নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হে মু\'মিনগণ! তোমরা আল্লাহ্‌কে যথার্থভাবে ভয় কর এবং তোমরা আত্মসমর্পণকারী (মুসলমান) না হইয়া কোন অবস্থায় মরিও না।(আলে- \'ইমরান,আয়াত-১০২)

আরিফুর রহমান হাওলাদার

আরিফুর রহমান হাওলাদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

বিশ্বমানবতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করল অভিবাসন সংকটের বলি আয়লান

০৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০১


'মানবতা' আর 'মানবাধিকার' নিয়ে কথা বলা থেমে নেই। অথচ বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই এ দুটি বিষয় নিয়ে রয়েছে নানামুখী বিতর্ক। দেশে-দেশে চলছে জঙ্গিবাদী হামলা, দখল-যুদ্ধ, দুর্বলের ওপর সবলের আঘাত। একই সঙ্গে রয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্ব নিয়ে নানামাত্রিক কূটচাল। ফলে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে মানবতা। ক্ষমতালিপ্সুদের স্বার্থের কাছে মানবাধিকার বিবসিত হয়ে পড়লে তার মতো পরিতাপের বিষয় আর কী হতে পারে। বর্তমান বিশ্বে মানবাধিকার পরিস্থিতি শুধু হুমকির মুখে রয়েছে তা নয়, বরং বলা চলে গভীর সংকটে পতিত। আর এ পরিস্থিতির বলি হতে হচ্ছে শিশু-বৃদ্ধ, অগণিত নারী-পুরুষকে। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, সংঘাতময় সিরিয়া থেকে বাঁচতে পিতা-মাতা এবং সহোদরের সঙ্গে দেশ ছেড়েছিল আয়লান। কিন্তু নিরাপদ জীবনের সন্ধানে স্বজনদের সঙ্গে তাকেও মৃত্যুর স্বাদ নিতে হলো। প্রশ্ন উঠতে পারে, কী ছিল শিশু আয়লানের অপরাধ। তবে এটা ঠিক, সৈকতে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকা শিশু আয়লানের নিথর দেহ বিশ্ববিবেককে প্রচ- ঝাঁকুনি দিয়েছে, বিশ্ববাসীকে জানিয়ে গেছে শরণার্থীদের দুঃখ-দুর্দশার নির্মমতা।
গণমাধ্যমের খবরে জানা যায়, যুদ্ধের কারণে জীবন বাঁচাতে সিরিয়া থেকে হাজার হাজার শরণার্থী মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে সাগর পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে চলে যাচ্ছে। যদিও এ প্রক্রিয়া অনেক ভয়ঙ্কর এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রাণনাশক। ইউরোপীয় দেশগুলোর শীর্ষ নেতারাও স্বীকার করছেন সিরিয়া, ইরাক এবং অন্যান্য দেশ থেকে শরণার্থীদের বিপদসংকুল পথে ইউরোপে আসার বিষয়টি। তবে অনেক ক্ষেত্রেই এসব দেশ শরণার্থীদের প্রতি ঔদার্য দেখাচ্ছে। আবার ইউরোপের কিছু দেশ, বিশেষ করে হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ড হয় সাহায্য করতে অনীহা দেখাচ্ছে অথবা শরণার্থীদের শুধু অন্য দেশে সরিয়ে দিচ্ছে। আর গ্রিস ও ইটালির মতো দেশগুলো শরণার্থীদের সংখ্যার সঙ্গে নিজেদের আর মানিয়ে নিতে পারছে না। আবার ইংল্যান্ড এ ক্ষেত্রে তাদের মনোভাব পরিবর্তন করেছে, যদিও তা অনেক দেরিতে। তথ্যমতে, হাঙ্গেরিতে আটকে থাকার পর অবশেষে অস্ট্রিয়ায় যাচ্ছেন হাজারো অভিবাসন-প্রত্যাশী। অস্ট্রিয়া ও জার্মানিও অভিবাসন-প্রত্যাশীদের দেশে ঢোকার অনুমতি দিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও অভিবাসন-প্রত্যাশীদের নিয়ে নতুন করে ভাবছে। শিশু আয়লানসহ সিরীয় অভিবাসীদের একটি দল নৌকায় করে গ্রিসের একটি দ্বীপে যাওয়ার চেষ্টাকালে নৌকাটি ডুবে আয়লান, তার মা এবং পাঁচ বছর বয়সী বড় ভাইসহ ১২ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, শিশু আয়লানের নিথর দেহের ছবি প্রকাশের আগে কেন বিশ্বনেতাদের ঘুম ভাঙেনি? গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অভিবাসননীতি নিয়েও তাই সমালোচনার শেষ নেই।
বিবিসিসহ বিশ্বের শক্তিশালী গণমাধ্যমের খবরে জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে হাঙ্গেরি অভিবাসন-প্রত্যাশীদের ইউরোপের পশ্চিমাঞ্চলগামী ট্রেনে উঠতে দেয়নি। অবশেষে আয়লানের হৃদয়বিদারক মৃত্যুর পর শুক্রবার অভিবাসন-প্রত্যাশীদের সীমান্ত পার করে দেয়ার উদ্যোগ নেয় হাঙ্গেরি। আবার ছবিটি প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ফ্রান্স ও জার্মানি নিজেদের দ্বিধাদ্বন্দ্ব বাদ দিয়ে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) নির্ধারিত সংখ্যা (কোটা) অনুযায়ী অভিবাসন-প্রত্যাশীদের জায়গা দিতে সদস্য দেশগুলোকে বাধ্য করা উচিত বলে মতো প্রকাশ করেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনও আয়লানের ছবি দেখে কয়েক হাজার সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দেয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এ বিষয়গুলো ইতিবাচক বলেই প্রতীয়মান হয়।
স্মর্তব্য যে, বিশ্বে অভিবাসন সংকট তীব্র। বিশেষ করে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের জন্য সবচেয়ে মারাত্মক মানবিক সংকট হয়ে এসেছে এ অভিবাসন সমস্যা। এর প্রমাণ মেলে ভূমধ্যসাগরে প্রতিনিয়ত মৃত্যুর ঘটনা, যার সর্বশেষ শিকার শিশু আয়লানের পরিবার। আমরা মনে করি, ইউরোপের একটি অভিবাসননীতি দরকার, যা ইউরোপের জনসংখ্যার হ্রাস কমাতে সহায়ক হবে, আবার মাত্রাতিরিক্ত বোঝা সৃষ্টি করবে না। শরণার্থীদের বিপন্নতা বুঝে বিশ্ববিবেককে এ ব্যাপারে সজাগ হতে হবে। 'মানবতা' আর 'মানবাধিকার' নিয়ে দ্বিমুখী নীতি কিছুতেই কাম্য হতে পারে না। এজন্য যুদ্ধ, হানাহানি বন্ধে নিতে হবে কার্যকর উদ্যোগ। আয়লান কুর্দির মতো আর কোনো মৃত্যু কেউই প্রত্যাশা করে না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.