![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
"গোটা পৃথিবীতে ওমরের বড় অভাব"
টানা নয়দিন ক্ষুধার্ত ছিল ওমর। যুদ্ধের বিভীষিকায় দৃষ্টির গভীরে জমেছিল তার নিদারুণ বিষাদ। প্রতি মুহুর্তে মৃত্যুর সাইরেন প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল মাথার ভেতর। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপ যেন ছিল এক নিরন্তর বিপর্যয়ের বিরুদ্ধে যাত্রা।
বাবা নেই, মা নেই, আপন বলে আর কেউ নেই। মাত্র আট বছরে পা দেওয়া এক ছোট্ট ফিলিস্তিনি বালক ওমর পৌঁছায় এক শরণার্থী শিবিরে।
বুভুক্ষু, পিপাসায় ক্লান্ত, নিঃশেষ সে ছোট্ট প্রাণটা ক্যাম্পে পৌঁছেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। তবু মৃত্যু নয় বরং বিস্ময়ে বেঁচে যাওয়া ওমরের ধীরে ধীরে জ্ঞান ফিরে আসে। একসময় সুস্থ হয়। ক্যাম্পের পাঠশালায় স্কুলে যাওয়া শুরু করে।
একদিন স্কুল পরিদর্শনে আসেন UNRWA-এর সেক্রেটারি জেনারেল ফিলিপ লাজারিনি ।
তিনি শিশুদের কাছে জানতে চান। তাদের স্বপ্ন কি। ভবিষ্যতে বড় হয়ে কে কি হতে চায়?
প্রশ্নটা খুবই সহজ। এমন প্রশ্নে শিশুদের চোখে জ্বলে ওঠে কত রকমের স্বপ্ন। বিস্তৃত আকাশের মাঝে শিশুদের কত রঙিন স্বপ্ন যেন সম্ভাবনারা ডানা মেলে উড়ে। কারো স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া, কেউ হতে চায় প্রকৌশলী, কেউ অধ্যাপক, কেউ বা সেনাবাহিনীর জেনারেল, কেউ রাষ্ট্রপতি।
শুধু শিশুরাই নয়। কত বড় বড় মহান মানুষেরা কত বড় বড় স্বপ্নের কথা বলেছেন তাদের বক্তৃতায়।
১৮৬৩ সালে আব্রাহাম লিংকনের গ্যাটিসবার্গ ভাষণ, ১৯৬৩ সালের ‘আই হ্যাভ এ ড্রিম’ উচ্চারণ করেছিলেন মার্টিন লুথার কিং, ১৯৪২-এ মহাত্মা গান্ধীর ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনের ডাক, ১৯৪০ সালে চার্চিলের যুদ্ধের সময় দেওয়া জাগরণী আহ্বান। এরকম কত মহান মানুষের কত ভাষণ, কত কণ্ঠস্বর, কত ত্যাগ মানুষকে কত স্বপ্ন দেখিয়েছে।
তবু ইতিহাস যেন থমকে দাঁড়ায় এক দশ বছর বয়সী শরণার্থী ওমরের জবাবে।
ওমর চোখ তুলে তাকায়। তার চারপাশে শূন্যতা, তার চোখে নিঃসীম বিষাদ। তার স্বপ্নে নেই কোনো পদ, নেই প্রতিপত্তি। তার একটি লাইন যেন পৃথিবীর সমস্ত যুদ্ধের প্রশ্নের উত্তর। যেন এক শিশুর কণ্ঠে উচ্চারিত সবচেয়ে মানবিক প্রার্থনা।
ওমর চুপচাপ দাঁড়িয়ে বলে- না আমি কোনো ডাক্তার, কোনো প্রকৌশলী, কোনো সেনাপতি কিংবা কোনো শাসক কিছুই হতে চাই না।
আমি শুধু ব্যথায় বিদীর্ণ হয়ে যাওয়া কোনো শিশুর চোখের অশ্রু মুছে দিতে চাই, কোনো বুভুক্ষু শিশুর প্লেটে খাবার তোলে দিতে চাই।তপ্ত বালুর উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া কোনো শিশুর পায়ের জুতো হতে চাই। আমি বড় হয়ে শুধু এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে একজন দয়াবান মানুষ হতে চাই।
হায় যদি এই পৃথিবীর যুদ্ধপাগল রাষ্ট্রনায়কেরা ওমরের সেই কথাটি অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে বুঝতে পারত! তবে হয়তো ওমরের মতো কোনো শিশুকে এতিম হতে হতো না , হাজার হাজার শিশুকে ছিন্নমূল হতে হতো না, খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে হতো না, কোনো শিশুকে ক্ষুধার জ্বালায় কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ত হতো না।
এই পৃথিবী হয়তো তখন আর যুদ্ধের নয়, অস্ত্রের নয়, ভূখন্ড দখলের নয়, উচ্ছেদের নয়, শুধু মানবতার পৃথিবী হতে পারতো।
কিন্তু তাতো আর হয়না।
কারণ- এই পৃথিবীতে রাষ্ট্রনায়ক , সেনানায়ক, শাসক, প্রশাসক, জেনারেল, ডাক্তার, প্রকৌশলী কোনো কিছুরই অভাব নেই। গোটা পৃথিবীতে আজ শুধু দয়াবান মানুষেরই বড় অভাব।
©somewhere in net ltd.