![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আওয়ামী লীগের সহযোগি রাজনৈতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে অন্যতম ছাত্রলীগ। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ছাত্ররাই সংগঠনটির সদস্য হওয়াসহ নেতৃত্ব দেওয়ার কথা। বর্তমানে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের কর্মকাণ্ড দেখে মনে হচ্ছে, তারা যেনো নিত্যদিন অছাত্রের পথেই হাঁটছে। ছাত্রলীগের দৌরাত্ম্য এসে ছুঁয়েছে সংস্কৃতি অঙ্গনকেও। বলতে গেলে, ছাত্রলীগ ক্রমেই অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। মনে হয়, কোনোভাবেই যেনো তাদের লাগাম টেনে ধরে রাখা যাচ্ছে না। ফিরানো যাচ্ছে না আইন বা দলীয় শৃঙ্খলার নীতিতে। ছাত্রলীগের দোর্দ- দাপট আর অনৈতিক নিয়ন্ত্রণ দেশের প্রায় প্রতিটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে করে তুলছে অস্থিতিশীল।
এছাড়া, ছাত্রলীগের বেপোরোয়া সন্ত্রাসী কার্যকলাপ, মাদক ব্যবসার সাথে জড়ানো, অপহরণ, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি, দখল, শিক্ষাঙ্গণে সন্ত্রাস, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে নিজেদের মধ্যে মারামারি, সংঘর্ষ, খুনোখুনিসহ শিক্ষকদের ওপর হামলা নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন অপ্রত্যাশিত নানাবিধ কারণে ছাত্রলীগ এখন পুরো দেশের মানুষের কাছে আতঙ্কের নাম। যেকোনো অপকমের্র সাথে ছাত্রলীগের নাম চলে আসাটা যেনো অবধারিত হয়ে উঠেছে। সংগঠনটির নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্বের কারণে আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর দেশের প্রায় সব ক’টি বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অরাজকতা কায়েম করে ছাত্রলীগ।
‘ছাত্রলীগ’ নামের আগে ‘ছাত্র’ শব্দটি থাকলেও ছাত্রসুলভ আচরণ যেনো উধাও হয়ে গেছে তাদের ভেতর থেকে। লাগামহীনতার চিত্র তুলে ধরায় সাংবাদিকদের উপরও নেমে আসছে ছাত্রলীগের নির্যাতনের খড়গ। একটি খুন অথবা সন্ত্রাসী ঘটনার ক্ষত মুছতে না মুছতেই ফের সন্ত্রাসী ঘটনার জন্ম দিচ্ছে ছাত্রলীগ। ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে বিভিন্নস্থানে চলছে নীরব চাঁদাবাজি। এতে কলঙ্কিত হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দাবিদার ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটি।
জাতীয় পত্রিকার খবরে জানা গেছে, গত দুই বছরে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে কয়েকজন ছাত্রলীগ কর্মী খুনের পাশাপাশি পঙগুত্ব বরণ করছে ডজনেরও বেশি। গত কয়েক বছরে দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সংঘটিত হয়েছে একাধিক হত্যাকাণ্ড। এতে বারবার ব্যাহত হয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
চলতি বছরের গত আট মাসে ছাত্রলীগ নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে শতাধিকবার। এতে খুন হয়েছেন স্বদলীয় চার নেতাকর্মী। ছাত্রলীগ প্রায়ই নানাবিধ বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করলেও দলীয় হাইকমান্ড থেকে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপও নেওয়ার নজির পরিলক্ষিত হচ্ছে না। এ নিয়ে রাজনৈতিক, বুদ্ধিজীবীসহ সর্ব মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া বিরাজ করছে। বিব্রত হচ্ছে ছাত্রলীগের অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগও।
‘অপ্রতিরোধ্য ছাত্রলীগ অস্থির শিক্ষাঙ্গন, শিক্ষক লাঞ্ছিত ও সাংবাদিক পেটানো অব্যাহত ; অভ্যন্তরীণ কোন্দলে গত ৮ মাসে ৪ কর্মী নিহত ; গত ৮ মাসে শতাধিক সংঘর্ষ’ শিরোনামে অতিসম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকার প্রকাশিত শীর্য প্রতিবেদনে উঠে আসে ছাত্রলীগের হীন কর্মকাণ্ডের ভয়াবহ চিত্র। এছাড়া ‘ছাত্রলীগ সিলেটের মানুষের কাছে এক আতঙ্কের নাম কিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না’ শিরোনামে পৃথক খবরে উঠে আসে সিলেটের ছাত্রলীগের নানাবিধ হীনকার্মকা-ের হালহকিকত। এতে ক্ষমতাসীন মহাজোট সরকারের নেতৃত্বদানকারী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দাবিদার আ’লীগ বিস্মিত না হলেও ভূক্তভোগি হচ্ছেন সাধারণ শিক্ষার্থী, শিক্ষক, সাংবাদিকসহ স্বদলীয় নেতাকর্মী।
সাধারণত আওয়ামী লীগবাদীদের কাছে আগস্ট শোকের মাস হিসেবে বিবেচিত। এ মাসে শোক দিবসের আলোচনা ছাড়া অন্য কোনো কর্মসূচি নেয়া না দলীয়ভাবে। সবাই অনেকটা সংযমের মধ্য দিয়ে মাসটি কাটান। কিন্তু চলতি বছরের সদ্যবিদায়ী শোকের আগস্টেও একশ্রেণীর নেতাকর্মীর মধ্যে সংযমের লক্ষণ কমই দেখা গেছে। বরং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদতবার্ষিকীকে সামনে রেখে তারা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। আগস্টে দুটি খুনসহ , সংঘর্ষ-হামলা, গৃহবধূকে ধর্ষণ, ছাত্রী উঠিয়ে নিয়ে আটকে রাখাসহ নানাবিধ বির্তকিত ঘটনার জন্ম দিয়েছে ছাত্রলীগ।
ছাত্রলীগের খতিয়ান ঘেঁটে জানা যায়, ১ আগস্ট রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সিট দখলকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে চারজন আহত হন। একই দিন রাজশাহী মহানগরীর কোর্ট স্টেশন এলাকা থেকে অস্ত্রসহ চার ছাত্রলীগকর্মীকে আটক করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ রাউন্ড গুলি, ১টি ম্যাগাজিন ও ১টি পিস্তল উদ্ধার করা হয়। ওই দিনই চাঁদপুরে ইয়াবা সেবনকালে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদকসহ ৬ জনকে আটক করা হয়। ৫ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগকর্মীরা দৈনিক মানবকণ্ঠ পত্রিকার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি সোহাইল মিয়াকে মারধর করে। ৬ আগস্ট সেমিনারে বসাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ৮ আগস্ট বরিশাল নগরীর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজিতে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে অন্তত পাঁচজন আহত হন। ১০ আগস্ট আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সিলেট সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষে ১০ নেতাকর্মী আহত হন। একই দিন খুলনার রূপসা ডিগ্রি কলেজে তুচ্ছ ঘটনা নিয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে শিকক্ষসহ আহত হন২০ জন। একই দিন নোয়াখালীর কবিরহাটে শাখা ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে ১৫ জন আহত হন। ১১ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে সিট দখল নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় হল প্রশাসন ৩টি কক্ষ সিলগালা করে দেয়। ১২ আগস্ট তুচ্ছ ঘটনায় সিলেট নগরীর মদনমোহন কলেজে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল আলীম নিহত হন। একই দিন ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগে আধিপত্য বিস্তার ও সিট দখল নিয়ে দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন ২৫ জন। একই দিন মিরপুর বাঙলা কলেজেও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ওই সময় পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি মুজিবুর রহমান অনিককে আটক করে। কিন্তু পরে তাকে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। এছাড়া ওইদিন সিলেটের মদন মোহন কলেজে পাওনা টাকা নিয়ে নিজ গ্রুপের ক্যাডারদের ছুরিকাঘাতে খুন হন ছাত্রলীগকর্মী আবদুল আলী। ১৩ আগস্ট পদপ্রত্যাশী ঢাকা কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ১৪ আগস্ট রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের ৫ নেতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশলীর কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে প্রকৌশলীসহ তার ভবন উড়িয়ে দেয়ার হুমকি দেয় তারা। ১৫ আগস্ট পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে তালা ভেঙে ছাত্রলীগ হামলা করে। ওই ঘটনার খবর পত্রিকায় প্রকাশের জেরে ২৫ আগস্ট রাতে নয়া দিগন্তের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতা মোজাহিদুল ইসলামকে বেধড়ক পিটিয়ে ক্যাম্পাস থেকে তাড়িয়ে দেয় ছাত্রলীগ। ওই সাংবাদিককে ক্যাম্পাসে প্রবেশ না করতে নানাভাবে হুমকি দেয় ছাত্রলীগ নেতারা। এছাড়া ওইদিন বাড্ডায় তিন খুনের ঘটনায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের জড়িত থাকার বিষয়টি ওঠে আসে। ১৬ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে আসা এক দম্পতির কাছ থেকে অর্ধলক্ষাধিক টাকা ছিনতাই করার অভিযোগে দুই ছাত্রলীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ২২ আগস্ট লক্ষ্মীপুর সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে নবীন ছাত্রীদের উত্ত্যক্ত করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ ছাত্রলীগের সাথে পৌর ছাত্রলীগ সংঘর্ষে জড়ায়। ৩০ আগস্ট সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ওপর ন্যক্কারজনকভাবে হামলা করে ছাত্রলীগ। এতে সারা দেশে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হলে ওই ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগে চার ছাত্রলীগ নেতাকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ৩১ আগস্ট জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মীর মোশাররফ হোসেন হলের সিনিয়র দুই সাধারণ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করে ছাত্রলীগের জুনিয়র কর্মীরা।
৭ জুলাই বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ ও জেলা ছাত্রলীগের মধ্যে সশস্ত্র ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া, গুলিবিনিময়, ককটেল বিস্ফোরণ ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ২২ জুলাই খুলনা সরকারি ব্রজলাল (বিএল কলেজ) বিশ্ববিদ্যালয় কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষককে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা।
২৪ জুন পুরান ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজের মাস্টার্সের ভর্তীচ্ছুক শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ের ঘটনাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ ও কবি নজরুল কলেজ ছাত্রলীগ দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়ায়। ২৫ জুন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের রফিক-জব্বার হলের অতিথি কক্ষে বসাকে কেন্দ্র করে দুইজন সিনিয়র সাধারণ শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করে ছাত্রলীগ। একই দিন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শাখা সৈয়দ আমীর আলী হলের ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। ৩০ জুন সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সামনে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে জেলা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়।
৩ মে তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। ১৩ মে টাঙ্গাইলের মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ময়মনসিংহের ছাত্রলীগ নেতা মোশাররফ গ্রুপ ও টাঙ্গাইলের মনির গ্রুপের মধ্যে দফায় দফায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়। ওই ঘটনায় অপরাধতত্ত্ব ও পুলিশ বিজ্ঞান বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মোশাররফ হোসেন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। ২১ মে কবি নজরুল অডিটোরিয়ামে আয়োজিত একটি কনসার্টে বিনা টিকিটে প্রবেশ করতে গিয়ে বাধা পাওয়ায় ব্যাপক হামলা চালিয়ে পুরো অনুষ্ঠান পণ্ড করে দেয় ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। এ সময় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে গুরুতর আহত করে। ওই হামলার কিছুক্ষণ পরে দ্বিতীয় দফা হামলায় আহত হন সিলেট সম্মিলিত নাট্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রজত কান্তি গুপ্ত। ধারালো দা দিয়ে আঘাতের কারণে তার বাঁ হাত মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ২৯ মে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে জীবন নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী নিহত হন।
১ এপ্রিল গাজীপুরের টঙ্গী সফিউদ্দিন সরকার একাডেমি অ্যান্ড কলেজে পরীক্ষা চলাকালে নকল সরবরাহে বাধা দেয়ায় কলেজ ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম টিটু জোরপূর্বক প্রবেশ করতে যান। এতে বাধা দেয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই ছাত্রলীগ নেতার অনুসারীরা এক পুলিশ সদস্যকে এলোপাতাড়ি মারধর করে। ৩ এপ্রিল কবি নজরুল অডিটোরিয়ামের সংস্কারকাজ উদ্বোধন করেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। এ সময় নবনির্মিত মুক্ত প্রাঙ্গণেরও উদ্বোধন করেন তিনি। মুক্ত প্রাঙ্গণটি কোনো অনুষ্ঠান ছাড়া সব সময়ই সংস্কৃতিকর্মীদের জন্য উন্মুক্ত থাকার কথা থাকলেও পরদিন থেকেই তার নিয়ন্ত্রণ নেয় কাশ্মির গ্রুপের কথিত নেতা পারভেজ ও তার কর্মীরা। সাংস্কৃতিক কর্মীদের মুক্ত প্রাঙ্গণ হয়ে যায় ‘ছাত্রলীগের ক্যাম্পাস’। তারা সেখানে জমিয়ে তোলে মাদকের আড্ডা। সেখানে বসতে বা আড্ডা দিতে গিয়ে তাদের হাতে লাঞ্ছিত হন একাধিক সংস্কৃতিকর্মী। অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে গেলেও তাদের দিতে হয় বড় অঙ্কের চাঁদা। চাঁদা না দিলে অনুষ্ঠানে হামলা ও অনুষ্ঠানে আসা নারীদের উত্ত্যক্ত করতে শুরু করে তারা। এছাড়া অডিটোরিয়াম এলাকায় যানবাহন পার্ক করতেও বাধা দেয় ছাত্রলীগ। ১৪ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। ছাত্রলীগের কোন্দলের জেরে বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। ১৬ এপ্রিল আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিনাজপুর হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের নিজেরদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ দ্বিতীয় বর্ষের জাকারিয়া ও ভেটেরিনারি অনুষদের মাস্টার্সের মিল্টন নামে দুই ছাত্র নিহত হন।
৩ মার্চ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়। একই দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক গ্রুপের কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। ১৯ মার্চ তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষ হয়।
১৬ জানুয়ারি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জসীমউদ্দীন ও মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে রাতভর সংঘর্ষে অন্তত অর্ধশত ছাত্র আহত হন। ২২ জানুয়ারি সিলেটে মদনমোহন কলেজে ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সদ্যঘোষিত কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বে সংঘর্ষ হয়। (তথ্য সূত্র : নয়াদিগন্ত- ০৩.০৯.২০১৫/ যুগান্তর- ১৯.০৮.১৫)
উল্লেখ্য, ছাত্রলীগের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড বিরক্ত হয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১০ সালের এপ্রিলে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক নেত্রীর পদ থেকে সরে দাঁড়িয়েছিলেন। গত ২০১৪ সালে সিলেট বিশ্ববিদ্যালয়ে খুনের ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সে সিলেটের বিভাগীয় কমিশনারকে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন। এছাড়া ছাত্রলীগকে সামলানোর জন্য অধ্যাপক কবীর চৌধুরী, জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, অধ্যাপক জামাল নজরুল ইসলামের মতো বিশিষ্টজনরা ২০১০ সালের ১১ এপ্রিল গণমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছিলেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও ছাত্রলীগ নিয়ে একাধিকবার বক্তৃতা দিয়েছেন। আর সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রায় প্রতিদিনই ছাত্রলীগের নেতিবাচক বিভিন্ন কর্মকা- নিয়ে তার যৌক্তিক সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন। কিন্তু স্বদলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে সরকারের হাক-ডাক বাস্তবে প্রতিফলন ঘটছে খুবই কম। যার ফলে ছাত্রলীগ নেতারা বেপোরোয়াই রয়েছে।
ছাত্রলীগের একাধিক বিতর্কিত ঘটনায় নিজ নির্বাচনী এলাকা সিলেটেও বিব্রত হন অর্থমন্ত্রী। সিলেটে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডর ক্ষোভ দেখাতে গিয়ে অর্থমন্ত্রীও এক সময় বললেন, ‘ওরা বাস্টার্ড। ওদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছি। কোনোভাবেই ছাড় নয়।’
আমরা মনে করি, শক্তিশালী বিরোধী দল যখন দুর্বল হয়ে যায় বা না থাকে তখন সরকারি দল বা তাদের ছাত্র সংগঠনের তোকর্মীরা নিজেরাই মারামারি করে, সংঘর্ষ হয়, অভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়ে পড়ে। আর এভাবে চলতে থাকলে সরকার কখনোই অভ্যন্তরীণ কোন্দল থামাতে পারবে না বরং ক্রমেই তা বদ্ধি পাবে। এখনই ছাত্রলীগের লাগাম না টেনে ধরলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নেবে তা বলা বড়ই মসকিল।
আমরা বলতে চাই, যে কোনো রাষ্ট্রের সব ধরণের হীন কর্মের দায় কার্যত সরকারের ঘাড়েই বর্তায়। কাজেই সতর্ক থাকতে হবে যে, ছাত্রলীগের অপ্রত্যাশিত হীন কর্মের মাসুল যেনো সুদে আসলে কোনো আ’লীগ তথা সরকার বাহাদুরকে না গুণতে হয়। আমরা ছাত্রলীগের লাগাম টেনে ধরার প্রত্যাশা কামনা করছি।
©somewhere in net ltd.