নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্টের সাথে ফোনালাপ

২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৭:০৪

আমার শহর থেকে ওয়াশিংটন যেহেতু অনেক দূরে-তাই বন্ধুরা পরামর্শ দিলো- অতদূরে যাওয়ার দরকার কি। মেইল করেই পাসপোর্টে নো ভিসার কাজটি শেষ করা যায়। ভাবলাম- এটা হলেতো ভালই হয়।
অনলাইন থেকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রিন্ট করার পর, যথোপযুক্তভাবে ফরম পূরণ করে- একেবারে নির্দেশমতো আমার পাসপোর্ট- মানিঅর্ডার সহ ফিরতি খামে কাগজপত্র গুলো ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ এ্যাম্বেসির ঠিকানায় প্রেরণ করলাম।

বন্ধুরা এও পরামর্শ দিলো- মেইল করার পর মেইল ট্রেক করার জন্য যেন ট্রেকিং নাম্বারটা রাখি ।
আমি তাও করলাম।
আমেরিকার পোস্টাল সার্ভিসের মাধ্যমে ট্রেকিং নাম্বার থেকে মনিটর করতে লাগলাম- মেইল কোথায় আছে, কোথায় যাচ্ছে, কখন ওয়াশিংটনে পৌঁছাচ্ছে।
কারণ- জীবনের এই অতি প্রয়োজনীয় সম্বল, আমেরিকার থাকার বৈধ অবলম্বন পাসপোর্ট হারানো গেলে - হয়তো আবার তৈরি করা যাবে। কিন্তু একটা বাড়তি দূর্গতি পোহাতে হবে।

যাইহোক- ট্রেকিং থেকে দেখলাম- বাংলাদেশ এ্যাম্বেসীতে আমার মেইল পৌঁছেছে। স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললাম।
কিন্তু এই স্বস্তি বেশি দিন ঠিকলো না। সপ্তাহ যায়, দু সপ্তাহ যায়, তিন সপ্তাহ যায়। ফিরতি খামে আমার পাসপোর্ট আর এসে পৌঁছায় না।
কি করা যায়? কার সাথে যোগাযোগ করা যায়?

মাঝখানে এক পারিবারিক নিমন্ত্রণে- বাংলাদেশের একজন অবসরপ্রাপ্ত এ্যাম্বেসেডরের সাথে আলাপ হলো। উনাকে জিজ্ঞাসা করলাম- কারো কোনো গাফলতির কারণে পাসপোর্ট যদি খোয়া যায়- এটার দায়ভার কেউ নেয় কিনা ? এ জন্য কেউ কোনো জবাবদিহিতা করে কিনা?
উনি শুধু মিষ্টি করে হাসলেন। কোনো সদুত্তর দিতে পারলেন না।
শুধু একটা ঘটনা শেয়ার করলেন- পাসপোর্টের ভিতরে নাকি অনেকেই ডলার গুজে দেয়- যাতে কাজটা দ্রুত হয়। আফসোস করে বললেন- জানিনা এই অবস্থার এখন পরিবর্তন হয়েছে কিনা।
পাশ থেকে এক ভাই বললেন-
ঘুষ দেয়া নেয়া আমাদের জাতীয় স্বভাব। এই স্বভাবতো এতো সহজে রদ হবেনা । আর আমরা চাঁদপুর থেকে চাঁদে গেলেও তা বদলাবে না।

উনি আমাকে ইমেইল করার পরামর্শ দিলেন।

আমি ঘরে এসেই ইমেইল করলাম। কোনো প্রত্যুত্তর নেই। এক সপ্তাহ অপেক্ষার পর আবার ইমেইল- এবারও কোনো জবাব নেই।

প্রবাসে যারা থাকেন- তারা উপলব্ধি করতে পারেন- এই দেশে ঘর, সংসার, চাকুরি ইত্যাদি নিয়ে কি রকম ব্যস্ত থাকতে হয়।
এই সব ব্যস্ততার মাঝে সময় বের করে বাড়তি কাজগুলো করতে হয়।

আমি আমেরিকার পোস্ট অফিসে গেলাম।

পোস্ট অফিস কর্তৃপক্ষ আমার সমস্যার কথা খুব মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। উনারা বললেন - দেখুন - মেইল ওয়াশিংটন অফিসে পৌঁছে দেয়া পর্যন্ত সব রেকর্ড আমাদের আছে। কিন্তু উনারা যদি আপনার পাসপোর্টের ফিরতি মেইল আমাদের কাছে দিয়ে না যান-সেটা আমরা ট্রেক করবো কিভাবে। উনাদের কাছে কি কোনো রিসিট আছে। সেই রিসিটের কোনো নাম্বার যদি আমরা পাই - তবে সেটা আমরা চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ট্রেক করে আপনাকে জানাবো।

উনাদের কথায় যুক্তি আছি। এরপর গেলাম- পুলিশ স্টেশানে। উনারাও খুবই ভালো ব্যবহার করলেন। বললেন- এটা যদি চুরি বিষয়ক কিছু হতো- আমরা আপনাকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করতাম।

ব্যর্থ মনে ঘরে ফিরলাম। কি করা যায়?

ওয়াশিংটনে বাংলাদেশ এ্যম্বেসিতে ফোন করলাম। ফোন কেউ ধরেনা।
পরদিন আবার ফোন। কেউ ফোন ধরেনা।
পরপর পাঁচদিন ফোন করার পর এক ভদ্রমহিলা ফোন ধরলেন।
উনি মহাব্যস্ত। আমার সমস্যার কথা শুনার উনার সময় নাই। তাঁর এতো ব্যস্ততা আর কথার ঝাজে মনে হলো- উনি আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট। আর আমি তৃতীয় বিশ্বের গরীব দেশের এক অসহায় হরিদাসপাল।
উনি আমার কথা ভালো করে না শুনেই বলে দিলেন- আপনার ফিরতি মেইল পোস্টাল বক্সে ড্রপ করে দিয়েছি।
কোনো রিসিট কি দেয়া যাবে ম্যাডাম ? যদি দিতে পারেন-তবে আমার খুবই উপকার হয়। অন্ততঃ আমি ট্রেক করতে পারতাম।
ফোনের ঐ পাশে টু টু শব্দ হচ্ছে। মাননীয় ভাইস প্রেসিডেন্টের এতো সময় কই- আমার মতো হরিদাসপালের পূর্ণ একটা বাক্য শুণার। দেশে বিদেশের অফিস আদালতে এরকম মহাশক্তিমান প্রেসিডেণ্ট, ভাইস প্রেসিডেন্ট, জাতিসংঘের মহাসচিবরা বসে আছেন। তাদের কাছ থেকে সেবা কিভাবে আশা করবেন। তারা যে আমার মতো দাস-প্রজাদের সাথে ফোনে এক মিনিট কথা বলেছেন- এটাইতো যথেষ্ট।

আমি ফোন হাতে ধরে চুপচাপ মূর্ত হয়ে বসে আছি।
ভাবছি- দেশের জন্য হয়তোবা কিছুই করতে পারিনি। কিন্তু সুখে দুখে- সময় অসময়ে গত দুদশক ধরে অন্ততঃ কিছু রেমিটেন্সেরতো যোগান দিয়েছি। আমার ছোট সন্তানকে তার পিতৃভূমি -মাতৃভূমি দেখাতে চেয়েছিলাম। জানিনা, সেটা আর হবে কিনা। আমার দীর্ঘশ্বাস ভারি হয়ে আসছে। নিজ জন্মভূমিতে ফেরার স্বাধও আমার আপাতত মিটে গেছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.