![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কারো অবহেলিত ভালোবাসার চাইতে, জীবনে একা থাকা অনেক ভালো। একাকিত্ব জীবনে সিমাহীন, সুখের দেখা না পেলে ও .......... কষ্ট থেকে নিজেকে দুরে রাখা যায়।
শুভ্রর মোবাইল বেজে যাচ্ছে।
–হ্যালো। বল।
–তুই বিকেলে নারায়নগঞ্জ আসতে পারবি?
ওপাশ থেকে বন্যা বললো।
–অবশ্যই পারবো। বান্দা এনিটাইম হাজির। কখন আসতে
হবে?
–বিকেল ৫ টার মধ্যে।
–ওকে। আইএম কামিং মাই ডিয়ার।
বিকেল পাঁচটা…. নারায়নগঞ্জ শহীদ মিনার।
বন্যাকে আজ বিষন্ন মনে হচ্ছে।
–মন খারাপ?
বন্যার কোনো জবাব নেই।
–কি হলো? কথা বল। উফ কি গরম
রে বাপ!! আইসক্রিম খাবি? নিয়ে আসি?
বন্যার জবাব নেই। শুভ্র আইসক্রিম নিয়ে হাজির।
–এই নে। খা। কিরে ধর!! কতক্ষণ ধরে থাকবো? না
খেলে বল, আমিই দুইটা সাবাড়
করে দিচ্ছি।
হাঃ হাঃ হাঃ
–তুই আমার বাসায় আর আসিস না। আমার
সাথে দেখা করার চেষ্টা করিস না। ফোনে
কনট্যাক্ট করার চেষ্টা করিস না।
গম্ভীর ভাব নিয়ে কথা গুলো বললো বন্যা।
শুভ্র তেমন পাত্তা দিলো না। এই আর নতুন কিছু না।
বন্যা মাঝে মাঝেই এমন করে। আবার
ঠিক হয়ে যায়।
–এই নে গল্পের বই। তোর জন্য এনেছি।
পড়া শেষে দিয়ে দিবি। বললো শুভ্র।
–না। নিবো না। আমি চাই না তুই
বইয়ের বাহানা ধরে আমার সাথে কোনো
প্রকারের দেখা করার চেষ্টা করিস। আমি যাচ্ছি। একটা
রিকশা করে দে তো। শুভ্র কিছু বুঝে ওঠার আগেই
বন্যা রিকশায় ওঠে, হুড উঠিয়ে চলে গেলো। শুভ্র
কিছুই বুঝতে পারলো না। বুঝবে কি করে!! বেচারা
বন্যার কথাগুলোই যে এখনো হজম করতে
পারলো না। বাসে বসে বসে ভাবছে এমন আচরণ
করার কারন কি? আমি কি কোনো ভুল করেছি?
কেনো এমন করলো? বাসায় গিয়ে ফোন
দেবো। সব ঠিক হয়ে যাবে। ভাবতে ভাবতেই
যাত্রাবাড়ী চলে এলো।
রাত ৮ টা বাজে। জলদি বাসায় যেতে হবে।
.
দুইদিন পর…
শুভ্রর বাবাঃ ওই মেয়ের সাথে তোর ঘোরাফেরা
বন্ধ। যদি না পারিস, সোজা ঘর
থেকে বের হয়ে যাবি। আমার সোজা কথা।
বলেই হনহন করে শুভ্রর রুম ত্যাগ করলেন।
শুভ্র কিছুই বুঝছে না। কি হচ্ছে এসব!!
২ দিন ধরে বন্যাও ফোন ধরছে না।
কি হচ্ছে এসব! রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলো
শুভ্রর। অবশ্য ইদানীং ঘুম তেমন হচ্ছে না।
ওঠে আগে ডাইনিং রুমে গিয়ে ফ্রীজ
থেকে এক বোতল শীতল পানি বের
করে ডগডগ করে খেয়ে নিলো।
নিজের রুমে এসেই ওয়ার ড্রব খুলে বন্যার
একটা ছবি বের করে চোখের সামনে মেলে
ধরে। শুভ্রর চোখ বেয়ে টপটপিয়ে পানি পড়ছে।
আজ প্রায় ৬ মাস হলো বন্যার
সাথে শুভ্রর কোনো ধরনের দেখাসাক্ষাৎ
কিংবা কথাবার্তা হয় না। শুভ্র অবশ্য
চেষ্টা করেছে। গতকালও ফোন দিয়েছিল। ওপাশ
থেকে কেউ সাড়া দেয়নি।
কিছুদিন পর…..
শুভ্র হাঁটছে। এখন কোথায় তা তার জানা নেই। সকাল
থেকে থেমে থেমে হেঁটেই
চলছে। এখন সন্ধ্যা প্রায়। পকেট থেকে বন্যার
সেই ছবিটা বের করে দেখলো। একটু পরপরই
সে এই কাজটি করছে। সিগারেট খেতে ইচ্ছে
করছে। দোকানিকে বললো, ভাই একটা বেনসন &
হেজেস দেন। দোকানি বললো, বেনচন?
শুভ্রঃ হুম।
সিগারেট হাতে নিয়ে পকেটে হাত
দিয়ে দেখলো পকেট শূন্য। মনে পড়েছে।
আরে আমিতো কোনো টাকাই
আনিনি। মনে মনে হাসলো সে। মামা সিগারেট
খাবো না। ফেরত নেন। পানি হবে?
দোকানিঃ হ হইবো। ওই যে ড্রাম
থ্যাইকা তুইলা গেলাসে ঢাইলা খান।
শুভ্রঃ টাকা লাগে নাকি?
দোকানিঃ না ভাই।
শুভ্রঃ তাহলে দুই গ্লাস খাই?
দোকানিঃ খান। আইচ্ছা ভাইজান, আপনে কই
যাইবেন?
শুভ্রঃ জানি না…..
দোকানিঃ কই থ্যাইকা আইসেন?
শুভ্রঃ কোথাও থেকে আসিনি। কোথাও
যাবো না।
প্রায় দেড় মাস পর…
শুভ্রর বাবার ফোন বাজছে। হ্যালো।
ভাইজান, শুভ্রকে পাওয়া গেছে।
কুমিল্লার লাকসাম রেলস্টেশনে পাওয়া গেছে।
ও এখন হসপিটালে। ডাক্তার বলছে উন্নত
চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে আসতে। আমি আসছি। সাথে
আমার এক বন্ধুও আছে। আপনি চিন্তা করবেন না।
আমরা এম্বুলেন্স নিয়ে এখনই ঢাকার
উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছি।
এতক্ষণ কথাগুলো শুভ্রর ছোট চাচার ছিল।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের
বেডে শুভ্র শুয়ে আছে। দাড়িগোঁফ অনেক বড়
হয়ে গেছে। শরীরে হাড় ছাড়া আর কিছুই
দেখা যাচ্ছে না। শুভ্রকে চেনার কোনো উপায়
নেই। একি হাল শুভ্রর! দুর থেকে শুভ্রর মা
ছেলেকে দেখে কাঁদছেন। মাকে সান্তনা
দিচ্ছে শুভ্রর ছোটবোন। রোগীর সুস্থ হতে
সময় লাগতে পারে। আপনারা চাইলে বাসায়
নিয়ে যেতে পারেন। বাসাই তার জন্য একমাত্র নিরাপদ
আর ভাল জায়গা।
একমাস হয়ে গেলো ছেলের কোনো
উন্নতি দেখছেন না তার বাবা মা। কথা নেই বার্তা নেই।
খালি ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থাকে। চোখের
পলকও ফেলে না। এই কোন রোগ!! এভাবে
কতদিন যাবে? বসে বসে ভাবছেন শুভ্রর মা।
শুভ্ররে, ও শুভ্রর। কথা বল বাবা। ছেলের মাথার পাশে
বসে মা এভাবেই বলছিলেন। শুভ্রর কোনো সাড়া
নেই। ফ্যালফ্যাল
চাহনি ছাড়া। আরো বেশকিছুদিন পর…
শুভ্রর পাশে বন্যা। বসে আছে। কিছু
বলছে না। শুভ্রর সেই ফ্যালফ্যালানি চাহনি।
বন্যা কাঁদছে। চোখের পানি তার গাল টপকিয়ে শুভ্রর
শরীরে পরার আগেই ওড়না দিয়ে মুছে নিলো।
একি!! শুভ্রর চোখের কোনেও জল। চোখ
থেকে জল গড়িয়ে কান বেয়ে পড়ছে।
বন্যা দেখে সহ্য করতে পারলো না। হয়তো তাই না
দেখার ভান করে ওঠে চলে গেলো।
সেদিনই ছিল শুভ্র আর বন্যার শেষ
দেখা।
আজ বহুবছর পর…..
কারো জন্য কারো জীবন থেমে নেই। সবাই
নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। প্রকৃতির নিয়মেই সবার
জীবন চলছে নিজ গতিতে। শুভ্রর বাবা মার বয়স
বেড়েছে। বৃদ্ধই বলা চলে। ছোটবোনটা
স্বামীর সংসার করছে। একটা ৮ বছরের মেয়ে
আছে। নাম সোহানা। ক্লাশ থ্রি তে পড়ছে।
বন্যা আর তার স্বামী দুজনই
একটা বেসরকারি ব্যাংকে জব করছে। তাদেরও দুটো
সন্তান আছে। বড়টি ছেলে। আর ছোটোটি
মেয়ে। ছেলের নাম রুদ্র।
মেয়ের নাম তন্দ্রা। ছেলে ক্লাশ থ্রি তে
পড়ছে।
আর মেয়েটার বয়স ৩ বছর। আজ সকাল সকাল ঘুম
থেকে উঠেই বন্যা বাইরে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ তার কোনো কাজ নেই। আজ সে মুক্ত। কাজ
থাকলেও আজকে সব বাদ। কারন আজ আজ ৪ঠা
অগ্রহায়ণ। শুভ্রর
মৃত্যুবার্ষিকী।
©somewhere in net ltd.