![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানব শিশুকে মাটিতে ছেড়ে দিলে সে যে কোনো কিছু মুখে নিবে। কিন্তু একটা বন্য হরিণ একেবারে নির্ভুলভাবে জানে কোনো ঘাস, কোন গাছের পাতা তার খাবারের জন্য উপযোগী। এর বাইরে- কোনো বিষাক্ত উদ্ভিদ সে খেয়ে দেখেনা। এ জন্য তাকে কোনো উদ্ভিদ বিদ্যা পাঠ করতে হয়না। প্রকৌশল বিদ্যা পড়া ছাড়াই একটা বাবুই পাখি নিঁখুতভাবে তার বাসা বুনে। ভূগোল জ্ঞান ছাড়াই অভিবাসী পাখিগুলো হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে একেবারে নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে। জিপিএস ছাড়া কোনো পাইলটকে যদি বলা হয় সাইবেরিয়া পৌঁছাতে তবে উড়োজাহাজের ফুয়েল শেষ হবে কিন্তু সাইবেরিয়া পৌঁছানো সম্ভব হবে না।
কিন্তু এ জন্য কোনো পাখি, কোনো হরিণকে জ্ঞানী বলা যাবেনা। কারণ- তাদের ডিএন'র মাঝে এগুলো একেবারে জেনেটিকালি প্রোগ্রামড করা। এসব জানার জন্য তাদেরকে আলাদাভাবে কোনো কিছু শিখতে হয়না। কিন্তু, মানব শিশুকে শিখতে হয়। প্রথম মানবকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সরাসরি শিক্ষা দিয়েছেন বলে রব শুধু সৃষ্টিকর্তা না। তিনি মানুষের সবচেয়ে আদি শিক্ষক।
বিখ্যাত পদার্থ বিজ্ঞানী মিশিও কাকুর মতে-পরিচিত মহাবিশ্বের সবচেয়ে জটিল বস্তু হলো মানব মস্তিষ্ক। মানব মস্তিষ্ক মাত্র বিশ ওয়াট দিয়ে প্রতি সেকেণ্ডে যে কাজ সম্পন্ন করে- অনুরুপ কাজ করার জন্য একটা বিশাল পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রে শক্তি উৎপাদন করে, একটা শহর সাইজের কম্পিউটারে সেই শক্তির সাপ্লাই দেয়ার প্রয়োজন হবে।
বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুর রউফ বলেন- লার্জ স্কেল ট্রানজেকশানের জন্য পৃথিবী বিখ্যাত সুপার ফাস্ট কম্পিউটার মেইনফ্রেমের ওজন প্রায় সাত টন। প্রতি সেকেন্ডে হিসাব কষতে পারে প্রায় চল্লিশ কোটি। আর এই সুপার ফাস্ট কম্পিউটার তৈরি করেছে যে মানুষ, তার ব্রেণের ওজন মাত্র বারোশ গ্রাম। একটা ছোট জিপিএস চিপস পুরো বিশ্বের জিওগ্রাফী ধরে রাখে। একটা মোবাইলে দুনিয়ার নাড়ী নক্ষত্রের খবর জানা যায়। যে এ আই নিয়ে দুনিয়া তোলপাড় হচ্ছে এসবের পিছনেও রয়েছে এই মহাশ্চর্য মানুষের ব্রেণ।
মানব শরীরে কোষের সংখ্যা প্রায় একশত কোটি ট্রিলিয়ন। প্রতিটি কোষের নিজস্ব খাবার প্রক্রিয়া আছে। আর প্রতিটি কোষ কাজ করে সোলার সিস্টেমের চেয়েও জটিল ভাবে। এই জটিল প্রক্রিয়া যথাযথভাবে সম্পন্ন করতে মানুষের ব্রেণকে প্রতি সেকেন্ডে কাজ করতে হয় প্রায় তেইশ হাজার বিলিয়ন বার। ব্রেণের কি অবিশ্বাস্য ক্ষমতা- কল্পনা করা যায়!!!
হযরত আদম আঃ পাহাড়ের সমান উঁচু ছিলেন না । তার মাঝে আলোর গতিও ছিলো না। কিন্তু একমাত্র জ্ঞান ছিলো বলেই আল্লাহ অন্যান্য সব কিছুর উপর মানুষের স্থান দিয়েছেন। তাকে সিজদা করতে বলেছেন।
একটা বট বৃক্ষের পাশে গিয়ে যদি এই মানুষ দাঁড়ায়- তাকে খুব ছোট মনে হয়। যদি সে হিমালয়ের পাশে গিয়ে দাঁড়ায় তখন সে মহা ছোট, সমূদ্রের পাশে নিতান্তই ক্ষুদ্র, বিশাল আকাশের নীচে সে ধূলো কণা, প্রমত্ত সূর্যের কাছে খুবই নগণ্য। চৌদ্দশ মাইল ব্যপ্তি আর ত্রিশ হাজার ফুট উচ্চতার হলো হিমালয়। আর মানুষ মাত্র সাড়ে তিন হাত লম্বা। অথচ, এই ক্ষুদ্র মানুষ তার ব্রেণে এই হিমালয়, এই আকাশ, এই সমূদ্র কত কিছু ধারণ করে। প্রতি পলকে মানুষের মন সীমাহীন দূরত্ব পাড়ি দেয়। মুখে পড়া, ব্রেণে শিখা, আর হাতে কলম ধরার এই তিনটি কৌশল শুধু মানুষেরই আছে।
তাই সমূদ্র যতই মহা সমূদ্র হোক, বৃক্ষ যতই বিশাল মহীরুহ হোক, হিমালয় যতই উঁচুতে ওঠুক কোনো কিছুর প্রতি মানুষের মাথা নত করা ঠিক না। শুধুমাত্র দয়াময় প্রভু ছাড়া।
এতো জ্ঞানের আধার নিয়ে এই মানুষ যখন অন্যের হক নষ্ট করে, জুলুম করে, অন্যকে হয়রানি করে- তখন এর চেয়ে নিকৃষ্ট প্রজাতি আর নেই।
আর এই মানুষ যখন রবের খলিফা হয়ে -অন্যের দুঃখে কাতর হয়, অন্যের যন্ত্রনায় কাঁদে তখন তার চেয়ে উৎক্বষ্ট প্রাণী, তারচেয়ে বিশুদ্ধতম আত্মা আর নেই।
মাওলানা জালাল উদ্দীর রুমি বলেছেন- মানুষের হৃদয় কাবা ঘরের চেয়েও পবিত্র। কারণ- কাবা ঘর তৈরি করেছে মানুষ। আর মানুষের হৃদয় তৈরি করেছে স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন।
©somewhere in net ltd.