নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

ছয়জন বিশ্ববিখ্যাত ফ্রি ডাক্তারঃ

২৫ শে জুন, ২০২৪ রাত ১১:৩৪


শারীরিক সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পরই ডাক্তার নানারকমের টেস্ট ধরিয়ে দিলেন। এই ল্যাব থেকে ঐ ল্যাব ঘুরে টেস্ট রেজাল্ট নিয়ে "দরবারে ডাক্তার" এ উপস্থিত হলাম।

যে টেস্ট করাতে আমার প্রায় দশ বারো ঘন্টা সময় লাগলো - সুপারসনিক ডাক্তারের সেই টেস্ট রেজাল্ট দেখতে সময় লাগলো মাত্র দশ সেকেন্ড।

তারচেয়ে বড় কথা হলো- যে সমস্যার কথা আমি জানি। সমস্ত টেস্ট রেজাল্ট দেখে ডাক্তার সেই একই সমস্যার কথাই বললেন। আমার টাকাও গেলো। সময়ও গেলো।

লিজেন্ডারী ডাক্তার বিধান রায় নাকি একবার রোগী দেখতে রোগীর বাড়ি গেছেন। জ্বি কথা সত্য। একসময় ডাক্তাররা রোগীর বাড়ি যেতেন। আর ডাক্তারের মায়ার হাতের স্পর্শেই রোগীরা অনেকটাই ভালো হয়ে যেতেন। আমাদের কত কিছু গেছে। অনেক কিছুর সাথে সেই মায়ার যুগও গেছে। এখন, রোগ নির্ণয়ের মেশিন আছে আর বেশিরভাগ ডাক্তারের মানবিকতা হারিয়ে গেছে।

ডাক্তার বিধান বললেন- উঠোনে বাঁধা এই গাভিটি কাদের?
রোগীর পিতা বললেন- গাভিটি আমাদের।
ডাক্তার বিধান বললেন- আপনাদের গাভিটি বিক্রি করে দিন। এটাই একমাত্র ব্যবস্থা পত্র।
রোগীর পিতা ভাবছেন- সন্তানের নিশ্চয়ই বড় কোনো অসুখ হয়েছে। তাই গাভী বিক্রি করে খরচ যোগাতে ডাক্তার পরামর্শ দিচ্ছেন।

কর্তা গাভী বিক্রি করে দিলেন। এক সপ্তাহ পর- রোগী ভালো হয়ে গেলো।
ডাক্তার বিধান বুঝতে পেরেছিলেন- বাড়তি ঔষধের নিষ্প্রয়োজন। এই অসুস্থ গাভীর দুধই সন্তানের পেটের পীড়ার একমাত্র কারণ।

আমার ডাক্তার আমাকে লম্বা প্রেসক্রিপশন ধরিয়ে দিলেন। আর বললেন- শরীর কোনো ভাবেই মোটা করা যাবেনা।
দিনে হয় ৫০ মিনিট হাঁটতে হবে না হয় ৩০ মিনিট দৌড়াতে হবে। কোনটা করবেন সেটা আপনার ইচ্ছে।
যেহেতু বিশ মিনিট সময় সেভ করতে পারবো তাই আমি দৌড়ানোটা বেছে নিলাম।
প্রতিদিন এভাবে বিশ মিনিট হায়াতের সাথে যোগ হলে মন্দ কি।

ডাক্তার এবার খুব উৎসাহ দিয়ে বললেন- প্রতিদিন দৌড়ালে হায়াত বাড়ে।
আমি বললাম-এভাবে হায়াত বাড়াতে থাকলে আমি কি চিরঞ্জীব হয়ে যাবো।
ডাক্তার মিষ্টি করে হাসলেন। মনে হয় হায়াতের অঙক এতো সহজে মিলাতে পারলেন না। অংক মিলাতে পারলে নিশ্চয়ই ডাক্তার না হয়ে প্রকৌশলী হতেন।

যাই হোক প্রেসক্রিপশান হাতে নিয়ে ফার্মেসীর দিকে দৌড়ালাম। জীবন বাঁচানোর অলিম্পিক ট্রাকে আমার দৌড় শুরু হয়ে গেছে। এই প্রথম খেয়াল করলাম- মোড়ে মোড়ে শুধু ফার্মেসির দোকান। মানুষ লাইন ধরে ঝালমুড়ি কেনার মতো ঔষধ কিনছে। এতো ঔষধ এদেশের মানুষ খায়। বাংলাদেশ নিশ্চয়ই সর্বোচ্চ রোগীর ক্যাটাগরিতেও অনেক আগেই বিশ্ব রেকর্ড করে বসে আছে। ব্যাপারটা কারো নজরে আসলে বিশ্ব রেকর্ডে আরেকটা গৌরবের পালক আমাদের অহঙকারের সাথে যুক্ত হতো।

ঔষধ কিনেই রওয়ানা দিলাম জুতার দোকানে। দৌড়াতে হলেতো ভালো এক জোড়া জুতা লাগবে।
জুতাওয়ালা আমাকে দেখেই যা বুঝার বুঝে ফেলেছে। জুতার দাম শুনেই- আমার ত্রাহি অবস্থা। ডাক্তার, ফার্মেসি আর জুতোর দোকানের ত্রিমুখী ট্রায়াঙ্গেলের ফাঁদে আমি আটকা পড়ে গেছি। এতো দামে মানুষ জুতো কেনে। আমার পূর্বপুরুষরা খালি পায়েই হেঁটেই দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন। মনস্থ করলাম । জুতা কিনবোনা। খালি পায়ে ঘাসের ওপর দৌড়াবো। এটা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো।

দোকানি ফিক করে হেসে বলেন- এই পাথরের নগরে যেখানে গরু বাছুরে খাওয়ার ঘাস পায়না। সেখানে আপনি ঘাসের উপর দৌড়াবেন।

হায়াত বাড়ানোর নেশায় আমি দৌড়াই।
একদিন ঘরে ফিরে দেখি- ছোট মেয়েটা দৌড়াচ্ছে। খুবই দৌড়াচ্ছে।
বললাম- মা মনি এতো দৌড়াচ্ছো কেন?
মেয়েটা তার ফোলা হাত দেখিয়ে বলে- বাবা তুমি না বলেছো- দৌড়ালে মোটা হওয়া কমে যায়। এই দেখো আমার হাতের এই জায়গাটা কি রকম ফুলে গেছে।

দেখি- আমাদের "জাতীয় পাখি মশা"র কামড়ে মেয়ের শুধু হাত না। হাত, গাল সহ নানা জায়গা মশার কামড়ে ফুলে গেছে।

বাপ মেয়ে দৌড়াই। কিন্তু আমার রোগতো কমেনা। কাশি, হাঁপানি বাড়ে। ঘটনা কি।
ডাক্তারের চেম্বারে আবার হাজিরা দেই।

ডাক্তারও মহা চিন্তায় পড়ে যান। তারপরে বলেন- কোন সময়ে দৌড়ান। কোন এলাকায় দৌড়ান।
আমি সময়, এলাকা সব বললাম।
এবার ডাক্তার বললেন- আসল সমস্যা এখানেই।
আপনি যে সময় দৌড়ান। সে সময় সিটি কর্পোরেশানের ময়লায় ট্রাক ঐ এলাকা দিয়ে চলাচল করে। আপনি নিশ্চয়ই ঐ ময়লা ট্রাকের পিছনেই দৌড়ান। দেখেন শুধু দৌড়ালেই হবেনা। বুঝতে হবে জীবনে কীসের জন্য দৌড়াচ্ছেন, কার পিছনে দৌড়াচ্ছেন।
ভুল জিনিসের পিছনে দৌড়ালে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হবে।
এই যে পুরো জাতি সাপ, ক্রিকেট, গরু, ছাগলের পিছনে দৌড়েই যাচ্ছে- এতে কি কোনো লাভ হচ্ছে।

বাপরে বাপ। ইনি কি ডাক্তার না কি ফিলোসোফার।
আমি ওঠতে যাই।
ডাক্তার বলেন- বসেন । কিছু কথা মন দিয়ে শুনেন।
রোগ হওয়া সহজ। কিন্তু একবার রোগ হয়ে গেলে সেটা থেকে ফিরে আসা খুবই কঠিন। শুধু ঔষধ খাবেন। আর দিনে দিনে পুরো স্টমাককে ঔষধের একটা গোডাউন বানিয়ে ফেলবেন।

আপনাকে আজ আমি ছয়জন বিশ্ববিখ্যাত ডাক্তারের কথা বলবো। এই ডাক্তাররা এ্যলোপেথিক, হোমোপেথিক ডাক্তারনা। ইনারা হলেন ন্যাচারোপ্যাথিক ডাক্তার। কোনো রকম ফি ছাড়াই যারা আপনার চিকিৎসা দিবেন।

এক) সূর্যরশ্মিঃ ভিটামিন ডি এর অফুরন্ত ভান্ডার। ভিটামিন ডি এর অভাবে শরীর কলাগাছ হয়ে যায়। খুবই সহজেই শরীরে রোগের বাসা বাঁধে। শরীরকে শক্ত-মজবুত করতে চাইলে সকালের নরম রোদের কোনো বিকল্প নেই।

দুই) নির্মল, স্বচ্ছ পানিঃ আমাদের শরীরের ৭০% পানি দিয়ে গঠিত। প্রতিদিন কমপক্ষে দুই লিটার পানি পান করা দরকার। এটি একটি সহজ স্বাস্থ্য অভ্যাস যা আপনার শারীরিক সক্ষমতাকে উন্নতি করতে, সব রকমের দূষিত টক্সিককে ফ্লাশ করতে, ত্বকের উন্নতি করতে, হজমে সহায়তা করতে এবং আরও অনেক কিছু করতে সাহায্য করে। শরীরের যাবতীয় কলকব্জাকে সঠিকভাবে কাজ করানোর জন্য পানির কোনো বিকল্প নাই।

তিন) বিশ্রামঃ ঘুম জীবনের জন্য লাক্সারি না। এটা প্রায়োরিটি। ৭-৮ ঘন্টা ঘুম প্রতিদিনের ক্লান্তিকে দূর করে দেয়। পরের দিনের একটা সুন্দর সূচনার জন্য আগের রাতের একটা ভালো ঘুম দরকার। ভালো ঘুমের প্রধান শর্ত হলো- ডিভাইস সাথে নিয়ে না বরং একটা সুন্দর পরিচ্ছন্ন মন নিয়ে প্রতিদিন বিছানায় যাওয়া। কিন্তু আপনাদের ক্লাস থেকে ফ্লাস সবজায়গায়তো শুধু এখন ডিভাইস আর ডিভাইস। ডিভাইস নামক এই ভয়ঙ্কর ড্রাগ মানুষের ঘুম কেড়ে নেয়।

চার) ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসঃ প্রতি সপ্তাহে অন্তত ৯০ মিনিট ভোরের বাতাসে গভীর শ্বাস প্রশ্বাসের অনুশীলন মেজাজ উন্নত করতে এবং স্ট্রেস কমাতে দারুণভাবে কার্যকর। শরীরে প্রাণচাঞ্চল্য তৈরি করতে ভোরের স্নিগ্ধ বাতাসের শীতল পরশ টনিকের মতো কাজ করে। যার অন্য কোনো বিকল্প নেই।

পাঁচ) ব্যায়ামঃ বডি বিল্ডার হওয়ার জন্য ব্যায়াম না। বরং ব্যায়াম করতে হবে- শরীরকে রোগ মুক্ত রাখতে। বাগান যতই সুন্দর হোক না কেন- যত্ন না নিলে আগাছা জন্মাবেই। ঠিক তেমনি শরীর চর্চা না করলে রোগ বাসা বাঁধবেই।

ছয়) ডায়েটঃ মানুষ মনে করে ডায়েট শুধু খাবারেই হয়। ডায়েট হয় দুরকমের । মনের ডায়েট আর দেহের ডায়েট। সুষম খাবারের অভাবে যেমন দেহ নষ্ট হতে পারে। ঠিক তেমনি নানারকম আবর্জনা মনে জায়গা দিলে আপনার হৃদয়টাও নষ্ট হতে পারে।

ডাক্তারের কথাগুলো শুনে যেন এক গভীর আত্মবিশ্বাস ফিরে পেলাম। আহা ! সব ডাক্তারেরা যদি একটু সময় নিয়ে এমন করে রোগীকে একটু পরামর্শ দিতেন। তাহলে মানুষ একটু হলেও সাবধান হতো। আর ধেয়ে আসা রোগের মহামারী থেকে মানুষ বাঁচতে পারতো।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.