নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের মান

২৯ শে এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:০০

নিরিবিলি এক সবুজ অরণ্যে বাস করত নরম, কোমল, শান্ত , শ্বেত , শুভ্র এক পাখি। নাম ছিল তার কপোতি। সে অন্যান্য পাখিদের সঙ্গে খেলত, খেত, জল পান করত আর প্রতিদিন সকালে গান গাইত। কিন্তু কপোতি ছিল একটু ভিন্ন। সে সবসময় নিজেকে প্রশ্ন করত:

জীবনের মানে কী? আমরা কেন বেঁচে থাকি? খাওয়া আর উড়া ছাড়া কি কোনো মহৎ উদ্দেশ্য আছে?

একদিন এক রাঙা ভোরে কপোতি সিদ্ধান্ত নেয় —সে উড়ে যাবে দূরে। তার প্রশ্নের উত্তর খুঁজে বের করবে।

সে উড়ল পাহাড়ের ওপর দিয়ে। পেরোল বিস্তীর্ণ মরুভূমি। আর পথে অনেক প্রাণীর সঙ্গে দেখা হলো তার। যাদের প্রত্যেকের জীবন ছিল আলাদা এবং প্রত্যেকের ভাবনার দৃষ্টিকোণও ভিন্ন।

প্রথম দেখা হলো এক বৃদ্ধ শিয়ালের সাথে। কপোতি তাকে জিজ্ঞেস করে-
ও শিয়াল চাচা, জীবনের মানে কী?

শিয়াল হেসে বলে-
জীবনের মানে হলো চতুরতা আর সুযোগ। যতটা পারো সুযোগ বুঝে নিয়ে নাও। আর বিপদে পড়ার আগেই পালিয়ে যাও।

এই উত্তর কপোতির ভালো লাগল না। সে ধন্যবাদ জানিয়ে আবার উড়ে গেল।

উড়ে এসে পৌঁছালো এক বিরান মরুভূমিতে। সেখানে সে দেখল একাকী এক ছোট বৃশ্চিক যে এক পাথরের নিচে বাস করে।
কপোতি তাকেও একই প্রশ্ন করে।

বৃশ্চিক বলে-
জীবন হলো কঠিন। এখানে বাঁচতে হলো শুধু হুল ফুটাতে হয়।
কপোতি তার চোখের কঠোরতা দেখে ভয় পায়। তবুও সে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সেখান থেকে উড়ে যায়।

এবার উড়তে উড়তে সে এসে পৌঁছায় এক শান্ত, স্নিগ্ধ হৃদের পাশে।

এরপর দেখা হলো এক জ্ঞানী কাছিমের সাথে। কপোতি তাকেও একই প্রশ্ন করে।

কাছিম মৃদু হেসে বলে:
জীবন দৌড় নয় বরং প্রতিটি পা ফেলার মাঝে চিন্তা। প্রতিটি গাছ, প্রতিটি জলের ফোঁটায় অনুভব—এগুলোতেই জীবনের মানে লুকিয়ে আছে। গতি নয়, স্নিগ্ধতাই জীবনের আসল রূপ।

কপোতির মন ছুঁয়ে গেল কথাগুলো শুনে। কিন্তু তার ভেতরে যেন রয়ে গেলো আরও কিছু জানার তীব্র আকাঙ্ক্ষা।

ফেরার পথে ক্লান্ত হয়ে সে এক দূরের অরণ্যে একটি গাছের ডালে এসে বসে। হঠাৎ শুনতে পায় এক দোয়েল পাখির গান। যে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা ভরে গান গাইছে।

সে কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে-

ও দোয়েল তুমি কেন গান গাও? তোমার কাছে জীবনের মানে কী?

দোয়েল হেসে বলে-

আমি গান গাই কারণ আমার হৃদয় ভালোবাসায় পূর্ণ। জীবন বিধাতার কাছ থেকে পাওয়া একটা অত্যাশ্চর্য উপহার আর কৃতজ্ঞতাই তার প্রকৃত মানে।

কপোতির হৃদয় যেন আলোয় ভরে উঠে। ঠিক সেই মুহূর্তে সে বুঝে গেল- সে যা খুঁজছিল তা পেয়ে গেছে।

সে ফিরে এল তার প্রিয় অরণ্যে। তবে সে আর আগের সেই কপোতি রইলো না।

সে অনুধাবন করতে পারলো- জীবন কোনো বস্তু নয় যা আমরা ধরে রাখি—জীবন হলো একটি যাত্রা। জীবন হলো এক ভ্রমণ। যেখানে জীবনের মোজাইকে প্রতিটি সাক্ষাৎ নতুন একটি রঙ যোগ করে। আর জীবনকে একেক জনের কাছে একেক রকম ভাবে অর্থময় করে তোলে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.