![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনে হচ্ছে আমরা সময়ের শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছেছি।
ইতিহাসের ঘটনাপ্রবাহের চাকা এত দ্রুত ঘুরছে যে, সামনে আর বেশি সময় অবশিষ্ট আছে বলে মনে হয় না।
অতীতে ইতিহাস খুবই ধীর গতিতে এগিয়েছে অনেকটা যেন কচ্ছপের মতো।
পাথরের যুগ থেকে ধাতু আবিষ্কার ও খননের যুগের মধ্যে বয়ে গেছে হাজার হাজার বছর।
তারপর চাকার গতি একটু বাড়লো। লোহার যুগ থেকে বাষ্প যুগের মধ্যে কেটে গেলো আরো হাজারো বছর।
পুনরায় চাকা দ্রুত ঘুরতে শুরু করল—বাষ্প যুগ থেকে বিদ্যুৎ যুগ পর্যন্ত সময় মাত্র একশো বছর।
এরপর এল পারমাণবিক যুগ, তারপর ইলেকট্রনিক্সের যুগ, তারপর মহাকাশ যুগ—সবই মাত্র কয়েক দশকের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনা।
তারপর তো আকাশ যান একেবারে পাগলের মতো ছুটতে লাগলো। মানুষ চাঁদে নামলো, মঙ্গলে রোবট পাঠালো, শুক্র গ্রহে অভিযান পরিচালনা করলো। এখন তো প্রতিদিন, প্রতি রাত, এমনকি প্রতি ঘণ্টায় নতুন কিছু আবিষ্কার হচ্ছে।
স্যাটেলাইটে ঢেকে যাচ্ছে মেঘে ঢাকা আকাশ।
মানুষ বুঝতে পারছেনা- পৃথিবী তার বাসিন্দাদের জন্য কত দ্রুত ছোট হয়ে আসছে।
আপনার চারপাশে একসময় যে অবারিত প্রান্তর ছিলো- তা আর নেই।
মেগা সিটির নাগরিকরা আর জানালা খোলে আকাশ দেখতে পায়না। রোদেলা আকাশ খেয়ে নিয়েছে মানুষকে ঠাঁই দিতে গড়ে ওঠা সুুউচ্চ ভবন।
জনসংখ্যা বেড়ে চলেছে অবিরাম।
আগামী একশো বছরে জনসংখ্যা কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু আশেপাশে এমন কোনো গ্রহ নেই যেখানে মানুষ উপনিবেশ গড়ে তুলতে পারে।
বিশ্বজুড়ে মূল্যবৃদ্ধি বেড়েই চলছে। এতে বুঝা যায় সম্পদের পরিমাণ কমছে আর চাহিদা কি তীব্র ভাবে বাড়ছে।
শুধু তাই না। দিন দিন নতুন নতুন ভাইরাস। নতুন নতুন অসুখ।
এইসব কিছুই ধর্ম, বর্ণ, জাতি নির্বিশেষে মানুষের কমন প্রবলেম।
অনেক আগে এক সুফীর গল্প পড়েছিলাম।
সুফি বলেছিলেন- এক জঙ্গলে যদি কোনো মানুষ হারিয়ে যায়। আর সে যদি কোনো এক মানুষের সন্ধান পায়। তাতেই সে খুশি হয়ে যাবে।
সে জানতে চাইবেনা- এই মানুষের জাত কি , ধর্ম কি, দেশ কি, নাগরিকত্ব কি?
এই বিশাল ভুবনের এই গ্রহেই মানুষ শুধু মানুষকেই খুঁজে পেয়েছে। আর কোথাও এমন নেই।
অথচ এসব কিছু ভুলে গিয়ে এই মানুষ নামক দানবেরা পারমাণবিক দাঁত ও ইলেকট্রনিক নখর দিয়ে একে অপরের সাথে যু্দ্ধ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে আছে।
জীবন বাঁচানো ঔষধের দাম বাড়ছে। ভুগর্ভে পানি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। কার্বন গ্যাস বাড়ছে। ক্যামিকাল পুড়ছে। আর মানুষ মারার জন্য মানুষ খরচ করছে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার।
কবে মানুষ বুঝতে পারবে -
এই একটাই পৃথিবী, একটাই জাতি, একটাই মানুষ।
মানুষ উপলব্ধি করেনা- ঘৃণায় ভালোবাসার চেয়ে বেশি খরচ হয়। কারণ এটা একটি বিপরীতমুখী অনুভূতি। যেমন যখন কোনো বস্তু পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণের বিরুদ্ধে চলে — এতে অতিরিক্ত শক্তি লাগে এবং বেশি জ্বালানি খরচ হয়।
এই বিশাল ভুবনের একটা ছোট নীল গ্রহের ক্ষণস্থায়ী জীবনে - মারণাস্ত্রের উন্মাদনা বাদ দিয়ে মানুষের উচিত যত বেশি পারা যায় ক্ষমা করে দেয়া, প্রতিপক্ষের ওপর ধৈর্য ধারণ করা, বন্ধুর প্রতি নিষ্ঠাবান থাকা, সবার সাথে সদ্ব্যবহার করা, নিজের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করা আর ধর্ম , বর্ণ, জাতি নির্বিশেষ শুধু মানুষ হিসাবেই মানুষকে ভালোবাসা এবং পরবর্তী প্রজন্মের জন্য সুন্দর একটা পৃথিবী রেখে যাওয়া।
কিন্তু তাতো আর হয় না।
জিঘাংসা, স্বার্থপরতা, লোভ, আত্মম্ভরিতা, ক্ষমতার দর্পে বিবেক রুদ্ধ মানুষ।
নভোচারী এডগার মিচেল চাঁদ থেকে বিস্ময়ভরা চোখে পৃথিবীর পানে চেয়ে অবাক হয়ে বলেছিলেনঃ
"চাঁদ থেকে পৃথিবীর দিকে থাকালে মানুষে মানুষের এই দ্বন্ধ, সংঘাত , ভুরাজনীতি নিতান্তই তুচ্ছ মনে হয়। ইচ্ছা করে এই সব বিভৎস-কুৎসিত, ঘৃণিত মানুষদের ঘাড় ধরে ধরে দুই লক্ষ পঞ্চাশ হাজার মাইল দূরে টেনে নিয়ে গিয়ে বলি-
পৃথিবীর দিকে একবার চেয়ে দেখো আর ভাবো- এমন এক সুন্দর নীল গ্রহকে তোমার কি করেছো - হারামজাদারা"।
©somewhere in net ltd.