নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাবলীগের তিনগ্রুপ, ইউরোপের মুসলমান আর অন্যান্যঃ

১৩ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:১২

তাবলীগের তিনগ্রুপ, ইউরোপের মুসলমান আর অন্যান্যঃ

ইউরোপ যখন আঁধারে ডুবে ছিলো তখন মুসলিম দুনিয়া জ্ঞান বিজ্ঞানের আলোয় ছিলো পূর্ণ বিভাময়। খ্রিস্টীয় সপ্তম থেকে চৌদ্দশ শতকে প্রায় ৭৮১ বছর ইসলামী শাসনামলে বিশ্বের সেরা সভ্যতায় পরিণত হয় গোটা স্পেন। জেনারেল তারিকের নেতৃত্বে স্পেন অর্থনীতি, সমাজনীতি, শিক্ষানীতি ইত্যাদি নানা ক্ষেত্রে সামনের দিকে অগ্রসর হয়। জিব্রাল্টার নামের সাথে এখনো তারিখ ইবনে জিয়াদের নাম জড়িয়ে আছে।

স্পেনে এসে তারা দেখতে পায় সমগ্র ইউরোপ ক্যাথলিক চার্চের অধীনে। গসপেল আর বাইবেল ছাড়া অন্য কিছু পাঠ করা পাপ। গবেষণা করা মানে শয়তানের উপাসনা করা। নব্বই শতাংশ মানুষ অক্ষরহীন। গ্রীক আর রোমান সভ্যতায় গড়ে ওঠা সব কিছু কালের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।

মুসলমানরা শিক্ষার দ্বার সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেয়। গণিত, চিকিৎসা, কৃষি এবং ভৌত বিজ্ঞানের পুনঃপ্রবর্তন করে। বিশৃঙখল রোমান সংখ্যাগুলি শূন্য এবং দশমিক বিন্দু দ্বারা পুনঃস্থাপনের ফলে দূর্বোধ্য গণিত সহজতর হয়ে ওঠে। ঐতিহাসিক ইভান সেরতিমা বলেন- রোমান সংখ্যা দিয়ে উচ্চতর গণিত করা সম্ভবপর ছিলোনা । মুসলমানরা সেটা সহজ করে দেয়। যতদিন পৃথিবীতে গণিতের চর্চা থাকবে ততদিন পর্যন্ত গণিতে মুসলিম বিজ্ঞানী আল খাওয়ারিজমির অবদান স্বর্ণখচিত হরফে লিখা হয়ে থাকবে।


মুসলমানরা শুধুমাত্র তুলা, চাল, আখ, খেজুর, আদা, লেবু এবং স্ট্রবেরি ইত্যাদি কৃষির প্রবর্তন করেনি। এর পাশাপাশি তারা ইউরোপকে শেখায় কিভাবে একশত বছর পর্যন্ত শস্য সঞ্চয় করে রাখতে হয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগ থেকে বাঁচতে শস্য সংরক্ষণের যে তাগিদ হযরত ইউসুফ আঃ কে দেয়া হয়েছিলো এবং তিনি সেই কৌশল প্রয়োগ করেছিলেন খৃষ্ট জন্মের প্রায় সতেরোশ বছর আগে।


মুসলমানরা স্পেনে বিশ্ব বিখ্যাত রেশম শিল্প প্রতিষ্ঠা করে। হাইড্রোলিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অনন্য কৃতিত্ব স্থাপন করে তারা এমন একটি জলপ্রবাহ নির্মাণ করে, যা পাহাড় থেকে সীসা পাইপের মাধ্যমে শুধু শহরে না প্রত্যেকের গৃহে জল সরবরাহের ব্যবস্থা করে। খাল খনন করে সেচ কর্মসূচি প্রবর্তন করে। পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থার ফলে - শহর, কিংবা গ্রাম কোথাও পানির জন্য কোনো হাহাকার ছিলো না। প্রতিটি ঘরে সুপেয় পানির সুবন্দোবস্ত ছিলো।


তারা ইউরোপকে শিখায় কীভাবে তামা, সোনা, রূপা, সীসা এবং অ্যালুমিনিয়াম সহ বৃহৎ আকারের মূল্যবান খনিজ সম্পদ আহরণ করতে হয়।

স্পেন উচ্চ মানের তলোয়ার ব্লেড এবং ঢাল তৈরি শিল্পের বিশ্ব কেন্দ্র হয়ে ওঠে। প্রতি বছর প্রায় বারো হাজার ব্লেড এবং ঢাল তৈরি করা হতো। যা ইতোপূর্বে পৃথিবীর কোনো কারখানায় সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। মুসলমান শিল্পীদের নিঁখুত বুননে স্পেনের কারুশিল্প এবং পশমী বিশ্ব বিখ্যাত হয়ে ওঠে। বিশ্বমানের কাঁচ, মৃৎপাত্র, ফুলদানি, মোজাইক এবং গয়না তৈরি করে তারা গোটা ইউরোপকে তাক লাগিয়ে দেন।

পথচারীদের হাঁটার জন্য ফুটপাথ সহ পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়, রাস্তাগুলো আলোকে সজ্জিত করা হয় । নারী-পুরুষ সকলের জন্য শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করা হয়। তার আগে শিক্ষা ছিল শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটি শ্রেণীর মানুষের জন্য। উচ্চ শিক্ষায়াতন প্রতিষ্ঠা করে - যুগোপযোগী বিভাগ খোলা হয়। পৃথিবীর সবচেয়ে বিখ্যাত স্কলারদের নিয়ে এসে অধ্যাপনায় নিয়োগ দেয়া হয়। যে কাজগুলো এখন আমেরিকা করে। আজকের আমেরিকার এই পর্যায়ে আসার অন্যতম কারণ হলো- দুনিয়া জোড়া তাদের টেলেন্ট হান্ট প্রোগ্রাম। যেটা এক সময় স্পেনে মুসলমানরা করেছিলো।


পঞ্চম শতাব্দীতে রোমান সাম্রাজ্যের পতনের পর ইউরোপ ভুল গিয়েছিলো সাবান ব্যবহার করে কিভাবে ভালো ভাবে স্নান করতে হয়।
প্লেগ মারাত্মক আকার ধারণ করে। ধর্মের নামে নানা সংঘাতে ইউরোপে রক্তপাত নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। এমনি ঘোর অমানিশা থেকে যে মুসলমানরা ইউরোপকে আলোর পথ দেখিয়েছিলো- সেই মুসলিমরা আজ জ্ঞান বিজ্ঞান থেকে যোজন যোজন দূরে।

এর কারণ কি?-

ইউএস সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্ণেল আমেরিকা মিলিটারি একাডেমি মসজিদের সম্মানিত ইমাম- ডঃ খালিদ সাবাজ দুঃখ ভারাক্রান্ত বিষাদ কন্ঠে বলেন - আগে ইসলামী স্কুলে শুধু কোরআন- হাদীস পড়ানো হতোনা। সেখানে পড়ানো হতো গণিত বিদ্যা, জ্যোতির্বিদ্যা, দর্শন, চিকিৎসা বিদ্যা সহ জ্ঞান বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখা। কিন্তু এখনকার মাদ্রাসা শিক্ষা এর থেকে যোজন যোজন দূরে। মাদ্রাসা থেকে এখন আর ডাক্তারও বের হয়না, বিজ্ঞানীও না। অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে- তাদের এসব না পড়লেও চলবে।
মাদ্রাসা থেকে পাশ করে হয় তাদের আধুনিক স্কুলে যেতে হবে নয়তো এখান থেকে পাশ করে ইমাম, মোয়াজ্জিন আর ওয়াজ মাহফিলের হুজুর হলেই চলবে। ডাক্তার, প্রকৌশলী হওয়ার জন্যতো আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয় আছে। তাদের পড়ার দরকার কি?

তাই, মাদ্রাসা থেকে পাশ করা লক্ষ, লক্ষ ছাত্ররা যে আধুনিক শিক্ষার জগৎ থেকে দূরে বড় দুঃখ হয় এই বোধটুকুও আজ আর তাদের মাথায় নেই।

অন্ধকার যুগের ইউরোপের পাদ্রীদের মতো মুসলমানরাও আজ নানা রকম দলে -উপদলে বিভক্ত হয়ে গেছে। গোটা ইউরোপকে আলোকিত করা মুসলমানরা আজ শুধু আচারে আছে, আচরণে নাই। রিচ্যুয়ালে আছে , স্পিরিচু্য়ালে নাই। নানা রকমের ফিতনায় জড়িয়ে আছে কিন্তু কোনো গবেষণায় নাই।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.