![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জীবনটা চলছে ২ টাকার নোটের মত। ..
আপনি কেমন আছেন?
চেনা-জানা দু’জনার দেখা হলে এমন প্রশ্ন আমরা হর হামেশাই শুনে থাকি। বাড়ির ভেতরে-বাইরে-আঙ্গিনায়, পথে-রাস্তায়, অফিস-আদালতে, হাট-বাজারে, স্কুল-কলেজ এমন আরো অনেক জায়গায় এ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। প্রশ্নটা শুধু যে প্রশ্ন করার জন্যই করা হয় তা যেমন নয়, তেমনি আবার এর মধ্যে কখনো কখনো সত্যিই আন্তরিকভাবে কুশল জানার ব্যাপারও রয়ে যায়। সেটা নির্ভর করে দু’জনার সম্পর্কের গভীরতা ও পরস্পরের আন্তরিকতার ওপর। প্রশ্নকর্তা প্রশ্নের গভীরতার কথা ভেবে বা না ভেবে যেভাবেই তা করুক না কেন, প্রশ্নের জবাবে উত্তরদাতা কি বলছেন সেটা কিন্তু খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমরা ক’জনাই সে জবাব দেবার আগে ভেবে তারপর জবাব দেই!
আমাদের জবাবটা সচরাচর এমনই হয়-
(ক) বেশী ভালো নেই, (খ) আর ভালো থাকা! (গ) আছি কোন রকম (ঘ) কাটছে এক রকম (ঙ) এই বেঁচে আছি আর কি, ইত্যাদি।
প্রশ্নকর্তা এবং উত্তরদাতা দু’জনাই সাধারণত এমন প্রশ্ন ও জবাবের সাথে বেশ অভ্যস্ত। এভাবেই যেন চলে আসছে, আরো অনেক আচার-আচরণের মতো। জবাবে একটা কিছু বলতে হয়- তাই বলা। আসলে কি তাই না অন্য কিছু। জবাব দেয়ার আগে যদি একটু ভাববার অবকাশ হতো যে, কি বলতে যাচ্ছি বা যা বলতে যাচ্ছি তাতে কী ধরনের সাংঘাতিক ক্ষতির বীজ বপন করছি, তাহলে কখনোই এমন বলতে আগ্রহী হতাম না।
এবার একটু গভীরে যাওয়া যাক। আপনি সুস্থ। আপনার দৈনন্দিন প্রয়োজনে আপনি বাড়ির বাইরে বের হয়েছেন সকাল বেলা। রাস্তায় নামতেই পরিচিত একজনের সাথে দেখা।
-কেমন আছেন?
আপনার দিক থেকে সাথে সাথে জবাব- ‘আছি কোন রকম, আর থাকা!’ বা এ ধরনের আরো অন্য জবাব। এভাবে চলতে থাকলো। সংখ্যা বাড়তে লাগলো। তিন-চার-পাঁচ।
আপনি যখন আপনার বাড়ি থেকে বের হয়েছেন তখন শারীরিক ও মানসিক সার্বিকভাবে সুস্থ এবং ভালো বলেই আপনি আপনার গন্তব্যে রওনা দিয়েছেন। তা আপনি যেমন জানেন, তেমন আপনার ব্রেন বা মস্তিষ্কও তাই জানে। আপনি প্রশ্নের জবাবে অমন বলার আগে পর্যন্ত- আপনার দেহের অভ্যন্তরের সার্বিক কর্মকা- সবই আপনার ব্রেন বা মস্তিষ্কের নিয়ন্ত্রণাধীন। সে, সবই জানে -দেহের ভেতরে কোথায় কি
হচ্ছে, কোথায় কি লাগবে, কি লাগবে না, কোথায় প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে ইত্যাদি। প্রতি মুহুর্তের সর্বশেষ পরিস্থিতি এর জানা। নূতন নূতন সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে ব্রেন। আপনি যখন প্রথমবার বললেন- আপনি ভালো নেই, তখন সে তথ্য আপনার কানের সাহায্যে আপনার মস্তিষ্ক কোষে পৌঁছল, সেটাকে হয়তো ব্রেন খুব একটা গুরুত্ব দেবে না। কিন্তু একই কথা যখন বার বার কানের মাধ্যমে পৌঁছবে তখন ব্রেন নিজ কোষে লিপিবদ্ধ তার নিজের তথ্যের (সবকিছু ঠিকমত সুস্থ আছে) সাথে তা মিলিয়ে দেখবে। ব্রেন যেন নিজ তথ্যের সাথে আপনার দেয়া তথ্যের মিল খুঁজে পাবে না। ব্রেন একটু আগ পর্যন্ত জানত যে, আপনার দেহের সবকিছুই তার নিয়ন্ত্রণে এবং সবই ঠিকঠাক আছে। কিন্তু যখনই আপনি বাইরে থেকে অন্যরকম তথ্য (কথা) পাঠাবেন তখনই ব্রেন বিভ্রান্ত হয়ে পড়বে এবং কিছুটা দিশেহারা হয়ে যাবে। নিজের কার্যক্রমের ওপর সন্দেহ আসবে, আস্থা কমে যাবে, দুর্বল হয়ে পড়বে নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা। কিন্তু আপনি তো আপনার সেই ধারাবাহিকতা চালিয়ে যাচ্ছেন- ছয়, সাত, আট, এভাবে করে আরো অনেককেই আপনার খারাপ থাকার কথাটা বলে যাচ্ছেন।
আপনার ব্রেন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব কাটিয়ে শেষ পর্যন্ত আপনার দেয়া তথ্যটাকেই গুরুত্ব দেবে বেশি, কারণ দেহের বাইরের কোন কিছুতেই ব্রেনের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা নেই। আর ভালো বা খারাপ লাগার অনুভবের ব্যাপারটাতো নিয়ন্ত্রণ করে আপনার মন। আপনি নিয়ন্ত্রণ করেন আপনার মন আর আপনার মন নিয়ন্ত্রণ করে আপনার ব্রেনকে- বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দেহের বাইরের কার্যক্রম ও অনুভবের ব্যাপারগুলোতে ব্রেন নিজের লিপিবদ্ধ তথ্যটাকে পাল্টে আপনার দেয়া কথার মত করে লিখবে। লিখবে এমন করে- ‘নিশ্চয়ই দেহের কোথাও এমন খারাপ কিছু হয়েছে, যা আমি দেহের ভেতর থেকে নিজে বুঝতে পারছি না। কিন্তু আমার দেহের যিনি মালিক তিনি বাইরে থেকে তা বুঝতে বা অনুধাবন করতে পেরে বার বার সেটাই বলে যাচ্ছেন। আর আমি বার বার দেহের ভেতরের সব স্থানে খোঁজ খবর নিয়েও কিছুই ধরতে বা বুঝতে পারলাম না -বিষয়টা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরের কিছু। সুতরাং আমার যিনি মালিক তার দেয়া তথ্যানুসারেই আমি আমার সার্বিক তথ্যকে পরিবর্তন করে নিলাম -আমি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ নই, কোথাও কোন না কোন অসুবিধা আছে যা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে।’
এদিকে দিনের অনেকখানি চলে গেছে। আপনি এর মধ্যে অনেকের কাছেই বলেছেন -আপনি ভালো নেই। বার বার দেয়া একই ইনফরমেশন বা তথ্যের জন্য ব্রেন বেশ বলিষ্ঠতার সাথেই লিপিবদ্ধ করবে -শরীরটা ভালো নেই, বেশ খারাপ। সকালে আপনি বেশ সুস্থ শরীর নিয়েই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন। কিন্তু তখন যেন কেমন দুর্বল দুর্বল ঠেকছে, শরীরের শক্তি বা এ্যানার্জি কম মনে হচ্ছে। শরীরটা একটু একটু করে খারাপ লাগতে শুরু করবে। কাজ বা প্রয়োজন শেষে যখন আপনি বাড়ি ফিরে আসবেন তখন আপনাকে দেখে মনে হবে উদ্যমহীন, দুর্বল, অবসন্ন আর ক্লান্তিময় একজন মানুষ। এটা যখন আপনার অভ্যাস মত দৈনন্দিন চলতে থাকবে তখন আপনি প্রায় প্রতিদিনই অনুভব করবেন অসুস্থতার ছোঁয়া লাগানো, বিষণœতায় ভরা অন্য এক আপনাকে। আপনার দেয়া তথ্যের আলোকে আপনার ব্রেন সব সময়ই, আপনি যে ভালো নেই তা খুব দৃঢ়ভাবেই লিপিবদ্ধ করে যাবে এবং তা একসময় অনেকটাই চিরস্থায়ী হয়ে যাবে। ব্রেনে এই ধরনের ‘ভালো নেই’ তথ্যের লিপিবদ্ধতার কারণে আপনার ব্রেন আপনার দেহটাকে সেভাবেই তৈরি করে নেবে যে, দেহটা সুস্থ নয়। সবসময় এমন ‘ভালো নেই’ তথ্যের কারণে ব্রেনের স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ করার ইচ্ছেটাও কিছুটা কমে যেতে থাকবে। ব্রেন ভাবে -‘দেহের ভেতরগত অসুবিধাগুলো যখন ধরতে/বুঝতে পারছি না তখন নিশ্চয়ই ক্ষমতা কমে যাচ্ছে, যা করার দেহের মালিকই করবে। অসুবিধাগুলো যখন বাইরে থেকে মালিক বুঝতে পারছে তখন তা দূর করার জন্য নিশ্চয়ই সচেষ্ট হবে।’ কিন্তু বাস্তবে তা তো আপনি করছেন না। আপনার দেহকে সার্বিকভাবে সচল, সুন্দর ও সুস্থ রাখতে হলে দেহাভ্যন্তরে নিঃসৃত হরমোন প্রবাহকে একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় নিয়ন্ত্রণাধীন রাখা দরকার এবং সেটা করে থাকে আপনার ব্রেন। কিন্তু আপনি তো আপনার ব্রেনকে সেটা স্বাধীনভাবে, সুষ্ঠুভাবে করতে দিচ্ছেন না। চিরস্থায়ী এক চিন্তা-চেতনা, মনোভাব দিয়ে আপনি আপনার ব্রেনের স্বাভাবিক কার্যক্রমকে ব্যাহত করছেন, প্রভাবিত করছেন নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে নেতিবাচকভাবে।
সবধরনের হরমোনের স্বাভাবিক প্রবাহ বিঘিœত হতে থাকে, ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যেতে থাকে দেহের বিভিন্ন অংশে। হরমোন প্রবাহের তারতম্যের কারণে দেহের অনেক অংশের স্বাভাবিক কার্যক্রম বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আপনি আস্তে আস্তে একসময় বেশ পীড়িত হয়ে পড়বেন তা যেন বেশির ভাগ আপনার অনুভবেই ধরা পড়বে। ব্রেনের স্বাভাবিক কার্যক্রম নির্বিঘেœ চলতে না পারায় আপনার দেহ রোগ জীবাণু দ্বারা বাইরে থেকে সংক্রমিত হবার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যাবে। বছরের বেশির ভাগ সময় আপনি কোন না কোনভাবে অসুস্থতা অনুভব করবেন। জীবন চলার পথ সাবলীল না হয়ে, হয়ে উঠবে কষ্টকর অনুভবের বোঝা যেন। কিন্তু এর অন্যথা তো হতে পারতো সামান্য একটু চিন্তা, সমান্য একটু মনোভাবের তারতম্যের কারণে। সত্যিকার ভাবে আপনি সুস্থ ও ভালো থাকলে, তা কেন আড়াল করে নিজের কষ্ট, নিজের দুঃখ বাড়িয়ে তুলছেন। নিজেই, নিজের সমস্যা-স্রষ্টা হয়ে যাচ্ছেন। এমন মনোভাব থেকে নিজেকে বিরত রাখতে সচেষ্ট হোন। মনোভাব পরিবর্তন করে সবসময় ‘ভালো আছি’ বলতে চেষ্টা করুন এবং বলুন। দেখবেন লাভবান আপনিই হবেন। নূতন আঙ্গিকে আপনাকে প্রকাশিত করুন -সুস্থ, স্বাভাবিক ও সুন্দর থাকুন।
এখন থেকে যা বলবেন বা করবেনঃ
১। খুব অসুস্থ না থাকলে সরাসরি দ্বিধাহীনভাবে বলুন -আমি ভালো আছি বা ছোট করে বলুন -ভালো।
২। অসুস্থ থাকলেও বলুন -ভালো হব এবং আগের চেয়ে ভালো।
৩। যখন যে অবস্থায় থাকুন না কেন সেটাতেই নিজেকে সুখী ভাবুন।
৪। সুস্থ ও ভালো থাকার জন্য এবং তা বলতে পারার মানসিকতার জন্য প্রথমে সৃষ্টিকর্তাকে পরে নিজেকে ধন্যবাদ দিন।
৫। কিছু প্রত্যাশা করার বা পাবার আগে ভাবুন আপনি আপনার পক্ষ থেকে অবলীলায় কতটুকু দিতে পেরেছেন।
৬। আপনার ধারণার চেয়ে মানসিকভাবে আপনাকে আরো বড় ভাবুন।
৭। সবকিছুকে এতদিন যে দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতেন অর্থাৎ জটিলভাবে দেখার মানসিকতা থাকলে তা পরিত্যাগ করুন -সহজ ও সরলভাবে দেখুন।
এখন থেকে যা একেবারেই করবেন না বা বলবেন নাঃ
(ক) বেশি ভালো নেই, আছি কোন রকম, কাটছে এক রকম, আর ভালো থাকা। যা দিনকাল পড়েছে তাতে কি ভালো থাকা যায়! বেঁচে আছি আর কি, ইত্যাদি ধাঁচের কথাবার্তা একেবারেই বলবেন না।
(খ) বিনয়ী হওয়া ভালো তবে অতি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজেই নিজের সমস্যা হয়ে দাঁড়াবেন না।
(গ) অন্যের যে কোন সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হবেন না, সে সাফল্য তার একান্ত নিজের চেষ্টার ফল।
(ঘ) আপনার নিজের অতীত ব্যর্থতার কথা মনে আনবেন না কখনো, বরং আপনার যে কোন সাফল্যের কথা ভাবুন তা যত ছোট বা বড়ই হোক না কেন।
(ঙ) ব্যর্থতা বা না পাওয়ার জন্য নিজের বিশ্লেষণ করবেন না, আবার চেষ্টা করুন। নিরাশ হবেন না।
(চ) আপনার কি নেই সেটা না ভেবে বরং খুঁজে বের করুন আপনার কি কি আছে।
আসুন, সুন্দর করে অবলীলায় বলি -ভালো আছি।
©somewhere in net ltd.