![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনসুর হাল্লাজকে মানুষ গালমন্দ করে। হাল্লাজ সমূদ্র থেকে এক পেয়ালা পানি নেন।
বলেন- এই পানিতে লবনের যে স্বাদ - সমূদ্রের যে কোনো জায়গা থেকে লবণ নেন- সেই একই স্বাদ পাবেন।
কিন্তু পার্থক্য হলো- এই পেয়ালার লবণ মাপা যায়। কিন্তু মহাসমূদ্রের লবনের পরিমান মাপা যায়না। কাজেই পেয়ালার লবণ আর সমূদ্রের লবণ এক হলেও এই পেয়ালা কিন্তু সমূদ্র না।
হাল্লাজ এর পরে- একটা মাটির পাত্র হাতে নিয়ে বলেন-এই মাটি পাত্রের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু পাত্র থেকে যদি মাটি আলাদা করা হয় তবে এই পাত্রের আর অস্তিত্ব থাকেনা।
দেহ থেকে আত্মা আলাদা হয়ে গেলেও তাই হয়। হাল্লাজের দেহ থাকে হাল্লাজ থাকেনা।
হাল্লাজকে বলা হয় - আপনি কে ?
হাল্লাজ বলেন- আমি নামে হাল্লাজ। মানে যে সুতায় কাপড় বুনে। ( হাল্লাজের পরিবার- সুতা দিয়ে কাপড় বুনতো।)
কিন্তু যেটা আমি চিনি- সেটাতো আসলে আমি না।
এই যে আমার গায়ে পরনের কাপড়। আমি জানি এটা কে বানায়, কি দিয়ে বানায়। কাজেই এই কাপড় টা আমি না।
আবার এই যে আমার হাত। হাতের চামড়া। এই গুলা কোন কারখানায় বানায়, কি দিয়া বানায়। এর কিছুই বুঝিনা। এই না চেনা, না বুঝাটাই হলাম আমি।
মনসুরকে বলা হয়- নির্দিষ্ট করে এমন এক জায়গা দেখান যেখানে খোদা থাকে। সেই জায়গা দেখাতে পারলে-আপনার মাথায় সোনার মুকুট পরিয়ে দেয়া হবে ।
হাল্লাজ হেসে বলেন- আপনার মুকুট আপনি রাখেন। শুধু যেখানে খোদা নাই- সে জায়গাটা আপনি আমারে দেখায়ে দেন।
মৃত্যুর পর যার দেহ ছাই ভস্মে পরিণত হবে - সে সোনার মুকুট দিয়ে কি করবে?
আপনার রব তাহলে কোথায় থাকে?
সেইতো রব - যে নিজেই সবকিছুকে বাঁধে। তাকে কেউ বাঁধতে পারেনা। কোন মসজিদ,মন্দির, গীর্জা-মাজারের দেয়াল দিয়ে তাকে বাঁধা যায়না। খোদার সাথে যে গভীর প্রেম করেছে- সেই আশেকের কলবের ভিতরেই খোদা আছে ।
এসব আবোল তাবোল কথায় মনসুর হাল্লাজের বিরুদ্ধে কঠিন ফতোয়া আসে।
সে নিজেকে আনাল হক দাবী করেছে। তাঁকে ধরে নিয়ে আসা হয়। জেলে পুরা হয়।
কয়েদি হাল্লাজকে বলেন- আপনার ফাঁসীর আদেশ হয়েছে শুনেছেন?
হাল্লাজ কয়েদিকে বলেন- আমি তো তিনদিনের মাথায় এমনিতেই বাতাসেই মিলিয়ে যাবো। এই দেহ দিয়েই আমি কি করবো?
আপনার ফাঁসী হবে। আপনি ভয় পান না। আপনাকে ফাঁসীর পর পুড়িয়ে ফেলা হবে।
আমাকে তো পুড়াতে পারবা না। কারণ এই দেহতো আমি না।
আমার আমি হলাম আমার রুহে।
কাজেই আমার দেহ পুড়ালেও আমার রুহ পুড়াতে পারবে না।
এর ঠিক তিন দিনের মাঝেই আব্বাসীয় খলিফা আল মুকতাদির আদেশে তাঁর ফাসি হয়।
মানসুর আল হাল্লাজের জন্ম ইরানের ফার্সে, আর ফাঁসী হয় ৬৪ বছর বয়সে ৯২২ সালে ইরাকের বাগদাদে।
তারপর তাঁর দেহকে পুড়িয়ে ভস্ম বানিয়ে বাতাসে ভাসিয়ে দেয়া হয়। ( কারো কারো মতে )
ফাঁসি হওয়ার আগে হাল্লাজ বলেন-
ওহ বাগদাদ বাসী- কত দিন কত পাগল না খেয়ে থেকেছে- একদিন এসে জানতে চাওনি- সে খেয়েছে কিনা।
কত রাত কত পাগল- বিনা ছাদের নীচে ঘুমিয়েছে- একদিন জানতে চাওনি- তার রাত যাপনের কোনো ঠাঁই আছে কিনা।
কত দিবস- রজনী কত পাগলের গায়ে এক খন্ড কাপড় জুটেনি- একবারও জানতে চাওনি- তার পরনে একখন্ড কাপড় আছে কিনা।
ক্ষুধাতর অবস্থায় এই দুনিয়ায় যার পেটে এক টুকরো রুটি দিতে পারোনি- মৃত্যুর পর সে জান্নাতে যাবে কিনা - তা নিয়ে এতো ব্যতিব্যস্ত হচ্ছো কেন?
আল্লাহ যখন এই প্রশ্নটা করবে- ও বাগদাদের খলিফা মুকতাদির তখন তুমি এর কি জবাব দিবে ?
©somewhere in net ltd.