নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আরিফ আটলান্টা

আরিফ আটলান্টা › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের মেঘ আর জীবনের হাটে আশাগুলো যেন মুরগীর ছানার মতো।

০১ লা জুলাই, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪১

একবার এক বিখ্যাত সাহিত্যিক বলেছিলেন- মানুষের স্বপ্নগুলো অনেকটা মুরগির ছানার মতো। চাল আর খুদ খেয়ে ধীরে ধীরে বড় হয়। তারপর বড় হওয়া ছানাগুলো পায়ে দড়ি বাঁধা অবস্থায় বাজারে বিক্রি হয়ে যায়।
আমাদের আশাগুলোও এমন জীবনের নানা হাটে, নানা দামে বিক্রি হয়ে গেছে।

শৈশবে এক সহজ প্রশ্ন ছিল- বড় হয়ে কী হতে চাও?
আমি অবাক হয়ে ভাবতাম- বড় হয়ে আবার হবো টা কি ?
আর মন যা চায় তা কি সত্যিই হওয়া যায়?

আমি তো হতে চেয়েছিলাম মেঘ! হতে চেয়েছিলাম বাদলের ফোঁটা, কদম ফুলের ঘ্রাণ, বৃক্ষের নিরবতা, দূর্বাঘাসের কোমলতা।
কিন্তু এসব কি চাইলেই হওয়া যায়?

একবার আমাদের পাশের বাড়িতে একটা গাছের মালিকানা নিয়ে দুপক্ষে খুব মারামারি হলো।
আমি গাছ থেকে চোখ ফিরিয়ে আকাশের দিকে চেয়ে রইলাম। দেখি আকাশ ভরা মেঘ, মেঘের সারি। ভেসে যাচ্ছে দূর কোন অজানা দিগন্তের খোঁজে।
আমি জিজ্ঞাসা করলাম, এই মেঘের মালিক কে?
বন্ধুরা হোহো করে হেসে উঠে বললো - ধুর পাগল ! মেঘের আবার মালিক হয় নাকি?

আমার স্বপ্ন ছিলো - বড় হয়ে আমি এইসব মেঘের মালিক হবো। তাদের নানা নামে ডাকবো।
সত্যিই এখন দেখি- মেঘেরও নানা নাম আছে। তাদেরকে নানা নামে ডাকা হয় সিরাস, স্ট্রাটাস, কিউমুলাস আরো কত কি?

মেঘের ও পরিচয় আছে, ভাষা আছে। কিন্তু তাদেরও কি কোনো স্বপ্ন আছে। যাদের কোনো স্বপ্ন নেই। একটা কিশোর মন হয়তোবা সেই স্বপ্নই হতে চায়।
আর বড় হতে হতে আমার সেই সেই ছোট ছোট স্বপ্নগুলো মেঘ হয়েই ভেসে যায়।

শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় একবার বলেছিলেন- এক বিরহ দুপুর। কিশোর বয়স তার। তিনি বাড়ির পেছনের এক বনজ ঝোপে ঢুকেছিলেন একটু ছায়া আর শ্রান্তির খোঁজে।
হঠাৎ ভেসে আসে এক বিরহী এক ঘুঘুর ডাক।
তার মনে হলো এই ডাক এমনি এক ডাক যা হাজার বছরে হয়তোবা একবারই আসে। যেই ডাক এক প্রাচীন ব্যথার সুর হয়ে তার বুকে বিঁধে গেছে।

তারপর আর কোনো শব্দ, কোনো পাণ্ডুলিপি, কোনো জগত তাকে সেই ঘুঘুর ডাক থেকে মুক্তি দিতে পারেনি।
সেই একটিমাত্র ডাকই তাঁকে লেখার জগতে সারা জীবনের জন্য ডুবিয়ে দিয়ে গেলো।

ঘুঘুর ডাক বুকে নিয়ে তিনি বাড়ি ফিরলেন। তাঁর চেহারার দিকে চেয়ে মা বুঝে গেলেন-
ঘন্টাখানেক আগে যে ছেলে তার বনজ ঝোপে গিয়েছিল, সেই ছেলে আর তার কাছে ফিরে আসেনি।
ফিরে এসেছে সম্পূর্ণ এক নতুন ছেলে। কোন জিনিসের ছায়া যে কার ওপর সারা জীবনের জন্য কিভাবে প্রভাব ফেলে যায়।

শৈশবে এক রাখাল বালকের সাথে মধুখালি বিলে গিয়ে সারাদিন তার সাথে ছিলাম।
সেখানে আরেক রাখাল বালক তপ্ত দুপুরে এক গাছের ছায়ার নীচে বসে বাঁশীর সুর তোলেছিলো। আহা সুরের কি মূর্ছনা, সুরের কি যাদু।
এরপর সারাটা সময় শুধু ভেবেছিলাম- যদি এই বাঁশী হতে পারতাম। যদি এই বাঁশীর সুর হতে পারতাম।
যদি সেই সুরের একটা ঝরনা হয়ে বইতে পারতাম।
অথবা হতে পারতাম এই রকম এক রাখাল। যার মাথায় অংকের কোনো চিন্তা নেই। পরীক্ষায় পাশ ফেলের কোনো ভয় নেই। অনেক বড় হওয়ার কোনো উচ্চাশা নেই।
যে ক্লান্ত হলে গাছের ছায়ার নীচে জিরিয়ে নেই। আর বুকের গহীন থেকে বাঁশীতে সুর তোলে।

কিন্তু না। আমি বাঁশি হলাম না, রাখালও হলাম না।
হলাম মুরগির ছানার মতো এক মানুষ ।
যে ধীরে ধীরে বড় হলো,
তারপর জীবিকার বাজারে পায়ে দড়ি বাঁধা হয়ে চুপচাপ বিক্রি হয়ে গেল।
পেছনে রইলো শুধু প্রশ্নহীন কিছু সকাল, অপূরণীয় কিছু বিকেল।
আর এক ফোঁটা স্বপ্ন—
যা এখনো হয়তো কোনো মেঘের ভেতর ঘুরে বেড়ায়।
দিগন্তের অজানায় হারিয়ে যাওয়া এরকম কোনো এক ফেরারী মেঘের পানে চেয়ে আজো ভাবি-

কত সকাল গেলো, কত বিকাল গেলো।
কিন্তু আমার আর এই জনমে কোনো রাখাল হওয়া হলো না।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.