নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের রুচি

০৬ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫৮

কত বড় বাড়িতে থাকেন কিংবা কত দামী গাড়ীতে চড়েন কিংবা কত উচ্চপদে চাকুরি করেন এতে রুচি প্রকাশ পায়না। মানুষের রুচি প্রকাশিত হয় আসলে সে কি পড়ে এবং কি দেখে তার উপর।

রুচির দুর্ভিক্ষ চলছে- কথাটা সঠিক না। যে জায়গায় এসে আমরা দাঁড়িয়েছি - সেখানে আসলে রুচির মহামারী চলছে।

স্বর্ণের প্রলেপে এক কেজি জিলাপি যখন বিশ হাজার টাকায় বিক্রি হয় এবং সেগুলো যখন আবার মানুষে কিনে খেয়ে নিজের জৌলুস প্রদর্শণ করে, আধ্যাত্মিক বিশুদ্ধতার ইফতারের সাথে যখন পার্টি যুক্ত হয় এবং তা একটা পার্টি কালচারে পরিণত করে, বিয়ে পার্টি সহ নানা পার্টিতে যখন খাবার উপচে উপচে পড়ে এসব কিছুই আমাদের রুচির মহামারী। সেদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের একটা ছবি দেখে চমকে ওঠেছি। কি অপরূপ, সবুজ, সতেজ , নির্মল প্রকৃতি আধুনিক আর সভ্য হওয়ার উন্নয়নের রুচির ধূলিতে একেবারে ঢাকা পড়ে গেছে।

এগুলো হলো রুচির একটা দিক। এবার রুচির অন্য আরেকটা দিকে দৃষ্টিপাত করি।

বিখ্যাত সংগীত শিল্পী রেশমাকে যখন সিতারা ইমতিয়াজ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়- তখন অনেকেই তাকে সুর সম্রাজ্ঞী হিসাবে অভিহিত করা শুরু করলে- তিনি বলেন-এরকম কখনো করবেন না। কারণ- আমাকে সুর সম্রাজ্ঞী উপাধি দেয়া হলে- সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর মতো কিংবদন্তীদের অপমান করা হবে। শত রাত বিনিদ্র রজনী পার করার পর যারা একটা সুন্দর সুর সৃষ্টি করেন- আমি তো তা করিনা। আমিতো শুধু গান গাই। তাই আমাকে সুর সম্রাজ্ঞী বলার প্রয়োজন নেই।

ভারতীয় ক্রিকেটার রাহুল দ্রাবিড়কে পিএইচিডি ডিগ্রি প্রদাণ করা হলে - তিনিও বলেছিলেন- যারা বছরের পর বছর অধ্যাবসায় করে পিএইচডি ডিগ্রী লাভ করে, আমাকে সেই মানের একটা ডিগ্রি প্রদাণ করে হলে- সত্যিকার গবেষকদের অবমূল্যায়ন করা হবে।

অথচ, সব কিছুতেই অতি আদিখ্যেতা প্রকাশ করতে গিয়ে- বুকটা ফাইট্টা যায়, ভোল্টেজ এখন আইস্যা গেছে, তারে তারে জোড়া দে, টিপ্পা দে, টিপ্পা দে---এইরকম অশ্লীল গানের শিল্পীকে আমরা সুর সম্রাজ্ঞী, বাউল শিরোমনি ইত্যাদি নানা উপাধি দিয়ে বসে আছি। এই হলো আমাদের রুচি।

একেবারে তৃণমূল থেকে ওঠে এসে কেউ যদি নিজ গুণে নিজেকে পরিষ্ফুটন করে তোলতে পারে- তিনি অবশ্যই আমাদের সতত শ্রদ্ধার পাত্র, কিন্তু সে জন্য নামের আগে ইচ্ছেমতো বিশেষণ জুড়ে দিয়ে একেবার সম্রাট, সম্রাজ্ঞী ইত্যাদি বানিয়ে ফেলা রুচির অত্যাচার।

মানুষ হিসাবে কোনো মানুষকেই তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করা যেমন ঠিক না। ঠিক তেমনি যার কোনো বিশেষ গুণ নাই -তাকে মাথায় তোলে নাচাও ঠিক না। একজন মানুষ হিসাবে হিরো আলমের গান গাইবার, কবিতা আবৃতি করার, অভিনয় করার পূর্ণ অধিকার আছে। কারণ- এই সব কিছু উনাকে জীবিকা এবং একটা স্বাস্থ্যকর অর্থের যোগান দেয়। উনার কাজ উনাকে ইচ্ছেমতো করতে দেয়া ঠিক আছে। কিন্তু উনাকে নিয়ে এভাবে মেতে ওঠা কি ঠিক?

আজ যদি কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ফিরে এসে একটা গান রচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দেন, কিংবা ডঃ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ একটা প্রবন্ধ লিখেন- কিংবা সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ নতুন একটা সুর তৈরি করেন- তা যতনা আলোচিত হবে- তার চেয়ে বেশি আলোচিত হবে -কার বুক ফেটে গেলো- কোন পরীর বাচ্চা কোন জায়গায় প্রসব হলো- বিয়ে করার আগেই কোন নায়ক সন্তানের বাপ হলো ইত্যাদি। কারণ- এসবইতো এখন আমাদের রুচি।

কিছুদিন আগে নাসার বিজ্ঞানী ডঃ রুবাব খানের একটা বক্তৃতা দেখলাম। আমার মনে হয়না কোনো কিশোরের জীবন বদলে দেয়ার মতো এতো সুন্দর করে কথা এর আগে কেউ বলেছে। কিন্তু ভিউ মাত্র হাজার ত্রিশেক। আর উদ্ভট সব কন্টেন্টের ভিউ শুধু হাজার না, লাখ ছাড়িয়ে মিলিয়ন।

কারণ এখন মানুষের গুণে মানুষ আলোচিত হয়না, যতটা না আলোচিত হয় সোসাল মিডিয়ার গুণে। যতটা না আলোচিত হয়ে নানা উদ্ভট কন্টেন্টের ভিউ আর লাইক গোনে।


ঐ যে লেখার আগে বলেছিলাম- মানুষের সত্যিকারের রুচি নির্ভর করে সে কি পড়ে এবং কি দেখে তার উপরে। সোসাল মিডিয়া আমাদের ভালো করে বুঝিয়ে দিয়েছে- আমাদের রুচিবোধ আজ কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে।

পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করে কেউ ভালো চাকুরি পেয়ে যেতে পারে। মদ,জুয়া, সুদের ব্যবসা করে কেউ ধনবান হয়ে যেতে পারে। কিন্তু রুচিবান অতো সহজে হওয়া যায়না। একজন রুচিশীল মানুষ গুনে, মননে, সৃজনে এবং ব্যক্তিত্বে তিলে তিলে নিজেকে তৈরি করে।এটা আসে পরিবার থেকে এবং নিজস্ব প্রচেষ্টা থেকে।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.