নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হে মু\'মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলমান) না হইয়া কোন অবস্থায় মরিও না।(আলে- \'ইমরান,আয়াত-১০২)

আরিফুর রহমান হাওলাদার

আরিফুর রহমান হাওলাদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্লগারদের জিডিতে বিপাকে পুলিশ

২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:১২

একের পর এক ব্লগারকে হত্যার হুমকির বিপরীতে তাদের পক্ষ থেকে পুলিশের কাছে নিরাপত্তা চেয়ে (জিডি) করা আবেদনে বিপাকে পড়েছে পুলিশ। ১৬ কোটি মানুষের এই দেশে নির্দ্রিষ্ট কোনো সাধারণ ব্যক্তিকে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেওয়া পুলিশের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব নয় বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট পক্ষ। বাস্তব এই অবস্থায় পুলিশের ওপরও ভরসা রাখতে পারছেন না ব্লগাররা। তাই অনেক ব্লগারই নিজেকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী করে ফেলছেন। আর যাদের সামর্থ্য ও সুযোগ আছে তারা করছেন দেশ ত্যাগ। সর্বশেষ গত শুক্রবার নিজের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে মোহাম্মদপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন শাম্মী হক নামে এক ব্লগার। এর আগে একই ধরনের হুমকি পেয়ে খিলগাঁও থানায় জিডি করতে গিয়েছিলেন ব্লগার নীলাদ্রী চ্যাটার্জি নীলয়। যদিও পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। এর কিছুদিন পর নিজের বাসাতেই নির্মমভাবে খুন হন নীলয়। পুলিশ জিডি গ্রহণ না করার বিষয়টি নীলয় নিজেই তার ফেইসবুকে প্রকাশ করেন। তার মৃত্যুর পর ঘটনাটি প্রকাশ হওয়ার পর তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ প্রশাসন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে পড়েন সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশও।
নীলয় খুনের পর ব্লগারদের নিরাপত্তা চেয়ে করা জিডি নিয়ে উভয়মুখী সঙ্কটে পড়েছে পুলিশ। নাম না প্রকাশের শর্তে পুলিশের ডিএমপি’র তেজগাঁও বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, স্বল্প জনবল এবং নানামুখী কাজে পুলিশের পক্ষে সার্বক্ষণিক কোনো সাধারণ মানুষকে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব না। আবার নিরাপত্তার আবেদন করা সংশ্লিষ্ট ব্লগারের প্রাননাশ হলে একদিকে যেমন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের রোষানলে পড়তে হচ্ছে অন্যদিকে পুলিশের প্রতি আস্থার সঙ্কট সৃষ্টি হবে সাধারণ মানুষের। ব্লগার শাম্মী হক জানান, নিলয় হত্যার পর তিনি বাসা থেকে প্রায় বেরই হতেন না। অনেক দিন পর শুক্রবার ধানমন্ডি ২৭ নাম্বারে শপিংয়ে যাওয়ার পথে দুই যুবক তাকে অনুসরণ করতে থাকে। তিনি আরো নিশ্চিত হতে হাঁটার গতি পরির্তন করেন। যুবকদ্বয়ও একইভাবে হাঁটতে শুরু করেন। এরপর শাম্মী হক বুঝতে পেরে রাস্তায় দাঁড়িয়ে পড়লে ওই দুই যুবকও দাঁড়িয়ে থাকেন। এ সময় শাম্মী পাশের শপিংমলে ঢুকে যান। সেখানেও তারা শাম্মীকে অনুসরণ করেন। এ সময় শাম্মী তার এক বন্ধুর দেখা পান। বন্ধুর সহায়তায় তিনি অনুসরণকারীদের ছবিও তুলে রাখেন। এরপর ওই দুই যুবক সেখান থেকে দ্রুত চলে যান। এরআগেও তাকে ফোনে এবং ফেইসবুকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছিল বলে জানান তিনি। একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী শাম্মী হক গণজাগরণ মঞ্চের একজন সক্রিয় কর্মী। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবিতে তার দেওয়া স্লোগানের কারণে তিনি ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেন।
শাম্মীর সঙ্গে এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ঘটনাটা আমি প্রশাসনকে জানিয়েছি। পুলিশ নিরাপত্তা দিচ্ছে। তবে একজন শিক্ষার্থী হিসেবে একটা স্বাধীন দেশে কেন এভাবে সার্বক্ষণিক নিরাপত্তার মধ্যে থাকতে হবে। এটা কতটুকু ভয়াবহ ব্যাপার, ভাবুন একবার। পুলিশের পক্ষেও ব্যক্তিবিশেষে নিরাপত্তা দেয়াটা অসম্ভব প্রায় এমন মন্তব্যে শাম্মী বলেন, এটা যদি হয় তা হলে এতগুলো ঘটনার পরও কেন তাদের বিচারের মুখোমুখি আনা হচ্ছে না? তাদের কেন শাস্তি দেওয়া হচ্ছে না? সত্যি বলতে সরকারের পক্ষ থেকেই যখন মুক্তমনাদের বলা হয়, সীমা লঙ্ঘন করিবেন না। এতে তারা আরও উসকানিই পান। তাই বলাই যায়, সরকারের মদতেই এধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তিনি এ অবস্থার উত্তরণ দাবি করে বলেন, ‘আমাদের অনেকেই এখন ঘরবন্দি, অনেকেই দেশ ছাড়া। এভাবে চলতে পারে না। বাসার সামনে এসেও আমাদের ‘ফলো’ করা হচ্ছে। আমরা স্বাভাবিক চলাফেরাও করতে পারছি না। তাই সরকারের কাছে আমার বিনীত আবেদন অবিলম্বে এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন এবং মুক্ত চিন্তাকে বাধাগ্রস্ত না করে মুক্ত থাকতে দিন।
ব্লগার শাম্মী হকের করা জিডি’র বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানার ওসি জামাল উদ্দিন মির বলেন, ‘তাকে (শাম্মী হক) আমাদের সাথে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার জন্য বলেছি। ওই এলাকায় পুলিশের টহল দলকেও তার প্রতি বিশেষ নজর দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শাম্মী হক কোথাও যেতে চাইলে আগে পুলিশকে জানাতে বলা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে তার নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা পুলিশের পক্ষে সহজ হবে। শাম্মী হকের নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক কোনো পুলিশ মোতায়ন করা হবে কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে ওসি বলেন, ‘বিষয়টি আমি সিনিয়র লেভেলে জানিয়েছি। সেখান থেকে যেমনটা নির্দেশ আসবে আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নিব।’ তিনি আরো বলেন, ‘জিডি এবং শাম্মী হকের সরবরাহকৃত তার হুমকি দাতাদের ছবি বিশ্লেষণ করে ঘটনার তদন্ত চলছে।’
এদিকে ব্লগারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা কোনোভাবেই পুলিশের ওপর ভরসা রাখতে পারছেন না। জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে জিডি করলে পুলিশ কিছুদিন তাদের খোঁজ খবর রাখে। তারপর তাদেরই (পুলিশ) আর কোনো খোঁজ থাকে না। ব্লগার মাহমুদুল হক মুন্সী বাঁধন জানান, গত বছরের আগস্টে তাকে পাঁচ দফা হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পল্লবী থানায় জিডি (নং-১৭৭৫) করলে পুলিশ কিছুদিন তার বাসার সামনে ঘোরাঘুরি করে। এরপর পুলিশের আর কোনো পাত্তা পাওয়া যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে তিনি চাকরি ছেড়ে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী হন।
তিনি জানান, দেশে নিরাপত্তা না পেয়ে বিদেশে (জার্মানি) চলে গেছেন হুমায়ুন আজাদ ছেলে অনন্য আজাদও। অনন্য তাকে জানিয়েছেন, পুলিশের ওপর তিনি ভরসা রাখতে পারছিলেন না। এর আগেও ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তি এবং ব্লগারদের হত্যার হুমকি দিয়ে উড়ো চিঠি দেওয়া হয়। ওইসব হুমকির প্রেক্ষাপটে থানায় জিডি করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। কিন্তু জিডি করার পর কিছুদিন ওইসব ব্যক্তিদের বাসা কিংবা কর্মস্থলের সামনে টহল দেয়ার পর তেমে যায় পুলিশের কার্যক্রম। এমনকি এখন পর্যন্ত কোনো হুমকিদাতাকেও চিহ্নিত করতে পারেনি পুলিশ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.