নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদক আছে, মাদক আছে শুধু সাধক নেই

১৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০১

রবীন্দ্রনাথের কাব্যগুরু হিসেবে পরিচিত কবি বিহারীলাল চক্রবর্তীকে নিজ গৃহে নিমন্ত্রণ করেছেন সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। কবির গলায় যখন বঙ্কিমচন্দ্র মালা পরিয়ে দিচ্ছেন। সেই মালা নিজ গলায় না নিয়ে কবি বিহারীলাল তাঁর পাশে দাঁড়ানো এক কিশোরের গলায় পরিয়ে বলেন- এই কিশোরটিই একদিন বাংলা সাহিত্যে দ্যুতি ছড়াবে। সেদিনের সেই কিশোর ছেলেটি ছিলো কবি রবীন্দ্রনাথ।

এর প্রায় ৪১ বছর পর রবীন্দ্রনাথও ২২ বছর বয়সের এক যুবকের গলায় মালা পরিয়ে বলেন- আজ সাহিত্যের নতুন যুবরাজের জন্ম হয়েছে এবং যার কলমেই একদিন বাংলা সাহিত্য শাসিত হবে। সেই দিনের সেই যুবরাজ ছিলেন কবি কাজী নজরুল ইসলাম আর সেদিনই বিজলী পত্রিকায় প্রকাশ হয়েছিলো তাঁর অমর কবিতা "বিদ্রোহী"।

বাংলা সাহিত্যের আকাশে ঠিক এভাবে এক নক্ষত্র ফুরিয়ে না যেতেই আরেক নক্ষত্রের উদয় ঘটেছিলো। উনবিংশ, বিংশ শতাব্দী ছিলো বিদ্বানের, শিল্পের, পাণ্ডিত্যের, প্রতিভার আলোয় আলোকিত। এই দেশে জন্মেছিলেন জীবননান্দ দাশ, ফরুরুখ আহমেদ , সত্যন্দ্রনাথ দত্ত, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ, মীর মোশাররফ, গোলাম মোস্তফা ,শেখ ফজলুল করিম , আব্বাসউদ্দীন, ইসমাইল হোসেন সিরাজী , কায়কোবাদ ,মুন্সি মেহেরুল্লাহ , মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী , মওলানা আকরম খাঁ, সৈয়দ মুজতবা আলীর মতো দ্যুতি ছড়ানো সাহিত্যিকরা। শিল্পের ক্ষেত্রে সাড়া জাগিয়ে ছিলেন যামিনী রায়, জয়নুল আবেদীন, নন্দলাল বসুর মতো মহা প্রতিভাবান মানুষেরা।

জ্ঞানের ক্ষেত্রে , পান্ডিত্যের ক্ষেত্রে সুকুমার সেন, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহরা ছিলেন উজ্জ্বল নাম। নানা নক্ষত্র , জ্যোতিষ্কের আলোয় পরিপূর্ন ছিলো বাংলার আকাশ । কবি শামসুর রাহমান, কবি আল মাহমুদ, শওকত ওসমান, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের মতো স্বপ্নবাজ লেখকরা দ্যুতি ছড়িয়েছেন। ষাটের দশক পর্যন্ত এই ধারা পরাক্রান্ত গতিতে চলেছে।

কিন্তু কি চরম দূর্ভাগ্য! এই আলো, এই উজ্জ্বলতা এই বিভা বেশিদিন টেকেনি। সর্বক্ষেত্রে শুরু হয়েছে আজ ভাটার টান । সব জ্যোতিষ্কের আলোরা যেন আজ এক অন্ধকার কৃষ্ণগহ্বরের ভিতর হারিয়ে গেছেন। সব কিছু আজ স্থিমিত। কারণ- বড় মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ, বড় শক্তি সম্পন্ন মানুষ, বড় ধীমান মানুষ, বড় সম্ভাবনাময় মানুষ , বড় প্রতিভাবান মানুষ আজ বিরল।

বাংলার আকাশ যখন এসব কীর্তিমান মহান মানুষেরা আলোকিত করেছিলেন-তখন কিন্তু কোনো মিডিয়া ছিলোনা, টেলিভিশন ছিলোনা, ছিলো দুয়েকটা রেডিও আর মাত্র হাতে গোনা কয়েকটা পত্রিকা। রবীন্দ্রনাথের দাদা দ্বারোকানাথ ঠাকুরের মৃত্যুর খবর কলকাতায় পৌঁছাতে প্রায় চার মাস সময় লেগেছিলো। তারপরও সেই সময় সারা দেশের মানুষ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপক্ষে দশজন শিক্ষককে চিনতেন। মিডিয়ার টকশো করতেন বলে না। গলাবাজির জন্য না। পদ লেহনের জন্য না। শুধুমাত্র চিনতেন তাদের বিদ্যার জন্য, বুদ্ধির জন্য, জ্ঞানের জন্য, তাদের শক্তির জন্য। তাদের মাথা উঁচু করে দাঁড়ানোর প্রবল দৃঢ়তার জন্য, ঋজুতার জন্য, সাহসের জন্য। ময়মনসিংহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ওসমান গণি - আয়ুব খানের অনৈতিক প্রস্থাব প্রত্যাখান করে বলেছিলেন- আপনি দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। কিন্তু এটাও মনে রাখবেন আমি একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি।

আজ অলি গলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা পত্র পত্রিকা, মাল্টিকালারের মিডিয়া , ফেসবুক, টুইটার, টিকটক , লিটফেস্ট কত কি। এসবের জোয়ারে প্রতি মুহুর্তেই সেলিব্রেটির জন্ম হচ্ছে। কিন্তু প্রতিভাবান মানুষের আর জন্ম হচ্ছেনা। আজ গ্রাম পর্যন্ত বিদ্যুতের আলো পৌঁছে গেছে। কিন্তু আলোকিত মানুষরা আজ হারিয়ে গেছে। বড় বড় প্রকাশক হয়েছে। কিন্তু গবেষক, সাধকরা আজ বিলুপ্ত হয়ে গেছে।

আজ এতো বড় দেশের প্রায় দুশো বিশ্ববিদ্যালয় আছে। কিন্তু সেই রকম কয়জন শিক্ষককে আজ মানুষ চিনে। মিডিয়ার কারণে না, টকশো করার জন্য না। শুধুমাত্র বিদ্যার কারণে, জ্ঞানের কারণে, গবেষণার কারণে, সাধনার কারণে কয়জন শিক্ষককের নাম সারা জাতি আজ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে !!!

করেনা। কারণ- দিনের পর দিন আমরা অবক্ষয়ের মধ্যে চলে যাচ্ছি । আমরা এক সীমাহীন শুণ্যতার মধ্যে ভাসছি। অসীম নিঃস্বতার চোরাবালিতে আটকা পড়ে আছি। শুধু মাত্র লুটেরারা না। বরং মহান শিক্ষকরা, নীতিবান আদর্শবান মানুষরাও আজ ভোগ বিলাস, খ্যাতির পেছনে ছুটছেন। বড় বড় অট্রালিকা তৈরী হচ্ছে। কিন্তু নীতি, আদর্শ, নৈতিকতা, বিশুদ্ধতা আজ ভেঙ্গে পড়ছে।

এমন বিরান ধূসর উষারতা, আর প্রতিভার বিমর্ষতা দেখে দুঃখভরা মনে আল মাহমুদ হয়তো এমনি দুটি লাইন লিখেছিলেনঃ

আবাল্য শুনেছি মেয়ে বাংলাদেশ জ্ঞানীর আতুড়
জ্ঞানের প্রকোষ্ঠে দেখো, ঝোলে আজ বিষণ্ণ বাদুড়

মানে- আজ এই দেশে জ্ঞানের প্রকোষ্ঠে কোনো প্রতিভাবান মানুষ আর এখন জন্মায় না। জন্মায় শুধু বিষণ্ণ বাদুড়।


তাঁর বিখ্যাত সোনালি কাবিন কাব্যগ্রন্থের একটা কবিতায় লিখেছেনঃ

কী করে মানবো বলো, শ্রীজ্ঞানের জন্মভুমি এই
শীলভদ্র নিয়েছিলো নিঃশ্বাসের প্রথম বাতাস,
অতীতকে বাদ দিলে আজ তার কোনো কিছু নেই
বিদ্যালয়ে কেশে ওঠে গুটিকয় সিনানথ্রোপাস ।

মানে যে জ্ঞানভূমে শ্রীমান অতীশ দীপঙ্কর মতো মানুষের জন্ম হয়েছিলো সে ভূমের এই বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে এখন কেবলি সিনানথ্রোপাসের মতো আদিম জীবদের কাশির শব্দ শুনা যায়। এখানে আর নেই কোনো প্রাণের শব্দ , নেই কোনো জীবনের স্পন্দন, নেই কোনো জ্ঞান প্রদীপ। চারপাশে এখন আছে শুধু খাদক আর মাদক । বিলুপ্ত হয়ে গেছে আজ সব জ্ঞান সাধক।

ডিসক্লেইমারঃ এই লেখার বেশ কিছু কথা অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বক্তৃতা থেকে নেয়া হয়েছে।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: কাইফা হালুকা !

২| ২৬ শে জানুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:০৫

আরিফ আটলান্টা বলেছেন: সালাম, সালাম হাজার সালাম :) :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.