে উল্লাস প্রকাশ করেছেন। নাস্তিক ও গঞ্জিকা সেবীদের আড্ডাখানা’র উচ্ছেদে তাঁরা যারপরনাই উচ্ছ্বসিত। কিন্তু তাঁরা ভুলে যাচ্ছেন যে এ আঘাত মুক্তমনের উপর আঘাত, সুস্থ্য সংস্কৃতির উপর আঘাত।



সরকার নিজেদের মত কে চাপিয়ে দেয়ার জন্য সব সময় ই বিপক্ষ দলের উপর দমন নীপিড়ন চালায়, কিন্তু ছবির হাটের মত অরাজনৈতিক স্থানের উপর যখন আঘাত আসে তখন ই বোঝা যায় নিজদের মত চাপিয়ে দেয়ার জন্য সরকার কতটা বেপরোয়া । ফ্যাসিস্ট রাস্ট্রের কাজ সবার আগে মুক্ত পাব্লিক স্পেস গুড়িয়ে দেয়া। সে হিসেবে প্রথম কোপ টা ছবির হাটের উপরে এসে পড়েছে।



জার্মান চিন্তাবিদ, ফ্রাঙ্কফোর্ট স্কুলের ক্রিটিকাল তাত্বিক, সমাজবিজ্ঞানের জীবন্ত কিংবদন্তী জুর্গেন হেবারমাসের একটি তত্ব আছে ‘থিওরি অব কমিউনিকেটিভ এ্যাকশন’। সেখানে তিনি বলেছেন পাব্লিক স্পেয়ার নিয়ন্ত্রিত হলে সমাজ নিয়ন্ত্রিত হয়। ছবির হাট এরকম ই একটি পাব্লিক প্লেস হিসেবেই জায়গা করে নিচ্ছিলো। এ ছবির হাট চলচ্চিত্র প্রেমী ও নির্মাতাদের আড্ডাস্থল , অনলাইন এক্টিভিস্টদের আড্ডাস্থল, উঠতি কবি ও সাহিত্যপ্রেমীদের ও আড্ডাস্থল। আর কে না জানে , এ আড্ডাগুলোই সমাজকে ভাংতে শেখায়, নতুন করে ভাবতে শেখায়। আমি নিজেও দুটি উঠতি চলচ্চিত্র নির্মাতাদের আড্ডায় গিয়েছি এই ছবির হাটে। প্রেমিক-প্রেমিকা,চিত্রকর, গায়ক, বাদক, কবি, সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবি, রাজনৈতিক কর্মী, হতাশাগ্রস্তযুবক, পানসেবী, মাদকসেবী, অসবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবি, পৌঢ়া সবার একটা মিলন ক্ষেত্রহয়ে উঠেছে এই জায়গাটা। যে যে কাউকেই আড্ডার জন্য ভেন্যু হিসাবে ছবির হাটে আসার আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন , এটাই বোধহয় রাষ্ট্রের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাড়িয়েছিল।



রাষ্ট্রীয় এ আঘাতের প্রতিবাদে উচ্চকিত হয়ে ওঠেনি আমাদের সুশীল সমাজ, আমাদের সচেতন জনগন। আমাদের সচেতন অনুভূতি গুলো ক্রমশ ভোঁতা আর অসংবেদনশীল হয়ে উঠেছে ক্রমাগত। তবে আঁতকে ওঠার মত জিনিস হচ্ছে, ছবির হাটকে সামনে নিয়ে অনেকের রাজনৈতিক অভিসন্ধি গুলো পূরণ হবার খায়েশ জেগেছে। ছবির হাটের সেন্টিমেন্ট কে পুঁজি করে এক শ্রেনীর শিল্পীরা এ এলাকাটিকে আরেকটি সরকারী আঁতুড়ঘর বানানোর ধান্দায় লিপ্ত। তাঁরা ছবির হাট কে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত কোন দলবাজির আখড়ায় নিমজ্জিত শিল্পকলা একাডেমী বানাতে চান ।



ছবির হাটের উপর সরকারী আগ্রাসন যতটা না ভয়ঙ্কর, তার চেয়ে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় নির্মিত শিলপ চর্চা কেন্দ্র। ছবির হাটের উপর আজকের আঘাত হয়তো সাময়িক ভাবে আড্ডাবাজিকে ব্যাহত করছে, কিন্তু এর মূল যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সেটি কিন্তু এইরকম আঘাতে আরো শানিত হয়ে উঠে। কিন্তু যখনি এটি সরকারী পৃষ্ঠপোষকতায় কোন প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে তখনি এর ভয়ঙ্কর রূপ আরো মূর্ত হয়ে উঠবে, এবং আজকের ছবির হাট তখন পরিণত হবে দলবাজির আখড়ায়।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬

কষ্টবিলাসী বলেছেন: ------- রাজনৈতিক কর্মী, হতাশাগ্রস্তযুবক, পানসেবী, মাদকসেবী, অসবসরপ্রাপ্ত চাকুরীজীবি, পৌঢ়া !!!!! B-)) B-) ;)

২১ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ১:৪১

চলনবিল বলেছেন: আপনার পছন্দ ভালো :) আগের কাউকেই পছন্দ হয়নাই ? =p~ ওহ আপ্নে তো কষ্টবিলাসী :) পড়ার জন্য ধন্যবাদ ।।

২| ২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:০৮

মেশকাত মাহমুদ বলেছেন: অসাধারণ। পোষ্টে +++..মডুকে পোষ্টটি স্টিকি করার অনুরোধ করছি ..

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:২৫

চলনবিল বলেছেন: ধন্যবাদ মেশকাত মাহমুদ। মডুরে খুইজা পাওন যাইতেসেনা । । :p

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.