নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বোরিং লাইফ

১৮ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ২:০২

সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পর মনে হয় যত দ্রুত পারি কাজ শেষে ঘরে ফিরি। কিন্তু আজ মনে হয় ফিরতে দেরি হবে ।
সামনে কোনো গাড়ি দূর্ঘটনায় পড়েছে। রাস্তা ব্লক।
এখন পুলিশের গাড়ি আসবে । অচল গাড়ি রাস্তা থেকে সরানোর ট্রাক আসবে। আরো কত কি .....। বিরক্ত হচ্ছি খুব।

এমন সময় দেখলাম- ডান দিকের লেন দিয়ে একটা ইমার্জেন্সি এ্যাম্বুলেন্স সাইরেন বাজিয়ে হাসপাতালের মেন গেট দিয়ে প্রবেশ করছে।
নিশ্চয়ই গাড়িতে কোনো রোগী আছে। হয়তোবা মরণাপন্ন কোনো রোগী। জীবন বাঁচানোর প্রচেষ্টায় দ্রুত গতিতে হাসপাতালে নেয়া হচ্ছে।

আচ্ছা, এই রোগী যদি কারো বাবা-মা হয়- তবে তার সন্তানের এখন কি হচ্ছে। যদি সন্তান হয়- তবে পিতা মাতা কি একটা নিদারুণ কষ্টের ভিতর দিয়ে যাচ্ছেন। কারো ভাই, বোন অথবা কারো স্বজনও হতে পারে। এরকম কত রোগীই হয়তোবা হাসপাতালে আছে। কেউ ঘরে ফিরে, কারো আর ঘরে ফিরা হয়না।


নানা ভাবনা আমার মনে আসে।
কত মানুষ জীবন বাঁচাতে সিরিয়া থেকে পালিয়ে লেবানন গেলো। এখন লেবানন থেকে ওরা কোথায় যাবে। পৃথিবীতে প্রতি মুহুর্তে কত মানুষ নিজ ভিটে বাড়ি ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়। ফিলিস্তিনে হয়, সিরিয়ায় হয়, আরাকানে হয়। রাজনৈতিক কারণে হয়। প্রাকৃতিক কারণে হয়।

যারা কোনো রাজনীতি বুঝেনা। রাজনৈতিক কর্মী না। বুঝে শুধু তার ছোট একটা সংসার। এই ছোট সংসারের মানুষের ভালো মন্দ নিয়েই যাদের পৃথিবী। মাত্র কয়েক সপ্তাহের মাঝে এরকম কত সাধারণ মানুষ কেউ পা হারিয়ে পঙ্গু, কেউ চোখ হারিয়ে সারা জীবনের জন্য অন্ধ হয়ে গেছে। তাদের সংসার এখন কিভাবে চলছে।

দেশের কত জেলায় বন্যা হয়ে গেলো। রিলিফ ওঠলো। রিলিফের কাজ হলো। ব্যাংকে কোটি টাকা পড়ে রইলো। কিন্তু তাদের জীবন যন্ত্রণা কি শেষ হলো । তাদের শষ্য নেই, গবাদি পশুগুলো নেই, মাথার উপর ছাদ নেই। সামনে আসছে শীতের তাণ্ডব।

আমি হয়তোবা ঘন্টা খানেক পরেই ঘরে ফিরবো। কত মানুষের আজ রাতে আর ঘরে ফিরা হবেনা। আমি ঘরে গিয়ে নিশ্চয়ই খাবার টেবিলে আহার পাবো। কত মানুষ আজ রাতেই না ঘুমিয়ে কাটাবে।


কিছুদিন আগে অপরাহ্নের পর অফিসে বসে আছি। ইমানুয়েল আসে। সে অফিস ক্লিনিং এর কাজ করে।
আমাকে বলে- আজকের দিন কেমন যাচ্ছে?
আমি বলি- বোরিং, খুবই বোরিং।
এ কথা শুনার পর ইমানুয়েল এমন কিছু কথা বলে- যা আমাকে নতুন করে ভাবায়।

ইমানুয়েল বলে- বোরিং তো হবেই। যাদের জীবন খুবই নিশ্চিত তাদের জীবন খুবই বোরিং হয়। জানো, আমার জীবন বোরিং না।
কাজ শেষ করার পর মাকে হাসপাতালে দেখতে যেতে হবে। আমার সাত বছরের অটিস্টিক বাচ্চাটা দিন দিন আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ছে। সারারাত মাকে তার পাশে জেগে থাকতে হয়। আমার মন খারাপটা কাউকে দেখাতে পারিনা। বাড়ি ভাড়া বেড়ে যাচ্ছে। ক্রেডিট কার্ডের লোন পরিশোধই করতে পারছিনা। এরকম কত কিছুর মাঝ দিয়ে আমাদের দিন যায়। চাইলেও তোমার মতো বোরিং হতে পারিনা। ইমানুয়েল হেসে বিদায় নেয়।


আমি ভাবি। কি নির্মম সত্য কথা গুলো ইমানুয়েল আমাকে বলে গেলো।

আমিওতো এরকম একজন ইমানুয়েল হতে পারতাম, আরাকানের কোনো উদ্বাস্তু হতে পারতাম, প্রতি নিয়ত বোমার আতঙ্কে থাকা গাজার কোনো শিশু হতে পারতাম, বন্যায় সব হারানো কোনো কৃষক হতে পারতাম, সাধারণ পথচারী হিসাবে হাঁটতে গিয়ে সারাজীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে বিছানায় পড়ে থাকতে পারতাম, অথবা চিরদিনের জন্য চোখ হারিয়ে অন্ধ হয়ে যেতে পারতাম।


চোখ আমার নিদারুণ অশ্রুসজল হয়। বসে থাকা অবস্থায় মহান রবের প্রতি কৃতজ্ঞতায় গাড়ীর স্টিরিয়াং হুইলে মাথা নত হয়ে আসে।

আমাদের জন্য যেটা ক্লান্তিকর, বোরিং, সাধারণ একটা দিন। এরকম একটা দিন হয়তো পৃথিবীর অগণিত মানুষের স্বপ্নের দিন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:০১

এসো চিন্তা করি বলেছেন: আমি নতুন আমার লেখা পড়বেন আর সাপোর্ট করবেন ভাই ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.