নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আবু রায়হান রাকিব

অন্যকে সম্মান করুন। নিজেও এর অধিকারী হতে পারবেন।

আবু রায়হান রাকিব › বিস্তারিত পোস্টঃ

পরিবেশ ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ

১৯ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৩:১৫


৩১মে পালিত হলো বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। ১৯৮৭ সাল থেকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সদস্য দেশগুলোর উদ্যোগে বিভিন্ন দেশে সর্বগ্রাসি তামাক নির্মূলের লক্ষ্যে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ২০২২ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করে-"Tobacco: Threat to our environment" স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষে যার বাংলা ভাবানুবাদ করা হয়- “তামাকমুক্ত পরিবেশ, সুস্বাস্থ্যের বাংলাদেশ।” বর্তমান প্রেক্ষাপটে এর যথার্থতা রয়েছে এবং প্রতিপাদ্যটি অত্যন্ত সময়োপযোগী। কারণ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, দূষণ নিয়ন্ত্রণ, জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলা বিশ্বব্যাপী বর্তমান সময়ের অন্যতম বড় আলোচ্য বিষয়। জলবায়ুর নেতিবাচক প্রভাব মোকাবেলায় বৈশি^কভাবে ঐক্যমত গড়ে তোলা হচ্ছে। ভূক্তভোগী এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় বাংলাদেশও রয়েছে। বাংলাদেশে ১৯৮৮ সালে তামাকমুক্ত দিবসটি উদযাপন শুরু হয়। তবে ১৯৯০ সালের পর থেকে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে দিবসটি ব্যাপক পরিসরে উদযাপন এবং তামাকের বিরুদ্ধে সামাজিক এই আন্দোলনটি গতিশীল হয়ে আজকের অবস্থানে এসেছে।

২০০৩ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্যোগে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক স্বাস্থ্য সম্মেলনে বাংলাদেশ তামাকের নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক চুক্তি ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’তে প্রথম রাষ্ট্র হিসেবে স্বাক্ষর করে এবং ২০০৪ সালে পূণরায় র‌্যাটিফাই করে। মূলত, এর পরেই দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের ভিত্তি স্থাপিত হয়। কারণ, ‘এফসিটিসি’ এর আলোকেই দেশে তামাক বিরোধীদের প্রধান অস্ত্র ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ)’ প্রণীত হয় ২০০৫ সালে। তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষয়-ক্ষতি রোধে বর্তমান সরকারের উদ্যোগে আইনটি অধিকতর শক্তিশালী করতে ২০১৩ সালে সংশোধনী পাস করে মহান জাতীয় সংসদ। ২০১৫ সালে বিধিমালা প্রনীত হয়েছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে তামাকজাত দ্রব্যে ১% হারে স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ আরোপ ও ২০১৭ সালে এ সংক্রান্ত নীতি প্রণয়ন, জনসতেনতা বৃদ্ধিতে ২০১৬ সাল থেকে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে তামাক ব্যবহারের ক্ষতি সম্বলিত ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রচলন করা হয়। তাছাড়া ৭ম এবং বর্তমানে ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাতেও তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে। এমন আরো কিছু উল্লেখযোগ্য কিছু অর্জন রয়েছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘সাউথ এশিয়ান স্পীকার্স সামিটে’ ঘোষণা দিয়ে বলেন, “আমরা ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার সম্পূর্ণভাবে নির্মূল করতে চাই।” তার এ ঘোষণা বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, দপ্তর, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগেও বিভিন্নজন নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ সুরক্ষা এবং সার্বিক উন্নয়নে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো ‘তামাক’। এ কথা সর্ব মহলে স্বীকৃত। তামাক চাষাবাদ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবনসহ প্রতিটি ধাপেই পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য মারাত্নকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। Global Adult Tobacco Survey-2017 তে দেখা যায় যে, বাংলাদেশে ১৫ বছরের অধিক বয়সীদের মধ্যে ৩৫.৩% (৩ কোটি ৭৮ লক্ষ) মানুষ তামাকজাত দ্রব্য সেবন করেন। ২০০৯ সালে তামাকসেবী ছিলো ৪৩.৩%। সুতরাং তামাক সেবনের শতকরা হার নিম্নগামী হয়েছে, যা আশার কথা। পক্ষান্তরে, কিছু এমন কিছু অসামঞ্জস্যতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা তামাক নিয়ন্ত্রণে কাঙ্খিত লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের পথে বিঘ্নতা সৃষ্টি করছে। জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ প্রতিবেশকে মারাত্নক ক্ষতির সম্মুখীন করছে। তার মধ্যে-
১) তামাক কোম্পানিতে সরকারের ৯.৪৯% শেয়ার ও বোর্ড অব ডিরেক্টরিতে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিতি;
২) কৃষি জমি ও পরিবেশ সুরক্ষায় ‘তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি’ পাস না করা;
৩) নীতিতে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে এফসিটিসি’র অনুচ্ছেদ ৫.৩ অনুসারে ‘গাইডলাইন’ না থাকা;
৪) ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ প্রণীত না হওয়া
৫) প্রধানমন্ত্রী’র তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার ৫ বছরেও তা বাস্তবায়নে ‘রোডম্যাপ’ না থাকা, ইত্যাদি;
প্রাণঘাতি পণ্য উৎপাদনকারী তামাক কোম্পানিগুলোর প্রভাব বিস্তারের ঘটনা নতুন নয় বরং পৃথিবীর অনেক দেশেই তারা কূট-কৌশলে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থ হাসিল করছে। বাংলাদেশেও তামাক কোম্পানিগুলোর অনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে জনস্বাস্থ্য ও তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এর নেপথ্যে কাজ করছে তামাক কোম্পানিতে সরকারি শেয়ার।

স্বাধীনতার পর থেকেই ‘ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো’তে সরকার ও সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ছিলো এবং বর্তমানে যা প্রায় ১০%। এর ফলে সরকারের উচ্চপদস্থ একাধিক কর্মকর্তা বিএটি’র পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধিত্ব করছেন। এমনকি বিএটিবি’তে শেয়ার নেই এমন প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিকেও তাদের পরিচালনা পর্ষদে প্রতিনিধিত্ব করতে দেখা যাচ্ছে যা তামাক কোম্পানিটি’র একটি সুক্ষ কৌশল! তাছাড়া জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ বিধ্বংসী পণ্যের ব্যবসায় সরকারের অংশীদারিত্বের বিষয়টিকে অনেক মহলে সরকারের দ্বৈতনীতি হিসেবে দেখা হচ্ছে এবং সরকারের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রচেষ্টাকে জনগনের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।

তামাক চাষে প্রচুর সার ও কীটনাশক ব্যবহৃত হয় যা মাটি ও পানি দূষণ করে এবং মাছসহ জলাশয়ের উদ্ভিদচক্রের মারাত্নক ক্ষতি করে। উদাহরণ হিসেবে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী কথা বলা যায়। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদে দেখা যায়, নদীর উৎপত্তিস্থল খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়, মানিকছড়ি ও নদীর তীর সংলগ্ন পাহাড়ের ধারে দীর্ঘদিন ধরে তামাক চাষের কারণে তামাকের নির্যাস ও চাষে ব্যবহৃত সার এবং রাসায়নিক মিশ্রিত পানি সরাসরি গিয়ে পড়ছে নদীতে পড়ায় হালদার পানি মারাত্নকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্ষার শুরুতেও পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে তামাকের মূল এবং পচা তামাক পাতা গিয়ে পড়ে নদীতে। ঠিক প্রজনন মৌসুমেই বেশি দূষণ হয় বিধায় মৎস উৎপাদন ও অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতির পরিমাণও বাড়ছে। তাছাড়া দেশে ৩১% বন নিধনের ক্ষেত্রে তামাক চাষ দায়ী! সুতরাং, তামাক চাষ ক্রমান্বয়ে কমিয়ে আনা এবং নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তামাক চাষ সম্পূর্ণ বন্ধ করা অত্যন্ত জরুরি।

তামাক চাষের পরিমাণ জমি তৈরীতে প্রচুর বনাঞ্চল ধ্বংস করা হয়। বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য মতে, ১৯৭০ সাল থেকে তামাকের কারণে বিশ্বব্যাপী (গ্রীষ্মমন্ডলীয় অঞ্চলে) আনুমানিক ১.৫ বিলিয়ন হেক্টর বন বিলুপ্ত হয়ে গেছে। যা ২০% বার্ষিক গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির কারণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে! বিশে^ বছরে ৩৫ লক্ষ হেক্টর জমি তামাক চাষে ধ্বংস হয়। যা বৈশি^ক ৫% বনাঞ্চল ধ্বংসের জন্য দায়ী। প্রায় ৯০% তামাক উৎপাদন হয় বিশে^র উন্নয়নশীল দেশসমূহে। তামাক পাতা প্রক্রিয়াজাত করতে চুল্লিতে প্রচুর পরিমাণে কাঠ পোড়ানো হয়। ৩০০টি সিগারেট তৈরি করতে প্রায় একটি সম্পূর্ণ গাছ প্রয়োজন হয়! একটি সিগারেট তৈরি করতে, ১৪ গ্রাম কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরী হয়। তামাক উৎপাদনে বছরে প্রায় ৮৪ মিলিয়ন মেট্রিক টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন হয়। যা মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা ২৮০,০০০ রকেটের সমতুল্য।

উল্লেখ্য যে, জেনেভায় অনুষ্ঠিত এফসিটিসি’র কনফারেন্স অব দ্য পার্টিসে (কপ-৮) বিশেষভাবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে, উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলো অবিলম্বে তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করবে। এফসিটিসি’র অনুচ্ছেদ ১৭ ও ১৮ এ, তামাকের বিকল্প ফসল চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং সহায়তা প্রদান, তামাক চাষের ক্ষতি থেকে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্য রক্ষার্থে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে। বাংলাদেশ উক্ত চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ। সুতরাং উক্ত চুক্তি প্রতিপালনে বাংলাদেশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তাছাড়া তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ১২ ধারায় তামাক উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে, বিশেষত: তামাক চাষ নিরুৎসাহিত করতে একটি নীতি প্রণয়নের কথা বলা আছে। যতদুর জানা যায়, একটি খসড়া নীতি প্রণীত হয়েছে। কিন্তু, দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হলেও সেটি চূড়ান্ত হয়নি। সময়ের প্রয়োজনে নীতিটি অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

এছাড়া ‘কৃষি বিপণন আইন, ২০১৮’ আইনের তফসিল ১-এ ১৩ ধরনের কৃষিপণ্যের উল্লেখ রয়েছে। উক্ত তফসিলের (খ) ক্যাটাগরিতে ৪টি অর্থকরী ফসলের মধ্যে ১টি ‘তামাক’ উল্লেখ রয়েছে। প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের পাঠ্যপুস্তকেও তামাককে অর্থকরী ফসল হিসেবে পড়ানো হচ্ছে! যা পক্ষান্তরে তামাক চাষকে উৎসাহিত করছে। কৃষি বিপণন আইন ও পাঠ্যপুস্তক থেকে অর্থকরী ফসল হিসেবে তামাক বাদ দেয়া জরুরি।

করোনার চাইতে তামাকের কারণে মৃত্যুহার এবং অন্যান্য ক্ষয়-ক্ষতি বেশি অনেক বেশি! বাংলাদেশে তামাকজনিত কারণে বিভিন্ন মরণব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে বছরে প্রায় ১ লক্ষ ৬২ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করে (Tobacco Atlas 2018)। অন্যদিকে, করোনা সংক্রমণে বাংলাদেশে প্রাণহানি ঘটেছে ২৯,১২৭ জনের (১৭ মে, ২০২২)। এছাড়াও সড়ক দুর্ঘটনাসহ মৃত্যুর অন্যান্য কারণ তো আছেই। সুতরাং করোনার চাইতে বড় মহামারি এখন ‘তামাক’ এ কথা নি:সন্দেহে বলা যায়। করোনা মহামারীর শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বিগত ৩০ মাসে বিশ^ব্যাপী উক্ত ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কম/বেশি ৬৩ লাখ মানুষ মৃত্যুবরণ করেছেন। সংখ্যার দিক থেকে মৃত্যুর পরিমাণ কম বলার সুযোগ নেই। তবে এর চাইতে ভয়ঙ্কর নিরব মহামারী ‘তামাক’ মানুষের জীবন ও প্রকৃতি-প্রতিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি করেই চলেছে। কারণ, বিশে^ প্রতিবছর তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ৮০ লক্ষাধিক মানুষ মারা যায়। এদের সিংহভাগই বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশের জনগণ। কারণ, বহুজাতিক তামাক কোম্পানিগুলো এসব দেশকে ব্যবসার উর্বর ক্ষেত্র ও তাদের জনগণকেই বৃহত্তর ভোক্তা হিসেবে বেছে নেয়। ফলশ্রুতিতে এ সকল দেশে তামাকজনিত রোগ-বালাইয়ের প্রাদুর্ভাব, অপুষ্টি ও মুত্যৃহার, পরিবেশগত, অর্থনৈতিক ক্ষয়-ক্ষতি হ্রাস করা ক্রমেই কঠিন হয়ে পড়ছে। সুতরাং, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি অধিকতর গতিশীল ও সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে ‘জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র তামাকমুক্ত বাংলাদেশ ঘোষণার ৫ বছর পেেিয যাচ্ছে। এখনো তা বাস্তবায়নে ‘রোডম্যাপ’ না থাকাটা অত্যন্ত দু:খজনক। অন্য বিষয়ে যেভাবে গুরুত্ব প্রদান করা হয় সেভাবেই আমলে নিয়ে দ্রুত সেটি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে।

সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে, করোনা সংক্রমণের উর্ধ্বগতির চরম দু:সময়েও তামাকজাত দ্রব্য উৎপাদন, বিপণনে প্রভাব খাটিয়ে নজীরবিহীন সুবিধা নেয় তামাক কোম্পানিগুলো এবয় বর্তমানেও তা অব্যহত রয়েছে। করোনা দু:সময়ে উৎপাদন ব্যবস্থায় স্থবীরতার ফলে বিভিন্ন কোম্পানির মুনাফা কমলেও ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো’র মুনাফা বেড়েছে ৫ গুণ! মূলত, তামাক কোম্পানিগুলো অপকৌশল এবং অনেক পুরনো আইন ‘এসেনসিয়াল কম্যুডিটি এ্যাক্ট-১৯৫৬’তে তামাক জরুরি পণ্য থাকা সেই সময়ে এর নেপথ্য অনুঘটকের কাজ করেছে। তাছাড়া কর ফাঁকি ও জটিল তামাক কর আহরণ প্রক্রিয়ায় বরাবরই লাভবান হচ্ছে তামাক কোম্পানি। এদিকে নীতি গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তামাক কোম্পানির নগ্ন হস্তক্ষেপের ফলে জনস্বাস্থ্য আইন/নীতিগ্রহণ প্রক্রিয়া রাজধানীর কঠিন জ্যামের মতো থমকে ছিলো এবং আছে। সেগুলোতে ফাঁক-ফোকর থেকেই যাচ্ছে এবং বাস্তবায়নে মন্থর গতি যেন নিয়তি। মোদ্দাকথা- পুরণো যে সকল আইন, নীতি, অধ্যাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণের সমস্যা সৃষ্টি করে এমন বিষয় সন্নিবেশিত রয়েছে সেগুলো সংস্কারের মাধ্যমে যুগপোযোগি করতে হবে। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন/নীতি সমূহের ‘রক্ষাকবচ’ খ্যাত এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে তামাক কোম্পানির প্রভাব বন্ধে ‘গাইডলাইন’ প্রণয়নও অত্যন্ত জরুরি

জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। এদিকে বিশে^র শীর্ষ ১০টির মধ্যে ১টি অধিক তামাক ব্যবহারকারী জনগণের দেশও ‘বাংলাদেশ’। সুতরাং জনস্বাস্থ্য এবং পরিবেশগত ঝুঁকি মোকাবেলায় কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। তামাক কোম্পানিগুলোকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার সময় এসেছে। পরিবেশ সুরক্ষার দোহাই দিয়ে প্রবাহ, সামাজিক বনায়নের নামে লোক দেখানো নাটক বন্ধ করতে হবে। তামাকের কারণে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের যে অপূরণীয় ক্ষতির চিত্র এবং তামাক কোম্পানির কালো মুখোশ জনসম্মুখে উন্মোচন এবং তার জন্য জবাবদিহি ও ক্ষতিপূরণ দাবী করতে হবে। এজন্য সরকারের নীতিগত অবস্থান আরো সুদৃঢ় করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রক্রিয়াধীন আইন ও নীতিসমূহ দ্রুত পাস এবং এফসিটিসিসি’র আলোকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি আরো শক্তিশালী ও কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। সর্বোপরি তামাক কোম্পানির সাথে সকল অংশিদারিত্ব বর্জন করতে হবে। বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী’র নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। উন্নয়নের এই অগ্রগতিকে অব্যহত রাখতে তামাকের আগ্রাসন থেকে আগামী প্রজন্ম, জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ রক্ষার বিকল্প নেই।

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৩:৩৬

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: তামাক মুক্ত বাংলাদেশ আমিও কামনা করি কিন্তু উত্তরাঞ্চলের যে সকল কৃষক তামাক উৎপাদন করে তাদেরকে তামাক উৎপাদন করে যে মুনাফা পেত সেরকম ব্যবস্থা করে দিয়ে পুরাপুরি তামাক উৎপাদন বন্ধ করা হোক। সেই সংগে যারা তামাক শিল্পের সংগে জড়িত তাদেরকেও অন্য পেশায় উৎসাহিত করা হোক অথবা অন্যকোন ব্যবস্থা করা হোক।

২০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:২২

আবু রায়হান রাকিব বলেছেন: আমরাও সেটা চাই। তবে কৃষক তামাক কোম্পানির কাছে জিম্মি যেন না হয়।

২| ১৯ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৪:১০

মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: তামাক মুক্ত বাংলাদেশ গড়া সম্ভব নয়।

২০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:২৬

আবু রায়হান রাকিব বলেছেন: কথিত আছে, সব সম্ভবের দেশ‌- বাংলাদেশ! সুতরাং আমরা আশাবাদী। আপনিও আশাবাদী হতে পারেন, আমাদের আগামী প্রজন্ম তামাক ও নেশামুক্ত পৃথিবীতে বেড়ে উঠবে।

৩| ১৯ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৪:৩৩

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


তামাকমুক্ত দেশে ঝুকবে পৃথীবী

২০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:২৬

আবু রায়হান রাকিব বলেছেন: পজিটিভ অর্থে হলে একমত।

৪| ২০ শে জুন, ২০২২ রাত ১:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: বুঝতেছি না আমি পক্ষে থাকবো না বিপক্ষে?

২০ শে জুন, ২০২২ বিকাল ৫:৩৩

আবু রায়হান রাকিব বলেছেন: অবশ্যই পক্ষে। আপনি সচেতন মানুষ হিসেবে তামাকের বিপক্ষে থাকবেন তাই আশা করি। প্রত্যেকের তাই করা উচিৎ। কেউ চায় না তার সন্তান বা তার আপনজন নেশায় ধ্বংশ হোক।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.