জাপানি বিচারপতির বিচার

১৬ ই মে, ২০২৩ রাত ২:০২

জাপানি বিচারপতির এই বিচার কাহিনী অনেকেই হয়তো আগে পড়েছেন।

গ্রামের নাম শিরাকাওয়া। সেই গ্রামের এক দরিদ্র কৃষক নাম সাচিকো।

শিরাকাওয়া গ্রামের সবচেয়ে প্রভাবশালী লোকের নাম ইয়োশিকো। গ্রামের লোকরা জানে- ইয়োশিকো পরিবার ধনী হয়েছে মানুষদের ঠকিয়ে। শিরাকাওয়া যেহেতু গ্রামে বেশ ধনী এবং প্রভাবশালী তাই তাকে জ্বি হুজুর করা লোকের সংখ্যাও গ্রামে কম না।


জাপান এখন যে রকম সভ্য হয়েছে। একসময় এমন সভ্য ছিলোনা। ঠগ আর জোচ্চুর ছিলো প্রচুর। যারা ঠগ হলেও নিজেকে মনে করতো খুবই স্মার্ট আর চালাক।

ইয়োশিকো তার একটা পুরানো পাতকুয়া কৃষক সাচিকোর কাছে বিক্রি করে। সেচ ব্যবস্থার প্রয়োজনে নানা অভাবের মাঝে ও সাচিকো বেশ চড়া দামে পাতকুয়াটি কিনে।

দু পক্ষ দলিলে সই করে। কুয়ার মালিকানা পেয়ে দরিদ্র কৃষক সাচিকো খুব খুশি।


পরদিন সাচিকো তার বউকে নিয়ে বালতিতে করে কুয়া থেকে পানি উত্তোলন করতে গেলে ইয়োশিকো বলেন-
বিনা পয়সায় কুয়ার পানি তুলছো কেন?
বিনা পয়সায় মানে? গতকালইতো তোমাকে প্রাপ্য অর্থ বুঝিয়ে দিয়ে এই পাতকুয়াটি আমি কিনে নিয়েছি।
তোমার কথা ঠিক। তোমাকে আমি কুয়া বিক্রি করেছি। কিন্তু কুয়ার পানিতো বিক্রি করিনি।
কুয়ার পানি বিক্রি করেছি- দলিলের কোথাও কি লিখা আছে ?

বাক বিতণ্ডা শুনে আশে পাশ থেকে লোক জুটেছে।সব শুনে তারা বলে - ইয়োশিকোতো ঠিকই বলেছে- সে তোমাকে কুয়া বিক্রি করেছে কিন্তু কুয়ার পানিতো বিক্রি করেনি।

ইয়োশিকো বলে- আমি জনদরদী মানুষ। সামনে ভোটে দাঁড়াবো। তোমাদের সবাইকে আমার দরকার। তুমি দশ বালতি পানি নিবা। আট বালতির দাম পরিশোধ করবা। প্রতিদিন দুই বালতি তোমাকেই মুফতই দিলাম।

ইয়োশিকোর ব্যবহারে সবাই খুবই খুশি হয়। কি জনদরদী মানুষ।

শুধু সাচিকো বলে- গরীবের উপর এটা একটা অবিচার। এই অবিচার বিধাতা সহ্য করবে না।

পাতকুয়ার মামলা কোর্টে ওঠে।


বিচারক দুপক্ষের কথা শুনে বলেন- ইয়োশিকোর কথাই ঠিক। সে তোমাকে শুধু কুয়া বিক্রি করেছে। দলিলে তাই লিখা আছে।
দলিল অনুযায়ী শুধুমাত্র কুয়ার মালিক - কৃষক সাচিকো।
বিচারকের কথা শুনে- সাচিকো কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ইয়োশিকো খুবই খুশি হয়।
এবার বিচারক বলেন- সাচিকো যেহেতু কুয়ার মালিক কাজেই- তার কুয়াতে পানি রাখার অধিকার ইয়োশিকোর নেই। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ইয়োশিকোকে কুয়া থেকে সব পানি সরিয়ে ফেলতে হবে- তা না হলে- তার কুপে পানি রাখার জন্য ইয়োশিকোকে দিন হিসাবে ভাড়া দিতে হবে।

শুধু তাই না, কুপ বিক্রির তারিখ থেকে এ পর্যন্ত যতদিন অতিবাহিত হয়েছে- ততদিন সাচিকোর কুপে পানি রাখার জন্য মোট ভাড়াও ইয়োশিকোকে প্রদাণ করতে হবে।

এ রকম রায় শুনার জন্য ইয়োশিকো মোটেই প্রস্তুত ছিলোনা। রায় শুনে এবার সে হায় হায় করে ওঠে। সে বুঝতে পারে- জোচ্চুরি করে বেশিদূর যাওয়া যায় না। এক জায়গায় গিয়ে অবশ্যই ধরা খেতে হয়।

নিজেকে সবচেয়ে বেশি স্মার্ট আর বিচক্ষণ ভাবতে নেই। কেউ না কেউ এর চেয়ে বেশি স্মার্ট আর বিচক্ষণ আছে ।

০ টি +০/-০