![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বাংলাদেশে শিশু হত্যার বান ডেকেছে। সিলেটে রাজন হত্যার পর খুলনায় রাকিব হত্যা বাংলাদেশের বিবেক কে বধির করে ফেলেছে। পুরোনো পত্রিকার ফাইল ঘাটলে গড়ে প্রতি সপ্তায় শিশু হত্যার খবর পাওয়া যায়। সে সব হত্যার ধরন অত্যন্ত হৃদয় বিদারক এবং বিচিত্র। পত্রিকা ঘাটলে পাওয়া যাবে মসজিদ-মাদ্রাসায় পর্যন্ত কন্যা শিমু ধর্ষিতা হয়েছে। বাংলাদেশের প্রতিটি জনপদে শিশু হত্যার ঘটনা ঘটছে। কোনো কোনো পিতা-মাতা পর্যন্ত নিজ সন্তানদের মেরে ফেলছে। সন্ত্রাসীরা শিশুদের ধরে নিয়ে মুুক্তিপণ আদায় করছে। মুক্তিপণ না পেয়ে অতীতে এক ফুটফুটে শিশুকে হত্যা করে তুরাগ নদীতে ফেলে দিয়েছিলো।
চারদলীয় জোট সরকারের আমলে সন্ত্রাীদের গুলিতে পিতার কোলে থাকা শিশু নিহত হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলতাপ হোসেন চৌধুরী বলেছিলেন, ‘আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছে।’ ২০০১ সালের ১ অক্টোবর নির্বাচনর পর ধর্ষিতা হয়েছে শিশুকন্যা ও কিশোরী। পিতার কোল থাকে শিশু কেড়ে নিয়ে আছড়ে মেরে হত্যা করেছে, কারণ বড় হলে সে নৌকায় ভোট দেবে। বর্তমান মহাজোট সরকারের আমলে এই শোকের মাসে ক্ষমতাসীন দলের উভয় গ্রুপের দলাদলি ও গোলা গুলিতে গুলি বিদ্ধ হয়েছে এক সন্তান সম্ভাবনা রমণী। তার গর্ভের কন্যা সন্তানের কোমল শরীর স্পর্শ করেছিলো বুলেট।
‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গত ২৩ জুলাই মাগুরা শহরের দোয়ার পাড়ায় সাবেক ছাত্রলীগ কর্র্মী কামরুল ভূঁইয়ার সঙ্গে সাবেক যুবলীগ কর্মী মোহাম্মদ আলী ও আজিবরের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ সময় কামরুলের বড় ভাই বাচচু ভূঁইয়ার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী নাজমা বেগম (৩০) ও প্রতিবেশী মিরাজ হোসেন গুলিবিদ্ধ হন। কামরুলের চাচা আবদুল মোমিন ভূঁইয়া গুলিতে নিহত হন। রাতেই মাগুরায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে নাজমার গুলিবিদ্ধ শিশুটি ভূমিষ্ট হয়। অবস্থার অবনতি হলে দুই দিন পর তাকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।’
ভয়াবহ অবস্থা! স্বস্তির খরব হলো, ‘১৪ দিন পর অবশেষে মায়ের পরশ পেল মাতৃগর্ভে গুলিবিদ্ধ মাগুরার সেই শিশুটি। মায়ের পরশে থেকে মাতৃদুগ্ধও পান করেছে শিশুটি। আধা ঘন্টারও বেশি মায়ের কোলে ছিলো শিশু সুরাইয়া। সন্তানকে কোলে তুলে নেয়ার পর আবেগ অপ্লুত হয়ে পড়েন মা নজমা।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি মানবিক, অস্বস্তিকর অভিযোগ থেকে নিস্কৃতি পেলেন। তার অঙ্গ দলের সন্ত্রাসীদের গুলিতে মাতৃগর্ভের শিশু নিহত হলে তার জন্য বদনামের দৃষ্টান্ত হয়ে থাকতো। প্রধান মন্ত্রীর কাছে আমার আবেদন, যাদের গুলিতে অন্তঃসত্ত্বা নারী গুলিবিদ্ধ হয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনুন। ১৯৭৫ সালের মধ্য আগষ্টের এক রাতে তিনটি গর্বিত পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। ওই পরিবারের একটি লোকও বেঁচে ছিলো না। শুধু আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ কোন রকম পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেছিলেন। ব্যরিস্টার ফজলে নূর তাপস তখন কোথায় ছিলেন তা আমার জানা নেই। শেখ ফজলুল হক মনির স্ত্রীর নাম আরজু মনি। প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার বান্ধবী। তিনি তখন অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। খুনীরা তাকে গুলি করলে তার অনাগত সন্তানও মাতৃগর্ভে অকাল মৃত্যুর শিকার হয়। শেখ রাসেলের বয়স ছিলো ১০ বছর। ফুটফুটে নিস্পাপ শিশু। পড়তো সাইন্স ল্যাবরেটরী স্কুলে। ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশে সফরে এসে, বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর সময় রাসেলকে কোলে তুলে আদর করেছিলেন। রাসেল খুনীদের কাছে প্রাণ ভিক্ষা চেয়েও প্রাণ রক্ষা করতে পারেনি।
একবার আমাদের প্রধান কবি শামসুর রহমান তার শ্যামলীর বাসভবনে আমাকে বলেছিলেন, মওলানা ভাসানীর উচিত ছিলো অন্তত শিশু রাসেল হত্যার প্রতিবাদ করা।’ শুধু রাসেল নয়, মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়া বাতের নাতী, আবুল হাসনাত আব্দুল্লাহর ছেলে সুকান্ত বাবু রাসেলের চেয়েও ছোট ছিলো। খুনিরা তাকেও হত্যা করে প্রতিহিংসার পিপাসা নিবৃত করেছে। সেরনিয়াবাত সাহেবের মেয়ে বেবীর বয়স বেশি ছিলো না। সে কিশোরী বয়সের ছিলো বলা চলে। খুনীদের বুলেটে বেবীর স্বপ্নমাখা চোখের পাপড়ি নীরবে ঝরে পড়েছিলো।
বর্তমান মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ধানমন্ডীর ২য় কারবালার শোকাবহ ঘটনার আওয়ামীলীগ প্রতিবাদ জানাতে যে পারেনি তার ব্যর্থতা স্বীকার করেছেন। স্বার্থ চর্চার মগ্নতার দিকটি তিনি চিহ্নিত করেছিলেন এক বক্তৃতায়। কিন্তু স্বাধীনতাতো শুধু আওয়ামীলীগের জন্য আসেনি, সমগ্র মানুষের জন্য এসেছিলো। বঙ্গবন্ধু শত্রুদেরও ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। প্রতিশোধের রাজনীতির কথা তিনি ভাবতেও পারেননি। তাহলে দেশবাসীর পক্ষ থেকে, বিবেক চর্চাকারীদের পক্ষ থেকে, গণতন্ত্র চর্চাকারীদের পক্ষ থেকে অন্তত শিশু হত্যার বিরুদ্ধে প্রতিবাদের বাণী উচ্চারিত হলো না কেনো?
যিনি ইসলামের নব্য খলিফা সেজে, জিন্নাহ ক্যাপ মাথায় দিয়ে ক্ষমতা দখল করলেন, তিনি খুনিদের বললেন ‘সুর্যসন্তান’। ইনডেমনিটি এ্যাক্ট প্রবর্তন করে তিনি শিশু হত্যাকারীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করলেন। বিচারের উর্দ্ধে রেখে খুনীদের আরাম আয়েশের ব্যবস্থা করে দিলেন। তাদের চাকুরী দেয়া হলো, নিরাপত্তা দেয়া হলো, সু-খাদ্য দেয়া হলো, জাতীয় মাছ পদ্মার তৈলাক্ত ইলিশ দিয়ে পোলাও খাওয়ার সুযোগ দেয়া হলো তাদের। খুনীদের পক্ষে যারা সাফাই গেয়েছিলেন তাদের মধ্যে মার্কসবাদী, মাওবাদী, মওদুদী বাদী, গণতন্ত্রী, সমাজতন্ত্রী, মৌলবাদী আরো অনেকে ছিলেন। ঈর্ষা সহজে কাউকে রেহাই দেয় না। ড. মুনতাসীর মামুনের একটি লেখায় পেয়েছি যে, ডালিম লন্ডনের এক হাসপাতালে মওলানা ভাসানীকে দেখতে গেলে বলেছিলেন, ‘এই বুইড়্যা ৯০ বছর রাজনীতি করে যা পারেনি, তোরা তাই পারছোস, তোদের দোয়া করি।’ মামুন অবশ্য বলেছেন এর সত্য মিথ্যা আমার জানা নেই।
অন্তত শিশু হত্যা এবং নারী হত্যার প্রসঙ্গটি ধরে এই বর্বরতার প্রতিবাদ করা উচিত ছিলো। তা করা হয়নি। উল্লাস করে এই হত্যাকে স্বাগত জানানো হয়েছিলো। বলা হচ্ছিলো ‘১৫ আগষ্টই প্রকৃত স্বাধীনতা দিবস।’ যে প্রবীণ নেতা বাকশালে যোগদান করেছিলেন, তিনি ১৫ আগস্টকে বললেন ‘নাজাত’ দিবস। এই ভাবে শিশু হত্যার স্বীকৃতি পেয়েছিলো। তার নেতিবাচক মূল্যবোধ সমাজের রেখায় রেখায় জড়িয়ে গেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে নারী ও শিশু হত্যাকারীদের সাফাই গাওয়ার লোক এদেশে আছে। ড. মামুন বলেছেন এদেশে নাকি ৪০ ভাগ পাকিস্তান সমর্থক আছে। বঙ্গবন্ধু নাকি একটি অনিচ্ছুক জাতির ওপর স্বাধীনতা চাপিয়ে দিয়ে গেছেন। এই ৪০ ভাগের ক্যাম্প থেকে ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ লোক শহীদ হয়েছে, এই সংখ্যাকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে।
এই যে মিশ্র সমাজ, মিশ্র মূল্যবোধ, মিশ্র আদর্শ- এই সমাজে মানবিক মূল্যবোধ ধ্বসে পড়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর কিন্তু মানবতার জয় হয়েছিলো, পশুত্বের পরাজয় ঘটেছিলো। কিন্তু পাশবিক মূল্যবোধটা নানা কৌশলে থেকে গেছে। সেই পশুত্বই রাজন ও রাকিবকে কেড়ে নিয়েছে।
©somewhere in net ltd.