নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু রায়হান রাকিব

অন্যকে সম্মান করুন। নিজেও এর অধিকারী হতে পারবেন।

আবু রায়হান রাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বার্থহীন জীবনে প্রাপ্তি।

১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:৪১

পঞ্চম শ্রেণীতে ভালো রেজাল্ট করায় সালেহা আপা জিজ্ঞেস করেছিল, বড় হয়ে তুমি কি হতে চাও ? যতদুর মনে পড়ে যুতসই কোন উত্তর দিতে পারিনি। নির্বাক তাকিয়ে ছিলাম। অজানা এক ঘোর মগ্ন করে রেখেছিল আমায়।

এইম ইন লাইফ! মাধ্যমিক পরিক্ষার খাতায় বহুবার লিখেছি প্রশ্নের উত্তর হিসেবে। তখনো বুঝে উঠিনি ছোট্ট বাক্যটির সারমর্ম। বাবা-মা, ভাই-বোন নিয়ে ছিল গোছানো সংসার । বাবা ছিলেন সরকারী অফিসের সামান্য কেরানি। মাইনে যা পেতেন, তাই দিয়ে সুখেই কাটছিল দিনগুলি। কিন্তু সেই সুখ ছিল ক্ষণস্থায়ী। বিজলীর মত আলোর ঝলকানি দিয়ে হারিয়ে গেল অজানা ঠিকানায়।

চোখের সামনেই দেখলাম প্যারালাইসিসে আক্রান্ত হলেন বাবা। অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌছাল যে, বিছানাই হল তার খাবার টেবিল থেকে বাথরুম। বছর পাঁচেক মাকে জালিয়ে চির বিদায় নিলেন পৃথিবী হতে। একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যাক্তি-বাবাকে হারিয়ে সংসার চালানো খুবই দূঃস্বাধ্য হয়ে উঠল মায়ের পক্ষে।

বাবা মা’র বড় ছেলে আমি। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে বাধ্য হয়েই সংসারের দায়িত্ব কাধে নিতে হল। জীবন সংগ্রামে আরম্ভ হল আমার জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস। বাবার রেখে যাওয়া কিছু জমি থাকায় চাষাবাদ দিয়েই শুরু হল আমার প্রথম কর্মজীবন।

সৃষ্টিকর্তার কৃপা, মায়ের দোয়ায় আর আমার পরিশ্রমে সুদিন ফিরতে বেশি দিন লাগল না। গোয়াল ভরা গরু, গোলা ভরা ধান না হলেও কোন কিছুর কমতি ছিল না। আনন্দেই দিন কাটছিল। বোনটা দেখতে দেখতে বড় হয়ে উঠল। মাষ্টার্স শেষ করার পর ভালো পাত্রস্থ করলাম। ছোট ভাইটা ইন্টারমিডিয়েট শেষ করে ইউনিভার্সিটি ভর্তির অপেক্ষায়। আল্লাহ্ অনেক দিল আমায়। ঠিক যেন, মেঘ না চাইতে বৃষ্টি..........

রাতের পরে আঁধার, সুখের পর দুঃখ আসবে। এটা চিরন্তন সত্য। আমার বেলায় ও তারতম্য হল না। অনেক কাঠ-খড় পুড়িয়ে সুখের যাদুর কাঠি যখন হাতের নাগালে তখন, মা আমাদের ছেড়ে পরপারে পাড়ি জমালেন। বাবার পর মা’কে হারিয়ে অভিভাবকহীন, এতিম হলাম আমরা তিন ভাই-বোন। ছোট ভাইবোন দুটোর কথা ভেবে শত কষ্টে, বাধা-বিপত্তিতে হাল ছাড়িনি কখনো। জানি মনোবল অটুট থাকলে বিজয় হাতের মুঠোয়।

জীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়গুলো শেষেও নিজেকে নিয়ে কিঞ্চিত ভাবার ফুসরত মেলেনি আমার। শৈশব, কৈশর পেরিয়ে ভরা যৌবনও পার করেছি প্রায়। নিকটবর্তি দুর হতে বার্ধক্য ইশারায় ডাকছে। কর্মক্লান্ত এতটা পথ এসেও ভাবিনি নিজের কথা। দেখিনি, নিজে সংসার পেতে আয়েশী জীবনের স্বপ্ন। তাই, বিয়ে নামক পবিত্র বন্ধনে কোন মেয়েকে আবদ্ধ করতে পারিনি। হয়তো বা পারতাম! কিন্তু স্বার্থপর হব ভেবে নিজের কতৃত্ববোধ সাঁয় দেয়নি তাতে। এক অদৃশ্য তাড়না আমাকে প্রতিটি মূহুর্তে ব্যাদিব্যাস্ত করে রেখেছিল ।

দুরন্ত পথের পথিকের মত দূর্গম পথে পিছন ফিরে তাকাইনি কখনো। অজস্র ভয়কে জয় করে পথ পাড়ি দিয়েছি। আজ আমি ক্লান্ত, অভিস্রান্ত। জীবনের ক্রান্তিলগ্নে এসে সালেহা আপার সেই প্রশ্নটি বারবার আমার মনের আকাশে মেঘ হয়ে উঁকি দিচ্ছে। তুমি বড় হয়ে কি হতে চাও ?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.